Skip to main content

এ্যারিস্টটলের নারী ও কৃতদাসের প্রতি নিম্নতর দৃষ্টিভঙ্গি


পৌত্তলিকতা নারীজাতি এমনকি দাসপ্রথার মাধ্যমে বন্দী কৃতদাসকেও যে যুগে যুগে কী পরিমাণ অপমান করেছে আর নীচে নামিয়েছে, তার একটা প্রমাণ পাওয়া যাবে এ্যারিস্টটল (Aristotle) এর Poetics থেকে। ১৫ তম অধ্যায়ে Tragedy বা বিয়োগাত্মক নাটকের চরিত্র বা character সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি নারীকে নিম্নজাতীয় (inferior being) আর কৃতদাসকে অপদার্থ (worthless) বলেছেন।

প্রথমে S. H. BUTCHER এর ইংরেজি অনুবাদ ও পরে ড. সাধনকুমার ভট্টাচার্যের বাংলা অনুবাদ দেওয়া হল।

"In respect of Character there are four things to be aimed at. First, and most important, it must be good. Now any speech or action that manifests moral purpose of any kind will be expressive of character: the character will be good if the purpose is good. This rule is relative to each class.

Even a woman may be good, and also a slave; though the woman may be said to be an inferior being, and the slave quite worthless...."

(THE POETICS OF ARISTOTLE/XV. The element of Character in Tragedy; translated by S. H. BUTCHER) source - https://bit.ly/2lXpDGi

.

.
"চরিত্র সম্পর্কে চারিটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রথমতঃ চরিত্র ভালো হওয়া চাই। এখন, যে কথা বা কাজ কোন রকমের নৈতিক উদ্দেশ্য ব্যক্ত করে তাই চরিত্রব্যঞ্জক; চরিত্র তখনই ভালো যখন উদ্দেশ্যটিও ভালো। এই সূত্রটি প্রত্যেক শ্রেণী সম্পর্কেই আপেক্ষিকভাবে প্রযোজ্য।

এমনকি একটা স্ত্রীলোকও ভালো হতে পারে - একটা ক্রীতদাসও ভালো হতে পারে, যদিও স্ত্রীলোক ব্যক্তি হিসাবে নিম্ন জাতীয় এবং ক্রীতদাস সম্পূর্ণ অপদার্থ..."

(গ্রন্থ: এ্যারিস্টটলের পোয়েটিকস্ ও সাহিত্যতত্ত্ব/লেখক - ড. সাধনকুমার ভট্টাচার্য/একাদশ সংস্করণ/পৃষ্ঠা ৬৬)

.

.

পৌত্তলিকদের চালু করা দাসপ্রথা এখনও unofficially পৃথিবীতে আছে। শুধু ভারতেই এখনও বিভিন্ন টাইপের দাসপ্রথা চালু আছে। যার পরিণতিতে পতিতাবৃত্তিও বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু এগুলো সমাজ থেকে নির্মূলের পথ পৌত্তলিকতা দেখাতে পারে নি। বরং যুগে যুগে বিশুদ্ধ একেশ্বরবাদী তাওহীদপন্থিরাই পৌত্তলিক কুপ্রথার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে মানুষকে তার প্রাপ্য মর্যাদা ফিরিয়ে এক সৃষ্টিকর্তার দাসত্বের পথে আনার জন্য। বর্তমান যুগের সাপেক্ষে এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবাদের যুগে আরবের ভূমি হতে পৌত্তলিকদের মাঝে চালু থাকা দাসপ্রথার পুরোপুরি বিলুপ্তি সাধন। দাস-দাসীদের প্রতি সদাচারণ তথা মানবজাতির মর্যাদা তখনই সম্ভব যখন মানুষ অন্য ব্যক্তি বা সৃষ্টির দাসত্ব ছেড়ে দিয়ে কেবল এক সৃষ্টিকর্তারই দাসত্ব শুরু করবে।

"আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

তোমাদের কেউ যেন ‘আমার দাস ও আমার দাসী’ না বলে এবং অধীনস্থরাও যেন ‘আমার রব, আমার রাব্বাতী’ না বলে। বরং মনিব তার দাসকে বলবে, ফাতায়া ও ফাতাতী (আমার যুবক ও আমার যুবতী)। আর অধীনস্থ লোকেরাও বলবে, আমার সাইয়িদ আমার সাইয়িদাহ (আমার নেতা ও আমার নেত্রী)। কেননা তোমরা সবাই গোলাম, মহান আল্লাহই (এক সত্য সৃষ্টিকর্তাই) হলেন একমাত্র রব (প্রতিপালক)।"

[সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত) ৪৯৭৫; হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)]
source - http://www.hadithbd.com/share.php?hid=62343
.
.
একমাত্র পৌত্তলিকতাই মানুষের দাসত্বের শিক্ষা দেয় আর ইসলাম সৃষ্টির সমস্ত রকম দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে এক সত্য সৃষ্টিকর্তার দাসত্বের পথ দেখায়

"...যে আপন ক্রীতদাসীকে শিক্ষা দেয় এবং উত্তম শিক্ষা দান করে এবং শিষ্টাচার শিক্ষা দেয় এবং উত্তমভাবে শিষ্টাচার শিক্ষা দেয় এরপর তাকে মুক্ত করে বিয়ে করে তার জন্য দ্বিগুণ সওয়াব..."

[সহীহ বুখারী (তাওহীদ) ৫০৮৩; হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)] http://www.hadithbd.com/share.php?hid=29646
.
.
ইসলামে শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড লিঙ্গ, বর্ণ, গোত্র, বংশ, জাতীয়তা ইত্যাদি কিছুই নয়, বরং একমাত্র "তাকওয়া"!

একারণেই আল্লাহ তাআলা সূরা হুজুরাতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করছেন,

يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَٰكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَىٰ وَجَعَلْنَٰكُمْ شُعُوبًا وَقَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوٓا۟ۚ إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ ٱللَّهِ أَتْقَىٰكُمْۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ

"হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার (একারণে নয় যে, তোমরা একে অপরকে ঘৃণা করবে)। তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে অধিক 'তাকওয়া' এর অধিকারী (অধিক আল্লাহ ভীরু, ন্যায়পরায়ণ, ধার্মিক ইত্যাদি)। আল্লাহ সবকিছু জানেন, সব কিছুর খবর রাখেন।"
(আল-কোরআন, ৪৯:১৩)

আর এজন্যই প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বিদায় হজ্জ্বের ভাষণে বলেন,

"সকল মানুষই আদম এবং হাওয়া থেকে এসেছে। একজন আরবের কোনো অনারবের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব নেই। এমনকি কোনো অনারবেরও কোনো আরবের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব নেই। শ্বেতকায় কোনো ব্যক্তির শ্রেষ্ঠত্ব নেই কৃষ্ণবর্ণের কোনো ব্যক্তির ওপর, এমনকি কৃষ্ণবর্ণের কোনো ব্যক্তিরও শ্রেষ্ঠত্ব নেই শ্বেতকায় কোনো ব্যক্তির ওপর; কেবল যা দিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব বিচার্য হবে তা হল তাকওয়া (ধার্মিকর্তা, ন্যায়পরায়ণতা, সৎকর্ম প্রভৃতি)।"

[আহমাদ ২২৯৭৮/হাদিসের মান: সহিহ]
source - https://bit.ly/2k9MKgu
.
.
ইসলামের এরূপ সমতায় মুগ্ধ হয়ে স্বামী বিবেকানন্দ পর্যন্ত বলতে বাধ্য হয়েছেন,

"মহম্মদের ধর্ম আবির্ভূত হয় জনসাধারণ এর জন্য বার্তারূপে। তাঁহার প্রথম বাণী ছিল-'সাম্য'। একমাত্র ধর্ম আছে-তাহা প্রেম। জাতি বর্ণ বা অন্য কিছুর প্রশ্ন নাই। এই সাম্যভাবে যোগ দাও! সেই কার্যে পরিণত সাম্যই জয়যুক্ত হইল। সেই মহতী বাণী ছিল খুব সহজ সরলঃ স্বর্গ ও মর্ত্যের স্রষ্টা এক ঈশ্বরে বিশ্বাসী হও। শূন্য হইতে তিনি কিছু সৃষ্টি করিয়াছেন। কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিও না।"

(স্বামী বিবেকানন্দ রচনাবলী/৮ম খণ্ড/মহাপুরুষ-প্রসঙ্গ/মহম্মদ) source - https://bit.ly/2lBvtx9
.
.
==========================

- আহমাদ আল-উবায়দুল্লাহ

Comments

Popular posts from this blog

মানহাজ ও মাযাহাব নিয়ে যত দ্বন্দ্বের জবাব....

[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...

কৃষ্ণ কি আল্লাহর নবী ছিল?

এই প্রশ্নটা আমাকেও করা হয়েছে সম্ভবত কয়েকবার। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরটা বড়ই জটিল। কারণ এর কোনো যথাযথ উত্তর আমাদের জানা নেই। যদি কৃষ্ণের গোপীদের সাথে লীলার কাজকে সত্য বলে...

Permission of Adultery and Fornication in Hinduism - Remaining Part

Read the previous part here: http:// uniqueislamblog.blogspot.com /2017/11/ permission-of-adultery-and-fornication.html ?m=1 => Condemning physical relationship outside marriage: Generally physical relationship outside marriage is condemned in Hindu Philosophy. Bhagabat Gita says, "There are three gates leading to this hell-**lust**, anger, and greed. Every sane man should give these up, for they lead to the degradation of the soul." (Bhagabat Gita, 16:21) ['Bhagabat Gita As It Is' by His Divine Grace A.C. Bhaktivedanta Swami Prabhupada] This verse indicates that lust or desire outside marriage can lead one to hell if it is not maintained properly. It is further mentioned in Yajur Veda, "O God, **cast aside a lover**, **who cohabits with another's wife** ; **a paramour having illicit connection with a domestic woman** ; **an unmarried elder brother suffering from the pangs of passion** ; younger brother who has married before his elder to ...