Skip to main content

♦ হিন্দু গোষ্ঠীর ভেদাভেদ ও মুসলিম গোষ্ঠীর ভেদাভেদে পার্থক্য!!!


মুসলিমদের প্রায়ই এই অভিযোগ ছুঁড়ে দেওয়া হয় যে, তারা দলে দলে বিভক্ত হয়ে গেছে। কিন্তু যেসব হিন্দু এই অভিযোগগুলো করে থাকে, তারা এই বিষয়টা সুস্পষ্টভাবে এড়িয়ে যায় যে, তারা নিজেরাই কতটা বিভ্রান্ত!
.
আপনি যদি কোনো হিন্দুকে প্রশ্ন করেন যে, ইসলাম অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তা কে, তারাও সহজেই বলে দেবে যে, ইসলামিক আকিদায় সৃষ্টিকর্তাকে বলা হয় "আল্লাহ"। এমনকি তারা এটাও জানে যে, ইসলাম ধর্মের সর্বশেষ বার্তাবাহক হল নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাঁকে তারা ইসলাম ধর্মের প্রচারক বলে মনে করে, আর অনেক হিন্দু পণ্ডিতও তাই মুসলিমদের "মহাম্মেদান"(Mohammedan) এবং ইসলামকে "মহাম্মেদানিজম" (Mohammedanism) বলে তাদের বিভিন্ন লেখায় উল্লেখ করেছেন।
.
এখানে তাই বিষয়টি একেবারে পানির মত পরিষ্কার যে, ইসলামে সৃষ্টিকর্তা কে, সেই বিষয়ে কোনো সন্দেহই নেই। "আল্লাহু আকবার" বললেই সব মুসলিম সেই বিষয়ে এক হয়ে যায় যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই, যতই তাদের মধ্যে ফিকহী বিষয়ে মতভেদ থাকুক না কেন।
.
কিন্তু হিন্দু গোষ্ঠীগুলোর আকিদার দিকে একবার তাকান। ঈশ্বর যে আসলে কে, সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট এবং চূড়ান্ত কোনো ধারণা নেই। হিন্দুদের দাবি অনুযায়ী, তাদের ধর্মে সকল মতবাদ বিদ্যমান বলেই এরূপ অনেক রকম বৈচিত্র্য দেখা যায় ঈশ্বরের কন্সেপ্ট নিয়ে। কিন্তু এটা দিয়ে প্রমাণিত হয় না যে, হিন্দু দর্শন সঠিকভাবে সত্য পথ তুলে ধরতে পেরেছে।
.
হিন্দু দর্শনে লোকমুখে ৩৩ কোটি দেব-দেবীর কথা প্রচলিত। আর বৈদিক বর্ণনা অনুযায়ী এই দেব-দেবী হল ৩৩ সংখ্যক। তবে এই দেবদেবীরা চূড়ান্ত ঈশ্বর নয়।
.
১) মায়াবাদী দর্শনে আদি শঙ্করাচার্যের অনুসারীদের মতে, জীব আর ব্রহ্মে মূলত খুব বেশি পার্থক্য নেই, যে জিনিসটায় শুধু পার্থক্য, সেটা হল মায়া বা অজ্ঞতা বা বিভ্রম।  তাদের মতে, চূড়ান্ত ঈশ্বর এর কোনো নির্দিষ্ট নাম নেই। ঈশ্বর আর সৃষ্টি আসলে একই জিনিস, কারণ সৃষ্টি আসলে ঈশ্বরের অংশ, তবে সৃষ্টি বলে আসলে কিছু নেই; এগুলো হল আমাদের অজ্ঞতা যে আমরা আলাদাভাবে জগতটা দেখছি যেটার আসলে কোনো অস্তিত্ব নেই। তাই যেকোনো একটা পথেই ঈশ্বরের দিকে যাওয়া যাবে। এই সম্পর্কে রামকৃষ্ণ পরমহংসের বিখ্যাত থিওরি হল "যত মত তত পথ"!
.
২) অন্যদিকে শিবের উপাসকদের মতে, শিব হল চূড়ান্ত ঈশ্বর আর অন্য সকল কিছু হল তার আওতাধীন।
.
৩) বৈষ্ণবদের মতে, কৃষ্ণ হল চূড়ান্ত ঈশ্বর আর বিষ্ণু, শিব, অন্যান্য দেবদেবী আর সকল সৃষ্টিই কৃষ্ণের আধ্যাত্মিক দেহের মধ্যে বিরাজমান এবং তাই কৃষ্ণই চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণকারী।
.
৪) অন্যদিকে আর্য সমাজের স্বামী দয়ানন্দ স্বরস্বতীর অনুসারীদের চিন্তাধারা অর্ধেক হিন্দু আর অর্ধেক মুসলিম টাইপের! তারা মৃত বস্তুর পূজা নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করে, কিন্তু সকল সৃষ্টি যে ঈশ্বরের মধ্যে অবস্থিত সেটা বিশ্বাস করে। অথচ তারা কোনো অবতারবাদে বিশ্বাস করে না বিধায় দেবদেবী, স্বর্গ-নরক এগুলি রূপক অর্থে গ্রহণ করে এদের বাস্তব অস্তিত্ব অস্বীকার করে। আবার এরা মায়াবাদীদের মত জগতটা যে মিথ্যা, এটাও স্বীকার করে না। তাই মায়াবাদীদের মত, জীব আর ব্রহ্মকে তারা কেবল মায়া দিয়ে পৃথক না করে ঈশ্বরের মর্যাদা জীবের থেকে আলাদা আর অনেক ওপরে বলে বিশ্বাস করে।
.
অর্থাৎ সব মিলিয়ে ব্যাপারটা এটাই দাঁড়াচ্ছে যে, হিন্দু মতপথগুলোকে একত্রিত করলে কে যে চূড়ান্ত ঈশ্বর, তার কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত কোনো নিরপেক্ষ ব্যক্তির পক্ষে নেওয়া খুবই মুশকিল!
.
এহেন বিভেদ থাকা সত্ত্বেও সুচতুরতার সাথে তারা বিভেদের প্রসঙ্গ তুলে আঙ্গুলটা কেবল মুসলিমদের দিকেই তুলে ধরে!!!

Comments

Popular posts from this blog

মানহাজ ও মাযাহাব নিয়ে যত দ্বন্দ্বের জবাব....

[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...

কৃষ্ণ কি আল্লাহর নবী ছিল?

এই প্রশ্নটা আমাকেও করা হয়েছে সম্ভবত কয়েকবার। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরটা বড়ই জটিল। কারণ এর কোনো যথাযথ উত্তর আমাদের জানা নেই। যদি কৃষ্ণের গোপীদের সাথে লীলার কাজকে সত্য বলে...

ভগবতগীতার বর্ণভেদ নিয়ে ভক্তদের ভণ্ডামির জবাব

============================ চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ৷ তস্য কর্তারমপি মাং বিদ্ধ্যকর্তারমব্যয়ম্৷৷১৩ অর্থ:  "প্রকৃতির তিনটি গুণ এবং কর্ম অনুসারে আমি মনুষ্য সমাজে চারটি বর্ণ...