এই প্রশ্নটা আমাকেও করা হয়েছে সম্ভবত কয়েকবার। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরটা বড়ই জটিল। কারণ এর কোনো যথাযথ উত্তর আমাদের জানা নেই। যদি কৃষ্ণের গোপীদের সাথে লীলার কাজকে সত্য বলে স্বীকার করা হয়, তবে দুটো অপশন চলে আসে:
.
১) যদি কৃষ্ণকে কেবল সাধারণ মানুষ হিসেবে ধরা হয়, তাহলে গোপীদের সাথে লীলার মধ্যে অলৌকিক কাজগুলোকে কেবল গল্প হিসেবে বাকি কাজটুকুর ওপর ভিত্তি করে বলা যাবে যে, সে একজন দুশ্চরিত্র লোক ছিল।
.
২) যদি অলৌকিক কাজগুলোকে যথার্থ ধরা হয়, তবে কৃষ্ণকে যোগেশ্বর বা ঈশ্বরের অবতার বা স্বয়ং ঈশ্বর ধরা যেতে পারে।
.
৩) যদি গোপীদের সাথে লীলাকে উপেক্ষা করে কেবল সাধারণ ভালো মানুষ হিসেবে ধরা হয়, তবে তার নবী বা রাসূল হওয়ার একটা সম্ভবনা আছে।
.
.
১ নং পয়েন্ট অনুযায়ী, কৃষ্ণ কখনও নবী হতে পারে না, কারণ দুশ্চরিত্র ব্যক্তি নবী বা রাসূল হতে পারে না।
.
২ নং পয়েন্ট অনুযায়ী যদি তাকে নবী বলা যাবে না, কারণ তার অলোকিক কাজের ব্যাখ্যা হল তার "মায়াশক্তি" আর ভগবতগীতায় এই প্রসঙ্গে সে নিজেকেই ঈশ্বর বলে দাবি করেছে।
.
অজোহপি সন্নব্যয়াত্মা ভূতানামীশ্বরোহপি সন্৷
প্রকৃতিং স্বামধিষ্ঠায় সম্ভবাম্যাত্মমায়য়া৷৷
.
অর্থ:
"যদিও আমি জন্ম রহিত এবং আমার চিন্ময় দেহ অব্যয় এবং ***যদিও আমি সর্বভূতের ঈশ্বর*** তবুও আমার অন্তরঙ্গা শক্তিকে আশ্রয় করে আমি স্বীয় মায়ার দ্বারা আমার আদি চিন্ময় রুপে যুগে যুগে অবতীর্ণ হই।"
(ভগবতগীতা, ৪:৬)
.
অথচ আল্লাহ বলছেন,
.
مَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُؤْتِيَهُ ٱللَّهُ ٱلْكِتَٰبَ وَٱلْحُكْمَ وَٱلنُّبُوَّةَ ثُمَّ يَقُولَ لِلنَّاسِ كُونُوا۟ عِبَادًا لِّى مِن دُونِ ٱللَّهِ وَلَٰكِن كُونُوا۟ رَبَّٰنِيِّۦنَ بِمَا كُنتُمْ تُعَلِّمُونَ ٱلْكِتَٰبَ وَبِمَا كُنتُمْ تَدْرُسُونَ
.
"(হে ঐশীগ্রন্থধারিগণ!) কোন মানুষের পক্ষে এ হতে পারে না যে, আল্লাহ তাকে কিতাব, প্রজ্ঞা ও নবুঅত দান করেন, তারপর সে লোকদেরকে বলে, ‘তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে আমার দাস হয়ে যাও।’ বরং সে বলে, ‘তোমরা রাব্বানী (আল্লাহ-ভক্ত) হও’; যেহেতু তোমরা কিতাব শিক্ষা দাও এবং যেহেতু তোমরা অধ্যয়ন কর।"
.
(আল-কোরআন, ৩:৭৯)
.
.
তাহলে বাকি থাকল শুধু ৩নং পয়েন্ট। কিন্তু আপনি কৃষ্ণকে ভগবতগীতা আর ভাগবতপুরাণ বাদ দিয়ে কীভাবে চিনবেন? যদি কেবল কৃষ্ণকে ভালো মানুষ ধরা হয়, তাহলে দুটো সম্ভবনাই থাকে - সে নবী হতেও পারে, আবার নাও পারে। যদি আপনি মনে করেন যে, পূর্ববর্তী গ্রন্থগুলো বিকৃত, তাহলে এখানে একটা সম্ভবনা আছে কৃষ্ণের নবী হওয়ার। কিন্তু তবুও এটা কেবল অনুমান ছাড়া আর কিছুই নয়। ধর্মগ্রন্থে তার সম্পর্কে যা যা বলা আছে সেগুলো কাট ছাট করলেও তার নবী বা রাসূল হওয়ার চান্স খুবই কম।
.
তাই যেসব মুসলিম ভাই-বোন তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে ঘাটতে গিয়ে মনে মনে ভেবেছেন যে, কৃষ্ণ নবী হলেও হতে পারে, তারা এটা নিয়ে আর বেশি জল ঘোলা না করারই চেষ্টা করবেন, কারণ এই ব্যাপারে কোনো পাকাপোক্ত দলিল আমাদের কাছে নেই। তাই সত্যে পৌঁছাতে গিয়ে আপনি তখন পথভ্রষ্ট হতে শুরু করবেন।
.
কৃষ্ণ নবী ছিলেন কিনা, তা আল্লাহই ভালো জানেন। আমরা জানি না।
.
فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ يَكْتُبُونَ ٱلْكِتَٰبَ بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَقُولُونَ هَٰذَا مِنْ عِندِ ٱللَّهِ لِيَشْتَرُوا۟ بِهِۦ ثَمَنًا قَلِيلًاۖ فَوَيْلٌ لَّهُم مِّمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيهِمْ وَوَيْلٌ لَّهُم مِّمَّا يَكْسِبُونَ
.
"সুতরাং তাদের জন্য দুর্ভোগ (ওয়াইল দোযখ), যারা নিজ হাতে গ্রন্থ রচনা করে এবং অল্প মূল্য পাবার জন্য বলে, ‘এটি আল্লাহর নিকট হতে এসেছে।’ তাদের হাত যা রচনা করেছে, তার জন্য তাদের শাস্তি এবং যা তারা উপার্জন করেছে তার জন্যও তাদের শাস্তি (রয়েছে)।"
(আল-কোরআন, ২:৭৯)
.
.
আহমেদ আলি সিরিজ/ইসলামের আলোকে কৃষ্ণের পরিচিতি
[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...
Comments
Post a Comment