হিন্দু দর্শন অনুযায়ী, মূর্তিপূজা এক ধরণের সাকার উপাসনা। বৈদিক শাস্ত্রে সরাসরি বলা হয় নি যে, মূর্তিপূজা করো না, মূর্তিপূজা নিষিদ্ধ। যা বলা হয়েছে সেটা হল ঈশ্বর এক, প্রকৃতিপূজা বা অন্যান্য সাকার বিষয়ের পূজা নিম্ন পর্যায়ের স্তর ইত্যাদি ইত্যাদি। এখানে সাম্ভুতি, আসাম্ভুতির উপাসনা করলে "অন্ধকারে প্রবেশ" এর অর্থ কোথাও বলা হয়নি নরকের অন্ধকারে প্রবেশ করা। অন্ধকারে প্রবেশের অর্থ জড় জগতের আসক্তি ও মায়া এর মধ্যে জড়িয়ে পড়া। আর এই মায়া এর কন্সেপ্ট ইসলাম অনুযায়ী এক ধরণের কুফরী কন্সেপ্ট।
.
যাই হোক, হিন্দু দর্শন অনুযায়ী জীবের মূল উদ্দেশ্য হল মায়া হতে মুক্তি লাভ করা। মায়া অর্থ হল মিথ্যা; অর্থাৎ এই জগৎ আসলে মিথ্যা এবং চূড়ান্ত সত্য নয় - এই উপলব্ধি না থাকা এবং জগতকে সত্য বলে বিভ্রমে পড়াকে মায়া বলে।
.
এখানে মূর্তিপূজা সবচেয়ে নিম্ন পর্যায় যখন ব্যক্তি এই মায়ার মধ্যে প্রবলভাবে জড়িয়ে পড়েছে।
.
"হে কৌন্তেয়, আমার অধ্যক্ষতা দ্বারা ত্রিগুনাত্তিকা মায়া এই চরাচর বিশ্ব সৃষ্টি হয়। প্রকৃতির নিয়মে এই জগত পুণঃ পুণঃ সৃষ্টি হয় এবং ধ্বংস হয়।"
(ভগবতগীতা, ৯:১০)
.
এক্ষেত্রে এটা ব্যক্তির জন্য ঐচ্ছিক ব্যাপার সে মূর্তিপূজা করতেও পারে, নাও পারে। মূর্তিপূজা এক্ষেত্রে মায়ার সর্বনিম্ন স্তর এবং ঈশ্বরের পৃথক অস্তিত্বের উপলব্ধিও মায়ার অন্তর্ভুক্ত। তাই এই মায়া থেকে বেরিয়ে জীবাত্মা ও পরমাত্মার মিলনই হল মূল লক্ষ্য যাকে হিন্দু দর্শনে অদ্বৈতবাদ বলা হয়েছে।
.
বেদেই অসংখ্য দেবদেবীর কথা আছে। আর আর্য সমাজ এই দেবদেবীগুলোকে রূপকভাবে গ্রহণ করে তাদেরকে জ্ঞানী, পণ্ডিত বা সোজা কথায় মানুষ হিসেবে দেখিয়েছে।
.
**"Devaas are those who are wise and learned:** asuras, are those who are foolish and ignorant;...."
.
[Satyarth Parakash (The Light of Truth) by Dayananda Saraswati/A STATEMENT OF MY BELIEF/Page728]
.
আর্য সমাজের বেদের অনুবাদ হল ভাবানুবাদ; অর্থাৎ তারা শাব্দিক অর্থগুলোকে ইচ্ছামত অনুবাদ করে জোর করে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছে, যেখানে সেই শাব্দিক অর্থের আক্ষরিক অর্থ আলাদা। ইস্কনের প্রতিষ্ঠাতা প্রভুপাদ বলছেন চৈতন্যের শিক্ষা অনুযায়ী এভাবে অনুবাদ করে অর্থ বিকৃত করা গ্রহণযোগ্য নয়, তা বর্জনীয়।
.
"...According to Lord Caitanya, those who try to give personal interpretations to the Vedic statements are not at all intelligent. They mislead their followers by inventing their own interpretations. In India there is a class of men known as ārya-samāja who say that they accept the original Vedas only and reject all other Vedic literatures. The motive of these people, however, is to give their own interpretation. According to Lord Caitanya, such interpretations are not to be accepted. They are simply not Vedic..."
.
[Teachings of Lord Caitanya/Chapter 24/source - https://prabhupadabooks.com/tlc/24?d=1]
.
.
যদি ঋগবেদের প্রথম মন্ত্রটাই দেখা হয়, তাহলে দেখা যাবে যে, সঠিকভাবে শাব্দিক অনুবাদ করলে তাতে অগ্নি দেবতার কথা বলা আছে আর অগ্নি দেবতার মাধ্যমে অন্য দেবতাদেরও আহবান করার কথা বলা হচ্ছে। গ্রিফিথের অনুবাদে সেটা পরিষ্কার বোঝা যায়।
.
"I Laud **Agni,** the chosen Priest, God, minister of sacrifice, The hotar, lavishest of wealth.
Worthy is Agni to be praised by living as by ancient seers. **He shall bring. hitherward the Gods."**
.
[RigVeda 1:1:1-2; tr. Ralph T.H Griffith;
source - https://en.m.wikisource.org/wiki/The_Rig_Veda/Mandala_1/Hymn_1]
.
.
আর্য সমাজ মূর্তিপূজা ত্যাগ করতে বলে, অথচ দেবপূজার নামে তারা ঠিকই মানুষ পূজা করার সমর্থন করে! তাহলে সাকার উপাসনা বাতিল হচ্ছে কীভাবে?
.
**"Devapujaa consists in showing honor to the wise and the learned,** to one's father ,
mother and preceptor, to the itinerant preachers of truth, to a just ruler, to those who lead righteous lives, to women who are chaste and faithful to their husbands, to men who are devoted and loyal to their wives."
[Satyarth Parakash (The Light of Truth) by Dayananda Saraswati/A STATEMENT OF MY BELIEF/Page728]
.
.
দাওয়াহ এর ক্ষেত্রে বাঙালি, অবাঙালি বড় বড় দাঈদেরও এই আর্য সমাজের স্টাইলে বেদে মূর্তিপূজা নিষিদ্ধ এমন কথার প্রচারের মাধ্যমে ব্রাহ্ম সমাজের অনুকরণে ইসলামের সাথে সাদৃশ্য দেখানোর প্রচলন দেখা যায়। কিন্তু এই সিস্টেমটা পুরোপুরি সঠিক নয়।
.
আমি এখানে কয়েকটি বিষয় আরও তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
.
.
দয়ানন্দ সরস্বতীর ঋগবেদ এর একটি মন্ত্রের অনুবাদ বলছে,
.
"He who has created this multiform universe, and is the cause of its sustenance as well as dissolution, the ***Lord of the universe in whom the whole world exists***, is sustained and then resolved into elementary condition, is the Supreme Spirit. Know Him, O man, to be your God and
believe in no other as the Creator of the Universe." RIG VEDA 10: 126, 8...."
.
['THE LIGHT OF TRUTH' (The Satyartha Prakasha) by Swami Dayanand Saraswati/CHAPTER 8 - THE CREATION, SUSTENANCE AND DISSOLUTION OF THE UNIVERSE/PAGE 242]
.
//Lord of the universe in whom the whole world exists// এই অংশ থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় জগত ঈশ্বরের মধ্যে অবস্থিত। দয়ানন্দ অন্য জায়গায় বলছে, প্রকৃতি, ঈশ্বর এবং আত্মা হল অবিনশ্বর।
.
"How many entities are eternal or beginningless?
.
A.- Three - God, the soul, and the prakriti (matter).
.
Q.What are your authorities for this statement?
.
A.- Both God and the soul are eternal, they are alike in consciousness and such other attributes.....
...The natures, attributes and characters of these three are also eternal."
.
['THE LIGHT OF TRUTH' (The Satyartha Prakasha) by Swami Dayanand Saraswati/CHAPTER 8 - THE CREATION, SUSTENANCE AND DISSOLUTION OF THE UNIVERSE/PAGE 243-244]
.
.
অর্থাৎ প্রকৃতি ও আত্মা ঈশ্বরের মধ্যে অবস্থিত এবং একারণেই তারা অবিনশ্বর। মনুসংহিতা বলছে,
.
"He, desiring to **produce beings of many kinds from his own body,** first with a thought created the waters, and placed his seed in them."
.
(Manu Samhita, 1:8;
http://www.sacred-texts.com/hin/manu/manu01.htm)
.
.
তাহলে এখানে ঈশ্বরের অংশ রূপান্তরিত হয়ে জগৎ তৈরি হয়েছে যা প্রকৃতি ও আত্মা এর সম্মিলিত প্রকাশ হিসেবে সাকার হিসেবে বিবেচ্য। এই সাকার অস্তিত্ব এর মধ্যে দেবদেবীকেও ধরা হবে আর বৈষ্ণব ব্যাখ্যায় এই সকল সাকার দেবদেবী সত্য এবং মায়াবাদী ব্যাখ্যায় দেবদেবী ও জগৎ মায়ারূপে বিবেচ্য। কিন্তু দয়ানন্দ মায়ার বিপক্ষেও কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি, আবার সাকার উপাস্যেরও কোনো মীমাংসা করতে পারে নি। শুধু নিজের কমেন্ট দিয়েই গোটা বই ভরে রেখেছে!
.
.
দ্বিতীয় যে বিষয়টি লক্ষ্যণীয় সেটি হল, "ব্রহ্ম" এবং "ব্রহ্মা" শব্দ দুটি আলাদা বিষয়কে নির্দেশ করে। "ব্রহ্মা" অর্থ সৃষ্টিকর্তা, আর ব্রহ্ম অর্থ যে নিজেকে বড় বা বিস্তৃত করে। এখানে হিন্দুদের প্রতিটি কন্সেপ্টেই শির্ক আর কুফর মেশানো।
.
ব্রহ্মা হল সগুণ ঈশ্বর বা personal God. Personal অর্থ ব্যক্তিগত নয়, personal অর্থ the attributes which can be found in God, বা সেই সকল বৈশিষ্ট্য যা ঈশ্বরের মধ্যে পাওয়া যায়।
সহজ কথায় বললে ঈশ্বরকে বৈশিষ্ট্য দিয়ে প্রকাশ করা গেলে ঈশ্বরকে বলা হচ্ছে সগুণ।
তবে এর সাথে এরা "person" জুড়ে দিয়ে ঈশ্বরকে ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য এর সাথে তুলনা করেছে, আর সেই কন্সেপ্টে সাকার উপাস্যও বানিয়েছে।
.
ব্যাপারটা আরও একটু বুঝতে নির্গুণ ব্রহ্ম এর কথা বলতে হবে। নির্গুণ অর্থাৎ গুণ বা বৈশিষ্ট্য বা সিফাত বা বিশেষণ দিয়ে যা প্রকাশ করা যায় না। নির্গুণ ব্রহ্মকে ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছে "Impersonal Brahman."
হিন্দু দর্শনে ঈশ্বরের এরূপ অবস্থাকে বোঝাতে নিরাকার বলা হয় যেখানে নিরাকার বললে পরোক্ষভাবে নির্গুণও বোঝায়।
.
এই নিরাকার ঈশ্বর বা নির্গুণ ব্রহ্ম তার নিজের অংশ থেকে জগতের আবির্ভাব ঘটায়। ভগবতগীতা বলছে,
.
মমৈবাংশো জীবলোকে জীবভূতঃ সনাতনঃ৷
মনঃষষ্ঠানীন্দ্রিয়াণি প্রকৃতিস্থানি কর্ষতি৷৷
.
অর্থ: এই জড় জগতে বদ্ধ জীবসমূহ আমার সনাতন বিভিন্ন অংশ। জড়া প্রকৃতির বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ফলে তারা মন সহ ছয়টি ইন্দ্রিয়ের দ্বারা প্রকৃতির রূপ ক্ষেত্রে কঠোর সংগ্রাম করছে।
.
(ভগবতগীতা, ১৫:৭)
.
.
একই কথা গীতা ৪:৩৫, মনুসংহিতা ১:৮ এবং আরও অনেক জায়গায় আছে। আর একটু আগে আমরা দয়ানন্দ সরস্বতীর ঋগ্বেদের একটি মন্ত্রের অনুবাদেও বিষয়টি লক্ষ্য করলাম।
.
ব্যাপারটা আরেকটু বোঝা জরুরি। এখানে ব্যাপারটা এমন না যে, ঈশ্বরের এক অংশ ঈশ্বর থেকে পৃথক হয়ে আলাদা ভাবে জগত তৈরি হয়, বরং জগৎ ঈশ্বরের মধ্যেই তৈরি হয়, বা অন্য কথায় বললে, নিরাকার ঈশ্বরের মধ্যেই জগৎ তৈরি হয়। ভগবতগীতায় বলা হচ্ছে,
.
"মহান বায়ু যেমন সর্বত্র বিচরণশীল হওয়া সত্ত্বেও সর্বদা আকাশে অবস্থান করে তেমনই জগত আমাতে অবস্থান করে।"
(ভগবতগীতা, ৯:৬)
.
কিন্তু ঈশ্বর তো নিরাকার, তাহলে সাকার জগৎ কীভাবে তৈরি হল? এখানেই মায়াবাদীরা বলে যে, এই জগৎ আসলে মিথ্যা, অর্থাৎ এই জগতের প্রকৃতপক্ষে অস্তিত্ব নেই। নির্গুণ ব্রহ্মের অংশ "মায়া" জাতীয় মিথ্যা বিষয় দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়, তখন ব্রহ্মের সেই অংশ পৃথকভাবে নিজেকে আলাদা সৃষ্টি ও জগৎ ভাবা শুরু করে।
.
"হে কৌন্তেয়, আমার অধ্যক্ষতা দ্বারা ত্রিগুনাত্তিকা মায়া এই চরাচর বিশ্ব সৃষ্টি হয়। প্রকৃতির নিয়মে এই জগত পুণঃ পুণঃ সৃষ্টি হয় এবং ধ্বংস হয়।"
(ভগবতগীতা, ৯:১০)
.
অর্থাৎ নির্গুণ ব্রহ্ম হল পরমাত্মা আর তার অংশ থেকে আত্মা এসে সেই আত্মা মায়া এর মধ্যে বেষ্টিত হয়, তখন সেই আত্মা নিজেকে আলাদা সৃষ্টি ভাবা শুরু করে আর এভাবে জগতের অস্তিত্ব এর উপলব্ধি হয়। এই মায়ার মধ্যে আসক্তি, মিথ্যা অহংকার ইত্যাদি ইত্যাদি কাজ করে। জন্ম-মৃত্যুর চক্রও এই মায়ার মধ্যে কাজ করে।
.
আর এই মায়ার মধ্যেই সগুণ "ব্রহ্মা" বা সৃষ্টিকর্তার পৃথক অস্তিত্ব এর উপলব্ধি শুরু হয়। অর্থাৎ ব্যক্তি যখন উপলব্ধি করছে যে, সে আসলে পৃথক সৃষ্টি, তখন সে ঈশ্বরকে সৃষ্টিকর্তা বা ব্রহ্মা হিসেবে অনুভব করে। এটা হিন্দু দর্শন হিসেবে নিম্ন পর্যায়, আর যদি সেই ব্রহ্মা এর ওপর ব্যক্তিত্ব আরোপ করা হয় বা personify করা হয়, তখন তাকে সাকার আকৃতিতে উপাসনা করা হয়, এটা হল আরও নিম্ন পর্যায়। আর সর্বোচ্চ পর্যায় হল (ব্যক্তি যখন শয়তানের কুমন্ত্রণার প্রবলতায়) এই উপলব্ধিতে পৌঁছাবে যে, সে আর "ব্রহ্ম" (ব্রহ্মা নয় "ব্রহ্ম") আসলে একই অস্তিত্ব এবং এর মধ্যে কোনো ভেদ বা পার্থক্য সে আর উপলব্ধি করতে পারবে না। এই পর্যায়ে জগতের পৃথক অস্তিত্ব আছে বলে তার আর মনে হবে না। একেই বলে নির্বিকল্প সমাধি আর এর মাধ্যমে প্রাপ্ত বিষয়কে বলে মোক্ষলাভ বা মুক্তিলাভ। বিবেকানন্দ এই বিষয়টিকে এক কথায় এভাবে বলেছেন,
.
"...সর্বদাই বুঝিতে হইবে, ভক্তের উপাস্য সগুণ ঈশ্বর, ব্রহ্ম হইতে স্বতন্ত্র বা পৃথক নন। সবই 'একমেবাদ্বিতীয়ম্ ব্রহ্ম'। তবে নির্গুণ পরমব্রহ্মের এই নির্গুণ স্বরূপ অতি সূক্ষ্ম বলিয়া প্রেম বা উপাসনার পাত্র হইতে পারেন না। এইজন্য ভক্ত ব্রহ্মের সগুণ ভাব অর্থাৎ পরম নিয়ন্তা ঈশ্বরকে উপাস্যরূপে নির্বাচন করেন..."
.
[স্বামী বিবেকানন্দ রচনাবলী/৪র্থ খণ্ড/ভক্তিযোগ/ঈশ্বরের স্বরূপ]
.
এক্ষেত্রে তাই মূর্তিপূজা বা সাকার উপাসনা এই সগুণ ঈশ্বরের প্রতিরূপের প্রতি মনোনিবেশের মাধ্যমে নির্গুণ ব্রহ্মের দিকে যাওয়ার মাধ্যম মাত্র। এটা নিম্ন পর্যায় হলেও বৈদিক শাস্ত্রে কোথাও নিষিদ্ধ নয়।
.
তবে ইস্কনের বৈষ্ণবরা ঈশ্বরের নির্গুণ অবস্থাকে চূড়ান্ত অবস্থা বলে স্বীকার করে না। কারণ তারা কৃষ্ণ এর আধ্যাত্মিক দেহ আছে বলে দাবি করে আর কৃষ্ণকেই চূড়ান্ত ভগবান বলে। তাই তাদের বক্তব্য অনুযায়ী চূড়ান্ত হল কৃষ্ণ। কিন্তু তার পার্থিব দেহ একমাত্র রূপ নয়, তার আধ্যাত্মিক একটা রূপ আছে যেটা মোক্ষলাভের পর্যায়ে না গেলে বোঝা যায় না। এখানে কৃষ্ণের শক্তির প্রকাশের ক্ষেত্রে যোগীর নিকট কৃষ্ণ হল পরমাত্মা এবং পরমাত্মা থেকে আত্মার আবির্ভাব ও তার শক্তির বিস্তৃতির মাধ্যমে জগতের আবির্ভাব এর ক্ষেত্রে তা হল নিরাকার ব্রহ্ম। আর ভক্তের নিকট সাকার রূপে আবির্ভাবের ক্ষেত্রে কৃষ্ণ হল ভগবান। ভাগবতে উল্লেখ করা হচ্ছে,
.
"অতিন্দ্রিয়বাদী জ্ঞানী ব্যক্তিরা যারা পরম সত্যকে জানতে পারে, তারা সেই সত্যকে অভিহিত করে অদ্বৈত বস্তু ব্রহ্ম অথবা পরমাত্মা অথবা ভগবান হিসেবে।"
.
"Learned transcendentalists who know the Absolute Truth call this nondual substance Brahman, Paramātmā or Bhagavān."
.
[Srimad Bhagavatam, 1.2.11/source - https://vanisource.org/wiki/SB_1.2.11]
.
.
এক্ষেত্রে বৈষ্ণব মতে মোক্ষলাভের প্রক্রিয়া হল কৃষ্ণের দাসে পরিণত হয়ে জগতের আসক্তি ছেড়ে দিয়ে কেবল কৃষ্ণের সেবা করা যাতে কৃষ্ণ তাদের এই মায়া থেকে উদ্ধার করে, যাতে করে জন্ম মৃত্যুর চক্র থেকে বেরিয়ে আসা যায়।
ইস্কনের একটা ব্যবহৃত বিখ্যাত রেফারেন্স হল এটা:
.
সর্বধর্মান্পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ৷
অহং ত্বা সর্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ৷৷
.
অর্থ: সমস্ত ধর্ম পরিত্যাগ করে কেবল আমার শ্বরণাগত হও। আমি তোমাকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করব। সে বিষয়ে তুমি কোন দুশ্চিন্তা করো না।
(ভগবতগীতা, ১৮:৬৬)
.
তাই তারা অন্যান্য দেব দেবীর উপাসনাকেও ভাল চোখে না দেখলেও কৃষ্ণের মূর্তির পূজাকে উত্তম বলে বিবেচনা করে থাকে। গীতাতেও এর পক্ষে রেফারেন্স পাওয়া যায়:
.
"যাদের মন জড়-কামনা বাসনা দ্বারা বিকৃত তারা অন্য দেব-দেবীর শরণাগত হয়ে এবং তাদের স্বীয় স্বভাব অনুসারে নিয়ম পালন করে দেবতাদের উপাসনা করে।"
(ভগবতগীতা, ৭:২০)
.
"অর্জুন জিজ্ঞাসা করলেন- হে ভগবান, এই ভাবে নিরন্তর ভক্তিযুক্ত হয়ে যারা সমাহিত চিত্তে তোমার আরাধনা করে এবং যারা ইন্দ্রিয়াতীত অব্যক্ত ব্রহ্মের উপাসনা করে, তাদের মধ্যে কারা শ্রেষ্ঠ যোগী?
ভগবান বললেন- যিনি আমার সবিশেষ রূপে তার মনকে নিবিষ্ট করেন, অপ্রাকৃত ভক্তিসহকারে নিরন্তর উপাসনা করেন আমার মতে তারাই শ্রেষ্ঠ যোগী।"
(ভগবতগীতা, ১২:১-২)
.
একারণেই আমি বার বার বলি যে, হিন্দু ধর্মের সাথে সাদৃশ্য না খোঁজাই ভাল, ঈশ্বর এক - এটা হয়ত বলা যেতে পারে, কিন্তু এর বেশি সাদৃশ্য না খোঁজাই সম্ভবত better. এখানে বলে রাখি মায়া কীভাবে এল তার কোনো উত্তর নেই - যেটা বিবেকানন্দ নিজেই অন্য এক জায়গায় স্বীকার করেছেন। অর্থাৎ হিন্দু দর্শন প্রকৃতপক্ষে একটা অন্ধ বিশ্বাস ছাড়া আর কিছুই নয়।
.
.
**”Why should the free, perfect, and pure being be thus under the thraldom of matter, is the next question.**
.
**How can the perfect soul be deluded into the belief that it is imperfect?**
.
We have been told that the Hindus shirk the question and say that no such question can be there. Some thinkers want to answer it by positing one or more quasi-perfect beings, and use big scientific names to fill up the gap. But naming is not explaining. The question remains the same. How can the perfect become the quasi-perfect; how can the pure, the absolute, change even a microscopic particle of its nature? But the Hindu is sincere. He does not want to take shelter under sophistry.
.
**He is brave enough to face the question in a manly fashion; and his answer is: “I do not know.**
**I do not know how the perfect being, the soul, came to think of itself as imperfect, as joined to and conditioned by matter.“**
.
But the fact is a fact for all that. It is a fact in everybody’s consciousness that one thinks of oneself as the body.
.
The Hindu does not attempt to explain why one thinks one is the body. The answer that it is the will of God is **no explanation.**
.
**This is nothing more than what the Hindu says, “I do not know.””**
.
[Complete Works of Vivekananda, Volume 1/Addresses at The Parliament of Religions/Paper on Hinduism;
source:http://www.ramakrishnavivekananda.info/vivekananda/volume_1/addresses_at_the_parliament/v1_c1_paper_on_hinduism.htm]
.
.
.
أَوَلَمْ يَرَ ٱلْإِنسَٰنُ أَنَّا خَلَقْنَٰهُ مِن نُّطْفَةٍ فَإِذَا هُوَ خَصِيمٌ مُّبِينٌ
.
"মানুষ কি দেখেনা যে, আমি তাকে সৃষ্টি করেছি শুক্র বিন্দু হতে? অথচ পরে সে হয়ে পড়ে প্রকাশ্য বিতন্ডাকারী।"
.
وَضَرَبَ لَنَا مَثَلًا وَنَسِىَ خَلْقَهُۥۖ قَالَ مَن يُحْىِ ٱلْعِظَٰمَ وَهِىَ رَمِيمٌ
.
"আর সে আমার সম্বন্ধে উপমা রচনা করে, অথচ সে নিজের সৃষ্টির কথা ভুলে যায়। বলেঃ অস্থিতে কে প্রাণ সঞ্চার করবে যখন ওটা পচে গলে যাবে?"
.
قُلْ يُحْيِيهَا ٱلَّذِىٓ أَنشَأَهَآ أَوَّلَ مَرَّةٍۖ وَهُوَ بِكُلِّ خَلْقٍ عَلِيمٌ
.
"বলঃ ওর মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করবেন তিনিই যিনি ওটা প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি প্রত্যেকটি সৃষ্টি সম্বন্ধে সম্যক অবগত।"
.
[মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, সূরা ইয়াসীন ৩৬:৭৭-৭৯]
.
.
هُوَ ٱللَّهُ ٱلَّذِى لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلْمَلِكُ ٱلْقُدُّوسُ ٱلسَّلَٰمُ ٱلْمُؤْمِنُ ٱلْمُهَيْمِنُ ٱلْعَزِيزُ ٱلْجَبَّارُ ٱلْمُتَكَبِّرُۚ سُبْحَٰنَ ٱللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ
.
"তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনিই অধিপতি, তিনিই পবিত্র, তিনিই শান্তি, তিনিই নিরাপত্তা বিধায়ক, তিনিই রক্ষক, তিনিই পরাক্রমশালী, তিনিই প্রবল, তিনিই অতীব মহিমান্বিত; যারা তাঁর শরীক স্থির করে আল্লাহ তা হতে পবিত্র ও মহান।"
.
[মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, সূরা আল-হাশ্র ৫৯:২৩]
.
.
======================
আরও পড়ুন:
=> মূর্তিপূজার যুক্তিখণ্ডন
.
=> হিন্দুরা আল্লাহকে একবার সাকার, একবার নিরাকার বললে কী জবাব দেবেন?
.
=> মুসলিমরা কী শিবলিঙ্গ আর দেবদেবীর পূজা করে?
.
=> Refutation to Indian Philosophy
Comments
Post a Comment