Skip to main content

জান্নাতের বিশেষত্ব

দুনিয়ায় ভোগের উপকরণ আছে, জান্নাতেও আছে। কিন্তু বিশেষ পার্থক্যটা কোথায়?

কেউ হয়ত বলতে পারেন যে, দুনিয়ার ভোগ সামান্য, আখিরাতের আনন্দ চিরস্থায়ী! কেউ বলতে পারেন যে, জান্নাতে এমন বিষয় পাওয়া যাবে যা হৃদয় কল্পনা করেনি, চোখ কখনও দেখেনি ইত্যাদি।

কিন্তু এখানে বক্তব্য কিন্তু পুরোপুরি পূর্ণ হল না। কারণ কী?

লক্ষ্য করুন। এই দুনিয়ার দিকে একটু তাকান। আপনাকে ধরুন এক কোটি টাকা দেওয়া হল। আপনি কি পুরোপুরি খুশি হতে পারবেন? কেউ হয়ত বলতে পারেন যে, হ্যাঁ, কেন না? এক কোটি টাকা তো আমার জন্য যথেষ্ট। আর কী লাগে?
কিন্তু আমি বলব যে, আপনি ভোগের নেশাতে থাকলে কখনই সন্তুষ্ট হতে পারবেন না। আপনি এরপর হয়ত একখানা গাড়ি চাইবেন, বড় বাড়ি চাইবেন। এরপর ভাল আসবাবপত্র চাইবেন। তারপর একদিন এসি চাইবেন, ফ্রিজ চাইবেন।

এভাবে আপনি দুটো বাড়ি পেলে হয়ত আরও দুটো বাড়ি, আরও কয়টা গাড়ি পেতে চাইবেন। আপনি দেশের সেরা ধনী হলে হয়ত পৃথিবীর সেরা ধনী হতে চাইবেন।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "যদি আদম সন্তানের স্বর্ণে পরিপূর্ণ একটা উপত্যকা থাকে, তথাপি সে তার জন্য দুটি উপত্যকার কামনা করবে।" (সহীহ বুখারী (ইফাঃ) ৫৯৯৬/হাদিসের মান: সহিহ)

তাহলে এখানে আসলে যা হচ্ছে, তা হল, আপনি যত উপভোগ করছেন, তত আপনার মধ্যে লোভ জন্ম নিচ্ছে। অর্থাৎ মনুষ্য প্রকৃতি এটাই যে, আপনি যত বস্তুগত সুখ ভোগ করবেন, তত তার আসক্তিতে নিমজ্জিত হবেন, কেননা সেই ভোগের প্রতি আপনার লোভ সৃষ্টি হবে।

এভাবে ক্রমাগত উপভোগ হতে আসে লোভ, আর লোভ পরিণত হয় আসক্তিতে আর ব্যক্তি ভোগান্তিতে নিপতিত হয়।

দুনিয়ায় আপনি যতই মুক্তমনে উপভোগ করুন না কেন, আপনি কোনোভাবেই উপভোগের মাধ্যমে সন্তুষ্ট হতে পারবেন না।

তাহলে এখানে জান্নাতের বিশেষত্ব কোথায়?

এই জিনিসটি নিয়ে একটু চিন্তা করার চেষ্টা করুন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের এর নিদর্শন তুলে ধরছেন তাঁর মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে। আল্লাহ বলেন,

جَزَآؤُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ جَنَّٰتُ عَدْنٍ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدًاۖ رَّضِىَ ٱللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا۟ عَنْهُۚ ذَٰلِكَ لِمَنْ خَشِىَ رَبَّهُۥ

"তাদের প্রতিপালকের কাছে তাদের প্রতিদান আছে স্থায়ী জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে নদ-নদী প্রবাহিত, তাতে তারা চিরকাল স্থায়ীভাবে থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট, আর তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট এ সব কিছু তার জন্য যে তার প্রতিপালককে ভয় করে।" (আল-কোরআন ৯৮:৮)

এই অংশটি বিশেষভাবে খেয়াল করুন:
"আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট, আর তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট"

আবার খেয়াল করুন:-

يَٰٓأَيَّتُهَا ٱلنَّفْسُ ٱلْمُطْمَئِنَّةُ
ٱرْجِعِىٓ إِلَىٰ رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً
فَٱدْخُلِى فِى عِبَٰدِى
وَٱدْخُلِى جَنَّتِى

"হে প্রশান্ত আত্মা!

তোমার প্রতিপালকের দিকে ফিরে এসো সন্তুষ্ট হয়ে এবং সন্তুষ্টির পাত্র হয়ে

অতঃপর আমার (নেক) বান্দাহদের মধ্যে শামিল হও। আর আমার জান্নাতে প্রবেশ করো।"
(আল-কোরআন ৮৯:২৭-৩০)

আয়াতগুলোতে বলা হচ্ছে "প্রশান্ত আত্মা" এর কথা এবং আল্লাহর নিকট ফিরে আসতে ও জান্নাতে প্রবেশের পূর্বে বলা হচ্ছে "সন্তুষ্ট" হওয়ার কথা। আর একটু আগেই আল-কোরআন ৯৮:৮ আয়াতে আমরা দেখেছিলাম যে, "আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট, আর তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট"।

অর্থাৎ মূল বিশেষত্ব উপভোগে নয়, বরং সন্তুষ্টিতে। অর্থাৎ জান্নাত এমনি একটি স্থান যেখানে আল্লাহ জান্নাতিদের চিত্তকে প্রশান্তি ও সন্তুষ্টিতে ভরিয়ে দেবেন। আর যে চিত্ত আল্লাহর অনুগ্রহে সন্তুষ্ট, তার পরিতৃপ্তির জন্য আর কী চাই!!

মহান আল্লাহ আমাদের সকলের গোনাহ মার্জনা করুন এবং জান্নাতে যাওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।
.
.
.
===============================
- আহমাদ আল-উবায়দুল্লাহ

Comments

Popular posts from this blog

মানহাজ ও মাযাহাব নিয়ে যত দ্বন্দ্বের জবাব....

[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...

কৃষ্ণ কি আল্লাহর নবী ছিল?

এই প্রশ্নটা আমাকেও করা হয়েছে সম্ভবত কয়েকবার। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরটা বড়ই জটিল। কারণ এর কোনো যথাযথ উত্তর আমাদের জানা নেই। যদি কৃষ্ণের গোপীদের সাথে লীলার কাজকে সত্য বলে...

ভগবতগীতার বর্ণভেদ নিয়ে ভক্তদের ভণ্ডামির জবাব

============================ চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ৷ তস্য কর্তারমপি মাং বিদ্ধ্যকর্তারমব্যয়ম্৷৷১৩ অর্থ:  "প্রকৃতির তিনটি গুণ এবং কর্ম অনুসারে আমি মনুষ্য সমাজে চারটি বর্ণ...