[লেখার সঙ্গে যুক্ত ভিডিওটিও দেখুন যেখানে Candace Owens যিনি একজন American conservative commentator and political activist - নারীবাদ বা Feminism এর আসল চেহারা তার বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন]
ভিডিও লিঙ্ক:
https://youtu.be/zfVw5tqoAYA
বর্তমানের নাস্তিকীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় ছাত্র-ছাত্রীদের মাথায় যে জিনিসের ভূত বেশ ভালভাবে ঢুকানো হয়, তা হল নারীবাদ বা Feminism.
নারীবাদের মূল লক্ষ্য সমাজে নারীদের প্রতি অন্যায়, অবিচার দূর করে তাদের প্রকৃত মর্যাদা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা। আর তাই নারীবাদ খুঁজে খুঁজে বের করে ঠিক কোন্ কোন্ জায়গায় নারীকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
এটুকু শুনেই হয়ত অনেকের খুব ভাল লাগতে পারে। কিন্তু এর গভীরে আরও কিছু বিষয় রয়েছে।
নারীবাদের দরকার পড়ল কেন আগে সেটা বুঝতে হবে। যদি আপনি সমাজব্যবস্থার দিকে তাকান, তবে দেখবেন - যুগে যুগে নারীকে বানানো হয়েছে ভোগের সামগ্রী। পৌত্তলিক জাতি থেকে শুরু হয়েছে নারীকে দাসী বানানোর ব্যবস্থা। নারী হিসেবে জন্মগ্রহণ করাকে নীচু জন্ম, পাপপূর্ণ জন্ম ইত্যাদি হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। নারীকে বলা হয়েছে - পুরুষকে দেবতা জ্ঞানে পুজো করতে। ঋতুমতী নারীকে অপমান করা হয়েছে। নারীকে পশুর সাথে তুলনা করা হয়েছে। গর্ভধারণকে অভিশপ্ত অবস্থা বলা হয়েছে। নারীকে সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আবার কখনও তাকে মত প্রকাশের অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। এরকম বহুবিধ বিষয়ের সাথে আরও দুটি প্রধান বিষয় রয়েছে - ১) নারীর নিজস্ব কোনো পরিচয় নেই; তার পরিচয় পিতা বা স্বামীর পরিচয়ে হবে এবং তাই সে পুরুষের অধীনস্থ দাসীর ন্যায় এক প্রকার জীব; ২) নারী, পুরুষের নিয়মের অধীন; পুরুষ যে নিয়ম নির্ধারণ করে নারীর ওপর চাপিয়ে দেবে, নারীকে সেই নিয়ম মেনে সমাজে চলতে হবে।
এহেন বিষয়াবলির কারণে নাস্তিকীয় ভাবধারায় এই মতবাদ উঠে আসে যে, নারীগণ পুরুষের অধীনস্থ হয়ে পুরুষের তৈরি নিয়মে আর চলবে না। যেমনভাবে পুরুষ স্বাধীনভাবে চলাফেরা করে, নারীও সেভাবে চলাফেরা করবে আর তেমনই অধিকার ভোগ করবে (যেমনটা পুরুষেরা ভোগ করে থাকে); অর্থাৎ সমাজে নারীদের অবস্থান হবে পুরুষের সমান। এর অর্থ হল, পুরুষ যা যা করবে, যেমন যেমন সুযোগ পাবে, নারীও তাই তাই করার ও পাওয়ার দাবিদার হবে।
[কিন্তু সমান দায়িত্ব পালনের বেলায় নারীবাদী মহিলারা আবার কাচুমাচু শুরু করে দেয়]
এর মানে এই দাঁড়াচ্ছে যে, যেহেতু এটি একটি ধর্মহীন মতবাদ, তাই পুরুষ যদি যিনা করার অধিকার পায়, নারীও তবে যিনা করার অধিকার পাবে। পুরুষ যদি মদ, গাঁজা, সিগারেট খাওয়ার অধিকার পায়, নারীও তা করতে পারবে! পুরুষ যদি সমকামিতায় লিপ্ত হয়, নারীও সমকামী হতে পারবে! পুরুষ যদি দাঁড়িয়ে মূত্র বিসর্জন করতে পারে, নারীও কৃত্রিম বস্তু লাগিয়ে দাঁড়িয়ে সেই কাজ সারতে পারবে! পুরুষ যদি গর্ভাবস্থা এড়াতে পারে, নারীও সন্তান নেওয়া ছেড়ে দিতে পারে! পুরুষ যদি বাইরে কাজ করে সন্তান-সন্ততি পালনের ঝামেলা এড়াতে পারে, নারীও তবে সংসার ভেঙে সন্তান-সন্ততির প্রতি অবহেলা করতে পারে! পুরুষ যদি পরনারীর সাথে প্রেমে লিপ্ত হয়, তবে নারীও পরকিয়া করতে পারবে (যা আসলে যিনা, যেটা আগেই বলা হয়েছে)।
অর্থাৎ এই মতবাদ প্রকৃতপক্ষে হেদায়েত বঞ্চিত একটি ব্যবস্থাকে তুলে ধরে যেখানে পুরুষ স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠলে নারীও সেই ভাবধারায় তাল মিলিয়ে স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠবে। ফলে ভাল-মন্দের কোনো বাছ-বিচার থাকবে না এবং প্রবৃত্তির স্বার্থপূরণই সেখানে হয়ে উঠবে মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
.
.
ইসলাম এহেন ব্যবস্থাকে সমর্থন করে না! ইসলামে নারীর অধিকার বিষয়ে লেখার শেষের দিকে কতগুলো লিঙ্ক দেওয়া হল; কেউ ইচ্ছা করলে সেগুলোতে ভিজিট করে বিস্তারিত জানতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
তবে এখানে সংক্ষেপে কিছু মূল পয়েন্ট বলার চেষ্টা করছি।
আমার বোধগম্যতায় যতটুকু উপলব্ধি করেছি, তাতে ইসলাম Patriarchy (পুরুষতন্ত্র বা পিতৃতন্ত্র)-ও না, আবার Feminism বা নারীবাদও না। বরং এটা আল্লাহ প্রদত্ত ব্যবস্থা ও জীবনধারা।
এখানে যদি পুরুষ নিয়ম বানিয়ে তা নারীর ওপর চাপিয়ে দিত, তবে এটাকে Patriarchy বলা যেত। কিন্তু এখানে প্রত্যেক (সহিহ) মুসলিম প্রতিটি বিধানকে এই নিয়ত ও বিশ্বাসে পালন করে যে, প্রত্যেকটা বিধান আল্লাহ প্রদত্ত। তাই নারী-পুরুষ প্রত্যেকেই এখানে নিজ নিজ অবস্থানে নিজেদের দায়িত্ব পালন করছে আর সব কিছুর কর্তৃত্বে রয়েছেন মহান আল্লাহ।
তাই ইসলাম কোনো পিতৃতন্ত্র, মাতৃতন্ত্র, নারীবাদ নয়। বরং ইসলাম হল আল্লাহ প্রদত্ত ব্যবস্থাপনা যেখানে পুরুষ আর নারী সমান নয়, বরং তারা সমতুল্য। অর্থাৎ তারা equal নয় (যেহেতু নারী-পুরুষ ভিন্ন প্রকৃতির), বরং equivalent. এর মানে হল, যেটা পুরুষের প্রকৃতির সাথে অধিক সামাঞ্জস্যপূর্ণ, আল্লাহ সেরকম দায়িত্ব পুরুষকে দিয়েছেন; আর নারীকে সেই দায়িত্ব দিয়েছেন যেটা নারীর প্রকৃতির সঙ্গে অধিক মানানসই। এখানে তাই পুরুষ নিজেকে নারীর থেকে শ্রেষ্ঠ বলে বা নারী নিজেকে পুরুষের থেকে শ্রেষ্ঠ বলে দাবি করতে পারবে না কেবল লিঙ্গ বা gender এর ভিত্তিতে। সূরা হুজুরাত এর ১৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন যে,
يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَٰكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَىٰ وَجَعَلْنَٰكُمْ شُعُوبًا وَقَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوٓا۟ۚ إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ ٱللَّهِ أَتْقَىٰكُمْۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ
"হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদা সম্পন্ন যে অধিক মুত্তাকী। আল্লাহ সব কিছু জানেন, সব কিছুর খবর রাখেন।" (আল-কোরআন ৪৯:১৩)
অর্থাৎ, সেই-ই হল আল্লাহর নিকট মর্যাদার অধিকারী যার আছে তাকওয়া (আল্লাহ ভীরুতা, আল্লাহর প্রতি সচেতনতা, ধার্মিকতা, ন্যায়পরায়ণতা ইত্যাদি)। অর্থাৎ ইসলামে শ্রেষ্ঠ হওয়ার পথ হল তাকওয়া অর্জন করা; নারী হওয়াও নয়, পুরুষ হওয়াও নয়। নারী বা পুরুষ যেই হোক না কেন, যার তাকওয়া বেশি হবে, সে অপরের থেকে বেশি সম্মান-মর্যাদার অধিকারী হবে। আমাদের দেশে মুসলিম সমাজে এর সবটা হয়ত পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয় না। তাই আমাদের এখন দায়িত্ব হল ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে পুনরুজ্জীবিত করা।
দ্বিতীয় যে বিষয়টি তোলা হয় প্রায়ই, সেটা হল, নারীর আত্মপরিচয়! নারীবাদীদের দাবি হল, তারা পুরুষের দাসী নয়। তাই তাদের পরিচয় - পিতার পরিচয়ে, স্বামীর পরিচয়ে হতে পারে না। তাদের পরিচয় হবে স্বতন্ত্র! একারণে অনেক উগ্র নারীবাদী নিজের নামের সাথে যুক্ত নিজের পিতার নামের শেষ নাম বা surname ত্যাগ করে। অনেকে আবার স্বামীর নামের surname নিতে বাধ্য হয় বিধায় সেটাও ত্যাগ করে। অনেকে আবার এই থিওরি খাড়া করে যে, তারা লেখাপড়া শিখে চাকরি-বাকরি করবে এজন্য যে, যাতে সমাজে তারা তাদের একটা আলাদা বা স্বতন্ত্র পরিচয় বা identity তৈরি করতে পারে।
তাহলে ইসলাম এখানে কী বলছে?
প্রথমত, ইসলামে নারী বা পুরুষ যে কারো পরিচয় তার পিতার পরিচয়ে হবে। পুরোটা আগে পড়ুন।
এই পরিচয়ের কারণ এটা নয় যে, এতে নারীর আলাদা পরিচয় থাকবে না। বরং এই পরিচয়ের কারণ হল, যাতে একটি নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা বজায় রাখা যায়। কেমন ব্যবস্থা? যেমন ধরুন, ইসলাম নারীকে সম্পত্তির অধিকার দিয়েছে পশ্চিমা সমাজে নারীর সম্পত্তির অধিকার পাওয়ার বহু পূর্বে। সেক্ষেত্রে নারী বা পুরুষ কারও না কারও পরিচয়ে সন্তানের পরিচয় হতে হবে। সেক্ষেত্রে আল্লাহ এখানে পুরুষকে নির্ধারণ করেছেন এবং মেয়ে সন্তান সেই পুরুষ পিতার নামের উপাধি পাওয়ার মাধ্যমে (সেই মেয়ে) সেই বংশের সাথে জুড়ে যাচ্ছে এবং তাকে বংশ পরিচয়ে চেনা সম্ভব হচ্ছে বিধায় তাকে সম্পত্তি প্রদানের সময়ও পরিচয়ের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না। আবার সেই মেয়ে যখন স্বামীর ঘরে যাচ্ছে, তখন ইসলামিক ব্যবস্থা অনুযায়ী, সেই মেয়ে তার স্বামীর নামের উপাধি বা শেষ নাম বা surname গ্রহণ করতে পারবে না। বরং তাকে তার পিতার নামের উপাধিই রাখতে হবে। এতে করে সেই মেয়ের বংশ পরিচয় কী - তা সহজে বোঝা যাবে। পরবর্তীতে যদি সেই মেয়ের ডিভোর্স হয় ও সে অন্য কাউকে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করে, সেক্ষেত্রেও তার নিজের বাবার পরিচয় নামের সাথে থাকলে তার বংশধারা চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। এতে করে সামাজিক ব্যবস্থা নিয়মতান্ত্রিক ও সুশৃঙ্খল হয়ে উঠবে।
এটা তো গেল বংশ পরিচয়। কিন্তু এখানে নারীর স্বতন্ত্র পরিচয় তাহলে কোথায়?
এর উত্তরে আল-কোরআনের সূরা বাকারার ১৫৬ নং আয়াত পেশ করব যেখানে আল্লাহ মুমিনদের ব্যাপারে বলছেন:
ٱلَّذِينَ إِذَآ أَصَٰبَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُوٓا۟ إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّآ إِلَيْهِ رَٰجِعُونَ
"যাদের উপর কোন বিপদ নিপতিত হলে তারা বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহরই জন্য এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।" (আল-কোরআন ২:১৫৬)
এখানে এই "ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন" (Arabic: إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّـا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ) এর "ইন্না লিল্লাহি" অংশ প্রকাশ করছে যে, "আমরা আল্লাহরই"; অর্থাৎ মুমিন পুরুষ অথবা মুমিন নারী - যে কারোরই প্রথম পরিচয় এবং স্বতন্ত্র পরিচয় হল - সে আল্লাহর বান্দা (দাস) অথবা আল্লাহর বান্দী (দাসী)!
অর্থাৎ ইসলামে একজন নারী প্রথম থেকেই নিজের এই স্বতন্ত্র পরিচয়ে পরিচিত যে, "সে আল্লাহর বান্দী"! সে পুরুষের দাসীও নয় আর পুরুষ তার পূজনীয় দেবতাও নয়। বরং পুরুষ কেবল তার সমাজ ও জীবনের সঙ্গী মাত্র!
.
.
.
.
বিঃদ্রঃ ইসলামে নারীর অধিকার কীরূপ জানতে এই লিঙ্কগুলোর বিষয়বস্তু দেখতে পারেন:-
১) ইসলামে নারীর অধিকার - আধুনিক না সেকেলে
visit - https://youtu.be/b_K8EbYWQ50
.
.
২) ইসলামে নারীর অধিকারগুলো কী কী?
visit - https://islamqa.info/amp/bn/answers/70042
.
.
৩) ইসলামে নারীর যৌন অধিকার
visit - https://www.quraneralo.com/sexual-rights-of-a-woman-in-islam/?amp
.
.
৪) জাহান্নামে নারী ও নারীর স্বল্পবুদ্ধিতা নিয়ে ইসলামবিদ্বেষীদের অভিযোগের জবাব
visit - https://m.facebook.com/notes/ahmad-al-ubaydullaah/জাহান্নামে-নারী-ও-নারীর-স্বল্পবুদ্ধিতা-নিয়ে-ইসলামবিদ্বেষীদের-অভিযোগের-জবাব/621303825058792/
.
.
৫) ইসলাম কি স্ত্রী নির্যাতনের অনুমতি দেয়??
visit - https://m.facebook.com/notes/ahmad-al-ubaydullaah/ইসলাম-কি-স্ত্রী-নির্যাতনের-অনুমতি-দেয়/588257065030135/
.
.
৬) ইসলামে ক্রীতদাসি ও যুদ্ধবন্দিনীর সাথে যৌন সম্পর্কের বৈধতার স্বরূপ
visit - https://response-to-anti-islam.com/show/ইসলামে-ক্রীতদাসি-ও-যুদ্ধবন্দিনীর-সাথে-যৌন-সম্পর্কের-বৈধতার-স্বরূপ-/173
.
.
৭) দাসপ্রথা ও ইসলাম
visit - https://response-to-anti-islam.com/show/দাসপ্রথা-ও-ইসলাম-/172
.
.
৮) কেন ইসলাম নারীদের একাধিক বিয়ের অনুমতি দেয় না?
visit - https://m.facebook.com/shottokothon1/posts/476119756157743
.
.
.
===============================
- Ahmad Al-Ubaydullaah
Comments
Post a Comment