আল্লাহ তাআলা সূরা ওয়াকিয়াতে শেষের দিকে কয়েকটি আয়াতে তাঁর অস্তিত্বের কিছু নিদর্শন হিসেবে মানবজাতির উদ্দেশ্যে কিছু প্রশ্ন রেখে দিয়েছেন। এমনই একটি আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন,
نَحْنُ خَلَقْنَٰكُمْ فَلَوْلَا تُصَدِّقُونَ
"আমিই সৃষ্টি করেছি তোমাদেরকে। অতঃপর কেন তোমরা তা সত্য বলে বিশ্বাস করো না?"
(আল-কোরআন, ৫৬:৫৭)
এরপর আল্লাহ তাআলা নিদর্শন হিসেবে কিছু সৃষ্টির কথা বললেন। চলুন দেখি সেটি কী!
أَفَرَءَيْتُم مَّا تُمْنُونَ
ءَأَنتُمْ تَخْلُقُونَهُۥٓ أَمْ نَحْنُ ٱلْخَٰلِقُونَ
"তোমরা কি ভেবে দেখেছ, তোমাদের বীর্যপাত সম্পর্কে। তোমরা তাকে সৃষ্টি করো, না আমি সৃষ্টি করি?" (আল-কোরআন, ৫৬:৫৮-৫৯)
দেখুন, মনুষ্য বীর্য আমরা আমাদের শরীরের মধ্যে তৈরি করতে সক্ষম নই, এটা নিজে থেকে তৈরি হয় আল্লাহর হুকুমে। আমরা বড় জোর মেডিসিন দিতে পারি, ডিএনএ গঠনের ওপর কারুকাজ করতে পারি, বাইরে থেকে কিছু শরীরে প্রবেশ করাতে পারি, কিন্তু বীর্য আমরা তৈরি করতে পারি না।
আল্লাহ তাআলা এই সূরায় আরও বলছেন,
أَفَرَءَيْتُم مَّا تَحْرُثُونَ
ءَأَنتُمْ تَزْرَعُونَهُۥٓ أَمْ نَحْنُ ٱلزَّٰرِعُونَ
"তোমরা যে বীজ বপন করো, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা কি ওকে অংকুরিত করো, না আমি অংকুরিত করি?" (আল-কোরআন, ৫৬:৬৩-৬৪)
খেয়াল করুন, এবার কিন্তু আল্লাহ তাআলা বলেন নি যে, তিনি বীজ তৈরি করেন, বরং তিনি বলেছেন যে, তিনি বীজ অংকুরিত করেন। এর কারণ কী? কারণ আজ মানুষ কৃত্রিম বীজ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে যাকে বলে synthetic seeds বা, synseeds; আর আল্লাহ তাআলা এখানে বলছেন যে, তিনি যদি হুকুম না দেন, তবে যত প্রক্রিয়াই মানুষ করুক না কেন, সেই বীজ অংকুরিত করতে পারবে না। এমনকি আল্লাহ তাআলা আরও বলছেন,
لَوْ نَشَآءُ لَجَعَلْنَٰهُ حُطَٰمًا فَظَلْتُمْ تَفَكَّهُونَ
"আমি ইচ্ছা করলে একে খড়-কুটায় পরিণত করতে পারি, তখন হতবুদ্ধি হয়ে পড়বে তোমরা।" (আল-কোরআন, ৫৬:৬৫)
أَفَرَءَيْتُمُ ٱلنَّارَ ٱلَّتِى تُورُونَ
ءَأَنتُمْ أَنشَأْتُمْ شَجَرَتَهَآ أَمْ نَحْنُ ٱلْمُنشِـُٔونَ
"তোমরা যে অগ্নি প্রজ্জ্বলিত কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা কি এর বৃক্ষ সৃষ্টি করেছ, না আমি সৃষ্টি করেছি?" (আল-কোরআন, ৫৬:৭১-৭২)
কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় যেটি আমার মনে হয়েছে সেটি হল এই আয়াতগুলি।
أَفَرَءَيْتُمُ ٱلْمَآءَ ٱلَّذِى تَشْرَبُونَ
ءَأَنتُمْ أَنزَلْتُمُوهُ مِنَ ٱلْمُزْنِ أَمْ نَحْنُ ٱلْمُنزِلُونَ
"তোমরা যে পানি পান করো, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা তা মেঘ থেকে নামিয়ে আন, না আমি বর্ষণ করি?" (আল-কোরআন, ৫৬:৬৮-৬৯)
ভালভাবে খেয়াল করুন, আল্লাহ তাআলা কিন্তু এখানে বলছেন না যে, তিনি মেঘ সৃষ্টি করেন। কিন্তু কোরআন এর অন্যান্য আয়াতে আপনি পাবেন যে, আল্লাহ তাআলা মেঘমালাকে সঞ্চালিত করেন, সেই মেঘকে পুঞ্জীভূত করেন ইত্যাদি নানারকম প্রক্রিয়া (যেমন সূরা নূর এর ৪৩ নং আয়াতটি দেখুন)। অথচ আল্লাহ তাআলা এখানে কেবল শুধু এটুকু কেন বলছেন যে, তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন, আমরা তা করতে সক্ষম নই। এর কারণ হল, আপনি জানেন কিনা জানি না, কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ কৃত্রিম মেঘ তৈরি করতেও সক্ষম হয়েছে যার ফলে অনেক রকম ক্ষয়ক্ষতি আজ সাধিত হচ্ছে। আমি চারটি ভিডিও এর লিঙ্ক দিচ্ছি, এখান থেকে ইচ্ছা হলে এই বিষয়ে বিস্তারিত দেখে নিন -
1) https://youtu.be/uJLppLLFOD4
2) https://youtu.be/GUBVs2jQmH0
3) https://youtu.be/S3xNa9mL6O8
4) https://youtu.be/pdTsuCJonxU
কিন্তু খেয়াল করুন, আল্লাহ তাআলা জানতেন যে, মানুষ এরকম অনর্থও সৃষ্টি করবে এই দুনিয়াতে। তাই তিনি মানবজাতির উদ্দেশ্যে ঘোষণা করছেন যে, যদি আল্লাহ তাআলার হুকুম না হয়, তবে সেই মেঘ থেকে বৃষ্টি পৃথিবীতে নেমে আসবে না। অর্থাৎ বৃষ্টি পৃথিবীতে নেমে আসার কারণ আপনি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলই বলুন, বা স্পেস-টাইম এর distortion-ই বলুন, অথবা চার্জ পার্টিকেল এর interaction আর entropy দিয়েই তাকে প্রকাশ করুন না কেন, মূল বিষয়টি হল, যে প্রাকৃতিক নিয়মের কারণে বৃষ্টি পৃথিবীতে নেমে আসবে, সেই নিয়মই হল আল্লাহর হুকুম, আর আল্লাহ বলছেন যে, যদি 'তোমরা সেই পানিকে মেঘ হতে নামিয়ে আনো, না আমি বর্ষণ করি?' অর্থাৎ এখানে মানুষের কোনো ক্ষমতাই নেই বৃষ্টিকে নামিয়ে আনার। আরও আশ্চর্যের বিষয় এর পরের আয়াতটিতে যেখানে মহান আল্লাহ ঘোষণা করছেন,
لَوْ نَشَآءُ جَعَلْنَٰهُ أُجَاجًا فَلَوْلَا تَشْكُرُونَ
"আমি ইচ্ছা করলে ওটা (এই পানিকে) লবণাক্ত করে দিতে পারি। তবুও কি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না?" (আল-কোরআন, ৫৬:৭০)
সুবহানআল্লাহ। দেখুন আল্লাহ তাআলা সবকিছুই জানতেন যে, মানুষ এই কৃত্রিম মেঘ পর্যন্তও বানিয়ে ফেলবে। আর তিনি তাই এরশাদ করছেন যে, তিনি ইচ্ছা করলে এই মেঘের মধ্যেও প্রকৃতির উপাদানের এমন সংমিশ্রণ করে দিতে পারেন, যাতে এই মেঘের পানির স্বাদ নোনতা বা লবণাক্ত হয়ে যায়!! তবুও মানুষ এতই অকৃতজ্ঞ যে, এত নিদর্শন থাকা সত্ত্বেও তারা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, তাঁর শুকরিয়া আদায় করে না; বরং ক্রমাগত নিজের ক্ষুদ্র ক্ষমতায় তারা হয়ে উঠছে অহংকারী এবং সত্য প্রত্যাখানকারী!! মহান আল্লাহ তাই ঘোষণা করছেন,
فَبِأَىِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ
"অতএব (হে জ্বিন ও মানুষ!) তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে অস্বীকার করবে?" (আল-কোরআন, ৫৫:১৬)
===============
#আহমাদ_আলি
Comments
Post a Comment