মুক্তমনাদের দাবি অনুযায়ী, জান্নাত হল এক ধরণের পতিতালয় যেখানে অবাধে যৌনাচার সম্পন্ন হবে (যদিও জান্নাত পতিতালয় নয়, বরং জান্নাতের প্রকৃতি হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের)।
কিন্তু যেহেতু মুক্তমনারা মুক্তমনে নাস্তিকতাকে অন্ধ-বিশ্বাসরূপে বরণ করেছে, তাই তাদের এই দাবি তর্কের খাতিরে সঠিক বলেই ধরে নিলাম যে, জান্নাত পতিতালয়ের মত কিছু একটা যেখানে অবাধে যৌনাচার সম্পন্ন হবে। এখন তাদের নিকট আমাদের প্রশ্ন হল, এই অবাধ যৌনাচার খারাপ কেন? প্রশ্নের সবটা শেষ হয়নি, এখনও এ সম্পর্কিত কিছু বিষয় বলতে বাকি, তাই আগে পুরো লেখাটুকু পড়ুন।
নাস্তিক শিরোমণিরা হয়ত এবার বলতে পারেন যে, যদি জান্নাতের মত পতিতালয়ে অবাধ যৌনাচার খারাপ না হয়, তাহলে এই পৃথিবীতেও এগুলো ভাল হওয়া উচিৎ, তাই না? স্বাভাবিকভাবে মুমিনদের উত্তর হল, যেহেতু আল্লাহ দুনিয়ায় এগুলো হারাম করেছেন, কিন্তু আখিরাতে হালাল করেছেন, তাই দুনিয়ায় এগুলো অনুমোদিত নয়। কিন্তু যেহেতু নাস্তিককুল আল্লাহ তাআলাকেই মানে না, তাই তাদেরকে এসব হালাল-হারাম মানতেও বলব না। তবে অন্য কিছু বলব, তাই পুরোটা আগে পড়ুন।
দুনিয়ায় অবাধ যৌনাচারে কিছু সমস্যা পরিলক্ষিত হয় যেগুলো মুক্তমনারাও চায় না।
যেমন, যদি পতিতালয়ে যৌনাচার হয়, তবে সেখানে পতিতালয়ের কর্মীকে অনেক ক্ষেত্রেই নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে যৌনাচারে লিপ্ত হতে হয় খদ্দেরের কাছ থেকে অর্থ উপার্জনের আশায়! মুক্তমনাগণ হয়ত তাদের বিকৃত মস্তিষ্ক দিয়ে চিন্তা করতে পারে যে, 'এ আবার হয় নাকি! যৌন-ক্রিয়া কে না করতে চায়'! সেক্ষেত্রে বলব, তারা এখানে ব্যাপারটা বোঝেই নি! ধরুন আপনার প্রিয় খাবার বিরিয়ানি। এখন আপনি পেট পুরে বিরিয়ানি খেলেন। এবার যদি আবার বিরিয়ানি খেতে বলা হয়, যখন আপনার পেট, মন সব ভরে গেছে, তখন কি আর খেতে ইচ্ছে করবে? উত্তর হল - না। আবার ধরুন, প্রতিদিন যদি সকাল-দুপুর-রাত শুধু বিরিয়ানিই খেতে দেওয়া হয়, আর কিছুই না দেওয়া হয় এক সপ্তাহ ধরে, তাহলে কি বিরিয়ানি আগের মতই ভাল লাগবে? এরও উত্তর 'না'। কারণ কোনো ভাল লাগার জিনিসকে অনুকূল পরিস্থিতি বা বিশেষ সময় অনুযায়ী সীমিত ব্যবহারের মাধ্যমেই ভাল লাগে। একইভাবে যৌনক্রিয়াও আপনার সব সময় ভাল লাগবে না। যখন মন-মেজাজ ভাল আছে, শরীরে উত্তেজনা ও সক্ষমতা আছে, পরিবেশও ভাল আছে, তখন হয়ত ভাল লাগতে পারে। কিন্তু পতিতালয়ের কর্মীদের খদ্দেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য ক্রমাগত যৌনাচারে লিপ্ত হতে হয়; সেখানে পতিতালয়ের কর্মী সেই পতিতালয়ের জগতে দাস-দাসীর ন্যায় আবদ্ধ এবং তার নিজের সাদ-আহ্লাদ মিটানোর অবস্থাও নেই বললেই চলে। খদ্দের এসে নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে চলে গেলেও দেখা গেল সেই পতিতা নারীর প্রয়োজন হয়ত তখনও মেটে নি; অথবা সেই পতিতা নারীর যৌনক্রিয়াতে হয়ত শরীর সেই মুহূর্তে উপযুক্ত নয়; কিন্তু তা সত্ত্বেও তাকে কেবল অর্থ উপার্জনের আশায় এই কাজ করতে হচ্ছে! অথবা সেই নারীর কয়েক জনের সাথে শারীরিক ক্রিয়ার মাধ্যমে চাহিদা হয়ত পূরণ হয়ে গেছে এবং এই কাজে তার আর ইচ্ছা আসছে না; কিন্তু তা সত্ত্বেও হয়ত আরও অন্যান্য খদ্দেরকে তার একইভাবে সময় দিতে হবে নিজের অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও! এমনকি তাকে প্রতিনিয়ত এভাবেই সার্ভিস দিতে থাকতে হবে যেখানে তার নিজের মন-মেজাজ, অনুকূল পরিবেশ, ভাল-লাগা, মন্দ-লাগার কোনো গুরুত্বই নেই!
তাহলে এখানে পতিতালয়ের এরূপ জীবনের যৌনাচার কীভাবে উত্তম আর সুখকর হয়! (মুক্তমনারাই বিচার করুক)
তার চেয়েও বড় কথা হল, পতিতাবৃত্তিতে আত্মমর্যাদা আর সম্মান থাকে না, যেহেতু একজন পতিতালয়ের কর্মীকে কেবল উপভোগের বস্তু হিসেবেই দেখা হয়!
আরও যদি খেয়াল করে দেখা হয়, তবে ক্রমাগত যৌনাচারে নানাবিধ যৌনরোগের সম্ভাবনা রয়েছে যেটা হয়ত মুক্তমনাদের খুব বেশি বোঝানোর দরকার নেই। এটা প্রায় অনেকেরই জানা যে, ক্রমাগত যৌনাচারের মাধ্যমে এইডস, গনেরিয়া, সিফিলিস সহ নানাবিধ যৌনরোগ হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া অবাধে ক্রমাগত যৌনাচারে যৌন ক্ষমতা কমে যেতে থাকে; পুরুষের দ্রুত বীর্যপাত, নারীর জরায়ুজনিত সমস্যা প্রভৃতির সম্ভাবনা থেকে যায় যা যৌনজীবনের প্রকৃত আনন্দকেও কেড়ে নেয়!
উপরন্তু, অবাধ যৌনাচারে জারজ সন্তান জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। জারজ সন্তান জন্মের ফলে তাদের সমাজে সঠিক পরিচয় থাকে না; তাদেরকে লালন-পালনের সঠিক দায়িত্ব নেওয়া হয় না। ফলে তাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে থাকে ও সমাজে বিশৃঙ্খলার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
মুক্তমনারা হয়ত এখানে জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থার কথা বলতে পারে। কিন্তু এতেও সমস্যা দূর হচ্ছে না! কেন? খেয়াল করুন - অবাধ যৌনাচারের লক্ষ্যই হল সন্তান জন্ম না দিয়ে আনন্দ উপভোগ করা। সেক্ষেত্রে যদি সকলে অবাধ যৌনাচারে লিপ্ত হয়, তবে মূল উদ্দেশ্যই হবে কেবল আনন্দ উপভোগ করা আর সন্তান জন্ম না দেওয়া। এভাবে সন্তান জন্মানোর পথ বন্ধ করে দিলে ধীরে ধীরে সমাজের লোকসংখ্যার মধ্য থেকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী, গবেষক, চিন্তাবিধ ইত্যাদিও কমে যেতে থাকবে। ফলে জ্ঞান ও সঠিক পথনির্দেশের অভাবে মানবজাতি ধীরে ধীরে নিজের ধ্বংস নিজেই ডেকে আনবে!
এছাড়াও অবাধ যৌনাচার সন্তুষ্টি প্রদান করতে পারে না। ফিলোসফি বা দর্শনেও এটা মাঝে মাঝে বলা হয় যে, পার্থিব কামনায় আনন্দের সাথে সাথে দুঃখও আসে; আনন্দের পরিমাণ সীমিত, কিন্তু দুঃখের পরিমাণ ব্যাপক। ব্যাপারটা একটু ভেঙে বললে এই দাঁড়ায় যে, পার্থিব জগতের উপভোগের প্রকৃতিই হল - যত বেশি ভোগ করা হবে, তত কম সন্তুষ্টি আসবে, তত বেশি দুঃখ প্রাপ্তি হবে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি একটা আইসক্রিম খেয়ে দশটা খেতে চাইলে ঠাণ্ডা লেগে যাবে। এখানে যত বেশি আনন্দ পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, তত বেশি দুঃখ প্রাপ্তি হবে। এক কোটি টাকা পেলে তখন ব্যক্তি এই চিন্তা করতে থাকবে যে, কীভাবে ব্যাংক ব্যালেন্স আরও বাড়ানো যায়, কীভাবে আরও একটা ফ্ল্যাট কেনা যায়, কীভাবে আরও একটা গাড়ি কেনা যায়, কীভাবে সিকিউরিটি গার্ড আনা যায় ইত্যাদি ইত্যাদি। সে যদি তার দেশের সবচেয়ে বড় ধনী ব্যক্তিও হয়ে যায়, তাহলেও হয়ত চিন্তা করবে - কীভাবে সে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ধনী ব্যক্তি হতে পারবে! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "যদি আদম সন্তানের স্বর্ণে পরিপূর্ণ একটা উপত্যকা থাকে, তথাপি সে তার জন্য দুটি উপত্যকার কামনা করবে।" (সহীহ বুখারী (ইফাঃ) ৫৯৯৬/হাদিসের মান: সহিহ)
একইভাবে যত বেশি নারীভোগ হবে, তত কম আনন্দ আসবে, আর তত বেশি মানসিক যন্ত্রণা বৃদ্ধি পেতে থাকবে, কেননা কামনা থেকে তৈরি হয় লোভ আর লোভ থেকে আসে যন্ত্রণা। আর মুক্তমনাদের জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এই যন্ত্রণা কখনই দূর করতে পারবে না!
.
.
এই সমস্যাগুলো আশা করি মুক্তমনারাও চায় না। এখন এই সমস্যাগুলো যেহেতু এই দুনিয়ায় বাদ দেওয়া যাচ্ছে না, তাই অবাধ যৌনাচার এখানে মন্দ কর্ম বলে প্রতীয়মান হয় একজন সুস্থ স্বাভাবিক যুক্তিবাদী মানুষের মস্তিষ্কে।
তাহলে এই সমস্যাগুলো বাদ দিয়ে যদি অবাধ যৌনাচার সম্ভব হয়, তাহলে নিশ্চয়ই মুক্তমনারা সেটাতে আপত্তি তুলবে না?
তা তাদেরই দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী এরকম যৌনাচার তো কেবল জান্নাতেই সম্ভব যেখানে কোনোরকম ঝামেলা বা সমস্যার অস্তিত্ব থাকবে না! সেক্ষেত্রে (মুক্তমনাদের বক্তব্য অনুযায়ী) জান্নাতে যদি অবাধে যৌনাচারও হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে সমস্যা কোথায়?
.
.
.
_____________________
আরও পড়ুন:
.
👉 জান্নাতের বিশেষত্ব
visit - https://uniqueislamblog.blogspot.com/2019/09/blog-post_6.html?m=1
.
.
👉 "জান্নাতী হুর" নিয়ে অমুসলিমদের পক্ষপাতিত্বের জবাব
visit - https://uniqueislamblog.blogspot.com/2019/09/blog-post_34.html?m=1
Comments
Post a Comment