Judge yourself
বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। তবে বিপরীত লিঙ্গের দুই ব্যক্তির মধ্যে আপাত দৃষ্টিতে তৈরি বন্ধুত্বকে কতটুকু প্রকৃত বন্ধুত্বের পর্যায়ে ধরা যায়, তা যথেষ্ট চিন্তার উদ্রেক ঘটায়। ছেলে ও মেয়ের মধ্যে তৈরি হওয়া বন্ধুত্ব কতটুকু প্রকৃত বন্ধুত্বের মর্যাদা ধরে রাখতে সক্ষম তা বড়ই সংশয়ের বিষয় কেননা আপাত দৃষ্টিতে তৈরি হওয়া এই বন্ধুত্ব গড়িয়ে গিয়ে ভালোবাসায়ও রূপান্তরিত হতে পারে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘বিবিধ প্রসঙ্গ’-তে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করতে গিয়েও এই বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন,
"অনেকে বলিয়া থাকেন বন্ধুত্ব ক্রমশঃ পরিবর্তিত হইয়া ভালবাসায় উপনীত হইতে পারে, কিন্তু ভালবাসা নামিয়া অবশেষে বন্ধুত্বে আসিয়া ঠেকিতে পারে না। একবার যাহাকে ভালবাসিয়াছি, হয় তাহাকে ভালবাসিব নয় ভালবাসিব না;
কিন্তু ***একবার যাহার সঙ্গে বন্ধুত্ব হইয়াছে, ক্রমে তাহার সঙ্গে ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপিত হইতে আটক নাই***।
অর্থাৎ বন্ধুত্বের উঠিবার নামিবার স্থান আছে। কারণ, সে সমস্ত স্থান আটক করিয়া থাকে না।”
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বিবিধ প্রসঙ্গ’ থেকে সংগৃহীত)
.
.
অন্যদিকে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ এর মতে,
“ছেলে এবং মেয়ে বন্ধু হতে পারে, কিন্তু তারা অবশ্যই একে অপরের প্রেমে পড়বে।
হয়ত খুবই অল্প সময়ের জন্য, অথবা ভুল সময়ে। কিংবা খুবই দেরিতে, আর না হয় সব সময়ের জন্য।
তবে প্রেমে তারা পড়বেই... ”
হুমায়ুন আহমেদের ধারণা কতটুকু যথার্থ তা একবারে নির্ণয় করা না গেলেও এটা নির্ণয় করা হয়ত কঠিন নয় যে, ছেলে ও মেয়ের মধ্যে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়া সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতাকে সর্বদা বন্ধুত্বের সংজ্ঞা দ্বারা সীমাবদ্ধ রাখা কঠিন।
প্রকৃতিগতভাবে পুরুষ কোনো নারীর প্রতি হঠাতই আকৃষ্ট হয়ে পড়ে, কিন্তু কোনো নারী কোনো পুরুষের প্রতি হঠাৎ করে তীব্রভাবে আকৃষ্ট হয় না। একারণে ছেলে ও মেয়ের পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও সাহচর্যে কোনো মেয়ে কোনো ছেলের প্রতি তেমন আকৃষ্ট না হলেও ছেলেটি কিন্তু সেই মেয়েটির প্রতি ঠিকই আকৃষ্ট হয়ে পড়ে।
সম্প্রতি নরওয়েতে এক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, নারী কোনো পুরুষের কামনাপূর্ণ আকাঙ্ক্ষাকে বন্ধুসুলভ আচরণ বলে ভুল করে, অন্যদিকে কোনো পুরুষ কোনো নারীর বন্ধুসুলভ আচরণকে কামনাসুলভ আচরণ বলে ধরে নেয়।
["...a new study in the journal Evolutionary Psychology has some compelling findings.
The research, conducted in Norway, found that men and women fundamentally misunderstand each other:
***She interprets his signals of sexual interest as friendliness***.
***He reads her signals of friendliness as sexual interest***..."
(Source: https://m.mic.com/articles/109480/science-shows-why-it-seems-impossible-for-men-and-women-to-just-be-friends#.qjDUrq2E7)]
সহজ কথায়, কোনো ছেলে যখন তার মেয়ে বন্ধুটির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাকে খুশি করার চেষ্টা করছে, তখন মেয়েটি ছেলেটির এই আচরণকে “শুধুই বন্ধুর মতো ব্যবহার” বলে ভুল করছে।
একইভাবে মেয়েটি যখন “শুধুই বন্ধু”(Just friend) ভেবে ছেলেটির সাথে হাসি ঠাট্টা ও অবাধে মেলামেশা করে চলেছে, তখন ছেলেটি ভাবছে, মেয়েটি তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে।
এহেন আচরণকে কীভাবে যে “বন্ধুত্ব” বলে, সেটা ঠিক বোধগম্য হয় না! আর তারপরও যদি একে বন্ধুত্বের পর্যায়ে বলে দাবি করা হয়, তবে বলব, এটা তো প্রকৃত বন্ধুত্ব নয়ই, বরং বন্ধুত্বের আড়ালে লুকিয়ে থাকা প্রণয়সুলভ বিশৃঙ্খলা ও নির্লজ্জতারই প্রতিরূপ।
সঙ্গত কারণেই হয়ত Oscar Wilde নারী ও পুরুষের মধ্যে আবেগ, প্রেম, শত্রুতা ইত্যাদির অস্তিত্ব স্বীকার করলেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে অস্বীকার করে বলেন,
"Between men and women there is no friendship possible. There is passion, enmity, worship, love, but no friendship."
(Irish Dramatist Oscar Wilde)
.
.
আহমেদ আলি সিরিজ/বন্ধুত্ব বনাম ভালোবাসা
.
.
আরও পড়ুন:
নারী-পুরুষ সংমিশ্রণের বিধান
Comments
Post a Comment