[A psychological explanation]
(এই লেখাটি ছেলেদের মনস্তত্ত্ব নিয়ে রচিত। তাই মেয়েদের মনস্তত্ত্বের সাথে এটা পুরোপুরি নাও মিলতে পারে)
(Guys be careful of what you are doing)
এখানে বিষয়বস্তুটা একেবারেই সরল।
প্রথমে চিন্তা করুন আপনার পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে। মা, বাবা, নিজের আপন ভাই বা আপন বোন (ইত্যাদি) যাদের সঙ্গে আপনার স্বভাবজাত স্নেহ ও ভালোবাসার বন্ধন গড়ে ওঠে শিশুকাল হতে। বয়সের বৃদ্ধিতে ছোটবেলার গণ্ডি পেরিয়ে ধীরে ধীরে আপনি উপস্থিত হন নানারূপ দায়িত্ব - কর্তব্যের সম্মুখে।
এই দায়িত্ব ও কর্তব্যের পরিধি বিস্তারের সঙ্গে বিস্তৃত হয় সমাজে আপনার চলাফেরার ক্ষেত্রও। পরিচয় ঘটে বহু মানুষের সাথে। তৈরি হয় বিভিন্ন বন্ধু।
বন্ধুত্বের সীমালঙ্ঘনঃ
স্বাভাবিক ধারণা অনুযায়ী প্রকৃত বন্ধু আপনার পাশে থাকবে সুখ-দু:খে, বিপদে-আপদে সবসময়। কিন্তু বন্ধুত্ব সীমালঙ্ঘনের পর্যায়ে হলে তা থেকে দূরে সরে আসাই বাঞ্ছনীয়। বিষয়টা আর একটু ভেঙে দেখা যাক।
উদাহরণস্বরূপ, স্বাভাবিক ভাবে তরুণ সমাজের দিকে তাকালে দেখা যায়, তাদের মনোজগতের অনেক কথাই তারা পরিবারের সদস্যদের কাছে বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। ফলে সেই কথাগুলো তারা ভাগাভাগি করে নেয় তাদের বন্ধুদের সঙ্গে। ছেলেরা তাদের নিজেদের মধ্যে এবং মেয়েরা তাদের নিজেদের মধ্যে তাদের কথাগুলো অধিক স্বাচ্ছন্দ্য সহকারে একে অপরের কাছে তুলে ধরে। এভাবে নানারূপ ঘটনার পরিক্রমায় গড়ে ওঠে গভীর বন্ধুত্ব।
কিন্তু এই বন্ধুত্ব বিকৃতির পথে মোড় নেয় যখন বন্ধুত্ব ক্রমাগত গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকে পরস্পর অবিবাহিত কোনো ছেলে ও মেয়ের মধ্যে।
একজন ছেলে যেভাবে অন্য কোনো ছেলের সঙ্গে অথবা একজন মেয়ে যেভাবে অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে স্বভাবগত সমপ্রকৃতি অনুযায়ী মার্জিতভাবে অবাধে মিশতে পারে,
সেভাবে একজন ছেলে ও একজন মেয়ে স্বাভাবিক ভাবে পরস্পরের সাথে মিশতে পারে না কেননা সেখানে কাজ করে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণের দরুণ ক্রিয়াশীল স্বভাবসুলভ লজ্জাবোধ। কিন্তু বন্ধুত্বের ক্রমাগত নিবিড়তা এই স্বভাবসুলভ লজ্জাবোধটা ভেঙে দেয় এবং বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে ছেলে মেয়ের মাঝে শুরু হয় নির্লজ্জের ন্যায় অবাধ মেলামেশা। এই বোধ তখন আর থাকে না যে, ছেলে-মেয়ের মাঝে বেশ কিছু সীমা বজায় রাখা উচিত। বরং প্রকৃতিসুলভ এই ভদ্র চিন্তাধারা বিনষ্ট হওয়ায় বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুটার সঙ্গে অবাধ মেলামেশাকেই মূর্খের ন্যায় উৎকৃষ্ট থেকে উৎকৃষ্টতর আচরণ বলে মনে হতে থাকে।
এখানে তাদের বিবেক এই কাজ থেকে বিরত হতে বলে ঠিকই, কিন্তু প্রবৃত্তির মোহে মাতোয়ারা হওয়ায় তারা অন্তরাত্মার পবিত্র এই আহবানকে উপেক্ষা করে ছুটতে থাকে নিজের খেয়াল-খুশির দিকে।
প্রতিক্রিয়াঃ
উপরিউক্ত উদাহরণ এর ধাচে, ক্রমাগত এরূপ নিজ প্রবৃত্তির অনুসারী যদি আপনি হয়ে পড়েন এবং প্রবৃত্তির এই অনুসরণ যদি এক পর্যায়ে আসক্তিতে পরিণত হয়, তবে আপনি বেশ কিছু প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে পারেন।
যদি আপনি সাহসী হয়ে থাকেন ও লোকলজ্জার ভীতি আপনার না থাকে, তবে সুযোগের সৎ ব্যবহার করে আপনি হয়ত আপনার আপাত দৃষ্টিতে প্রতীয়মান প্রাণপ্রিয় সেই বন্ধুটির প্রতি প্রেম নিবেদন(Propose of love) করতে পারেন।
কিন্তু যদি আপনার মধ্যে তখনও কিছু স্বভাবসুলভ পবিত্র চিন্তা ও লজ্জাবোধ থেকে থাকে, তাহলে আপনি হয়ত নিজের মনকে মিথ্যা সান্তনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতে চাইবেন- “না আমরা তো শুধু ভালো বন্ধুই, এর বেশি কিছু না। ”
নিজের সাথে নিজের এই প্রতারণা, আপনার বন্ধুত্বের আড়ালে লুকিয়ে থাকা প্রণয়সুলভ মনোভাবকেই অধিক হারে প্ররোচিত করতে থাকে। ফলে আপনি আপনার সেই সঙ্গীটির অভাব বোধ(miss) করতে থাকেন ও তার সঙ্গ কামনা করেন কারণ আপনার মনে তখন সেই-ই হয়ত অবস্থান করছে।
এ থেকেই আপনি অন্তরে অনুভব করতে শুরু করবেন এক ধরণের যন্ত্রণা। ফলে আপনার প্রিয় বন্ধুর সংস্পর্শে এলে তা কিছুটা কমবে, আর দূরে অবস্থানে আবার তা জাগ্রত হবে। এমনকি আপনার সেই বন্ধুটি যদি আপনার সঙ্গে কোনো বিরূপ আচরণ করে, তাহলে যন্ত্রণা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠবে। ফলে প্রণয়জাত এই মনস্তাত্ত্বিক রোগে আপনি হয়ে পড়বেন উন্মত্ত ও দিশেহারা। আপনার সময় নষ্ট হবে বৃথা কাজে।
চরম পরিণতিঃ
ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব হতে গড়ে ওঠা এই বিকৃত সম্পর্ক যেমন আপনার দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড ও তার ফলাফলের উন্নতিতে বাধা সৃষ্টি করবে, তেমনি সমাজে আপনার সম্মানজনক অবস্থানটাকেও করবে নষ্ট। এমনকি নিজের এই খেয়াল খুশির সবোচ্চতম অনুসরণ আপনাকে নিজের অজান্তেই এনে হাজির করবে অশ্লীলতার সম্মুখে যার বাস্তব প্রমাণ আজ শিক্ষাঙ্গন ও কর্মক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ে, নারী-পুরুষের অপবিত্র অবৈধ সম্পর্ক।
সুতরাং এখনই সময়, নিজেকে প্রশ্ন করুন, যাচাই করুন আপনার অবস্থান ও পরিবর্তন করুন নিজেকে। জীবন সংক্ষিপ্ত হলেও তা মূল্যমান এবং তা তুচ্ছ ও নিকৃষ্টতর কাজের জন্য নয়।
ছেলে-মেয়ে ও নারী-পুরুষের ‘অবাধ মেলামেশা’(Free-mixing) আর যাই হোক পবিত্রতা ও বন্ধুত্বের সমকক্ষ হতে পারে না।
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
"...সাবধান! কোন পুরুষ কোন মহিলার সাথে নির্জনে মিলিত হলে সেখানে অবশ্যই তৃতীয়জন হিসাবে শয়তান অবস্থান করে (এবং পাপাচারে প্ররোচনা দেয়)..."
.
(গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত]
অধ্যায়ঃ ৩১/ কলহ ও বিপর্যয় (كتاب الفتن عن رسول الله ﷺ)
হাদিস নম্বরঃ ২১৬৫
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih))
.
.
আহমেদ আলি সিরিজ/বন্ধুত্বের বিকৃতি
.
.
আরও পড়ুন:
নারী-পুরুষ সংমিশ্রণের বিধান
Comments
Post a Comment