Skip to main content

Big Bang যদি সৃষ্টির প্রারম্ভ হয়, তাহলে জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদির সৃষ্টি কি আধুনিক বিজ্ঞানের সৃষ্টিতত্ত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়? প্রথমে পৃথিবী সৃষ্টি হলে সেটা কি বৈজ্ঞানিক ত্রুটি নয়?


আধুনিক বিজ্ঞান সৃষ্টির শুরু সম্পর্কে যতটুকু প্রমাণসহ তথ্য পেয়েছে, তাতে সৃষ্টির শুরু হয়েছে "Big Bang" নামক এক মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে। তবে ইসলাম অনুযায়ী Big Bang সৃষ্টির চূড়ান্ত প্রারম্ভ নয়। Big Bang সৃষ্টির মধ্যবর্তী একটি প্রক্রিয়া মাত্র এবং Big Bang এর পূর্বে থেকেই সৃষ্টি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে আর সেই সৃষ্টিতে কেবল আমাদের দেখতে পাওয়া এই মহাবিশ্বই না, বরং জান্নাত, জাহান্নাম, ফিরিশতা ইত্যাদিও সৃষ্টি করা হয়েছে। এখন বর্তমানের সংশয়বাদীরা নিজেদের এতটাই যুক্তিবাদী, আধুনিক ভাবা শুরু করেছে যে, তারা চোখে না দেখে এসব কিছু বিশ্বাস করতে রাজি নয়।

এখন প্রথমত, Big Bang বা মহাবিস্ফোরণ এর কথা বললে অনেকে ভাবে যে, এই প্রক্রিয়ায় বিস্ফোরণ বা explosion এর মাধ্যমে সবকিছু নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে তা নয়। Big Bang এর প্রক্রিয়ার পূর্বে প্রকৃতপক্ষে সবকিছু এক বিন্দুতে মিশে ছিল যে বিন্দুকে বিজ্ঞানীরা আদর করে Singularity নামে ডাকে। Big Bang নামক মহাবিস্ফোরণে এই এক হয়ে থাকা সকল কিছুই পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে যেতে থাকে আর সকল বস্তুর দূরত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে। অর্থাৎ আমাদের পৃথিবী আর মহাবিশ্বের সবকিছু এক বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত ছিল আর big bang এর মাধ্যমে তাদের মধ্যে দূরত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই লিঙ্কের ভিডিও থেকে ব্যাপারটি দেখতে পারেন👉 https://youtu.be/y3f1OuAiLVQ

এখন ইসলামে সৃষ্টির কথা বলতে গিয়ে এই Big Bang-কে মহাবিশ্বের শুরু হিসেবে ইঙ্গিত করা হয়নি, বরং পুরো মহাবিশ্বকেই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী বা heaven and earth বলে ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে যে, গোটা heaven and earth-কেই সৃষ্টি করা হয়েছে। আর গোটা heaven and earth-কে একত্রে কেন্দ্রীভূত অবস্থা থেকে পৃথক করে দেওয়া হয়েছে, যে প্রক্রিয়াকে আজ বাবাজিরা আদর করে "big bang" বলছে:

اَوَ لَمۡ  یَرَ الَّذِیۡنَ  کَفَرُوۡۤا  اَنَّ  السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ کَانَتَا رَتۡقًا فَفَتَقۡنٰہُمَا ؕ وَ جَعَلۡنَا مِنَ الۡمَآءِ کُلَّ  شَیۡءٍ حَیٍّ ؕ اَفَلَا یُؤۡمِنُوۡنَ ﴿۳۰﴾

"অবিশ্বাসীরা কি দেখে না যে, **আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী (heaven & earth) এক সঙ্গে সংযুক্ত ছিল,** অতঃপর আমি (আল্লাহ) উভয়কে পৃথক করে দিলাম; আর প্রাণসম্পন্ন সব কিছু পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। তবুও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?" (আল-কোরআন ২১:৩০)
"Do not the Unbelievers see that the heavens and the earth were joined together (as one unit of creation), before we clove them asunder? We made from water every living thing. Will they not then believe?" (The Noble Quran, 21:30; tr. Yusuf Ali)

এখানে উল্লেখ্য যে, বাবাজিরা আজকাল যেন পাগল হয়ে গেছে big bang এর আগে কী ছিল তা জানার জন্য। তারা eternal inflation theory, string theory সহ আরও কত কী থিওরি বানাচ্ছে; কিন্তু এখনও পর্যন্ত big bang এর পর একটা থিওরিরও strong evidence পায়নি। আর স্টিফেন হকিং এই বিগ ব্যাং থিওরির ওপর যুক্তি দিয়েছিলেন এভাবে - এডুইন হাবল নামে আরেক বিজ্ঞানী টেলিস্কোপ লাগিয়ে খুঁজতে খুঁজতে দেখেন যে, এই মহাবিশ্বের সব কিছু নিজেদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। অর্থাৎ, যেমন বেলুনে ফুঁ দিলে বেলুনের ওপরের বিন্দুগুলো একে অপরের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়ে বেলুন এর আকার, আয়তন বেড়ে সম্প্রসারিত হতে থাকে, তেমনি এই মহাবিশ্বের গ্রহ-নক্ষত্র ইত্যাদি সবকিছু পরস্পরের নিকট থেকে দূরে সরে যাচ্ছে আর মহাবিশ্ব ক্রমাগত সম্প্রাসারিত হচ্ছে।

স্টিফেন হকিং বাবাজি এসে যুক্তি দেখালেন যে, মহাবিশ্বের সবকিছু দূরে সরে যাওয়ার অর্থ হল, সবকিছু এক বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত ছিল আর big bang এর মাধ্যমে সবকিছু আলাদা হয়ে পরস্পরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। পরবর্তীতে cosmic microwave background আর relative abundances of light elements (source: https://en.m.wikipedia.org/wiki/Big_Bang ) এর প্রমাণকে big bang এর প্রমাণ হিসেবে পাওয়ার পর big bang প্রমাণিত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ এডুইন হাবলের সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্ব (expansion of universe) এর পর্যবেক্ষণ থেকে বোঝা যায় যে, বিগ ব্যাং পরবর্তী একটি ধাপ হল, মহাবিশ্বের সবকিছু পরস্পরের থেকে দূরে সরে যাওয়া, যা এখনও চলমান।

ইসলামে ঠিক এটাই স্বীকার করা হয় যে, সৃষ্টির সকল কিছু পরস্পর থেকে big bang এর পর দূরে সরে যাচ্ছে; অর্থাৎ মহাবিশ্ব সম্প্রসারণশীল।

وَ السَّمَآءَ  بَنَیۡنٰہَا بِاَیۡىدٍ وَّ اِنَّا لَمُوۡسِعُوۡنَ ﴿۴۷﴾
"আমি (আল্লাহ) আকাশ নির্মাণ করেছি আমার ক্ষমতাবলে এবং **আমি (আল্লাহ) অবশ্যই মহাসম্প্রসারণকারী।"** (আল-কোরআন ৫১:৪৭)

এখানে arabic لَمُوۡسِعُوۡنَ (lamūsiʿūna) এর অর্থ করা হয়েছে "অবশ্যই সম্প্রসারণকারী" ((are) surely (its) Expanders) [source - https://bit.ly/30jd2ga ]

এখানে এই বিষয়টি নিয়ে ইখতিলাফ আছে যে, প্রথমে পৃথিবী নাকি প্রথমে পৃথিবী বাদে মহাবিশ্বের অন্য কিছু সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠিত মত হল, পৃথিবী আগে সৃষ্টি হয়েছে। তবে এখানে "সৃষ্টি" এর ধারণা কিছুটা ভিন্ন। আগেই দেখানো হয়েছে যে, বিগ ব্যাং এর পূর্বে সব কিছু একত্রিত অবস্থায় ছিল। যখন সব কিছু একত্রিত ছিল, তখন সেটা গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থায় ছিল না। বরং সেটা অবিস্তৃত অবস্থায় ছিল যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় অসীম ঘনত্বসম্পন্ন বা infinite density বলা যেতে পারে ["...density apparently becomes infinite..as the earliest state of the universe during the Big Bang."] source - https://bit.ly/2KGBnah

এই অসীম ঘনত্বসম্পন্ন বা infinite density এর অবস্থা থেকে ক্রমাগত প্রক্রিয়ায় ধীরে ধীরে গ্রহ-নক্ষত্র ইত্যাদি তৈরি হয়। তাফসিরকারকগণ এই বিষয়টিকেই বিগ ব্যাং আবিষ্কার হওয়ার পূর্বে এভাবে বলেছেন যে, পৃথিবী আগে সৃষ্টি হয়েছে, তারপর মহাকাশের অন্য কিছু; কিন্তু সেগুলো ছিল অবিস্তৃত অবস্থায়। তারা পরবর্তীতে (বিগ ব্যাগ এর মাধ্যমে পরস্পর থেকে পৃথক হওয়ার পর থেকে) ক্রমাগত প্রক্রিয়ায় মহাকাশ আকারে উৎপত্তি লাভের সময় ধীরে ধীরে গ্রহ-নক্ষত্র আকারে পৃথক গঠন লাভ করতে থাকে,

"...আকাশের পূর্বেই জমীন সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে যমীনের বিস্তৃতিকরণ আকাশ সৃষ্টির পরে ঘটেছে.." (তাফসির ইবনে কাসির/আল-কোরআন ৭৯:২৭-৩০ এর তাফসির হতে বিবৃত)
"...the earth was created before the heaven was created, but it was only spread out after the creation of the heaven..." (Tafsir ibn Kathir on Quranic verses 79:27-30) source - https://bit.ly/2TMZbfE

এর সাথে প্রাসঙ্গিক একটি বিষয় হল, বিজ্ঞানীরা অনেক প্রচেষ্টার পর দেখেছে যে, বিগ ব্যাং এর সময় অসীম ঘনত্ব বা infinite density এর অবস্থায় যে সৃষ্টি ছিল, তা big bang এর পর নিজস্ব মহাকর্ষ বা gravity এর প্রভাবে নির্দিষ্ট গঠন লাভ করতে শুরু করে। মহাকর্ষ নিয়ে অনেকে বিতর্ক তোলে। সেক্ষেত্রে মহাকর্ষ বাদ দিয়ে বললে বক্তব্য একই যে, big bang এর পর অবিস্তৃত সৃষ্টি এর নির্দিষ্ট বিস্তৃত গঠন উৎপত্তি লাভ করা শুরু করে।

তাই বিজ্ঞানীরা এখনও জানে না যে, বিগ ব্যাং এর আগে কী ছিল! সেখানে আগে পৃথিবীর মূল উপাদান সৃষ্টি হয়েছে নাকি আগে মহাকাশের অন্যকিছুর মূল উপাদান সৃষ্টি হয়েছে - এ সম্পর্কে এখনও তাদের স্পষ্ট জ্ঞান নেই!

এমনকি সৃষ্টিতত্ত্ব এর বর্ণনায় কোরআন বিগ ব্যাং এর পর মহাকাশের প্রাথমিক অবস্থার কথাও তুলে ধরেছে। প্রাথমিক অবস্থায় মহাবিশ্ব বা universe ছিল প্লাজমা স্তরে ধোঁয়া বা smoke এর মত অবস্থায়, "About 300,000 years after the big bang, the universe was like a smoke-filled chamber from which light could not escape..." source - https://bit.ly/2P2vb0i

এই প্লাজমা স্তরের ধোঁয়াটে মহাবিশ্বকে আবিষ্কারের পূর্বেই আল্লাহ তাআলা সেটাকে এভাবে বর্ণনা করছেন:

ثُمَّ  اسۡتَوٰۤی  اِلَی السَّمَآءِ وَ ہِیَ دُخَانٌ فَقَالَ  لَہَا وَ لِلۡاَرۡضِ ائۡتِیَا طَوۡعًا  اَوۡ کَرۡہًا ؕ قَالَتَاۤ   اَتَیۡنَا  طَآئِعِیۡنَ ﴿۱۱﴾

"অধিকন্তু তিনি (আল্লাহ) আকাশের দিকে মনোনিবেশ করেন যা ছিল ধূম্রপুঞ্জ বিশেষ (smoky)। অতঃপর তিনি ওটাকে এবং (অবিস্তৃত) পৃথিবীকে বললেনঃ তোমরা উভয়ে এসো স্বেচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বললঃ আমরা এলাম অনুগত হয়ে (i.e অন্য সৃষ্টির মত প্রকাশের ধরণ মানুষের মত নয়)।" (আল-কোরআন ৪১:১১)
"Moreover He comprehended in His design the sky, and it had been (as) smoke: He said to it and to the earth: "Come ye together, willingly or unwillingly." They said: "We do come (together), in willing obedience."" (The Noble Quran, 41:11; tr. Yusuf Ali)

এই জ্ঞান বিজ্ঞানীরা আধুনিক প্রযুক্তি লাগিয়ে বহু বছরের প্রচেষ্টা, থিওরি, গবেষণা ইত্যাদির মাধ্যমে অর্জন করেছে। কিন্তু এসকল জ্ঞান আর পাশাপাশি আরও অজানা বিষয়ের বর্ণনা তাদের আবিষ্কারের অনেক আগেই নিরক্ষর নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মানুষের নিকট নিদর্শনের মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরেছেন। তাই এগুলো নিদর্শন তাদের জন্য যারা নিজেদের অহংকার বিসর্জন দিয়ে সত্যকে গ্রহণ করতে ও সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তাকে মেনে নিতে প্রস্তুত।

سَنُرِیۡہِمۡ  اٰیٰتِنَا فِی الۡاٰفَاقِ  وَ فِیۡۤ   اَنۡفُسِہِمۡ حَتّٰی یَتَبَیَّنَ  لَہُمۡ  اَنَّہُ  الۡحَقُّ ؕ اَوَ لَمۡ یَکۡفِ بِرَبِّکَ  اَنَّہٗ عَلٰی کُلِّ  شَیۡءٍ شَہِیۡدٌ ﴿۵۳﴾
"আমি শীঘ্র তাদের জন্য আমার নিদর্শনাবলী ব্যক্ত করব বিশ্বজগতে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে। ফলে তাদের নিকট সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে যে ওটাই সত্য। এটা কি যথেষ্ট নয় যে, তোমার প্রতিপালক সর্ব বিষয়ে অবহিত?" (আল-কোরআন ৪১:৫৩)

তবে যারা প্রবৃত্তির অনুসারী, তাদের যাই দেখানো হোক না কেন, কোনো নিদর্শনই তাদের কোনো কাজে লাগে না!
.
.
============================

- Ahmad Al-Ubaydullaah

Comments

Popular posts from this blog

মানহাজ ও মাযাহাব নিয়ে যত দ্বন্দ্বের জবাব....

[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...

কৃষ্ণ কি আল্লাহর নবী ছিল?

এই প্রশ্নটা আমাকেও করা হয়েছে সম্ভবত কয়েকবার। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরটা বড়ই জটিল। কারণ এর কোনো যথাযথ উত্তর আমাদের জানা নেই। যদি কৃষ্ণের গোপীদের সাথে লীলার কাজকে সত্য বলে...

ভগবতগীতার বর্ণভেদ নিয়ে ভক্তদের ভণ্ডামির জবাব

============================ চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ৷ তস্য কর্তারমপি মাং বিদ্ধ্যকর্তারমব্যয়ম্৷৷১৩ অর্থ:  "প্রকৃতির তিনটি গুণ এবং কর্ম অনুসারে আমি মনুষ্য সমাজে চারটি বর্ণ...