লেখক: Mainuddin Ahmad
.
কিছু ভাইয়েরা “মাযহাবী”দের “সালাফী” বলতে রাজি নন; তারা শুধু মাত্র তাদেরকেই “সালাফী” বলেন, যারা নির্দিষ্ট কোনো ফিক্বহী মাযহাবের অনুসারী নন। এই “চিন্তাধারা”টি ‘সঠিক’ নাকি ‘ভুল’ তা কিছু উচ্চপর্যায়ের আলিমগনের বক্তব্য ও কাজের আলোকে এখানে নির্নয়ের সামান্য চেষ্টা করবো।
.
১. শাইখ ইবন বায রহিমাহুল্লাহ’কে প্রশ্ন করা হয়ঃ “শুধুমাত্র হাম্বলীরাই সালাফী- এটা কি সঠিক? সালাফিয়্যাতের বাস্তবতা কী? এটা কি বাড়াবাড়ি ও কঠোরতার নিদর্শন যেমনটা অনেকে প্রচলন ঘটিয়েছে?”
.
জবাবে শাইখ ইবন বায বলেছেনঃ “এটা সঠিক কথা নয়। বরং তারা হচ্ছেন সালাফ আল-সালিহ – সাহাবীগন(রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) এবং যারা তাদের পথ অনুসরণ করেছেন তাবিয়ীগন, তাবি-তাবিয়ীগন, হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী, হাম্বলী ও অন্যান্যদের মধ্য হতে। যারা হক্বের উপর চলেছেন, তাওহীদের অধ্যায়ে, আসমা ওয়া সিফাতের অধ্যায়ে এবং দ্বীনের যাবতীয় বিষয় সমূহে সম্মানিত কিতাব ও পবিত্র সুন্নাহ’কে মজবুত করে ধরেছেন।” [১]
.
২. অন্যত্র শাইখ ইবন বায রহিমাহুল্লাহ বলেছেনঃ “লা মাযহাবিয়্যাহ দ্বারা কেউ যদি এটি বোঝান যে, মাযহাবে আবদ্ধ থাকা ওয়াজিব নয় – তাহলে এটি সঠিক। কিন্তু সে যদি বোঝাতে চায় যে, মাযহাবের সাথে সম্পর্ক রাখা জায়েয নয় – তাহলে এটি সঠিক নয়। মানুষের জন্য শাফিয়ী, হাম্বলী, মালিকী অথবা হানাফী – এই সম্পর্কস্থাপন করা জায়েয। ... যদি সে বোঝাতে চায় যে, এই মাযহাবগুলোর সাথে সম্পর্ক রাখা যাবে না, তাহলে যার উপর আহলুল ইলমগন আছেন, এই কথা তার বিরোধী এবং এর কোনো ভিত্তি নেই।” [২]
.
শাইখ ইবন বায রহিমাহুল্লাহ অন্যত্র বলেছেনঃ "ফিক্বহের ক্ষেত্রে আমাদের মাযহাব হলো আহমাদ ইবন হাম্বলের মাযহাব।" [৩]
.
শাইখ ইবন বাযের উপরোক্ত ৩টি বক্তব্য দ্বারা এটি সুস্পষ্ট যে, "মাযহাবী" হওয়া দোষের কিছু নয়, আর "সালাফী" হওয়া ও "মাযহাবী" হওয়ার মাঝে কোনো দ্বন্দ নেই।
.
৩. শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালীহ আল-উছাইমীন রহিমাহুল্লাহ ফিক্বহী মাযহাবের পক্ষে অনেক কথা বলেছেন, এক স্থানে তিনি বলেছেনঃ
"কোনো মাযহাবের সাথে সম্বন্ধযুক্ত হওয়া এবং তার উসূল ও ক্বাওয়াঈদ অধ্যয়ন করা মানুষকে কুর'আন ও সুন্নাহ বুঝতে সহায়তা করে।" [৪]
.
শাইখ ইবন উছাইমীন অন্যত্র বলেছেনঃ "আমাদের মাযহাব হলো ইমাম আহমাদ রহিমাহুল্লাহ -এর মাযহাব।" [৫]
.
৪. শাইখ সালীহ আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ বলেছেনঃ “আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আতের ৪টি প্রসিদ্ধ মাযহাবের কোনো একটি নির্দিষ্ট মাযহাবের অনুসরনে কোনো সমস্যা নেই। ... সুতরাং, এটা বলা যেতে পারে যে, “অমুক” ব্যক্তি শাফিয়ী অথবা হাম্বলী অথবা হানাফী অথবা মালিকী। এই নামগুলো যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে, এমনকি উচ্চপর্যায়ের আলিমগনের যুগেও। এটা বলা যেতে পারে যে “অমুক” “অমুক” ব্যক্তি হাম্বলী। উদাহরণস্বরূপঃ ইবন তাইমিয়্যাহ ছিলেন হাম্বলী, ইবনুল কায়্যিম ছিলেন হাম্বলী এবং আরও অনেক। এগুলো’তে কোনো সমস্যা নেই। মাযহাবের অনুসরণ করাতে ও নিজেকে মাযহাবের দিকে সম্পৃক্ত করাতে কোনো দোষ নেই; তবে সমস্যা হলো এই চিন্তায় যে, মাযহাবে যা কিছু আছে- হোক তা সঠিক অথবা ভুল – তা আঁকরে ধরে রাখবো।” [৬]
.
প্রকৃতপক্ষে ফিক্বহী মাযহাবগুলোর পক্ষে এমন বহু আলিমগনের বক্তব্য আনা যাবে যাদের অনুসরণ ও সম্মান করেন “মাযহাব” অস্বীকার-কারী ভাইয়েরা। কিন্তু সেটা আমার এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। আমি শুধুমাত্র এতটুকুই বুঝাতে চেয়েছি যে, “সালাফী” হওয়া আর “মাযহাবী” হওয়া বিপরীত নয়।
.
যেমন শাইখ মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল ওয়াহহাব রহিমাহুল্লাহ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে শাইখ সালীহ আল-ফাওযান বলেছিলেনঃ “হানবালিয়্যুন ওয়া সালাফিয়্যুন, হানবালিয়্যুন ফিল ফিক্বহ, সালাফিয়্যুন ফিল আক্বীদাহ”। [৭]
.
সুতরাং, যারা "মাযহাবী"দের "সালাফী" বলতে আপত্তি করেন বা অস্বীকার করেন, তারা নিজেরা এমন এক মতবাদের কথা বলছেন, যার উপর আহলুল ইলমগন ছিলেন না। তাদের এই মতমাদ'কে সঠিক ধরে নিলে আমাদের বলতে হবে যে, ইবন তাইমিয়্যাহ, ইবনুল কায়্যিম, নববী, ইবন রজব, ইবন হাজার আসক্বালানী, মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল ওয়াহহাব, ইবন বায ও ইবন উছাইমীন- এরা কেউই "সালাফী" বা "সালাফে সালেহীনগনের" অনুসারী ছিলেন না!!
.
১. https://www.binbaz.org.sa/fatawa/2060
২. https://www.binbaz.org.sa/noor/1772
৩. শাইখ ইবন বায, মাজমূ ফাতাওয়া, ৪/১৬৬
৪. শাইখ ইবন উছাইমীন, মাজমূ ফাতাওয়া, ২৬/২৪৫
৫. লিকা'আতুল বাবিল মাফতুহ, ১২/১০০
৬. শাইখ সালীহ আল-ফাওযান, মাজমূ ফাতাওয়া, ২/৭০১
৭. https://www.youtube.com/watch?v=4luQ8ljO8Dk
[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...
Comments
Post a Comment