[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference]
.
মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ।
.
সহিহ মানহাজ বলতে বোঝায় সেই পথ বা প্রণালী যা সালফে সালেহীন অর্থাৎ সাহাবা, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন এর মতাদর্শের অনুসরণে অনুসৃত।
.
অর্থাৎ বাতিল মানহাজ হল সেটাই যা সালফে সালেহীনদের পথ অনুসরণ করে অনুসৃত নয়।
.
এখানে যারা সহিহ মানহাজের অনুসারী, তাদের আকিদাকে বলা হয় আহলে সুন্নাত আল-জামাআত এর আকিদা এবং সালফে সালেহীনদের অনুসারীদের সংক্ষেপে বলা হয় "সালাফি"। তাদের বৈশিষ্ট্য হল তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহিহ সুন্নাহ এর অনুসারী এবং হাদিসের সহিহ সনদ যাচাই বাছাই করে অনুসরণ করায় তাদের বৈশিষ্ট্যগত নাম "আহলুল হাদিস" বা "আহলুস সুন্নাহ"।
.
এর মধ্যে আরও কয়েকটি বিষয় বলা প্রয়োজনীয় যা না বললেই নয়। আজ মানহাজের নাম করে যে প্রপাগাণ্ডা সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে, তার মধ্যে কিছু মানুষ নিজেদেরকে সরাসরি পৃথক দল না বললেও তাদের কাজ এবং আচরণ এটা বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, তারা নিজেদের পৃথক ভাবা শুরু করেছে এবং নিজেদের ব্যতীত অন্য সকল মুসলিমকেই পথভ্রষ্ট মনে করছে।
.
এখানে আগেই আমরা দেখেছি যে, সহিহ মানহাজ বলতে বোঝায় সালফে সালেহীনদের পথ অনুসরণ করা। এক্ষেত্রে তাই যদি কোনো ব্যক্তি কোনো মাযাহাব এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে সালফে সালেহীনদের পথ সঠিকভাবে অনুসরণ করে, তবেও সে সালাফি; যদি কেউ কোনো নির্দিষ্ট মাযাহাবের পথে না হেঁটে সালফে সালেহীনদের পথানুসরণ করে চলে, তবুও সে সালাফি। আর এদের মধ্যে যে কোনো ব্যক্তি যদি সহিহ হাদিস এর সনদ যাচাই করে সেগুলো মেনে চলে, তবে সে আহলুল হাদিস বা আহলুস সুন্নাহ। তাই আহলে সুন্নাত আল জামাআত এর যেকোনো মুসলিম, সে হোক মাযাহাবি কী লা-মাযাহাবি, যদি সহিহ হাদিস এর যথাযথ অনুসরণ করে চলে, তবে সে আহলুস সুন্নাহ, আহলুল হাদিস।
.
কিন্তু এই বিষয়গুলোকে হাতিয়ার বানিয়ে সৃষ্ট কিছু প্রপাগাণ্ডা আজ এমনভাবে সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে যে, উম্মতের মধ্যে ঐক্যের পরিবর্তে দিন দিন বিভেদ তৈরি হচ্ছে।
.
ভাইয়েরা আপনারা যারা এখনও সকল মুসলিম উম্মাহকে এক দেহ এর ন্যায় মনে করেন, তারা একবার ভেবে দেখুন - সালফে সালেহীনদের মধ্যে কি বিতর্ক হত না? তাদের মধ্যে ফিকহ বিষয়ে মতবিরোধ হত না?
.
আমি একটা হাদিস এর উদ্ধৃতি দিচ্ছি।
.
"আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আসমা যুবাঈ (রহঃ) ..... আবদুল্লাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহযাবের যুদ্ধ থেকে ফিরে আসলেন- তখন তিনি আমাদের মাঝে ঘোষণা দিলেন যে, কেউ যেন যুহরের সালাত আদায় না করে, যতক্ষণ না বানী কুরাইযার মহল্লায় গিয়ে পৌছবে। তখন কিছু সংখ্যক লোক যুহরের সালাতের সময় চলে যাওয়ার ভয় করলেন এবং তারা বানু কুরাইযাহ গোত্রে পৌছার পূর্বেই সালাত আদায় করলেন। আর অন্যান্যরা বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে যে স্থানে সালাত আদায় করতে বলেছেন, সে স্থান ব্যতীত আমরা সালাত আদায় করব না, যদিও সময় চলে যায়। রাবী বলেন, এ ঘটনা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু'দলের কারো প্রতি রাগান্বিত হননি।"[১]
.
এই হাদিসটি সহিহ হাদিস যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশ মেনেই কোনো কোনো সাহাবা ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত কাযা করলেন, আর কোনো কোনো সাহাবা সেই নির্দেশ না মেনেই ইচ্ছাকৃতভাবে সঠিক ওয়াক্তে সালাত আদায় করলেন। এখানে দুই দলের কাউকেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিন্দা করেন নি।
.
তাহলে এখানে কিন্তু সাহাবাদের মধ্যে দিব্যিই মতবিরোধ হয়েছে; কিন্তু, না সাহাবারা নিজেদের মধ্যে নিজেরা মারামারি করেছে, না রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের নিন্দা করেছেন। এক্ষেত্রে তাঁদের সকলের আচরণে যেন এই আয়াত দুটির ওপর আমলের প্রতিফলনই দেখা যাচ্ছে।
.
إِنَّمَا ٱلْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا۟ بَيْنَ أَخَوَيْكُمْۚ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّن قَوْمٍ عَسَىٰٓ أَن يَكُونُوا۟ خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَآءٌ مِّن نِّسَآءٍ عَسَىٰٓ أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّۖ وَلَا تَلْمِزُوٓا۟ أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا۟ بِٱلْأَلْقَٰبِۖ بِئْسَ ٱلِٱسْمُ ٱلْفُسُوقُ بَعْدَ ٱلْإِيمَٰنِۚ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ
.
"মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে-যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও। মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালিম।" (আল-কোরআন, ৪৯:১০-১১)
.
কিন্তু আমাদের অবস্থাটা একবার দেখুন! যদি আমরা আমাদের নির্দিষ্ট কোনো গণ্ডির মধ্যে প্রচলিত ফিকহী মাসলা মাসায়েল এর বিরুদ্ধে কিছু দেখি, তাহলে সাথে সাথেই ক্ষেপে উঠি আর তাকে বিদআতী ট্যাগ দেওয়া শুরু করি, যা হানাফি, আহলে হাদিস সবার মধ্যেই আজ বিদ্যমান!
.
যদি এমন দাবি করা হয় যে, মাযাহাব মানা ফরজ, না মানলে সে সহিহ সুন্নাহ এর পথে নেই, তবে এই দাবিটি কি আদৌ সঠিক? এই দাবি মাযাহাবি আর আহলে হাদিস দুই দলের লোকদের মধ্য থেকেই করা হয়ে থাকে, কেউ বলে পক্ষে, কেউ বিপক্ষে। কিন্তু ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন এমন ব্যক্তি যিনি মাযাহাব সম্পর্কে ভাল জানেন, তিনি কখনও আপনাকে বলবেন না যে, মাযাহাব না মানলে আপনি মুসলিম নন। কিন্তু মাযাহাব নিয়ে এই উস্কানিমূলক প্রপাগাণ্ডাই আমাদের মনে এমন ভাব তৈরি করেছে যে, মাযাহাবিরা মনে করেন যে, সালাফি মানেই সে মাযাহাবের বিরোধী বাতিল গোষ্ঠী! আগেই বলেছি, সালাফি অর্থ যে সালফে সালেহীনদের পথ অনুসরণ করে চলে। তাই এখানে কেউ সালফে সালেহীন এর পথ অনুসরণ করে চলে যদি মাযাহাব নাও মানে, তবুও আপনি তাকে বাতিল বলতে পারেন না। আবার কেউ যদি মাযাহাব মানে, তবুও আপনি তাকে পথভ্রষ্ট বলতে পারেন না!
.
যিনি প্রকৃত সালাফি, তিনি মাযাহাবের বিরোধী নন। শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদ এর ওয়েবসাইটের একটি ফতোয়ায় উল্লেখ করা হয়েছে,
.
"আপনাকে বুঝতে হবে যে মাযাহাবের গ্রন্থগুলো থেকে ফিকহ এর অধ্যয়ন করা এমন বিষয় যা খুবই সাধারণ এবং এতে কোনো খারাপ কিছু নেই। বরং এটা এমন যে, এমনটাই হওয়া উচিৎ, কেননা কেউই এই পদ্ধতি ছাড়া ফিকহ অধ্যয়ন করতে পারে না। এটাই আমাদের আলিম এবং শাইখদের পদ্ধতি। তাই যে কেউ ফিকহ এর অধ্যয়ন শুরু করতে চায়, সে যেকোনো একটি মাযাহাব বেছে নিক এবং যেটি বাঞ্ছনীয় সেটি হল, সে এমন একটি মাযাহাব বেছে নিক যেটা তার দেশে সবচেয়ে প্রচলিত। আর তারপর সে সেই মাযাহাবের সংক্ষিপ্ত পাঠগুলো মুখস্থ করুক এবং তারপর সেগুলোর ওপর ব্যাখ্যা একজন জ্ঞানী শাইখ এর কাছ থেকে শিখুক। এরপর সে অল্প অল্প করে তার ফিকহ এর অধ্যয়ন আরও বিস্তৃত করতে পারে যতক্ষণ না সে সেই গ্রন্থগুলো পড়তে সক্ষম হয় যেগুলো মাযাহাব, মাযাহাবের দলিল এবং সেগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পর্কে বর্ণনা করছে যা "তুলনামূলক ফিকহ" (আল-ফিকহ আল-মুকারান) নামে পরিচিত, যেমন Ibn Qudaamah এর al-Mughni, an-Nawawi এর al-Majmoo‘। এই প্রক্রিয়ায় সে ফিকহ অধ্যয়ন করতে পারবে..."[২]
.
এখানে যে বিষয়টি লক্ষ্যণীয় সেটা হল, তুলনামূলক ফিকহ এর পর্যায়ে চলে গেলে ব্যক্তির উচিৎ মাযাহাবের অন্ধ আনুগত্য না করে দলিলগুলোকে নিজে যাচাই করে দেখা।
.
শাইখ সালিহ আল ফাওজান বলেন,
.
"আহলে সুন্নাত আল জামাআত এর সুপরিচিত চার মাযাহাব যা এখনও বিদ্যমান এবং সাধারণভাবে মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে, তার যেকোনো একটিকে অনুসরণ করলে কোনো সমস্যা নেই...
..উদাহরণস্বরূপ এটা বলা যেতে পারে, ইবনে তাইমিয়া ছিলেন হাম্বলি, ইবনে কায়্যিম ছিলেন হাম্বলি ইত্যাদি। এই ব্যাপারে কোনো সমস্যা নেই...
..তবে শর্ত হল কোনো ব্যক্তি কেবল সেই মাযাহাবের গণ্ডিতেই আবদ্ধ থেকে সত্য-মিথ্যা, সঠিক-ভুল সবকিছুই গ্রহণ করবে না। বরং যেটা সঠিক সেটাই সে গ্রহণ করবে, কিন্তু যেটা ভুল বলে সে জানতে পারবে, তার ওপর আমল করা তার জন্য বৈধ নয়। যদি সঠিক ধারণাটি তার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে যায়, তবে অবশ্যই তাকে সেটি মেনে চলতে হবে - সেটা তার মাযাহাবে থাকুক, কী অন্য মাযাহাবের অন্তর্ভুক্ত হোক। কারণ যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ একজন ব্যক্তির কাছে সুস্পষ্ট, তখন অন্য কারও মতামতের পক্ষ নিয়ে তা অগ্রাহ্য করার অধিকার তার নেই..."[৩]
.
তবে দলিলগুলোকে যাচাই এর ক্ষেত্রে তিনি আরও বলেন,
.
"মুজতাহিদ বলতে বোঝায়.... যে ব্যক্তি ইজতিহাত এর পর্যায়ে চলে গেছে, অর্থাৎ যার ইতজিহাদে নিজেকে সম্পৃক্ত করার মত যোগ্যতা চলে এসেছে (অর্থাৎ দীনের দলিলগুলো যাচাইয়ের মাধ্যমে কোনো বিষয়ে সঠিক বিধানটি নির্ণয়ের যোগ্যতা এসে গেছে), যেমনটা দেখা যায় চার ইমাম ও উম্মত এর অন্যান্য আলিমদের ক্ষেত্রে...
...কিন্তু যদি ব্যক্তি কেবল একজন সাধারণ পাঠক হয়.... তবে ইজতিহাদে নিজেকে সম্পৃক্ত করা তার জন্য হারাম। কারণ সে নিজে ভুল করে বসতে পারে, আবার অন্যকেও ভুলের মধ্যে ফেলতে পারে। সাধারণ মুসলিম এবং যারা ইলম অণ্বেষণ এর ক্ষেত্রে শিক্ষানবিস, তাদের উচিৎ সেই সকল আলিমদের অনুসরণ করে চলা যাদের দীনি অঙ্গীকার ও ইলম এর প্রতি তাদের ভরসা আছে যতক্ষণ না তাদের কাছে এটা পরিষ্কার হয় যে, তাদের (সেই সকল আলিমদের) ধারণাগুলো দলিলের বিপরীত। সুতরাং তাদের উচিৎ সেই সকল আলিমদের মতামত অনুসরণ করে চলা, যার ওপর দলিলের ভিত্তি রয়েছে যদি তারা কোনটি অধিকতর সঠিক এবং কোনটি কম সঠিক তা পার্থক্য করার ক্ষমতা রাখে..."[৪]
.
তবে এরপরও এমনও দৃষ্টিভঙ্গি সমাজে পাওয়া যাবে যেখানে অনেকেই মনে করে যে, প্রকৃত সালাফি হতে হলে আগে মাযাহাব ছাড়তে হবে। যে ব্যক্তি মাযাহাবের মধ্যে আছে, সে হল বিদআতী এবং একমাত্র মাযাহাব বহির্ভূত লোকরাই কেবল সালফে সালেহীন এর প্রকৃত পথের অনুসরণ করতে পারবে!!!
.
তাদের এই দৃষ্টিভঙ্গির জবাবে আমরা আরও কিছু রেফারেন্স দেব।
.
শাইখ ইবন বায রহিমাহুল্লাহ’কে প্রশ্ন করা হয়ঃ “শুধুমাত্র হাম্বলীরাই সালাফী- এটা কি সঠিক? সালাফিয়্যাতের বাস্তবতা কী? এটা কি বাড়াবাড়ি ও কঠোরতার নিদর্শন যেমনটা অনেকে প্রচলন ঘটিয়েছে?”
.
জবাবে শাইখ ইবন বায বলেছেনঃ “এটা সঠিক কথা নয়। বরং তারা হচ্ছেন সালাফ আল-সালিহ – সাহাবীগন(রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) এবং যারা তাদের পথ অনুসরণ করেছেন তাবিয়ীগন, তাবি-তাবিয়ীগন, হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী, হাম্বলী ও অন্যান্যদের মধ্য হতে। যারা হক্বের উপর চলেছেন, তাওহীদের অধ্যায়ে, আসমা ওয়া সিফাতের অধ্যায়ে এবং দ্বীনের যাবতীয় বিষয় সমূহে সম্মানিত কিতাব ও পবিত্র সুন্নাহ’কে মজবুত করে ধরেছেন।”[৫]
.
অন্যত্র শাইখ ইবন বায রহিমাহুল্লাহ বলেছেনঃ “লা মাযহাবিয়্যাহ দ্বারা কেউ যদি এটি বোঝান যে, মাযহাবে আবদ্ধ থাকা ওয়াজিব নয় – তাহলে এটি সঠিক। কিন্তু সে যদি বোঝাতে চায় যে, মাযহাবের সাথে সম্পর্ক রাখা জায়েয নয় – তাহলে এটি সঠিক নয়। মানুষের জন্য শাফিয়ী, হাম্বলী, মালিকী অথবা হানাফী – এই সম্পর্ক স্থাপন করা জায়েয। ... যদি সে বোঝাতে চায় যে, এই মাযহাবগুলোর সাথে সম্পর্ক রাখা যাবে না, তাহলে যার উপর আহলুল ইলমগন আছেন, এই কথা তার বিরোধী এবং এর কোনো ভিত্তি নেই।”[৬]
.
শাইখ ইবন বায রহিমাহুল্লাহ অন্যত্র বলেছেনঃ "ফিক্বহের ক্ষেত্রে আমাদের মাযহাব হলো আহমাদ ইবন হাম্বলের মাযহাব।"[৭]
.
শাইখ ইবন বাযের উপরোক্ত ৩টি বক্তব্য দ্বারা এটি সুস্পষ্ট যে, "মাযহাবী" হওয়া দোষের কিছু নয়, আর "সালাফী" হওয়া ও "মাযহাবী" হওয়ার মাঝে কোনো দ্বন্দ নেই।
.
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালীহ আল-উছাইমীন রহিমাহুল্লাহ ফিক্বহী মাযহাবের পক্ষে অনেক কথা বলেছেন, এক স্থানে তিনি বলেছেনঃ
"কোনো মাযহাবের সাথে সম্বন্ধযুক্ত হওয়া এবং তার উসূল ও ক্বাওয়াঈদ অধ্যয়ন করা মানুষকে কুর'আন ও সুন্নাহ বুঝতে সহায়তা করে।"[৮]
.
শাইখ ইবন উছাইমীন অন্যত্র বলেছেনঃ "আমাদের মাযহাব হলো ইমাম আহমাদ রহিমাহুল্লাহ -এর মাযহাব।" [৯]
.
যেমন শাইখ মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল ওয়াহহাব রহিমাহুল্লাহ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে শাইখ সালীহ আল-ফাওযান বলেছিলেনঃ “হানবালিয়্যুন ওয়া সালাফিয়্যুন, হানবালিয়্যুন ফিল ফিক্বহ, সালাফিয়্যুন ফিল আক্বীদাহ”।[১০]
.
সুতরাং, যারা "মাযহাবী"দের "সালাফী" বলতে আপত্তি করেন বা অস্বীকার করেন, তারা নিজেরা এমন এক মতবাদের কথা বলছেন, যার উপর আহলুল ইলমগন ছিলেন না। তাদের এই মতমাদ'কে সঠিক ধরে নিলে আমাদের বলতে হবে যে, ইবন তাইমিয়্যাহ, ইবনুল কায়্যিম, নববী, ইবন রজব, ইবন হাজার আসক্বালানী, মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল ওয়াহহাব, ইবন বায ও ইবন উছাইমীন- এরা কেউই "সালাফী" বা "সালাফে সালেহীনগনের" অনুসারী ছিলেন না!!
.
আল্লাহই ভাল জানেন।
.
.
.
________________________
তথ্যসূত্র:
[১] সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ৩৩। জিহাদ ও সফর (كتاب الجهاد والسير)
হাদিস নম্বরঃ ৪৪৯৩
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) http://www.hadithbd.com/share.php?hid=51576
[২] "You should understand that studying fiqh through the books of the madhhabs is something that that is very common and there is nothing wrong with it, rather it is something that should be done, for no one can learn fiqh without doing that. This is the way of our scholars and shaykhs. So whoever wants to start his study in fiqh, let him choose one of the madhhabs – and what is preferable is for him to choose the one that is most common in his country – and memorise a brief text on that madhhab, then learn the commentary thereon from a well-versed shaykh. Then after that he can broaden his study of fiqh little by little, until he is able to read the books that talk about the madhhabs and their evidence and the examination thereof, which is known as “comparative fiqh (al-fiqh al-muqaaran),” such as al-Mughni by Ibn Qudaamah, and al-Majmoo‘ by an-Nawawi. In this manner he will be able to learn fiqh...."
(source - https://islamqa.info/en/250296)
[৩] "There is nothing wrong with following one of the four well-known madhhabs of Ahl as-Sunnah wa’l-Jamaa‘ah that have survived and been preserved and are common among the Muslims, and claiming to belong to one of them....
..It may be said, for example that Ibn Taymiyah was Hanbali, Ibn al-Qayyim was Hanbali, and so on. There is nothing wrong with that..
..but that is on condition that one is not restricted to that madhhab and accept everything in it, whether it is true or false, whether it is right or wrong. Rather he should take from it whatever is right, but whatever he comes to know is wrong, it is not permissible for him to act upon it. If the correct view becomes clear to him, then he must follow it, whether it is found in the madhhab to which he belongs or in another madhhab, because once the Sunnah of the Messenger of Allah is clear to a person, he does not have the right to ignore it in favour of the view of anyone else..."
(Majmoo‘ Fataawa ash-Shaykh al-Fawzaan (2/701)/source - https://islamqa.info/en/250296)
[৪] "What is meant by the mujtahid that... the one who has attained the level of ijtihaad, meaning that he has met the conditions of being able to engage in ijtihaad (i.e., examining the religious texts in order to determine the correct ruling on an issue), such as the four imams and other great scholars of this ummah...
..But if a person is simply a reader... then it is haraam for him to engage in ijtihaad, because he is likely to fall into error and cause others to fall into error. Ordinary Muslims and those who are beginners in the pursuit of knowledge should follow scholars whose religious commitment and knowledge they trust, and follow their views so long as it is not clear to them that their views are contrary to the evidence. So they should follow scholarly views that are based on evidence, if they are able to distinguish between what is more likely to be correct and what is less likely to be so..."
(Majmoo‘ Fataawa ash-Shaykh al-Fawzaan (2/702)/source - https://islamqa.info/en/250296)
[৫] https://www.binbaz.org.sa/fatawa/2060
[৬] https://www.binbaz.org.sa/noor/1772
[৭] শাইখ ইবন বায, মাজমূ ফাতাওয়া, ৪/১৬৬
[৮] শাইখ ইবন উছাইমীন, মাজমূ ফাতাওয়া, ২৬/২৪৫
[৯] লিকা'আতুল বাবিল মাফতুহ, ১২/১০০
[১০] https://www.youtube.com/watch?v=4luQ8ljO8Dk
======================
- আহমেদ আলি
এই প্রশ্নটা আমাকেও করা হয়েছে সম্ভবত কয়েকবার। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরটা বড়ই জটিল। কারণ এর কোনো যথাযথ উত্তর আমাদের জানা নেই। যদি কৃষ্ণের গোপীদের সাথে লীলার কাজকে সত্য বলে...
Comments
Post a Comment