Skip to main content

প্রাণীহত্যা নিয়ে ভক্ত ও মানবতাবাদীদের জবাব

==============================
ইস্কনের প্রতিষ্ঠাতা ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ এর ভাষায়,

“…ঐ যে যারা কুরআন পড়ে থাকে, ঐ মুসলিম ধর্ম বছরে একবার পশুবলির অনুমতি দেয়। একে বলা হয় কুরবান। আর তারা মসজিদের কাছে প্রাণীদের বলি দেয়। একইভাবে বৈদিক ধর্মেও কিছু কিছু বলিতে পশুবলির অনুমতি রয়েছে…”
“…You know, those who have read the Qur’an, the Muslim religion allows animal slaughter once in a year. It is called qurban. And they can slaughter animals near the mosque. Similarly, in the Vedic religion also, the animals are allowed to be slaughtered in some sacrifice…”
[A. C. Bhaktivedanta Swami Prabhupada on Islam and Vaishnavism]
source – https://bit.ly/2WLj0EM

অর্থাৎ বৈষ্ণবগুরু প্রভুপাদ যিনি নিজেই নিরামিষভোজী এবং নিরামিষ আহার প্রতিষ্ঠার জন্য সারাজীবন প্রচার করে গেছেন, তিনিই তার বক্তব্যে স্বীকার করেছেন যে, বৈদিক ধর্মের বিধানে পশুবলির নিয়ম রয়েছে।

স্বামী বিবেকানন্দ ব্যাপারটিকে আরও স্পষ্ট করে বলেন,

“…মনে রাখিও, চিরকালই এই-সকল প্রথা ও আচারের পরিবর্তন হইতেছে। এই ভারতেই এমন সময় ছিল, যখন গোমাংস ভোজন না করিলে কোনো ব্রাহ্মণের ব্রাহ্মণত্ব থাকিত না। বেদপাঠ করিলে দেখিতে পাইবে, কোনো বড় সন্ন্যাসী বা রাজা বা অন্য কোনো বড়লোক আসিলে ছাগ ও গোহত্যা করিয়া তাঁহাদিগকে ভোজন করানোর প্রথা ছিল…”

[স্বামী বিবেকানন্দ রচনাবলী/৫ম খণ্ড/ভারতে বিবেকানন্দ/মাদুরা অভিনন্দনের উত্তর]
source – https://bit.ly/2Ec2nKT

স্মৃতিশাস্ত্র মনুসংহিতায় বলা হচ্ছে যে, মাংস খেলে কোনো পাপ হয় না, এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তাহলে হিন্দু দাদা-দিদিদের নিকট আমাদের প্রশ্ন হল, আপনাদের ধর্মগ্রন্থ যখন আমিষ খাওয়াকে স্বাভাবিক বলছে, তখন আপনারা আমাদের প্রশ্ন করারই বা কে?

“যখন কোনো ব্যক্তি পিতৃলোক ও দেবতাগণের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, তখন মাংস খেলে এতে তার কোনো পাপ হয় না, সেক্ষেত্রে সেটি সে ক্র‍য় করে আনুক, অথবা নিজেই (সেই প্রাণীকে) হত্যা করুক, অথবা অন্যের কাছ থেকে তা উপহার হিসেবে গ্রহণ করুক না কেন।” (মনুসংহিতা, ৫:৩২)

“He who eats meat, when he honours the gods and manes, commits no sin, whether he has bought it, or himself has killed (the animal), or has received it as a present from others.” (The Laws of Manu, translated by George Bühler, Chapter 5, Verse 32) source – https://bit.ly/2Wb7QvO

এমনকি উত্তম পুত্র সন্তান লাভের জন্য ষাঁড়ের মাংস খেতে পরামর্শ দিচ্ছে বৃহদারণ্যক উপনিষদ!

"অথ য ইচ্ছেৎ পুত্রো মে পণ্ডিতো বিগীতঃ সমিতিংগমঃ শুশ্রূষিতাং বাচং ভাষিতা জায়েত সর্বান্বেদাননুব্রুবীত সর্ব্বমায়ুরিয়াদিতি মাংসৌদনং পাচয়িত্বা সর্পিষ্মন্তমশ্লীয়াতামীশ্বরৌ জনয়িত বা ঔক্ষেণ বার্ষভেণ বা।"

অনুবাদ - যদি কেহ ইচ্ছা করে 'আমার এমন পুত্র হউক্ যে পণ্ডিত, প্রখ্যাত ও সভায় বিচারসমর্থ হইবে, রমণীয় বাক্য উচ্চারণ করিবে, সর্ব্ববেদ অধ্যয়ন করিবে এবং পূর্ণায়ুপ্রাপ্ত হইবে' - তাহা হইলে তাহারা ঘৃতসংযোগে মাংসমিশ্রিত অন্ন রন্ধন করিয়া ভোজন করিবে।
**এই মাংস তরুণবয়স্ক বলশালী বৃষের হইলে কিংবা অধিক বয়স্ক বৃষের হইলে (তাহারা উক্ত প্রকার সন্তান) উৎপাদনে সমর্থ হইবে।**

(বৃহদারণ্যক উপনিষদ, ষষ্ঠ অধ্যায়, চতুর্থ ব্রাক্ষণ, শ্লোক নং ১৮/অনুবাদঃ শ্রী সীতানাথ তত্ত্বভূষণ)
.
.
শ্রী সীতানাথ তত্ত্বভূষণ এই শ্লোকের অনুবাদের ক্ষেত্রে "ঔক্ষেণ" শব্দকে বাংলা "বৃষমাংসের সহিত" অনুবাদের ক্ষেত্রে "ঔক্ষেণ"-কে বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে এভাবে দেখিয়েছেন, "উক্ষ্ন্+অণ্ = ঔক্ষ, উক্ষ = বৃষ"।

"বার্ষভেণ" শব্দকে বাংলা "অধিকবয়স্ক বৃষ মাংসের সহিত" অনুবাদের ক্ষেত্রে এভাবে ভেঙ্গে দেখিয়েছেন, "বা আর্যভেণ (অধিকবয়স্ক বৃষ মাংসের সহিত; ঋষভ+অণ্ = আর্যভ)" [রেফারেন্স স্ক্রিনশটে দ্রষ্টব্য]

বৃহদারণ্যক উপনিষদের এই শ্লোককে Robert Ernest Hume এভাবে অনুবাদ করেছেন:

"Now, in case one wishes, 'That a son, learned, famed, a frequenter of council-assemblies, a speaker of discourse desired to be heard, be born to me! that he be able to repeat all the Vedas! that he attain the full length of life!'--they two should have rice boiled with meat and should eat it prepared with ghee. They two are likely to beget [him], **with meat, either veal or beef."**

(Brihadâranyaka Upanishad 6.4.18; tr. by Robert Ernest Hume) source - http://www.sacred-texts.com/hin/sbe15/sbe15098.htm
.
.
তাহলে ভক্ত বাবাজিরা কি আজ থেকে গোমূত্র বাদ দিয়ে দম্পতি এবং গর্ভবতী নারীদেরকে শাস্ত্রানুযায়ী ষাঁড়ের মাংস খেতে দেবে?

মানবতাবাদীরা এখানে আবার বলতে পারে যে, এসকল পুরাতন সেকেলে গ্রন্থের সাহিত্য। এখন আধুনিক যুগে এসব চলবে না!

বেশ, তাহলে গাছ কাটেন কেন মশাই? গাছ কাটার সময় গাছ কাঁদে পর্যন্ত, জানেন না?

ভক্ত বা মানবতাবাদী (দাবি করা) বাবাজিরা এত জীবহত্যা, প্রাণীহত্যা নিয়ে লম্ফঝম্প করে, অথচ এটা দিব্যি এড়িয়ে যায় যে, যেকোনো গাছ বা তৃণলতা কাটলেও উদ্ভিদ কান্না পর্যন্ত করে! তাদের এই কান্নার স্টাইল কিছুটা ভিন্ন ধরণের। তারা সাহায্যের জন্য চিৎকার পর্যন্ত করে থাকে!

"...scientists may have found the key to understanding these cries for help..." (source - National Geography) লিঙ্ক - https://on.natgeo.com/2GZo6ak

কিন্তু আমরা তাদের এই আর্তনাদ শুনতে পাই না!

"...often too low or too high for human ears to detect, insects and animals signal each other with vibrations." (source - livescience magazine) link - https://bit.ly/2P2dywm (যেহেতু ২০ থেকে ২০ হাজার হার্জ - এই রেঞ্জের বাইরের কম্পাঙ্ক (frequency) বিশিষ্ট কোনো শব্দ আমরা শুনতে পাই না)।

তাহলে তারা গাছের কাঠ কাটা, কাঠের জিনিসপত্র বানানো, শাক-সবজির লতাপাতা কাটা, গাছ থেকে পাতা ছেঁড়া ইত্যাদি সব বন্ধ করে দিক!

জীবহত্যা বন্ধ করতে আজ থেকে মশা মারা বন্ধ করে দিক!

ভক্তি/মানবতাবাদ আর ভণ্ডামি যে এক জিনিস না - এই বোধখানা কতিপয় ব্যক্তিবর্গ আজও তাদের ইসলামবিদ্বেষী মনোভাবের দরুণ তাদের উপলব্ধিতে আনতে পারল না!
.
.

- Ahmad Al-Ubaydullaah

Comments

Popular posts from this blog

মানহাজ ও মাযাহাব নিয়ে যত দ্বন্দ্বের জবাব....

[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...

কৃষ্ণ কি আল্লাহর নবী ছিল?

এই প্রশ্নটা আমাকেও করা হয়েছে সম্ভবত কয়েকবার। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরটা বড়ই জটিল। কারণ এর কোনো যথাযথ উত্তর আমাদের জানা নেই। যদি কৃষ্ণের গোপীদের সাথে লীলার কাজকে সত্য বলে...

ভগবতগীতার বর্ণভেদ নিয়ে ভক্তদের ভণ্ডামির জবাব

============================ চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ৷ তস্য কর্তারমপি মাং বিদ্ধ্যকর্তারমব্যয়ম্৷৷১৩ অর্থ:  "প্রকৃতির তিনটি গুণ এবং কর্ম অনুসারে আমি মনুষ্য সমাজে চারটি বর্ণ...