Skip to main content

আমাদের খারাপ কাজের জন্য কি শয়তান দায়ী নাকি আমরা নিজেরাই দায়ী???


শয়তান অর্থ "সীমালঙ্ঘনকারী", "দাম্ভিক" "স্বৈরাচারী" প্রভৃতি এবং ইবলিস অর্থ "নিরাশ" বা "হতাশাগ্রস্ত"।
আল্লাহ তাআলা ইবলিসকে শয়তান হিসেবে সৃষ্টি করেন নি। ইবলিস নিজে থেকেই বেছে নিয়েছে শয়তান হওয়ার পথ৷
.
আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমে উল্লেখ করছেন:
.
.
وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَٰٓئِكَةِ ٱسْجُدُوا۟ لِءَادَمَ فَسَجَدُوٓا۟ إِلَّآ إِبْلِيسَ أَبَىٰ وَٱسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ ٱلْكَٰفِرِينَ
.
"যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম যে, তোমরা আদমকে সাজদাহ করো, তখন ইবলিস ব্যতীত সকলেই সাজদাহ করেছিল; সে অগ্রাহ্য করল ও অহংকার করল এবং কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।"[১]
.
এই আয়াতের তাফসিরে আবু বকর জাকারিয়া এক স্থানে বলছেন:
.
"‘ইবলিস’ শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘চরম হতাশ’। আর পারিভাষিক অর্থে এমন একটি জিনকে ইবলিস বলা হয় যে আল্লাহ্‌র হুকুমের নাফরমানী করে আদম ও আদম-সন্তানদের অনুগত ও তাদের জন্য বিজিত হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। মানব জাতিকে পথভ্রষ্ট করার ও কেয়ামত পর্যন্ত তাদেরকে ভুল পথে চলার প্রেরণা দান করার জন্য সে আল্লাহ্‌র কাছে সময় ও সুযোগ প্রার্থনা করেছিল। আসলে শয়তান ও ইবলিস মানুষের মত একটি কায়াসম্পন্ন প্রাণীসত্তা। তাছাড়া সে ফেরেশতাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল, এ ভুল ধারণাও কারো না থাকা উচিত। কারণ পরবর্তী আলোচনাগুলোতে কুরআন নিজেই তার জীনদের অন্তর্ভুক্ত থাকার এবং ফেরেশতাদের থেকে আলাদা একটি স্বতন্ত্র শ্রেণীর সৃষ্টি হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্য পরিবেশন করেছে।"[২]
.
.
সূরা ফালাকের ২ নং আয়াতের তাফসিরে আবু বকর জাকারিয়া আরও উল্লেখ করেছেনঃ
.
"এখানে লক্ষণীয় যে, আয়াতে বলা হয়েছে, “তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট হতে আল্লাহর আশ্রয় চাচ্ছি।” এ বাক্যে অনিষ্টকারিতা সৃষ্টির ব্যাপারটিকে আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত করা হয়নি। বরং সৃষ্টিজগতের সৃষ্টিকে আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত করা হয়েছে। আর অনিষ্টকারিতাকে সম্পর্কিত করা হয়েছে সৃষ্টির সাথে। অর্থাৎ একথা বলা হয়নি যে, আল্লাহ যে অনিষ্টকারিতাসমূহ সৃষ্টি করেছেন সেগুলো থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।
.
এ থেকে জানা যায়, **মহান আল্লাহ্ কোন সৃষ্টিকে অনিষ্টকারিতার জন্য সৃষ্টি করেননি।** বরং তাঁর প্রত্যেকটি কাজ কল্যাণকর এবং কোন না কোন কল্যাণমূলক প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্যই হয়ে থাকে। তবে সৃষ্টির মধ্যে তিনি যেসব গুণ সমাহিত করে রেখেছেন, যেগুলো তাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য প্রয়োজন, সেগুলো থেকে অনেক সময় এবং অনেক ধরনের সৃষ্টি থেকে প্রায়ই অনিষ্টকারিতার প্রকাশ ঘটে।"( বাদায়ে‘উল ফাওয়ায়িদ: ২/৪৩৬)[৩]
.
.
উল্লেখ্য যে, এই ইবলিস না থাকলেও মানুষের হারাম কাজের সম্ভাবনা থামত না। কেননা হারাম কাজ হয় নাফস বা প্রবৃত্তির কারণে। আমাদেরকে নির্দিষ্ট পরিমাণে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দেওয়া হয়েছে আমাদেরকে ইবাদতের পরীক্ষায় যাচাই করার জন্য। এক্ষেত্রে আমাদের ইচ্ছাশক্তি আমাদের বুদ্ধি বা intelligence এর সাথে সম্পর্কিত। আমরা নিজেদের intelligence ব্যবহার করে নিজেদের ইচ্ছায় নিজেদের পথটা বেছে নেই। আর যেহেতু আমরা এই পথটা বেছে নিতে বুদ্ধি ব্যবহার করি, তাই এই বাছাইকরণের মধ্যে ভাল মন্দ পার্থক্যকরণের ক্ষমতা আমাদের দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের ভাল মন্দ নির্ধারণ এর বিচার আপেক্ষিক যা স্থান, কাল, ব্যক্তিবিশেষে পরিবর্তনশীল, তাই হালাল ও হারামের চূড়ান্ত নির্ধারণকারী হলেন একমাত্র আল্লাহ। আর এই নির্ধারণকে অনুধাবন ও অনুসরণ এর জন্য প্রয়োজন ১) নাফসের বিলাসিতার অনুসরণ থেকে দূরে সরে আসা, ২) বুদ্ধি ও বিবেককে নাফসের শিকলে না রেখে আল্লাহ অভিমুখী হয়ে অনুভব করা।
.
ইবলিস নিজের ইচ্ছাশক্তিকে নাফসের দাসত্ব এর মাধ্যমে প্রয়োগ করেছিল এবং নিজের ইচ্ছায় পথভ্রষ্টতা বেছে নিয়েছিল।
এই বিষয়টি আমাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে তাই ইবলিস একমাত্র শয়তান নয়। মানুষ ও জিন এর মধ্যে যে কেউ শয়তান হতে পারে। সূরা নাস এর শেষ আয়াতে কুমন্ত্রণাদানকারী হিসেবে মানুষ ও জিন উভয়ের কথা এসেছে। ইবলিস এখানে প্রথম জিন যে নিজের ইচ্ছায় শয়তান হয়েছে অর্থাৎ সীমালঙ্ঘনের পথ বেছে নিয়েছে। এক্ষেত্রে সে তাই চায় যেন অন্যরাও তার মত হয়ে যাক এবং সে একারণে কুমন্ত্রণা প্রদান করে। যেমনভাবে একজন মদ্যপানকারী চাইবে অন্যরাও মদ্যপান করুক, ব্যভিচারী চাইবে অন্যরাও ব্যভিচার করুক, সৎকর্ম এর অনুসারী চাইবে অন্যরাও সৎকাজ করুক; তেমনি ইবলিস বা শয়তান প্রকৃতির অনুসারীরা সব সময় চায় অন্যরাও তাদের মত হয়ে যাক। তাই এখানে পথ বাছার অপশন আমাদেরই। আখিরাতের পরীক্ষার জন্য আমাদের সামনে হালাল ও হারাম উভয় পথই দেখানো হয়েছে। এবার যে ব্যক্তি যে প্রকৃতির অনুসরণ করবে, সে সেই অনুযায়ীই ফল পাবে ইনশাআল্লাহ।
.
‘‘..হে মানুষ! তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তোমাদের কাছে প্রকৃত সত্য এসে পৌঁছেছে। অতঃপর যে সঠিক পথ অবলম্বন করবে, সে নিজের কল্যাণের জন্যই সঠিক পথ ধরবে। আর যারা পথভ্রষ্ট হবে তারা পথভ্রষ্ট হবে নিজেদেরই ক্ষতি করার জন্য...."[৪]
.
.
এবার এই হাদিসটি খেয়াল করুনঃ
.
আহমাদ ইবনু সালিহ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ব্যভিচারী ব্যভিচার করার সময়ে মুমিন থাকে না, মদ পানকারী মদ পান করার সময়ে মুমিন থাকে না। চোর চুরি করার সময়ে মুমিন থাকে না...[৫]
.
.
এখানে তাই এই বিষয়টি পরিষ্কার যে, হারাম কাজের সময় আমরা ঈমানের ওপর টিকে থাকতে পারি না। তাই হারামে লিপ্ত হই। আর এর জন্য আরেকটি বিষয় বুঝতে হবে।
.
আমাদের ইচ্ছাশক্তি স্বাধীন - কথাটা পুরোপুরি সঠিক নয়। বরং এটা বলা উচিৎ যে, আমাদের ইচ্ছাশক্তি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে স্বাধীন। অর্থাৎ আমাদেরকে একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত আল্লাহ সুযোগ ও ক্ষমতা দিয়েছেন নিজেদের পথ বেছে নেওয়ার। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো বেপর্দা নারী সামনে দিয়ে যায়, আর তার দিকে নজর যায়, আর দেখে ভাল লাগে তাকে, তাহলে একজন পুরুষের সামনে দুটো অপশন - ১) তার দিকে তাকিয়েই থাকতে পারে, ২) দৃষ্টি সরিয়ে নিতে পারে।
.
এখন এটা হল প্রথম পর্যায়, যখন ব্যক্তির সামনে আল্লাহ সুযোগ দিয়েছেন আর ক্ষমতা দিয়েছেন তার পথটা বেছে নেওয়ার জন্য। এই পর্যায়ে ব্যক্তির কিন্তু নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, সে নিজেকে সামলে চলে যেতে পারবে। সূরা নূরে আল্লাহ বলছেন,
.
قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا۟ مِنْ أَبْصَٰرِهِمْ وَيَحْفَظُوا۟ فُرُوجَهُمْۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْۗ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرٌۢ بِمَا يَصْنَعُونَ
.
"মু’মিনদের বল তাদের দৃষ্টি অবনমিত করতে আর তাদের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করতে, এটাই তাদের জন্য বেশি পবিত্র, তারা যা কিছু করে সে সম্পর্কে আল্লাহ খুব ভালভাবেই অবগত।"[৬]
.
.
এখানে যেহেতু কোরআন ইবলিস এর বাস্তব অস্তিত্বের কথা বলছে, তাই আমরা মানি যে, ইবলিস এর বাস্তব অস্তিত্ব রয়েছে। এজন্য ইবলিস অথবা তার অনুসারী জিন অথবা মানুষও এই হারাম কাজে প্ররোচিত করতে পারে। শয়তান জিন এই হারাম দৃষ্টিতে অটল থাকার জন্য প্ররোচিত করলে তা আমরা সামনে দেখতে পাই না, আর শয়তান ব্যক্তি যদি প্ররোচনা দেয়, তবে সেটা আমরা দেখতে পাই। যেমন ধরুন, কখনও একদল ছেলে যদি হয়, তাহলে সেই বেপর্দা নারী সামনে এল, এবার একটা ছেলে চোখ নামিয়ে রাখল, আর দলের অন্য ছেলেরা তাকে উস্কাতে থাকল সেই মেয়ের দিকে তাকানোর জন্য। এখানে এই উস্কানি আমরা দেখতে পাচ্ছি, তবে এখানে আরো এক ধরণের উস্কানি হয় যেটা শয়তান দেয়, কিন্তু অদৃশ্য অবস্থায়। সেটা আমরা কেবল অনুভব করতে পারি, যখন অন্তরে কুমন্ত্রণা অনুভূত হয়। এখানে আগেই বলেছি যে, প্রথম পর্যায়ে আমাদের সুযোগ রয়েছে আমাদের পথটা বেছে নেওয়ার। আর একজন মুমিন ব্যক্তি তাই প্রথম পর্যায়ে এই হারাম বিষয়ের সম্মুখীন হলেই সে এই বিষয় থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয় আর কুসঙ্গ ত্যাগ করে এবং কুপ্ররোচনার জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য চায়।
.
এবার যদি কোনো ব্যক্তি এই হারাম থেকে সরে না আসে আর এই হারামেই অটল থাকে, তাহলে এখানে সে প্রথম পর্যায় থেকেই নিজের ইচ্ছায় হারাম পথটা বেছে নিল। অর্থাৎ নিজের ইচ্ছাশক্তির অপপ্রয়োগ করল। এভাবে যদি চলতে থাকে, তবে সে এক পর্যায়ে নিজের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে আর প্রবৃত্তির দাসে পরিণত হয়। তখন শয়তান উস্কানি দিলেও সে হারাম কাজ করে, না দিলেও করে।
.
উদাহরণস্বরূপ, ওই মেয়েকে দেখার পর সে দৃষ্টি না নামিয়ে দেখেই যেতে থাকল, এরপর জানতে পারল যে, সেই মেয়ের সাথে যোগাযোগ করা যাবে, তখন সে যোগাযোগ শুরু করল, এরপর সে ডেটিং এ গেল এবং এভাবে সে একদিন যিনা করে বসল।
.
তাই আল্লাহ বলছেন,
.
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَتَّبِعُوا۟ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيْطَٰنِۚ وَمَن يَتَّبِعْ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيْطَٰنِ فَإِنَّهُۥ يَأْمُرُ بِٱلْفَحْشَآءِ وَٱلْمُنكَرِۚ وَلَوْلَا فَضْلُ ٱللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُۥ مَا زَكَىٰ مِنكُم مِّنْ أَحَدٍ أَبَدًا وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ يُزَكِّى مَن يَشَآءُۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
.
"হে ঈমানদারগণ, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক (দেখানো পথের) অনুসরণ করো না। যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, তখন তো শয়তান নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ করবে। যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া তোমাদের প্রতি না থাকত, তবে তোমাদের কেউ কখনও পবিত্র হতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পবিত্র করেন। আল্লাহ সবকিছু শোনেন, জানেন।"[৭]
.
.
এখানে তাই মূল সিস্টেমটা হল আমাদের নাফস বা প্রবৃত্তি সব সময় চায় যা সহজে পাওয়া যায় বা যা থেকে বেশি আনন্দ পাওয়া যায়, সেটা উপভোগ করা। আর তাই এই আনন্দ আর বিলাসিতা ভোগের পথ ভাল কী খারাপ সেটা আমাদের প্রবৃত্তি বা মন বা নাফস বিচার করে না। তাই শয়তান কোনো কুমন্ত্রণা দিলে আমাদের নাফস শয়তানের সাজেশনটা সরাসরি গ্রহণ করে বসে আর আমাদের মন তখন আমাদের বলতে থাকে হারাম পথে গিয়ে আনন্দ ভোগ করতে। এখানে তাই যদি শয়তান নাও থাকত, তবুও আমাদের মন বা প্রবৃত্তি বা নাফস এই আনন্দ ভোগের সাজেশন দিতেই থাকত। সেটা ভাল হোক বা মন্দ। যেমন ধরুন, সামনে বিরিয়ানি আর নিম পাতার রস থাকলে আমাদের মন বলবে, বিরিয়ানি খাও। এখন বিরিয়ানি খাওয়া কিন্তু হালাল৷ তাই এখানে মন কিন্তু ভাল জিনিসেরই সাজেশন দিচ্ছে। কিন্তু কীসের সাপেক্ষে দিচ্ছে? আনন্দ উপভোগের জন্য। উপকারিতার জন্য নয়। এবার আমরা নির্ধারণ করব আমরা কোনটা খাব আমাদের বুদ্ধি বা intelligence দিয়ে। এবার ডাক্তার আপনাকে বলল যে, আপনি এক বছর বিরিয়ানি খেতে পারবেন না। তাহলে এটা আপনাকে বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে হবে আপনি কি করবেন, আপনি অনিচ্ছা সত্ত্বেও ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী বিরিয়ানির বদলে নিম পাতার রসটাই খেলেন। এই যে আপনি সঠিক পথটা বেছে নিলেন, এটাই হল আপনার সীমার মধ্যে থাকা স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির সঠিক প্রয়োগ। আর যখনই আপনি নিজের নাফস বা প্রবৃত্তির দাসে পরিণত হবেন, তখন আপনি ভুল পথটা বেছে কেবল আনন্দ উপভোগের জন্য বিরিয়ানি খেয়ে বসবেন।
.
তাই সার কথা হল, আমরা ঈমান বিহীন হয়ে পড়লে হারাম কাজ করি। আর ঈমান বিহীন তখনই হয়ে পড়ি, যখন আমরা শয়তানের দেখানো পথের অনুসরণ করি আর আল্লাহর বিধানের পরিবর্তে নিজের নাফস বা প্রবৃত্তি বা মন যে সাজেশন দেয়, সেই অনুসারে চলি।
.
তাই ঈমানের পথে অটল থাকলে শয়তান আমাদেরকে দিয়ে জোর করে হারাম কাজ করিয়ে নিতে পারে না। বরং যদি আমরা আল্লাহর পথে সংগ্রামের পরিবর্তে শয়তানের পথে নিজেদের সমর্পণ করি, তখনই শয়তান আমাদের ওপর প্রভুত্ব শুরু করে।
.
আল্লাহ তাআলা আমাদের গুনাহ সমূহ মার্জনা করুন এবং তওবা করে তাঁর পথে ফিরে এসে ঈমানের পথে অটল থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।
.
وَٱصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ ٱلَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُم بِٱلْغَدَوٰةِ وَٱلْعَشِىِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُۥۖ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيدُ زِينَةَ ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَاۖ وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُۥ عَن ذِكْرِنَا وَٱتَّبَعَ هَوَىٰهُ وَكَانَ أَمْرُهُۥ فُرُطًا
.
"তুমি দৃঢ় চিত্ত হয়ে তাদের সাথে অবস্থান কর যারা সকাল-সন্ধ্যা তাদের প্রতিপালককে আহবান করে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের সন্ধানে। পার্থিব জীবনের শোভা ও চাকচিক্য কামনায় তুমি তাদের থেকে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিও না। তুমি তার আনুগত্য কর না যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণ হতে উদাসীন করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির আনুগত্য করে আর যার কার্যকলাপ হচ্ছে সীমালঙ্ঘনমূলক।"[৮]
.
আল্লাহই ভালো জানেন।
.
.
________________________
তথ্যসূত্রঃ
[১] আল-কোরআন, ২:৩৪
[২] তাফসির আবু বকর জাকারিয়া/আল-কোরআন ২:৩৪ আয়াতের তাফসির হতে বিবৃত
[৩] তাফসির আবু বকর জাকারিয়া/আল-কোরআন ১১৩:২ আয়াতের তাফসির হতে বিবৃত
[৪] আল-কোরআন ১০:১০৮
[৫] গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
হাদিস নম্বরঃ ৫১৭৮
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) http://www.hadithbd.com/share.php?hid=5822
[৬] আল-কোরআন, ২৪:৩০
[৭] আল-কোরআন, ২৪:২১
[৮] আল-কোরআন, ১৮:২৮
=======================
- আহমেদ আলি

Comments

Popular posts from this blog

মানহাজ ও মাযাহাব নিয়ে যত দ্বন্দ্বের জবাব....

[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...

কৃষ্ণ কি আল্লাহর নবী ছিল?

এই প্রশ্নটা আমাকেও করা হয়েছে সম্ভবত কয়েকবার। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরটা বড়ই জটিল। কারণ এর কোনো যথাযথ উত্তর আমাদের জানা নেই। যদি কৃষ্ণের গোপীদের সাথে লীলার কাজকে সত্য বলে...

ভগবতগীতার বর্ণভেদ নিয়ে ভক্তদের ভণ্ডামির জবাব

============================ চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ৷ তস্য কর্তারমপি মাং বিদ্ধ্যকর্তারমব্যয়ম্৷৷১৩ অর্থ:  "প্রকৃতির তিনটি গুণ এবং কর্ম অনুসারে আমি মনুষ্য সমাজে চারটি বর্ণ...