Skip to main content

"জান্নাতী হুর" নিয়ে অমুসলিমদের পক্ষপাতিত্বের জবাব

আল্লাহ তাআলা জান্নাতের পবিত্র হুরদের প্রসঙ্গে কোরআনে এক স্থানে বলেন,

فِيهِنَّ قَٰصِرَٰتُ ٱلطَّرْفِ لَمْ يَطْمِثْهُنَّ إِنسٌ قَبْلَهُمْ وَلَا جَآنٌّ

"সে সবের মাঝে রয়েছে বহু আনত নয়না; যাদেরকে তাদের পূর্বে কোন মানুষ অথবা জ্বিন স্পর্শ করেনি।" (আল-কোরআন, ৫৫:৫৬)

[বিঃদ্রঃ জান্নাতের আরও বিস্তারিত বিবরণ জানতে এখানে ভিজিট করুন:
কুরআনের আলোকে জান্নাত ও জাহান্নাম
https://bit.ly/2Y2yvZ0 ]

বর্তমানে এই "জান্নাতী হুর" নিয়ে সমালোচনা, ইসলামবিদ্বেষীদের একটি বহু প্রচলিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই অপমান করার জন্য জান্নাতী হুরদের প্রসঙ্গ টেনে এনে কেবল ইসলামেরই সমালোচনা করে। অথচ যদি ভালভাবে লক্ষ্য করা হয়, তবে দেখা যাবে যে, 'স্বর্গে কুমারী মেয়ে'-জাতীয় ধারণা অন্যান্য ধর্মগ্রন্থগুলোতেও খুঁজে পাওয়া যাবে। কেউ যদি সেগুলোতে বিশ্বাস না করে, তবে সেটা একান্তাই তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু এর জন্য কেবল ইসলামেরই সমালোচনা করা পক্ষপাতদুষ্টতা ও সত্য গোপনের মাধ্যমে ঘৃণা প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছুই নয়।

ভগবতগীতায় বলা হয়েছে,

"হে কুন্তীপুত্র, এই যুদ্ধে নিহত হলে তুমি স্বর্গলাভ করবে আর জয়ী হলে রাজ্যসুখ ভোগ করবে। অতএব যুদ্ধের জন্য দৃঢ় সংকল্প হয়ে উত্থিত হও।"
(ভগবতগীতা, ২:৩৭)

এই স্বর্গলাভ করা যুদ্ধে নিহত ব্যক্তির পুরষ্কার সম্পর্কে মহাভারতে হাজার হাজার অপ্সরার কথা বলা হচ্ছে,

"যদি যুদ্ধে নিহত একজন ক্ষত্রিয় বীরের জন্য কেউ শোকগ্রস্ত না হন, তবে তিনি স্বর্গে গমন করবেন এবং স্বর্গের অধিবাসী হিসেবে মর্যাদা লাভ করবেন.........
শোন আমার কথা - এমনতর ব্যক্তির জন্য কী ধরণের সুখ প্রস্তুত রয়েছে তা আমি গণনা করেছি।

**শীর্ষস্থানীয় অপ্সরা - যাদের সংখ্যা হবে হাজার হাজার - দ্রুত বেগে ছুটে বেরিয়ে আসবে (যুদ্ধে নিহত ক্ষত্রিয় বীর আত্মাকে বরণ করতে) তাদের প্রভুর প্রতি ব্যাকুলভাবে লালায়িত হয়ে..."**

(মহাভারত/গ্রন্থ নং ১২: শান্তিপর্ব/খণ্ড ১/রাজধর্মানুশাসন পর্ব/অধ্যায় ৯৮;
অনুবাদ - কিশারি মোহন গাঙ্গুলি)
মূল ইংরেজি অনুবাদের উৎস - https://bit.ly/2H5E3ML

"A slain hero, if nobody grieves for him, goes to heaven and earns the respect of its denizens.........
Listen to me as I enumerate the felicity that is in store for such a person. Foremost of Apsaras, numbering by thousands, go out with great speed (for receiving the spirit of the slain hero) coveting him for their lord..."

(The Mahabharata/Book 12: Santi Parva/Part 1/Rajadharmanusasana Parva/SECTION XCVIII;
translated by Kisari Mohan Ganguli)
source - https://bit.ly/2H5E3ML

এমনকি দেবী ভাগবত গ্রন্থে আরও উল্লিখিত হয়েছে যে, তমগুণের অধিকারী পতিতা নারীদেরকে পরকালে অপ্সরা বানিয়ে দেওয়া হবে স্বর্গবাসীদের মনোরঞ্জনের জন্য।

"...যারা তমগুণসম্পন্ন, তারা সর্বনিকৃষ্ট হিসেবে স্বীকৃত এবং অজ্ঞাত পরিবারসমূহের অন্তর্গত। তারা অত্যন্ত অমার্জিত রুচিসম্পন্ন, প্রতারক, পরিবারের ধ্বংস সাধনকারী, স্বেচ্ছাচারী, কলহপ্রবণ এবং তাদের সমতুল্য দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তিত্ব আর নাই।

**এহেন নারীগণ এই পার্থিব জগতে পতিতা হয়ে ওঠে এবং স্বর্গে তারা অপ্সরার ভূমিকা পালন করে..."**

(দেবী ভাগবত ৯:১:৯৬-১৪৩/মূল ইংরেজি অনুবাদ - Swami Vijñanananda) মূল ইংরেজি অনুবাদের উৎস - https://bit.ly/2vEelbB

"...those that are sprung from Tamo Guna are recognised as worst and belonging to the unknown families. They are very scurrilous, cheats, ruining their families, fond of their own free ways, quarrelsome and no seconds are found equal to them.

**Such women become prostitutes in this world and Apsarâs in the Heavens...."**

(The S'rîmad Devî Bhâgawatam, Translated by Swami Vijñanananda, 9:1:96-143) source - https://bit.ly/2vEelbB

ইস্কনের প্রতিষ্ঠাতা বৈষ্ণব গুরু স্বামী প্রভুপাদ এই অপ্সরা সম্পর্কিত উপভোগের ব্যাপারে বলছেন,

"নিয়ামাবদ্ধ আত্মার জন্য স্বর্গীয় সুখ হল যৌন আনন্দ এবং এই আনন্দের উপভোগ ঘটে জননেন্দ্রিয়ের মাধ্যমে। নারী হল এই যৌন আনন্দের ক্ষেত্রে ভোগ্যবস্তু এবং ইন্দ্রিয়ের উপলব্ধি ও নারী - এই দুই-ই প্রজাপতি (ব্রহ্মা) কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত, যিনি ভগবানের জননেন্দ্রিয় সমূহের নিয়ন্ত্রণাধীন..."

(ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ কর্তৃক শ্রীমদ্ভাগবত ২:১০:২৬ এর সারমর্ম/ইংরেজি ভাষ্য হতে অনূদিত) source - http://vanisource.org/wiki/SB_2.10.26

"The heavenly pleasure for the conditioned soul is sexual pleasure, and this pleasure is tasted by the genitals. The woman is the object of sexual pleasure,** and both the sense perception of sexual pleasure and the woman are controlled by the Prajapati, who is under the control of the Lord’s genitals…”

(A.C. Bhaktivedanta Swami Prabhupada on Srimad Bhagavatam 2.10.26) source - http://vanisource.org/wiki/SB_2.10.26
.
.
এবার চলুন খ্রিস্টানদের বাইবেলের দিকে লক্ষ্য করি। বাইবেলের গসপেল অব ম্যাথিউ এর ১৯ অধ্যায়ের ২৯ নং শ্লোকে বলা হয়েছে,

“যে কেউ আমার জন্য গৃহ, পিতামাতা, ভ্রাতাভগ্নী, স্ত্রী, পুত্রকন্যা এবং স্থাবর সম্পত্তি ত্যাগ করেছে সে তার বহুগুণ ফিরে পাবে এবং শাশ্বত জীবনের অধিকারী হবে।”

[বাংলা বাইবেল (Bengali C.L. Bible), মথি (Matthew), ১৯:২৯]
source – https://bit.ly/2vLa3PD

ইংরেজি কিংস জেমস ভার্সনের অনুবাদটি হল,
“And every one that hath forsaken houses, or brethren, or sisters, or father, or mother, or wife, or children, or lands, for my name’s sake, shall receive an hundredfold, and shall inherit everlasting life.” [The KJV Bible, Matthew, 19:29]
source – https://bit.ly/2VneQq5

এখানে বলা হচ্ছে যে, পৃথিবীর জীবনে কেউ যা কিছু ত্যাগ করবে, পরকালে সে তার বহুগুণ পাবে। Bengali C.L. Bible এর অনুবাদে “বহুগুণ” অনুবাদ করা হয়েছে।
তবে কিংস জেমস ভার্সনে “hundredfold” অনুবাদ করা হয়েছে যার অর্থ হল “শতগুণবিশিষ্ট”।

এই রেফারেন্সে গৃহ, পিতামাতা ইত্যাদির সাথে সাথে স্ত্রীর কথাও বলা হয়েছে। অর্থাৎ বাইবেল অনুযায়ী পৃথিবীতে যে কয়জন স্ত্রী থাকবে, স্বর্গে তার চেয়ে বহুগুণ বা শতগুণ পরিমাণ বেশি স্ত্রী থাকার কথা বলা হচ্ছে।

খ্রিস্টান মিশনারিরা এবার বলে উঠবে, ‘না! না! না! এখানে আসলে বোঝানো হচ্ছে যে, এই পৃথিবীর চেয়ে আরও বহুগুণ বা শতগুণবিশিষ্ট উত্তম জীবন পরকালে স্বর্গে পাওয়া যাবে! এখানে অর্থটি রূপকার্থে, আক্ষরিক নয়।’

সত্যিই কি তাই? চলুন দেখি তারা এখানে কোথায় তথ্য গোপন করেছে!

এখানে গ্রীক ἑκατονταπλασίονα (hekatontaplasiona) শব্দের অনুবাদ করা হয়েছে “a hundredfold” [source - https://bit.ly/2WphA2o ] যার বাংলা অর্থ দাঁড়াবে “শতগুণবিশিষ্ট”।

খ্রিস্টানদেরই বাইবেল হাব (bible hub) ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে,

"hekatontaplasíōn (from 1540 /hekatón, "one hundred" and plasiōn, "-fold") – literally, a hundredfold ; also used symbolically in Scripture of totality..." source - https://biblehub.com/greek/1542.htm

এর বাংলা করলে দাঁড়ায়: "hekatontaplasíōn" (hekatón এর অর্থ "একশত" (one hundred) এবং plasiōn এর অর্থ "-fold") - আক্ষরিক অর্থে (literally) একশ-গুণ; এছাড়াও প্রতীকি অর্থে ধর্মগ্রন্থে সমগ্রতাকেও বুঝিয়েছে..."

অর্থাৎ গ্রীক ἑκατονταπλασίονα (hekatontaplasiona) শব্দের "একশ গুণ" অর্থটি আক্ষরিকভাবেও যেমন গ্রহণ করা যায়, তেমনি ভাবার্থে বা প্রতীকি অর্থেও গ্রহণ করা যায়।

"Christ's Words" ওয়েবসাইট যেখানে গ্রীক থেকে অনুবাদের সময় কী হারিয়ে গেছে (What Is Lost in Translation from Greek) - এমনতর শিরোনাম রয়েছে, সেখানে বলা হচ্ছে,

"hundredfold -- This Greek word means literally "hundred forms" but it works like our hundredfold..." source - https://christswords.com/content/mar-1030-he-shall-receive-hundredfold

অর্থাৎ গ্রীক ἑκατονταπλασίονα (hekatontaplasiona) শব্দের অনুবাদের ক্ষেত্রে যে hundredfold অনুবাদ করা হয়েছে, সেটি গ্রীক শব্দের ক্ষেত্রে আক্ষরিকভাবে (literally) একশত সংখ্যক বিষয় (hundred forms)-কে প্রকাশ করে।

এরপর লেখা হয়েছে "..but it works like our hundredfold..." যার থেকে বোঝা যায় যে, আক্ষরিক অর্থ প্রকাশ পাওয়া সত্ত্বেও একে খ্রিস্টান মিশনারি রূপক অর্থে ব্যবহার করে অর্থ গ্রহণ করেছে সত্য গোপন করার জন্য!!

অর্থাৎ, বাইবেলের উক্ত শ্লোক আক্ষরিক ও রূপক উভয় অর্থ প্রকাশ করতে সক্ষম। তাই যদি রূপক অর্থ প্রকাশের মাধ্যমে বলা হয় যে, পৃথিবীতে গৃহ, পিতামাতা, ভ্রাতা, ভগ্নী, স্ত্রী, পুত্রকন্যা এবং স্থাবর সম্পত্তি এর চেয়ে স্বর্গে আরও উন্নত গৃহ, পিতামাতা, ভ্রাতা, ভগ্নী, পুত্রকন্যা পাওয়া যাবে; তবে আক্ষরিক অর্থেও বলা যায় যে, পৃথিবীর প্রত্যেকের মত আরও একশ জন করে একই রকম আপনজন, একশগুণ অধিক সম্পত্তি এবং ১০০টা বেশি স্ত্রী পাওয়া যাবে।

তাহলে স্বর্গে ১০০ জন অধিক স্ত্রী মানে বিবাহিত স্ত্রী। আর ইসলামেও হুরেরা জান্নাতবাসীদের সাথে বিবাহিত সম্পর্কেই থাকবেন।

Ephrem the Syrian নামে একজন খ্রিস্টান ধর্মযাজক, স্তোত্র রচয়িতা এবং প্রাচীন খ্রিস্টান ধর্মগুরু তার রচিত "Hymns On Paradise" এর Strophy 7.18-তে বলছেন:

"The man who abstained,
with understanding, from wine,
will the vines of Paradise
rush out to meet, all the more joyfully,
as each one stretches out and proffers him
its clusters;
or if any has lived
a life of virginity,
him too they welcome into their bosom,
for the solitary such as he
has never lain in any bosom
nor upon any marriage bed."

[St. Ephrem The Syrian, “Hymns On Paradise”: Strophy 7.18] source - https://bit.ly/2lJkZeT

অর্থাৎ "Hymns On Paradise" এর Strophy 7.18-তে তিনি উল্লেখ করছেন যে, যারা এই দুনিয়ায় মদ পান করবে না, সন্ন্যাসের মত জীবন-যাপন করবে, তাদেরকে স্বর্গের মদ (vines of Paradise) প্রদান করা হবে; স্বর্গে তাদের সঙ্গীগণ তাদেরকে বুকে জড়িয়ে নেবে ("if any has lived/a life of virginity,/him too they welcome into their bosom")।

এছাড়াও Strophy 7.14-তে স্বর্গের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, সেখানে কোনো অভিসম্পাত বা কটুক্তি থাকবে না এবং সকলে আশীর্বাদ পুষ্ট হয়ে আনন্দ করবে, "At him who has uttered/no curse or abuse/does Paradise’s blessing/rejoice all the more...." [St. Ephrem The Syrian, “Hymns On Paradise”: Strophy 7.14] source - https://bit.ly/2lJkZeT

ঠিক এর পরের Strophy-তে (Strophy 7.15) স্বর্গের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলা হচ্ছে:

"The virgin who rejected
the marriage crown that fades
now has the radiant marriage chamber
that cherishes the children of light,
shining out because she rejected
the works of darkness-
To her who was alone
in a lonely house
the wedding feast now grants tranquility:
here angels rejoice,
prophets delight,
and apostles add splendor"

[St. Ephrem The Syrian, “Hymns On Paradise”: Strophy 7.15] source - https://bit.ly/2lJkZeT

এখানে বলা হচ্ছে যে, দুনিয়াতে যে কুমারী মেয়ে (virgin) বিবাহের মুকুট (marriage crown) ত্যাগ করেছিল, সে স্বর্গে দীপ্তিমান বিবাহের কক্ষ (radiant marriage chamber) লাভ করবে। সেখানে ফিরিশতারা উল্লাস করবে (angels rejoice), নবীরা আনন্দিত হবে (prophets delight), নবীদের সাহাবারা আড়ম্বর যোগ করবে
(apostles add splendor)।

অর্থাৎ এগুলো থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, বাইবেলেও “স্বর্গের হুর” জাতীয় কন্সেপ্ট বিদ্যমান! (প্রমাণিত)

প্রাচীন খ্রিস্টান যাজক, ধর্মগুরু, স্তোত্র-রচয়িতা এত কিছু লিখে গেলেন আর এই ভণ্ড খ্রিস্টান মিশনারিরা আজ বলছে যে, তাদের গ্রন্থে জান্নাতের হুর জাতীয় কোনো ধারণাই নাকি নেই!!
.
.
================================
- Ahmad Al-Ubaydullaah

Comments

Popular posts from this blog

মানহাজ ও মাযাহাব নিয়ে যত দ্বন্দ্বের জবাব....

[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...

কৃষ্ণ কি আল্লাহর নবী ছিল?

এই প্রশ্নটা আমাকেও করা হয়েছে সম্ভবত কয়েকবার। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরটা বড়ই জটিল। কারণ এর কোনো যথাযথ উত্তর আমাদের জানা নেই। যদি কৃষ্ণের গোপীদের সাথে লীলার কাজকে সত্য বলে...

ভগবতগীতার বর্ণভেদ নিয়ে ভক্তদের ভণ্ডামির জবাব

============================ চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ৷ তস্য কর্তারমপি মাং বিদ্ধ্যকর্তারমব্যয়ম্৷৷১৩ অর্থ:  "প্রকৃতির তিনটি গুণ এবং কর্ম অনুসারে আমি মনুষ্য সমাজে চারটি বর্ণ...