Skip to main content

সওম ও অটোফেজী


আমাদের শরীরের যেমন একটা পাকস্থলী আছে, যেখানে খাদ্য হজম হয়, ঠিক তেমনি আমাদের দেহের প্রতিটি সেল বা কোষের মধ্যেও একটা পাকস্থলী/পেট আছে। তার নাম লাইসোজোম।
.
মনে করেন, দেহের ভিতরে ঢুকে হাজার হাজার ব্যাকটেরিয়া আমাদের ডিফেন্সের হাতে মারা পড়লো। বা কোন ভাইরাস ঢুকেছিল, সে মারা পড়লো। বা কোন সেল মারা গেল, তার জীবন শেষ। বা মনে করেন, খাদ্য থেকে কোন Misfolded প্রোটিন অনুর অংশ দেহে বর্জ্য হিসেবে রয়ে গেছে। এগুলো যাবে কোথায়? এগুলো অন্ত্রের মাধ্যমে মল হবার কোন ওয়ে নাই।
.
এইসব বর্জ্য বা ডেড বডির সমাহার সব গিয়ে আমাদের জীবিত সেলগুলোর পেট বা লাইসোজোমের মধ্যে জমা হয়। এগুলো মূলত প্রোটিন জাতীয় পদার্থ, কিন্তু 'বর্জ্য প্রোটিন' বলতে পারেন।
.
এখন এই বর্জ্য পদার্থগুলো সব সেলের পেটের (লাইসোজোম) মধ্যে গিয়ে জমা হতে থাকে, সেলের অংশ হয়ে যায়, কিন্তু হজম হয়না। বছরের পর বছর জমতে জমতে এটা সেলটাকে অসুস্থ করে তুলে। মানুষ বুড়িয়ে যায়।
.
ব্রেন সেল, হার্ট সেল, লাংস সেল, কিডনী সেল, প্যানক্রিয়াস নরমাল মাসল সহ সব সেলেই এই প্রকৃয়া হতে থাকে। এবং এজন্য আমাদের সেলগুলো ধীরে ধীরে বিশাল ভুড়ির অধিকারী হয়, যদিও আমাদের বাহ্যিক কোন ভুড়ি নাও থাকে। কোষগুলো বুড়িয়ে যায়, সহজেই অসুস্থ হয়। আমরাও হই। অকারণ বার্ধক্যে জর্জরিত হই আমরা তারুণ্যেই।
.
এখন যখনই আপনি দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকবেন, মানে রোযা রাখবেন, তখন কি হবে জানেন? আপনার কোষগুলো কোন খাদ্য পাবেনা। কিন্তু সে খাদ্যের উৎসের জন্য ব্যাপক চাপে থাকবে। অতিরিক্ত চাপে পড়ে গিয়ে একসময় তার ভিতরে ইমার্জেন্সী ডিক্লেয়ার হবে। তখনই তার পেট ( বা লাইসোজোম ) এ থাকা বর্জ্য পদার্থকে সে হজম করা শুরু করবে।
.
ওই বর্জ্য পদার্থ হজম করে সে সবকিছু ভেঙ্গে এমাইনো এসিড ফরমেট বানিয়ে ফেলবে, এবং তা থেকে উৎপাদিত শক্তি দিয়ে সে চলবে। একই সাথে ওই এমাইনো এসিড দিয়ে সে নতুন ব্র্যান্ড নিউ কোষ ও উৎপন্ন করবে, কারণ এগুলো প্রোটিনেই বিল্ডিং ব্লক। এটা আস্তে আস্তে হবে। একদিনেই সব বর্জ্য হজম হবেনা। ধীরে ধীরে হবে, প্রতিদিন একটু একটু করে।
.
তারমানে এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়াররা যেমন প্রতিটা বর্জ্যকে রিসাইকেল করে আবার রিইউজ করতে চায়, পরিবেশ বাঁচানোর জন্য, ঠিক তেমনি কোষের ভিতরে থাকা লাইসোজোমও এই কাজটাই করে। বর্জ্যকে রিসাইকেল করে রিইউজ যেভাবে না করলে পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যায়, ঠিক তেমনি কোষের ভিতরে থাকা লাইসোজোম যদি তার বর্জ্যকে রিসাইকেল না করতে পারে, কোষটি দ্রূত বুড়িয়ে মারা যাবে। আর রিসাইকেল করতে পারলে, সে নিজে সুস্থ হবে, আর রিসাইকেল ম্যাটেরিয়াল হিসেবে আপনি পাবেন নতুন ব্র্যান্ড নিউ সেল।
.
কিন্তু ইচ্ছা করলেই আপনি এইভাবে কোষের বর্জ্য শোধন এবং রিসাইকেএল করতে পারবেন না। বরং আপনাকে দীর্ঘক্ষণ ( ১২ ঘন্টার অধিক ) না খেয়ে থাকতে হবে। এবং এরকম বার বার করতে হবে। তাহলে আস্তে আস্তে রিসাইকেল করে বর্জ্য গুলো শেষ হয়ে আপনার কোষগুলো আবার ব্র্যান্ড নিউ হয়ে যাবে।
.
আপনি হয়ে যাবেন সম্পূর্ণ তরুণ। আপনি হয়ে যাবেন জোয়ান। বাচ্চাদের মত ফীটনেস পাবেন। আপনার শরীরের প্রতিটি অঙ্গই আবার ব্র্যান্ড নিউ হয়ে যাবে। মাথা থেকে পা পর্যন্ত।
.
১৯৬০ সাল থেকেই অটোফেজী যে কোষগুলোতে হয়, মানুষ জানতো। কিন্তু কেন কিভাবে হয়? কি করলে হবে, আর কি করলে হবেনা _ এটা মানুষ জানতো না।
Dr. Yoshinori Ohsumi (জাপানিজ সাইন্টিস্ট) এ নিয়ে বহু আগে থেকে রিসার্চ করছিলেন। তিনি ইস্ট সেল নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বের করে ফেলেন সেই ১৫ টি জিনকে, যারা এই অটোফেজী প্রকৃয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। তিনি পুরো প্রকৃয়াটির ব্যবস্থাপনা বুঝে যান। এরপর হিউম্যান বডিতে এই রিসার্চ প্রয়োগ করে দেখেন, যে মানুষএরও অটোফেজী হয়, এবং সে এভাবে অটোফেজী থেকে বেনিফিটেড হতে পারে। উনার রিসার্চের জন্য ২০১৬ সালে উনি নোবেল প্রাইজ পান।
.
তো, উনার রিসার্চের ফলস্বরূপ যেটুকু প্রমাণিত হয়েছে সেটা হল:
.
ক. যদি মানুষ রোযা রাখে দীর্ঘক্ষণ, তাহলে তার শরীরের কোষগুলোর মধ্যে জমে থাকা বর্জ্য শোধন হবে, বা রিসাইকেল হবে। এবং ধীরে ধীরে দীর্ঘদিন অটোফেজী করতে থাকলে আপনার বডির প্রতিটা অর্গান যেন কমপ্লীট রিনিউয়াল হবে। আবার ব্র্যান্ড নিউ দেহ পাবেন। মানে আপনি বুড়া হবেন খুব আস্তে আস্তে। আপনার এজিং ধীরগতির হয়ে যাবে।
.
খ. আল ঝেইমার্স, পারকিনসনস এইসব মস্তিষ্কের রোগ থেকে মুক্তি পাবেন বা এট লিস্ট এর প্রকোপ কম হবে। কারণ আপনার মস্তিষ্কের কোষগুলোর বর্জ্য শোধন হচ্ছে । যেমন আলঝেইমার্স হবার কারণ হল ameloic-beta protein plaque মস্তিষ্কের নিউরণগুলোর মাঝখানে জমে নিউরনগুলোকে ডিসকানেক্ট করে দিচ্ছে। কাজেই রোগী কিছুই মনে রাখতে পারেনা।

অটোফেজী হলে মস্তিষ্কের প্রোটিন প্ল্যাক রিসাইকেল হয়ে যাবে, মস্তিষ্ক ক্লীন হয়ে যাবে। আপনি স্মৃতি শক্তি ফিরে পাবেন। অনুরূপভাবে পারকিনসন্সকেই সেইভ করবে অটোফেজী।

তার মানে অটোফেজী করে আপনি মস্তিষ্ককে আবার বাচ্চাদের মতন স্মৃতিশক্তিপ্রখর করে ফেলতে পারবেন? চিন্তা করেন।
.
গ. ডায়াবেটিস-২ রোগীদের ডায়াবেটিসের প্রকোপকে অটোফেজী কমিয়ে দেয়। প্যানক্রিয়াসের মধ্যে থাকা বিটা সেল অসুস্থ হয়ে গেলে ইনসুলিন বানাতে পারেনা ঠিকমতন, তখনই তো ডায়াবেটিস-২ হচ্ছে? রাইট?

এখন অটোফেজী যখন প্যানক্রিয়াস এর মধ্যে বিটা সেল এ হবে, তখন সে সুস্থ হয়ে ঠিকমতন ইনসুলিন বানাইতে পারে। খুব রিসেন্ট রিসার্চ। ২০১৭ তে পাবলিশড। বাহির থেকে ইনসুলিন দেবার দরকার কি? ঘরের মধ্যে থাকা প্যানক্রিয়াসকে সুস্থ করলেই হলো।
.
ঘ. আপনার ব্রেন, হার্ট, লিভার, কিডনী , লাংস সহ সমস্ত অর্গান কোষের অভ্যন্তরীন বিষমুক্ত হবে এবং কিছু কোষ রিজেনারেট হবে। কারণ অটোফেজী হয়ে যে প্রোটিনগুলো পাওয়া যায়, সেটা রিসাইকেল করে পুরান কোষগুলো আবার ব্র্যান্ড নিউ কোষ তৈরী করে।
.
এছাড়াও:
ঘ. ক্যান্সার কি অটোফেজী থামাতে পারে? এটা নিয়ে রিসার্চ ডিসপিউটেড। এখনও রিসার্চ হচ্ছে। কমেন্ট করার সময় আসেনি।
.
ঙ. অনেক সাইন্টিস্ট মডার্ন সিভিলাইজেশনের যত কুখ্যাত রোগ আছে, সবকিছুর কমন সমাধান হিসেবে এই অটোফেজীকে সন্দেহ করছেন। সম্ভবত: আমরা বেশী খেয়ে খেয়ে এইসব রোগ ক্রিয়েট করছি। এখন একটাই সমাধান , অটোফেজী করে সমাধান করা।
.
■ অটোফেজী করার উপায় কী?
.
বিজ্ঞানীরা যেটা বলেছেন সেটা হল:
.
১. নরমাল ফাস্টিং, বা রোযা
২. ইন্টামিটেন্ট ফাস্টিং , বা একদিন পরপর রোযা
এই দুটো করলেই হবে।
.
এখন পশ্চিমা বিশ্বে মানুষ রোযা রাখে, খ্রিস্টান তরীকায়। মানে রোযায় তারা পানি খায়, কিন্তু সলিড খায় না। মুসলিমদের রোযাটা একটু হার্ড। তবে ওরা সেটা জানেনা।
.
এজন্য অটোফেজী রিসার্চে যখনই ফাস্টিং এর কথা বলা হচ্ছে, তখন ' আপনি ইচ্ছে করলে পানি খেতে পারেন ' , এটা ধরে নেয়া হচ্ছে। পানি খান বা না খান, অটোফেজী হবেই। পানি খেতেই হবে এমন কথা কোন পাবলিকেশনে বা আর্টিকেলে আমি খুঁজেই পেলাম না। বরং পানি খেতে পারেন, এ কথা উল্লেখিত।

দুনিয়ায় মানুষ যে পানি না খেয়ে কমপ্লীট ফাস্টিং করে, তার কি হবে? এটা আসলে এখনও সেভাবে রিসার্চ হয়নি। আমি খুজে পেলাম না।
.
পানি না খেয়ে ফাস্টিং তারা চিন্তাই করেনি, সেজন্য ইনিশিয়াল রিসার্চ সেটা নিয়ে হয়নি। তবে হওয়া শুরু হয়েছে। ২০১৮ সালে পাবলিশড একটা পেপার পেলাম, যেখানে পানি না খেয়ে মুসলিম তরীকায় ফাস্টিং করলে কি হয়, ব্রেইন সেল এর উপর তার এফেক্ট নিয়ে তারা গবেষণা করছে। এগুলো প্রিলিমিনারী রিসার্চ, কমেন্ট করার সময় আসেনি।
.
পশ্চিমা ডাক্তার রা চিন্তাই করতে পারেন না, যে মানুষ টানা ৩০ দিন পানি না খেয়ে রোযা রাখতে পারে। তাই এ নিয়ে তারা রিসার্চ করেনি। তারা যেটা সহজ, তারা করতে পারবে, সেটা নিয়ে রিসার্চ করতেছে। এজন্য তারা ৩-৪-৭ দিন রোযা বা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এর বেনিফিটগুলো বলতেছে।
.
এটা মুসলিম দেশগুলোর দায়িত্ব , যে টানা ৩০ দিন বা ইভেন ১০-১৫ দিন রোযা রাখলে অটোফেজী কোন পর্যায়ে পৌছায় সেটা বের করা। তবে মুসলিম দেশের ইউনিভার্সিটি গুলো তে ভাল ইন্সট্রূমেন্ট নেই, রিসার্চ নিয়ে তারা চিন্তিত নয়, কাজেই সেটা হয়তো পশ্চিমারাই একদিন করবে।
.
তবে কমন সেন্স হল এটা, যে অটোফেজী প্রভোকড হয়, দীর্ঘক্ষণ ক্ষুধার জ্বালায় থাকলে যখন দেহের সব কোষগুলো স্টারভেশনে চলে যায়, তখন। ওই সময়ে মস্তিষ্ক বার্তা পাঠায়: বাবারা, আমার কাছে কোন ফুড নাই, তুমার পেটে থাকা মাটির ব্যাংক ভাঙ্গো, ভেঙ্গে কিছু পারলে করো। কোষগুলো তখন বাধ্য হয়ে নিজের লাইসোজোমে সঞ্চিত বিষাক্ত বর্জ্য গুলোকে ভেঙ্গে এনার্জি উৎপন্ন করে এবং এগুলো ব্যবহার করে নতুন সেল গঠন করে, যদি দরকার হয়।
.
তাহলে দেহকোষগুলো যত দ্রূত স্টারভেশনে যাবে, তত দ্রূত অটোফেজী হবে। এখন কোষগুলো পানি যদি না পায়, তাহলে তো দ্রূত স্টারভেশন হবে, রাইট? । মানে যদি তৃষ্ঞার জ্বালাও ক্ষুধার সাথে যুক্ত হয়, তাহলে কিন্তু অটোফেজী বেশী রেইটে হওয়ার কথা, বেশী তাড়াতাড়ি প্রভোকড হবার কথা, তাইনা?
.
কাজেই তৃষ্ণাসমেত রোযায় অটোফেজী হবার সম্ভাবনা আসলে বেশী, ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতের রিসার্চ প্রমাণ হবে।
.
আসলে পানিকে একটা আলাদা ভ্যারিয়েবল হিসেবে বিবেচনা করে এর সাপেক্ষে অটোফেজীর সেনসিটিভিটি চেক করতে হবে। কোন না কোন পেপার অতি দ্রূত দেখবেন বের হয়ে যাবে। মেডিকেল জার্নাল গুলো চেক করতে থাকেন।
.
এক ইন্টার পাশ নাস্তিক দেখলাম লিখেছে, যে অটোফেজী হইতে হইলে নাকি পানি বেশী কইরা খাইতে হবে। কি বলবো বলার কিছু নাই। এরা না বুঝে সাইন্স, না বুঝে রিসার্চ মেথডলজী, না বুঝে কোনটা প্রমানিত, কোনটা স্পেকুলেশন। এরা না বুঝে রিসার্চের ফাক ফোকর। এরা না বুঝে রিসার্চের ল্যাঙগুয়েজ। এদের সাথে কি তর্ক করবো?
কেউ ট্যাগ করবেন না এদের।
.
এখন কথা হল ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এই যদি এত উপকার হয়, তাহলে কনটিনিউয়াস ফাস্টিং এ কি উপকার হবে?
.
যদিও রিসার্চ হয়নি, কিন্তু সহজেই অনুমান করা যায়। যদি আপনি কনটিনিউয়াস ৩০ দিন ফাস্টিং করতে থাকেন, তাহলে আপনার দেহের কোষগুলো শেষদিকে খুব স্টার্ভড হয়ে যাবে। মানে তখন খুব বেশী করে অটোফেজী হবে। সুতরাং তাড়াতাড়ি আপনার কোষগুলো সুস্থ হয়ে যাবে। তার মানে শেষ দশ দিনের রোযায় কিন্তু আসল অটোফেজী হচ্ছে। চরম। ভাঙ্গবেন না সাবধান।
.
তার মানে আসলে বনু ইসরাইলকে আল্লাহ হালকা অটোফেজী করাইছেন। মনে করেন ২০% অপটিমাইজেশন অব হেলথ দিছেন।
.
কিন্তু আমাদেকে ১০০% অপটিমাইজেশন অব হেলথ দিছেন।
কারণ কোষগুলোতে বাৎসরিক এত বেশী পরিমাণ বর্জ্য জমে, যে এটা দূর করতে অনেক বেশী পরিমান অটোফেজী দরকার। মাত্র ৩-৪-৫ টা রোযায় হবেনা। মিনিমাম ৩০ টা লাগবে হয়তো। আল্লাহ ভাল জানেন।
.
আরো বেশী রোযা রাখলে আরো বেশী হবে । একদম ইভেন হয়তো আপনি বুড়া থেকে পুরা জোয়ান হয়ে যাবেন। সব রোগ নাই হয়ে যাবে। কাচ্চি-টিকা-শিক-হালিমসহ যা যা খাইছেন, সব মাত্র ২-৩ বছর সমানে রোযা রাখলে সব ঠিক হয়ে যাবে হয়তো।
.
আরেকটা ব্যাপার: নরমাল কম খেয়ে মেদ-ভুড়ি কমানো আর অটোফেজী কিন্তু এক জিনিস না। কমপ্লীট ভিন্ন।
.
মনে করেন, আপনি দিনে তিন-চার-পাঁচ বেলায় মাত্র ১৫০০ ক্যালরী খাচ্ছেন, মেদ ভুড়ি কমিয়ে চর্বি ঝরিয়ে ফেললেন। আলহামদুলিল্লাহ। আপনার কোলেস্টেরল এবং ট্রাই গ্লিসারিড ঝরবে, আপনি সিক্সপ্যাক হয়ে গেলেন। কিন্তু আপনার কিন্তু অটোফেজী হয়নাই। আপনার কোষগুলো কিন্তু স্টিল হালকা অসুস্থ, এবং ভিতরে বর্জ্য পদার্থ নিয়েই টিকে আছে।
.
আপনি যদি ওই ১৫০০ ক্যালরী ফুড ইফতারী আর সেহেরীতে খান, মাঝখানে ১৫ ঘন্টা রোযা রাখেন, তাহলে আপনার মেদ ভুড়িও কমবে, আবার কোষের ভিতরে অটোফেজী হয়ে 'মিসফোল্ডেড প্রোটিন-মৃত কোষ-ব্যাকটেরিয়া ডেড বডি' - এইসব বর্জ্য দূর হবে, প্রতিটা অর্গান সুস্থ হবে। তাহলে পার্থক্য বুঝছেন তো?
.
কম খেয়ে ডায়েট করা আর রোযা রেখে ডায়েট করা , দুইটা আলাদা জিনিস।
কলাভবনের নাস্তিকরা কিন্তু এসব বুঝেনা। ওদের বুঝাতে যাবেন না। ওদের দিলের মধ্যে সমস্যা।
.
■ কিছু তথ্য:
.
আমিষ বেশী খেলে বডিতে কোষের ভিতরে বর্জ্য বেশী জমবে। মিসফোল্ডেড প্রোটিন থেকে। কাজেই তখন আপনি বুড়িয়ে যাবেন, তাড়াতাড়ি। কিন্তু তওবাহ করে অটোফেজী করে, মানে রোযা রেখে আবার তরুণ হতে পারবেন। দিনে গড়ে ১৫০ গ্রামের বেশী মীট খাবেন না। দরকার নেই।
.
তার মানে যারা আমিষ বেশী খায় , তাদের রোযাটা বড় হওয়া উচিত, অটোফেজী বেশী দরকার তো, তাইনা?
.
শীত প্রধান অঞ্চলে, মানে পৃথিবীর উত্তরে, মানুষকে বেশী আমিষ খেতেই হয়, কারণ শরীর গরম রাখতে হয়। শীত তো। কাজেই পৃথিবীর উত্তরাঞ্চলে , নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড---, জার্মানী, কানাডা, রাশার উত্তরাঞ্জল এসব জায়গায় মানুষকে বেশী অটোফেজী করাতে হবে। কারণ তারা আমিষ বেশীই খাবে এমনিতেই । কাজেই এসব জায়গায় ২২ ঘন্টা রোযা হলে মানুষের জন্য ভাল হবে, চ্রম অটোফেজী করবে।
.
আর বিষুবরেখায় যারা থাকবে, আরবভূমি থেকে বাংলা পর্যন্ত , এখানে মানুষ এত আমিষ খাবার প্রয়োজন ফীল করবেনা, বেশী অটোফেজী দরকার নেই, নরমাল ১২-১৫ ঘন্টা রোযাই যথেষ্ঠ।
.
তাহলে চিন্তা করেন, আল্লাহ কেন ২২ ঘন্টা রোযা দিছেন। জাস্ট অনুমান করলাম, আল্লাহ ভাল জানেন।
.

এই অটোফেজী নিয়ে ধার্মিক মানুষের এক্সাইটেড হবার যথেষ্ঠ কারণ আছে। কারণ এটা কমপক্ষে ৩ হাজার বছর আগে থেকেই, ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের আমলএর আগ থেকেই চলে আসছে। ইহুদীরা রাখতো, খ্রিস্টানরা রাখতো, মুহাম্মদ(স) তো ৩০ টা রাখতে বলছেন।[তার আগের উম্মাতেরাও সম্ভবত রাখতো, আল্লাহ ভাল জানেন]
.
কেন কিছু মানুষ নবুওয়াত দাবী করবেন, এবং তাঁরা মানুষকে রোযা রাখতে বলবেন? দুনিয়ার সব ডাক্তার রাই ২০০০ সাল পর্যন্ত রোযাকে মানবস্বাস্থ্যের জন্য খারাপ বলে আসছে। চাইনিজরা তো আইন করেই বন্ধ করতে চায়।
.
অথচ সেদিন এক ইউ এস ডাক্তারের ভিডিও দেখলাম, তিনি বললেন, যে এতদিন ভুল পরামর্শ দিবার জন্য দু:খিত, আসলে রোযা রাখা স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভাল , কাউন্টার প্রডাক্টিভ। কেউ জানতোনা, এতদিন রাইট?
.
তাহলে ইব্রাহীম ( আ) থেকে ইউসুফ(আ)-মূসা(আ)-ঈসা(আ)-মুহাম্মদ (স) কেউই বানিয়ে বানিয়ে মানুষের উপর রোযা কে আপতিত করেন নি। বরং ওয়াহী এসেছিল, উপর থেকে।
.
আচ্ছা, মুহাম্মদ(স) কেন মানুষকে ৩০ টা রোযা কনটিনিউয়াস রাখতে বলবে? এমনি এমনি কেন বলবে? মানুষকে এটা মানানো কষ্ট না তার জন্য? যুদ্ধ বিগ্রহের সময় রোযা নিয়ে একটু কষ্ট হয়না? পুরো সমাজ এর উপর ডিপেন্ডেন্ট হয়ে যায়না? কেন বলবে? একটাই ব্যাখ্যা, তার উপর ওয়াহী আসছিল।
.

এজন্যই কলাবিজ্ঞানীদের এত ছটফট লাগে। ছটফট ছটফট। রিসার্চ তো কিছু বুঝেনা, এটা ওটা ( যেমন এক্ষেত্রে পানি ) দিয়ে ভুং ভাঙ দিতে চায়।
.

■ পুনশ্চ:
.
◑ এখানে শুধুই শারীরিক ব্যাপারটা উল্লেখ করা হয়েছে। আসলে তাকওয়া অর্জনই সাওম বা রোযার মূল উদ্দেশ্য এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই মূল উদ্দেশ্য [দেখুনঃ সুরা বাকারাহ ১৮৩ নং আয়াত]। তবে আল্লাহ আমাদের জন্য বোনাস দিয়েছেন আরকি। আল্লাহ যখন আমাদের কোন বাহ্যিক কষ্টে আপতিত করেন, তার মধ্যে ইন্টারনাল কল্যান রেখে দেন। যদিও আমরা দেখতে পাই না।
.
◑ অতিরিক্ত অটোফেজী খারাপ, Scientist রা বলছেন। এবং মুহাম্মদ(স) ও অতিরিক্ত রোযা রাখতে মানা করছেন। সারা বছর রোযা রাখতে মানা করছেন। সবোর্চ্চ অর্ধ বছর, ইন এ ইয়ার, ইন্টামিটেন্ট করে, অনুমতি আছে।
অথবা মাসে তিনটা। অথবা সপ্তাহে দুইটা। অথবা একবারে অনেকগুলো ( হয়তো ১০-১৫ টা ) এরপর সমপরিমান ব্রেক, এরপর আবার। অনেকভাবে করা যায়।
.
এবার নিশ্চয়ই বুঝছেন, কিভাবে মুসলিমরা বুড়া বয়সে জোয়ান থাকে? ৮০ বছরের বুড়ারা কিভাবে ৩০ বছরের বাইজেন্টাইন-পারসিয়ানদের ধুয়ে দেয়?
.
মাশাআল্লাহ।
=====================

লেখকঃ M. Rezaul Karim Bhuyan

লেখাটির উৎস - সত্যকথন

.

প্রয়োজনীয় লিঙ্কসমূহঃ

১। অটোফেজী কিভাবে ডায়াবেটিসকে সারিয়ে দিতে পারে।
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC5479440/

২। ডা. এরিক এর বক্তব্য, ইউএস।
https://www.youtube.com/watch?v=10jNZleNH9w

৩। টেড এক্স এর ভিডিও, অটোফেজী নিয়ে।
https://www.youtube.com/watch?v=dVArDzYynYc&t=254s

৪। আলঝেইমার এর উপর অটোফেজীর প্রভাব। https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC5797541/

৫। https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC5039008/

৬। নোবেল প্রাইজ প্রাপ্তি
https://www.youtube.com/watch?v=HJAvGWiQZRU

৭। https://response-to-anti-islam.com/show/নামাজ-রোজার-কি-আসলেই-কোন-পার্থিব-উপকারিতা-আছে--/128

Comments

Popular posts from this blog

মানহাজ ও মাযাহাব নিয়ে যত দ্বন্দ্বের জবাব....

[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...

কৃষ্ণ কি আল্লাহর নবী ছিল?

এই প্রশ্নটা আমাকেও করা হয়েছে সম্ভবত কয়েকবার। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরটা বড়ই জটিল। কারণ এর কোনো যথাযথ উত্তর আমাদের জানা নেই। যদি কৃষ্ণের গোপীদের সাথে লীলার কাজকে সত্য বলে...

ভগবতগীতার বর্ণভেদ নিয়ে ভক্তদের ভণ্ডামির জবাব

============================ চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ৷ তস্য কর্তারমপি মাং বিদ্ধ্যকর্তারমব্যয়ম্৷৷১৩ অর্থ:  "প্রকৃতির তিনটি গুণ এবং কর্ম অনুসারে আমি মনুষ্য সমাজে চারটি বর্ণ...