Skip to main content

ভাগ্য নিয়ে সকল বিভ্রান্তির সংক্ষিপ্ত জবাব


স্রষ্টা আগে থেকে সকল কিছু জানেন মানে এই না যে, তিনি আমাদের ওপর জোর প্রয়োগ করবেন। কেউ জানলে দোষটা তার হয় না, বরং যে কাজটা করে, দোষটা তারই হয়। উদাহরণ হিসেবে, একজন বিজ্ঞানী একটা যন্ত্র বানালেন মানুষের কল্যাণের জন্য, এখন তিনি জানেন যে, এটা দিয়ে মানুষ খারাপ কাজও করতে পারে, তিনি সেজন্য সতর্কও করে দিলেন সবাইকে। কিন্তু একদল দুষ্কৃতি সেটাকে খারাপভাবে কাজে লাগাল, তাহলে দোষটা এখানে সেই দুষ্কৃতিদেরই। আইনস্টাইনের  E=mc^2 এর ফর্মুলা ধ্বংসাত্মক কাজের জন্য তিনি উদ্ভাবন করেন নি। কিন্তু এই ফর্মুলাকে ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবহার করে আমেরিকা হিরোশিমা-নাগাসাকি উড়িয়ে দেয়। এখানে তাই কেউ যদি কোনো কিছু জেনে থাকে, এটার অর্থ এই না যে, এর জন্য সেই দায়ী হবে। যেমন ক্লাসের শিক্ষক তার অভিজ্ঞতা থেকে জানেন যে, এই ছেলে পাস করবে, এই ছেলে ফেল করবে, পরীক্ষার পর দেখা গেল তাই-ই হয়েছে। কিন্তু ফেল করার ক্ষেত্রে দোষটা কি শিক্ষকের? না! তিনি তো ছাত্রদের ভালভাবেই বুঝিয়েছিলেন পড়াশুনা করার জন্য; এখন কেউ সেই নির্দেশে কান না দিলে দোষটা তার নিজেরই। একইভাবে আল্লাহও আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, সতর্ক করেছেন, কিন্তু কেউ সেটায় গুরুত্ব না দিলে দোষটা তারই ওপর বর্তাবে। তিনি ভবিষ্যৎ জানেন অর্থ এই নয় যে, তিনি এর জন্য দায়ী, অথবা তিনি আমাদের ওপর সেটা চাপিয়ে দিচ্ছেন। বরং আমরা নিজেদের ইচ্ছাতেই জান্নাত অথবা জাহান্নামের পথ বেছে নিচ্ছি আর আল্লাহ সেটা আগে থেকেই জানেন। কিন্তু তিনি জানেন বলে আগেই আমাদের জান্নাত বা জাহান্নামে প্রেরণ করছেন না, এর কারণ হল এটা তখন হয়ে যাবে অবিচার। যেমনভাবে শিক্ষক আগে থেকেই জানতে পারেন তার অভিজ্ঞতা থেকে যে, কোন ছেলে ফেল করবে; এখন যদি পরীক্ষা না নিয়েই ফেল করিয়ে দেওয়া হয়, তবে এটা তখন হয়ে যাবে অবিচার। একইভাবে সুবিচারের জন্য আল্লাহ তাআলা প্রথমে আমল (কৃতকর্ম) করার সুযোগ দেবেন এই দুনিয়াতে। আর এর ভিত্তিতেই আখিরাতের (পরকালের) বিষয় নির্ধারিত হবে।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে, যদি আমার কাজই সব কিছু হয়, আল্লাহ এখানে আমার ভাগ্যের ওপর হস্তক্ষেপ না করেন, তাহলে কীভাবে তিনি নিয়ন্ত্রণকারী হলেন? আর যদি তিনি নিয়ন্ত্রণকারী হন, তাহলে তিনিই তো ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন, আমার স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি তাহলে কোথায়?

এর উত্তর হল, আমরা সীমার মধ্যে স্বাধীন, তবে এই স্বাধীনতা অসীম নয়। উদাহরণ হিসেবে, সিনেমার পর্দায় অভিনেতাদের অভিনয় আমরা দেখতে পাই। কিন্তু এর পিছনে একজন পরিচালক থাকে যেটা আমরা জানি, কিন্তু সেই পরিচালক কীভাবে পরিচালনা করেছিলেন, সেটি সরাসরি সিনেমার পর্দায় দেখানো হয় না। এখানে অভিনেতারা কিন্তু নিজেদের ইচ্ছাতেই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছে এবং নিজেদের ইচ্ছাতেই সকল কাজ সম্পাদন করছে, অথচ তাদের একজন পরিচালক নিয়ন্ত্রণ করছেন। একইভাবে ভাগ্যের ওপরও আল্লাহ তাআলার সূক্ষ্ম নিয়ন্ত্রণ রয়েছে যা আমরা সরাসরি দেখতে পাচ্ছি না, অথচ আমাদের সীমার মধ্যে স্বাধীনতায় আমরাই আমাদের কাজগুলো নিজেদের ইচ্ছাতেই সম্পাদন করছি এবং এর যথাযোগ্য বিনিময় আখিরাতে (পরকালে) প্রদান করা হবে ইনশাআল্লাহ।

আব্দুল আলীম ইবনে কাওসার তাঁর রচিত "প্রশ্নোত্তরে সহজ তাওহীদ শিক্ষা" গ্রন্থে উল্লেখ করছেন,

"মানুষ কি বাধ্যগত জীব নাকি স্বাধীন?

এধরনের শব্দ ব্যবহার করা উচিৎ নয়। কেননা এ দু’টিই ভুল। কুরআনুল কারীম ও সহীহ হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ী প্রমাণিত হয়, মানুষের ইচ্ছাশক্তি রয়েছে এবং সে তার ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগের মাধ্যমেই আমল করে থাকে। তবে এসবকিছুই আল্লাহ্‌র ইলম এবং ইচ্ছার অধীন। এরশাদ হচ্ছে,

﴿لِمَن شَآءَ مِنكُمۡ أَن يَسۡتَقِيمَ ٢٨ وَمَا تَشَآءُونَ إِلَّآ أَن يَشَآءَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢٩ ﴾ [التكوير: ٢٨،  ٢٩]

“(এই উপদেশ) তার জন্য, তোমাদের মধ্যে যে সরল পথে চলতে চায়। তোমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইচ্ছার বাইরে অন্য কিছুই ইচ্ছা করতে পার না” (তাকভীর ২৮-২৯)।"

[গ্রন্থঃ প্রশ্নোত্তরে সহজ তাওহীদ শিক্ষা
অধ্যায়ঃ তাওহীদ সম্পর্কে প্রশ্ন এবং উত্তর
লেখকঃ আব্দুল আলীম ইবনে কাওসার]
source - http://www.hadithbd.com/shareqa.php?qa=1508

আল্লাহই ভাল জানেন।

===============================
- Ahmad Al-Ubaydullaah

Comments

Popular posts from this blog

মানহাজ ও মাযাহাব নিয়ে যত দ্বন্দ্বের জবাব....

[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...

কৃষ্ণ কি আল্লাহর নবী ছিল?

এই প্রশ্নটা আমাকেও করা হয়েছে সম্ভবত কয়েকবার। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরটা বড়ই জটিল। কারণ এর কোনো যথাযথ উত্তর আমাদের জানা নেই। যদি কৃষ্ণের গোপীদের সাথে লীলার কাজকে সত্য বলে...

ভগবতগীতার বর্ণভেদ নিয়ে ভক্তদের ভণ্ডামির জবাব

============================ চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ৷ তস্য কর্তারমপি মাং বিদ্ধ্যকর্তারমব্যয়ম্৷৷১৩ অর্থ:  "প্রকৃতির তিনটি গুণ এবং কর্ম অনুসারে আমি মনুষ্য সমাজে চারটি বর্ণ...