ইসলাম কেন গান-বাজনা-সঙ্গীতকে অনুমোদিত করে নি?
وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَشْتَرِى لَهْوَ ٱلْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًاۚ أُو۟لَٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ
"কতক মানুষ আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার উদ্দেশ্যে অজ্ঞতাবশতঃ অবান্তর কথাবার্তা (গান-বাজনা) ক্রয় করে আর আল্লাহর পথকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। ওদের জন্যই আছে অবমাননাকর শাস্তি।" (আল-কোরআন, ৩১:৬)
অনেকেই এটা মানতে পারে না - কেন ইসলাম গান-বাজনা-সঙ্গীতকে হারাম করেছে! অনেকেই মনে করে যে, সঙ্গীত একটা সাধনা, এটা খারাপ কেন হবে? অনেকে এটাও ভাবে যে, গান মনকে উচ্ছসিত করে, প্রফুল্ল রাখে; গান কেন খারাপ হতে যাবে?
বিশ্বাস করুন ভাই, আমি নিজেই সঙ্গীতে বহু দিন ধরে ডুবে ছিলাম। আল্লাহর রহমতে ইসলামের সত্য বোঝার পর তা থেকে বেরিয়ে এসে বুঝেছি যে, আপনার আমার ভাল বা খারাপ লাগার ওপর ইসলামের হুকুম নয়। বরং হক ও বাতিলের বিচারে ইসলাম সেই হক এর ওপর প্রতিষ্ঠিত; সেখানে অনেক কিছু আপনার আমার ভাল লাগতেও পারে আবার নাও লাগতে পারে!
যখনই আপনি সঙ্গীতে নিমজ্জিত হতে থাকবেন, ইবাদত আপনার কাছে আপনার মনের মধ্যে নিম্নতর কাজ ও একপর্যায়ে তুচ্ছ কাজ বলে মনে হতে শুরু করবে। আপনার চিন্তা আল্লাহর প্রতি, ইবাদতের প্রতি সঠিকভাবে নিবিষ্ট হবে না, বরং ইবাদত করতে হয়, তাই করি জোর করে - এমনটা মনে হতে শুরু করবে!
সঙ্গীতে যতই নিমজ্জিত হবেন, মনের মধ্যে দুনিয়ার প্রতি আকর্ষণ বাড়তে থাকবে, অন্তর সঙ্গীতের মত আকর্ষণীয় বিষয়ে অভ্যস্ত হওয়ায় বার বার সেই আকর্ষণীয় বিষয়টি উপভোগের জন্য অন্তরে এক ধরণের সুপ্ত আসক্তি কাজ করবে যার ফলে কুরআন এর আয়াতের প্রতি গভীরভাবে মনোনিবেশ করা আপনার পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে উঠতে থাকবে!
গান বাজনার একটা অংশতে এমন গানও আপনি পাবেন যেখানে প্রেম, যৌনতা, ব্যভিচার ইত্যাদির বিবরণ ও প্রশংসা করা হয়েছে (বহু গানে) যা আপনার সামনে ব্যভিচারকে সামান্য বিষয় হিসেবে তুলে ধরতে থাকবে, অশ্লীলতাকে, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশাকে সাধারণ বলে ভাবাতে শুরু করবে এবং হারাম সম্পর্কের প্রতি সম্মান জন্মাতে উস্কানি দেবে!
সঙ্গীতের বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার যার মাধুর্য অন্তরে তার প্রতি এক প্রকার সুপ্ত নির্ভরশীলতা ও আসক্তি তৈরি করবে যা আপনি সহজে ধরতে পারবেন না, কিন্তু এটা তখনই বিরূপভাবে প্রতিক্রিয়া করা শুরু করবে যখন আপনি সালাতে দাঁড়াবেন আর আপনার চিন্তা সালাতের পরিবর্তে সেই বাদ্যযন্ত্রের তাল আর ঝঙ্কারের ওপর নিবিষ্ট থাকবে যা সালাতে পূর্ণতা আনার পক্ষে এক বড় বাধা!
এমনকি আপনি পৃথিবীতে বিভিন্ন সঙ্গীত পাবেন যা শির্ক ও কুফরের জয়গান গেয়েছে। হিন্দু ভক্তিগীতি, শ্যামা সঙ্গীত, খ্রিস্টানদের চার্চের সঙ্গীত, স্যাটানিক মতবাদের ইলুমিনাতি, ফ্রি মেসনারি ইত্যাদির প্রভাবে থাকা বিভিন্ন রক সঙ্গীত এরকম আরও বহু নমুনা খুঁজলে পাওয়া যাবে।
তাই মুসলিম ভাই-বোনদের বলব যে, ইসলামের বিধানগুলো ভাল না লাগলেও মেনে নেওয়ার চেষ্টা করুন। কেননা আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন কীসে আপনার জন্য কল্যাণ আর কীসে অকল্যাণ! পথে চলতে গিয়ে ছোট শিশুর দিকে যেমন তার পিতামাতা তাদের আঙ্গুল বাড়িয়ে দেন, আল্লাহ তাআলাও আমাদের দিকে তাঁর হেদায়েতের পথের নির্দেশনা তুলে ধরেছেন। একজন শিশু যেমন সব সময় ভাল মন্দ বুঝে উঠতে পারে না, তেমনি নাফসের প্ররোচনায় আবদ্ধ আমাদের মত এই ক্ষুদ্র সৃষ্টির পক্ষেও সব সময় সম্ভব নয় আল্লাহ তাআলার হুকুমের পিছনে হিকমাহ কতটুকু তা সঠিকভাবে বুঝে ওঠা!
আল্লাহ তাআলা আমাদের অন্তর থেকে সকল প্রকার সন্দেহ দূর করে দিন এবং হেদায়েতের পথে অটল থাকার তৌফিক দান করুন! আমিন।
"....তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না।" (আল-কোরআন, ২:২১৬)
_________________________
#Ahmad_Ali
Comments
Post a Comment