Skip to main content

♦ ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের যৌক্তিকতা!!!!


(ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গিতে হিন্দু দর্শনের জবাব)
.
হিন্দু দর্শন যে কতবড় কুফরি দর্শন, তার একটি নমুনা নিচের অংশ থেকে আমরা পাই:
.
"ঈশ্বরের কোনো উদ্দেশ্য নাই, কারণ কোনো উদ্দেশ্য থাকিলে তিনি মানুষের সমান হইয়া যাইতেন। তাঁহার কোনো উদ্দেশ্যের প্রয়োজন কী? কোনো উদ্দেশ্য থাকিলে তিনি তো তাহা দ্বারা বদ্ধ হইতেন..........
....ঠিক যেমন বড় বড় সম্রাটগণ কখন বা পুতুল লইয়া খেলা করেন, ঈশ্বরও তেমনি এই প্রকৃতির সহিত খেলা করেন; এবং ইহাকেই আমরা বিধি বা নিয়ম বলি...."
.
[স্বামী বিবেকানন্দ রচনাবলি/১ম খণ্ড/কর্মযোগ-প্রসঙ্গ/কর্মবিধান ও মুক্তি]
.
এবার দেখুন মহান আল্লাহ কীভাবে এই শয়তানি ধারণার জবাব দিচ্ছেন:
.
"আমি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং ওদের মধ্যে কোন কিছুই খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করিনি;
আমি এগুলো যথাযথ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছি; কিন্তু তাদের অধিকাংশই বোঝে না।"
.
[মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ৪৪:৩৮-৩৯]
.
তাহলে দেখুন, ইসলাম স্পষ্ট ঘোষণা করছে যে, সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির একটি উদ্দেশ্য আছে। আর এই উদ্দেশ্য সম্পর্কে তাফসিরে আহসানুল বয়ানে আল-কোরআন, ৪৪:৩৯ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হচ্ছে,
.
"যথাযথ বা যথার্থ উদ্দেশ্য এটাই যে, মানুষকে পরীক্ষা করা হবে এবং সৎলোকদেরকে তাদের সৎকর্মের প্রতিদান এবং অসৎ লোকদেরকে তাদের অসৎ কর্মের শাস্তি দেওয়া হবে।"
(তাফসিরে আহসানুল বয়ান)
.
.
এখানে হিন্দু দর্শন এই ধারণাকে স্বীকার করে না। স্বামী বিবেকানন্দের বিবৃতির উক্ত অংশে ঈশ্বরের যে, কোনো উদ্দেশ্য নেই, তার সমর্থনে আমরা নিম্নোক্ত যুক্তিগুলো পাচ্ছি:
.
১) যদি ঈশ্বরের কোনো উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে তিনি সেই উদ্দেশ্যের মধ্যে বদ্ধ হয়ে পড়বেন;
.
২) যদি ঈশ্বর উদ্দেশ্য সাধন করতে গিয়ে বদ্ধ হয়ে পড়েন, তাহলে তিনি মানুষের সমতুল্য হয়ে পড়বেন;
.
৩) সুতরাং ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের কোনো প্রয়োজন নেই;
.
৪) অর্থাৎ ঈশ্বর জগত নিয়ে খেলায় মত্ত যেটাকে বিধি বা নিয়ম বলা যেতে পারে।
.
.
যুক্তিগুলো খ্রিষ্টান মিশনারিদেরকে হয়ত চুপ করিয়ে দেবে, কিন্তু ইসলামকে চুপ করাতে পারবে না ইনশাআল্লাহ। কারণ স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ কোরআনে এই মিথ্যাচারের জবাব দিয়েছেন বিভিন্ন আয়াতে।
.
উপরিউক্ত যুক্তিগুলো থেকে আমরা পাই যে, ঈশ্বরের উদ্দেশ্য থাকলে তিনি সেই উদ্দেশ্যে বদ্ধ হয়ে মানুষের সমতুল্য হয়ে পড়বেন।
এখানে, মানুষ কোনো উদ্দেশ্যে একারণেই বদ্ধ হয়ে পড়ে যে, তাকে সেই উদ্দেশ্যের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। তাই বলা যায়, সৃষ্টিকর্তা তখনই বদ্ধ হয়ে পড়বেন, যখন তিনি সেই উদ্দেশ্যের ওপর নির্ভরশীল হবেন।
.
কিন্তু মহান আল্লাহ কোনো কিছুর ওপর নির্ভরশীল নন।
.
তাহলে যখন সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কোনো কিছুর ওপর নির্ভরশীল নন, তবে তিনি কীভাবে কোনো কিছুর দ্বারা বদ্ধ হতে পারেন??? এটা মুশরিকদের কল্পিত ধারণা মাত্র যা দিয়ে তারা ক্রমাগত মিথ্যা অপবাদ দিয়ে চলেছে মহান আল্লাহ তায়ালার ওপর।
.
তবে এখানে প্রশ্ন থেকে যায় যে, যদি সৃষ্টিকর্তার কোনো কিছুর প্রয়োজন না-ই হয়, তাহলে তাঁর উদ্দেশ্য কীভাবে থাকতে পারে?
.
এর তাৎপর্য বুঝতে হলে কয়েকটি ধাপে আমাদের বুঝতে হবে।
.
মহান আল্লাহ বলেন,
"আর তাঁর সমতুল্য কিছুই নেই।"
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ১১২:৪)
.
অর্থাৎ আমরা যেভাবে উদ্দেশ্য সাধন করি, আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্য সাধন করার প্রক্রিয়া সেরূপ নয়। আমরা তুলনা করা ছাড়া বুঝি না। তাই আমরা উদ্দেশ্য সাধন বলতে এটাই বুঝি যে, আমরা সেই উদ্দেশ্যের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু মহান আল্লাহ সকল তুলনার উর্ধ্বে। তাই মহান আল্লাহর ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য সাধন এর অর্থ এটা নয় যে, তিনি সেই উদ্দেশ্যের ওপর নির্ভরশীল।
.
মহান আল্লাহ ঘোষণা করছেন:
.
"হে মানুষ! তোমরাই আল্লাহর মুখাপেক্ষী, কিন্তু আল্লাহ তিনি তো অভাবহীন, প্রশংসিত।" (মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ৩৫:১৫)
.
এক্ষেত্রে যেহেতু আল্লাহ তায়ালার কোনো কিছুরই প্রয়োজন নেই, তাই এই উদ্দেশ্যেরও তাঁর নিজের কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু উদ্দেশ্যের প্রয়োজন নেই অর্থ এটা নয় যে, আল্লাহর তায়ালার নিজের প্রয়োজন নেই বলে তিনি জগত নিয়ে খেলা শুরু করে দেবেন যেখানে তিনি বলছেন,
.
"আকাশ ও পৃথিবী এবং যা উভয়ের অন্তর্বর্তী তা আমি খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করিনি।
আমি যদি চিত্তবিনোদনের উপকরণ সৃষ্টি করতে চাইতাম, তবে আমি আমার নিকট যা আছে তা নিয়েই করতাম; যদি আমি তা করতামই।"
.
[মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ২১:১৬-১৭]
.
.
উপরন্তু মহান আল্লাহ ঘোষণা করছেন:
.
بَدِيعُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِۖ وَإِذَا قَضَىٰٓ أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ
.
"তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের উদ্ভাবক। যখন তিনি কোন কার্য সম্পাদনের সিন্ধান্ত নেন, তখন সেটিকে একথাই বলেন, ‘হয়ে যাও’; তৎক্ষণাৎ তা হয়ে যায়।"
.
[মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ২:১১৭]
.
এক্ষেত্রে তাই এই সৃষ্টিজগৎ এবং সেই সৃষ্টিজগতের সৃষ্টির উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য কেবল মহান আল্লাহর প্রদত্ত নির্দেশের বহিঃপ্রকাশ মাত্র যা তাঁর ক্ষমতা, জ্ঞান, ন্যায়বিচার, প্রজ্ঞাময় সত্ত্বা ও আরও বহুবিধ বিষয়ের প্রকাশভঙ্গিকে এমনভাবে তুলে ধরে যা কোনো কিছু দিয়েই তুলনা বা পরিমাপ করা যায় না!!!
.
তাই আবারও বলতে হয় যে, যেহেতু, মহান আল্লাহ কোনো কিছুর সাথেই তুলনীয় নন, তাই তাঁর উদ্দেশ্য সাধন করতে গিয়ে তিনি সেই উদ্দেশ্যে বদ্ধ হয়ে পড়েন না; কারণ সেই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সেই উদ্দেশ্যের ওপর তাঁকে নির্ভরশীল হতে হয় না।
.
যদি ঈশ্বর জগত নিয়ে খেলা করেন, তখন তিনি কি সৃষ্টির সমতুল্য হয়ে পড়ছেন না?
আমরা বিবেকানন্দের উপরের অংশের বক্তব্যে দেখতে পাচ্ছি, তিনি নিজেই ঈশ্বরের ক্রিয়াকে বড় বড় সম্রাটগণের শখের বশে পুতুল খেলার সাথে তুলনা করেছেন।
তবে শুধু সম্রাটই বা কেন হতে যাবে? ছোট শিশুরাও তো খেলা করে। ছোট ছোট মেয়েরা পুতুল খেলে। এমনকি পশুরাও খেলা করে; তবে তাদের খেলা হিংস্র প্রকৃতির ! তা এগুলো থেকে কি প্রমাণিত হয় না যে, ঈশ্বর জগৎ নিয়ে খেলায় মত্ত হলে তিনি শুধু মানুষই না, পশুরও সমতুল্য হয়ে পড়বেন??? হিন্দু দর্শনের ঈশ্বর হয়ত এহেন সৃষ্টির সমতুল্য হতেই পারেন, কিন্তু এগুলো থেকে একটা বিষয় এড়ানো যায় না যে, তাদের স্বামীজির নিজের যুক্তিই পরস্পর বিরোধী!
.
মহান আল্লাহ তাই ঘোষণা করছেন:
.
وَمَا خَلَقْنَا ٱلسَّمَآءَ وَٱلْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا بَٰطِلًاۚ ذَٰلِكَ ظَنُّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ۚ فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ كَفَرُوا۟ مِنَ ٱلنَّارِ
.
"আমি আকাশ, পৃথিবী এবং উভয়ের অন্তর্বর্তী কোন কিছুই অনর্থক সৃষ্টি করিনি; এ তো অবিশ্বাসীদের ধারণা। সুতরাং অবিশ্বাসীদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের দুর্ভোগ।"
.
[মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ৩৮:২৭]
.
আল্লাহই ভালো জানেন।
.
লেখক: আহমেদ আলি

Comments

Popular posts from this blog

মানহাজ ও মাযাহাব নিয়ে যত দ্বন্দ্বের জবাব....

[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...

কৃষ্ণ কি আল্লাহর নবী ছিল?

এই প্রশ্নটা আমাকেও করা হয়েছে সম্ভবত কয়েকবার। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরটা বড়ই জটিল। কারণ এর কোনো যথাযথ উত্তর আমাদের জানা নেই। যদি কৃষ্ণের গোপীদের সাথে লীলার কাজকে সত্য বলে...

ভগবতগীতার বর্ণভেদ নিয়ে ভক্তদের ভণ্ডামির জবাব

============================ চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ৷ তস্য কর্তারমপি মাং বিদ্ধ্যকর্তারমব্যয়ম্৷৷১৩ অর্থ:  "প্রকৃতির তিনটি গুণ এবং কর্ম অনুসারে আমি মনুষ্য সমাজে চারটি বর্ণ...