Skip to main content

মুক্তমনাদের বিকৃত চিন্তার ব্যবচ্ছেদ


মনে করুন আপনার পাড়ায় এক ব্যক্তি আছে যার চরিত্র খুবই খারাপ। তার অনেকগুলো বিবাহ বহির্ভূত সঙ্গী আছে। আর এরপরও সে সুযোগ পেলেই অন্য মেয়েদের সাথে অশ্লীল আচরণ করে। পাড়ায় আরও একজন ব্যক্তি আছে যে সম্পূর্ণ এর বিপরীত। সে মেয়েদের সাথে অবাধে মেলামেশা করে না, অশালীন আচরণ করে না এবং তার ব্যবহারও খুব মিষ্টি। এবার আমায় বলুন, পাড়ার ভদ্র সভ্য মেয়েরা কোন ব্যক্তির প্রতি আকৃষ্ট হবে?
.
যদি এখনও বুঝতে না পারেন, তাহলে আমি কিছুটা সাহায্য করছি।
.
একজন মেয়ে ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখে একজন উত্তম জীবনসঙ্গীর যে তাকে সারাজীবন ভালবাসবে। সে এটাও মনে মনে ভেবে রাখে যে, তার ভালবাসার মানুষটি এমন হবে যে, সে যেন অন্য কোনো মেয়ের দিকেই না তাকায়, অন্য কোনো মেয়ের সাথেই সম্পর্কে না জড়ায়। এজন্যই কোনো মেয়ে তার ভালবাসার মানুষটিকে যদি দেখে অন্য কারও প্রতি আসক্ত হতে, তবে সে যেমন রেগে যায়, তেমনি ওই মেয়ের ওপর তার হিংসাও হয়। আমার এই বক্তব্যকে আশা করি মুক্তমনারা মেনে নেবেন, কেননা এখানে না মানার কিছুই নেই।
তাহলে এথেকে আমরা বুঝতে পারি যে, মেয়েরা অবচেতনভাবেই এটা মনে করে যে, যদি তার সঙ্গী অন্য মেয়েদের প্রতি আসক্ত না হয়, তবে সে কেবল তাকেই সবচেয়ে বেশি ভালবাসবে। সুতরাং আমরা বলতে পারি, একজন ভদ্র সভ্য মেয়ে সেই পুরুষের প্রতিই আকৃষ্ট হবে যে সচ্চরিত্র, যার মেয়েদের প্রতি লোলুপ দৃষ্টি নেই।
.
অর্থাৎ যদি কোনো মেয়ে দেখে যে, কোনো ছেলে বা পুরুষ আসলে দুশ্চরিত্র এবং সে নারীলোভী, কামাসক্ত, তবে স্বাভাবিকভাবেই সে ভদ্র সভ্য হলে সেই ধরণের ছেলে বা পুরুষ থেকে দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করবে।
.
এবার এই হাদিসটি দেখুন:
.
"সাবিত আল বুনানী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-এর কাছে ছিলাম। তখন তাঁর কাছে তাঁর কন্যাও ছিলেন। আনাস (রাঃ) বললেন, একজন মহিলা নাবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার কি আমার প্রয়োজন আছে? এ কথা শুনে আনাস (রাঃ)-এর কন্যা বললেন, সেই মহিলা কতই না নির্লজ্জ, ছিঃ লজ্জার কথা। আনাস (রাঃ) বললেন, সে মহিলা তোমার চেয়ে উত্তম, সে নাবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহচর্য পেতে অনুরাগী হয়েছিল। এ কারণেই সে নিজেকে নাবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পেশ করেছে।"
.
[সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬৭/ বিয়ে (كتاب النكاح)
হাদিস নম্বরঃ ৫১২০
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) http://www.hadithbd.com/share.php?hid=29683]
.
.
একই ধরণের কথা আমরা আরও একটি হাদিস থেকেও পাই।
.
"আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে নারীরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর (স্ত্রী হওয়ার জন্য) আত্মনিবেদিতা হত, আমি তাদের নির্লজ্জতায় বিস্ময় প্রকাশ করতাম এবং বলতাম, কোন নারী কি (এভাবে নির্লজ্জ হয়ে) আত্মনিবেদন করতে পারে? পরে যখন আল্লাহ তা'আলা এ আয়াত নাযিল করলেন- “তুমি তাদের (স্ত্রীগণের মধ্যে) যাকে ইচ্ছা তোমার নিকট হতে দুরে সরিয়ে রাখতে পার এবং যাকে ইচ্ছা তোমার কাছে স্থান দিতে পার এবং যাকে তুমি দুরে রেখেছ তাকে (পুনরায়) কামনা করলে তাতে তোমার কোন অপরাধ হবে না।” (আহযাবঃ ৫১)। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি তখন বললামঃ আল্লাহর কসম! আমি তো দেখছি আপনার প্রতিপালক আপনার মনোবাঞ্ছা পূরণে দ্রুতই সাড়া দিয়ে থাকেন।"
.
[সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ১৮/ দুধপান (كتاب الرضاع)
হাদিস নম্বরঃ ৩৫০০
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) http://www.hadithbd.com/share.php?hid=13111]
.
.
এবার একটু যুক্তিযুক্তভাবে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে চিন্তা করুন!
.
তৎকালীন সময়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর অসংখ্য শত্রু ছিল। তাঁর নামে কুৎসা, নিন্দা রটনার পরিমাণও ছিল অগণিত। তাই লোকমুখে তাঁর নামে নিন্দাও ছড়িয়েছে প্রচুর! অথচ তা সত্ত্বেও সেই সময়ের নারীরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে নিজেদের পেশ করেছে যাতে তিনি তাদেরকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন!
.
আপনার নিরপেক্ষ চিন্তা দিয়ে আমায় জবাব দিন - যদি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুশ্চরিত্র হতেন, কামাসক্ত হতেন, নারীর প্রতি লোলুপ দৃষ্টির হতেন, তবে নারীরা কেন তাঁর কাছে গিয়ে তাঁর সাহচর্য লাভের বাসনা প্রকাশ করেছে???
.
এটাই প্রমাণ করে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানবতার সর্বোৎকৃষ্ট নিদর্শন যাঁর সর্বোত্তম চরিত্রে মুগ্ধ হয়ে নারীরা গোপনে না, বরং প্রকাশ্যে সমস্ত লজ্জা ভুলে, লোকের কথা পরোয়া না করে নিজেদের আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাহচর্যে সঁপে দিতেও কুণ্ঠিত হয়নি!
.
আর আমাদের মুক্তমনা ব্যক্তিবর্গের মুক্তমনা চরিত্র এতটাই কলুষিত হয়ে গেছে, তাদের চিন্তাধারা এতটাই বিকৃত হয়ে গেছে যে, এই উজ্জ্বল নিদর্শন সামনে থাকা সত্ত্বেও তারা পবিত্রতা কী, ঈমানের অনুভূতি কী, হারাম থেকে দূরে থাকার আনন্দ কী তাঁর কিছুই উপলব্ধি করতে পারছে না!!!
.
وَٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَٰتِنَا صُمٌّ وَبُكْمٌ فِى ٱلظُّلُمَٰتِۗ مَن يَشَإِ ٱللَّهُ يُضْلِلْهُ وَمَن يَشَأْ يَجْعَلْهُ عَلَىٰ صِرَٰطٍ مُّسْتَقِيمٍ
.
"আর যারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা মনে করে তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত মূক ও বধির, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা হিদায়াতের সরল সহজ পথের সন্ধান দেন।"
(আল-কোরআন, ৬:৩৯)

Comments

Popular posts from this blog

মানহাজ ও মাযাহাব নিয়ে যত দ্বন্দ্বের জবাব....

[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...

কৃষ্ণ কি আল্লাহর নবী ছিল?

এই প্রশ্নটা আমাকেও করা হয়েছে সম্ভবত কয়েকবার। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরটা বড়ই জটিল। কারণ এর কোনো যথাযথ উত্তর আমাদের জানা নেই। যদি কৃষ্ণের গোপীদের সাথে লীলার কাজকে সত্য বলে...

ভগবতগীতার বর্ণভেদ নিয়ে ভক্তদের ভণ্ডামির জবাব

============================ চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ৷ তস্য কর্তারমপি মাং বিদ্ধ্যকর্তারমব্যয়ম্৷৷১৩ অর্থ:  "প্রকৃতির তিনটি গুণ এবং কর্ম অনুসারে আমি মনুষ্য সমাজে চারটি বর্ণ...