Skip to main content

কর্মবাদ খণ্ডন

ভারতীয় পৌত্তলিকতার মূল ভিত্তিগুলোর মধ্যে একটি হল "কর্মবাদ" (karma) যা Abrahamic Monotheism স্বীকার করে না। আজ এর ওপর কয়েকটা জিনিস দেখানোর চেষ্টা করব। প্রথমত, কর্ম বা karma বলতে স্বাভাবিকভাবে সকল ধরণের কাজকে বোঝায়; তবে মূল দর্শনটা হল, যেরূপ কর্ম করা হবে, সেরূপ ফল ভোগ করতেই হবে। এর বিকল্প কোনো পথ নেই। যদি সৎকর্ম করা হয়, তবে পুণ্যফল ভোগ করতে হবে, আর পাপ কর্মে পাপের ফল। এখানে বিশেষ দিকটি হল, জীবিত অবস্থায় কেউ তার কৃতকর্ম করে মারা গেলে সেই ফল সে ভোগ করার জন্য আবার জন্মগ্রহণ করবে। এখানে সে হয় অন্য কোনো সুখ বা দুঃখের স্থানে জন্মাবে যেকোনো টাইপের জীব হয়ে, নয়ত স্বর্গ-নরক ইত্যাদি স্থানে পুণ্যফল বা পাপফল ভোগ করে পুনরায় পূর্বজন্মের কর্ম অনুসারে সৃষ্টির কোনো একটি স্থানে জন্মগ্রহণ করবে।

এক্ষেত্রে কিছু কিছু ব্যাখ্যায় স্বর্গ-নরকের বাস্তব অস্তিত্ব অনেকে স্বীকার করে না। সেক্ষেত্রে স্বর্গ-নরকের প্রসঙ্গ বাদ দিলেও মুখ্য বিষয় হল, কৃতকর্মের ফল ভোগ করার জন্য আত্মা বার বার মৃত্যুর মাধ্যমে দেহ পরিবর্তন করে আর বার বার জন্মগ্রহণ করে। কর্মের যে ছাপ বা প্রভাব আত্মার মধ্যে থেকে যায়, তা হল সংস্কার। আর এই প্রভাব অনুযায়ী আত্মা বার বার দেহধারণ করে কর্মের ফল ভোগ করার অবস্থা অনুযায়ী। যেমন পুণ্য কর্ম করলে পরবর্তী জন্মে হয়ত মানুষ হয়ে জন্মাল অথবা পাপকর্মের জন্য পরবর্তী জন্মে হয়ত পশু-পাখি বা অন্য জীব হয়ে জন্মাল ইত্যাদি ইত্যাদি যেটা প্রায় সকলেরই জানা। এবার নতুন কিছু বলি।

প্রথমত, মূল বিষয়টি শুরু হয়েছিল কর্মের ফল ভোগ করা দিয়ে। এখানে যে দর্শনটি পরিচিত সকলের কাছে, সেটা হল, ফল ভোগ ব্যতীত বিকল্প কোনো পথ নেই। কিন্তু Abrahamic Monotheism এখানে এই বিষয়ে কিছুটা দ্বিমত পোষণ করেছে। আর সেটা হল, কর্মের ফল কতটুকু কী পরিমাণে ভোগ করতে হবে, এটা নির্ধারণ করবেন সৃষ্টিকর্তা। কেউ পাপকর্মে অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করে সৃষ্টিকর্তার পথে ফিরে এলে সৃষ্টিকর্তা ওই ব্যক্তির পাপ মার্জনা করে দেবেন; ফলে ব্যক্তির পাপের ফল ভোগের তখন আর প্রয়োজন হবে না।
"যারা (সত্যের প্রতি) বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আমি অবশ্যই তাদের মন্দ কাজ গুলো মিটিয়ে দেব এবং তাদেরকে কর্মের উৎকৃষ্টতর প্রতিদান দেব।" (মহাগ্রন্থ আল-কোরআন ২৯:৭)

তাহলে মূল যে ফল ভোগের বিষয়টি ছিল, সেটা নির্ধারণ যদি সৃষ্টিকর্তা করেন, তাহলে সেখানে বার বার জন্ম-মৃত্যুর প্রয়োজনও থাকছে না। তবে এখানে আরেকটি objection দেওয়া হবে। সেটাতে যাওয়ার পূর্বে এই বিষয়টি দেখাই যে, ঈশ্বর ইচ্ছা করলে সমস্ত পাপ দূর করে দিতে পারেন, এই বিষয়টি ভারতীয় দর্শনের ভক্তিযোগের মধ্যেও আছে।
"অতি দূরাচারী ব্যক্তিও যদি অনন্য ভক্তি সহকারে আমাকে ভজনা করেন, তাকে সাধু বলে মনে করবে, কারণ তিনি যথার্থ মার্গে অবস্থিত। তিনি শীঘ্রই ধর্ম আত্মায় পরিণত হন এবং শান্তি লাভ করেন... প্রভৃতি নিম্নবর্ণ- মানুষেরা আমার অনন্য ভক্তিকে বিশেষ ভাবে আশ্রয় করলে অবিলম্বে পরাগতি লাভ করে।" (ভগবতগীতা ৯:৩০-৩২)

"আজামিলা ইতিমধ্যেই তার সমস্ত পাপকর্মের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করেছে... অসহায় অবস্থায় নারায়ণের পবিত্র নাম সে জপ করেছিল। যদিও সে সঠিকভাবে জপ করেনি, তবুও বিনা অসন্তোষে জপ করায় সে এখন শুদ্ধ হয়ে মোক্ষলাভের উপযুক্ত হয়ে গেছে।" (ভাগবত ৬.২.৭) ["Ajāmila has already atoned for all his sinful actions... in a helpless condition he chanted the holy name of Nārāyaṇa. Even though he did not chant purely, he chanted without offense, and therefore he is now pure and eligible for liberation." (Bhagavatam 6.2.7)] source - https://www.vedabase.com/en/sb/6/2/7

তাহলে ভক্তিযোগের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, ঈশ্বরের ভক্তির মাধ্যমে শুধু তার নাম জপ করলেই সব পাপ ঈশ্বর ইচ্ছা করলে দূর করে দিতে পারেন এমন concept এখানে আছে। অর্থাৎ ঈশ্বর ইচ্ছা করলে পাপ দূর করে দিতে পারেন আর কর্মফল ভোগের জন্যও বার বার জন্ম নেওয়ার প্রয়োজন পড়ছে না। তাহলে এখানে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন হল, ঈশ্বর যদি সত্যিই পাপ দূর করে দিতে পারেন, কর্মফল ভোগের জন্য পরবর্তী জন্ম আটকে মোক্ষ বা মুক্তি দিয়ে দিতে পারেন, তাহলে এখানে ফল ভোগের জন্য বার বার জন্ম-মৃত্যুর প্রশ্ন কেন আসছে? উত্তর হল, ন্যায়বিচারের জন্য; আর এই objection টার কথাই আমি একটু আগে বলছিলাম। কর্মের যোগ্য প্রতিদান দেওয়ার জন্যই বার বার জন্ম-মৃত্যুর প্রসঙ্গ এখানে এসেছে; যেমন চোরের পাপমুক্তি না হলে পরের জন্মে সে ফল ভোগ করবে, এমন concept আসবে।

তাহলে এই বিষয়টি যদি আমরা যাচাই করি, তবে এথেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারব যে, এই কর্মবাদ আদৌ কতখানি সঠিক! এখানে আবারও উল্লেখ্য যে, পূর্বের জন্মের কৃতকর্ম নিম্নতর হলে পরের জন্মে অবস্থাও নিম্নতর হবে। এই বিষয়টিকে উল্টিয়ে বললে, এই জন্মে অবস্থা নিম্নতর হলে পূর্বের জন্মের কৃতকর্মও নিম্নতর হবে। এই জন্মে উচ্চতর অবস্থা হলে, আগের জন্মের কৃতকর্মও উচ্চতর হবে। এখন ঈশ্বরে অবিশ্বাসী ম্লেচ্ছ নাস্তিক ব্যক্তি ভারতীয় দর্শন অনুযায়ী পাপী। স্বামী প্রভুপাদ ভাগবত ৩.৩.৬ এর ব্যাখ্যায় এক স্থানে বলছেন, "..atheist is called a demon, and it is a fact that even a person born of good parents can turn into a demon by bad association.." source - https://vanisource.org/wiki/SB_3.3.6

এমনকি যারা বৈদিক শাস্ত্রে বিশ্বাস করে না বা অস্বীকার করে, তারাও নাস্তিক এবং পাপী! অর্থাৎ অহিন্দু সকল গোষ্ঠীই যারা বৈদিক শাস্ত্রসমূহ মানে না, যেমন বৌদ্ধ, জৈন, ইহুদি, খ্রিস্টান, মুসলিম ইত্যাদি, তারা সবাই নাস্তিক ও তাই তারা পাপী! "...The exact word used in Sanskrit is nāstika, which refers to one who does not believe in the Vedas but manufactures some concocted system of religion. Śrī Caitanya Mahāprabhu has said that the followers of the Buddhist system of religion are nāstikas..." (Purport on Bhagavatam 4.2.30 by Swami Prabhupada) source: https://vanisource.org/wiki/SB_4.2.30

তাহলে এবার প্রশ্নটা হল, western world আর পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বহু বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষেরা রয়েছে, যাদের অনেকেই নাস্তিক অথবা বৈদিক শাস্ত্র অস্বীকারকারী অহিন্দু; তাদের অনেকেরই জীবনযাত্রা উন্নতমানের। জ্ঞান-বিজ্ঞান, অর্থ-টাকা-পয়সায় তারা অনেকেই স্বচ্ছল। তাহলে এসব নাস্তিক বেদ অস্বীকারকারীরা কীভাবে এরকম উন্নত হল? ঈশ্বর যদি ন্যায়বিচার করতে চান, তাহলে তারা যেহেতু পাপী, তাই তাদের বর্তমান পাপের জীবন থেকে বলা যায় যে, তাদের পূর্বজন্মের কৃতকর্মও ছিল পাপপূর্ণ বা নিম্নতর! অথচ তারা এই জন্মে নিম্নতর অবস্থায় বিরাজ না করে উচ্চতর জ্ঞান-বিজ্ঞান-টাকা-পয়সার মধ্যে বিরাজ করছে!

যদি কর্মের ফল প্রদানের জন্যই তাদের আবার জন্ম দেওয়া হয়, তাহলে শাস্ত্রের নাস্তিকের সংজ্ঞা অনুযায়ী, এটি কখনও ন্যায়বিচার নয়। আর যদি এটা ন্যায়বিচার না হয়, এর অর্থ হল, আগের জন্ম বলে আসলে কিছু নেই। এই কর্মবাদের বার বার জন্ম-মৃত্যুর থিওরি আসলে মানুষের বানানো!

আরেকটি উদাহরণ দিই।

কোনো কুকুর বা বিড়াল এজন্য কুকুর বা বিড়াল হয়ে সারা জীবন থাকবে, কারণ সে থিওরি অনুযায়ী আগের জন্মে পাপকর্ম করেছিল। একইভাবে একজন নারী পাপী হয়ে জন্মায় পৌত্তলিকতা অনুসারে; তাই সারা জীবন নারী হয়ে থাকার অর্থ হল, সেই পাপের ফল ভোগ করা, যেমনটা ভাগবত ২.৭.৪৬ এ বলা হচ্ছে, "strī" অর্থাৎ "নারী" হচ্ছে "pāpa-jīvāḥ" অর্থাৎ পাপী জীব (sinful living beings) ("Surrendered souls, even from groups leading sinful lives, such as women..." (Bhagavatam 2.7.46)) source - https://www.vedabase.com/en/sb/2/7/46

এখন যদি কেউ গরিব হয়ে জন্মায় বা ধনী হয়ে জন্মায়, তাহলে থিওরি অনুযায়ী তাকে সারাজীবন সেই অবস্থাতেই থাকতে হবে। এটাই হবে কর্মবাদের যথাযথ প্রয়োগ। কিন্তু আমরা দেখি যে, ভাগ্যের মোড় ঘুরে অনেক দরিদ্র ব্যক্তিই রাতারাতি ধনী হয়ে যায়, আর অনেক ধনী ব্যক্তিই রাতারাতি দরিদ্র হয়ে যায়। বিশেষ করে সেই ব্যক্তির বেলায়, যে নিজে পরিশ্রম করে নিজের অবস্থা পরিবর্তন করে দরিদ্র থেকে ধনী হয়ে গেছে! তাহলে এটা বলাই কি শ্রেয় নয় যে, সেই ব্যক্তির ক্ষমতা, ঈশ্বরের নির্ধারণ করা কর্মবাদের নীতির থেকেও শক্তিশালী? অর্থাৎ সেই ব্যক্তির ক্ষমতার সাথে তাহলে ঈশ্বরও পেরে ওঠেনি!!!

বাস্তবে কর্মবাদ একটা ভুয়া থিওরি! এটা মানুষের বানানো এক পৌত্তলিক বিশ্বাস! এমনকি এই কর্মবাদের মাধ্যমে জন্মান্তর আর মোক্ষলাভের থিওরি চার বেদ সংহিতারও কোথাও উল্লেখ নেই! ন্যায়বিচারের কথাই যদি হয়, তাহলে ভক্তিযোগের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছিলাম যে, কেবল ভগবানের নাম জপ করলেই সব পাপ দূর হয়ে যায়! তাহলে এটা কেমনতর ন্যায়বিচার হল!!! একজন খুন, ধর্ষণ, চুরি করল সারাজীবন। আর মরণকালে শুধু নাম জপ করেই মুক্তি পেয়ে যাবে - এটা কেমনতর ন্যায়বিচারের পরিচয়!! According to Abrahamic Monotheism, our ultimate result of worldly deeds will be given in the Day of Judgment which is often called as Doomsday or, Qiyamah!!
.
.
==============================

- Ahmad Al-Ubaydullaah

Comments

Popular posts from this blog

মানহাজ ও মাযাহাব নিয়ে যত দ্বন্দ্বের জবাব....

[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...

কৃষ্ণ কি আল্লাহর নবী ছিল?

এই প্রশ্নটা আমাকেও করা হয়েছে সম্ভবত কয়েকবার। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরটা বড়ই জটিল। কারণ এর কোনো যথাযথ উত্তর আমাদের জানা নেই। যদি কৃষ্ণের গোপীদের সাথে লীলার কাজকে সত্য বলে...

ভগবতগীতার বর্ণভেদ নিয়ে ভক্তদের ভণ্ডামির জবাব

============================ চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ৷ তস্য কর্তারমপি মাং বিদ্ধ্যকর্তারমব্যয়ম্৷৷১৩ অর্থ:  "প্রকৃতির তিনটি গুণ এবং কর্ম অনুসারে আমি মনুষ্য সমাজে চারটি বর্ণ...