আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমে বলছেন,
وَّ الۡمُحۡصَنٰتُ مِنَ النِّسَآءِ اِلَّا مَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُکُمۡ ۚ کِتٰبَ اللّٰہِ عَلَیۡکُمۡ ۚ وَ اُحِلَّ لَکُمۡ مَّا وَرَآءَ ذٰلِکُمۡ اَنۡ تَبۡتَغُوۡا بِاَمۡوَالِکُمۡ مُّحۡصِنِیۡنَ غَیۡرَ مُسٰفِحِیۡنَ ؕ فَمَا اسۡتَمۡتَعۡتُمۡ بِہٖ مِنۡہُنَّ فَاٰتُوۡہُنَّ اُجُوۡرَہُنَّ فَرِیۡضَۃً ؕ وَ لَا جُنَاحَ عَلَیۡکُمۡ فِیۡمَا تَرٰضَیۡتُمۡ بِہٖ مِنۡۢ بَعۡدِ الۡفَرِیۡضَۃِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ عَلِیۡمًا حَکِیۡمًا ﴿۲۴﴾
"নারীদের মধ্যে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ নারীগণও তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ, কিন্তু তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদের বাদে, আল্লাহ এসব ব্যবস্থা তোমাদের উপর ফরয করে দিয়েছেন। তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ নারীদের ছাড়া অন্যান্য সকল নারীদেরকে মোহরের অর্থের বদলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে চাওয়া তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে, অবৈধ যৌন সম্পর্কের জন্য নয়। অতঃপর তাদের মধ্যে যাদের তোমরা সম্ভোগ করেছ, তাদেরকে তাদের ধার্যকৃত মোহর প্রদান কর। তোমাদের প্রতি কোনও গুনাহ নেই মোহর ধার্যের পরও তোমরা উভয়ের সম্মতির ভিত্তিতে মোহরের পরিমাণে হেরফের করলে, নিশ্চয় আল্লাহ সবিশেষ পরিজ্ঞাত ও পরম কুশলী।"
(আল-কোরআন, ৪:২৪)
অর্থাৎ নারীকে এখানে বিবাহ ও শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বৈধ করে নেওয়ার জন্য মোহরানা দিতে হবে।
নাস্তিকদের বহুল প্রচলিত একটি অভিযোগ হল, দেনমোহরের মাধ্যমে বিয়ে হল একপ্রকার বেশ্যাবৃত্তি বা পতিতাবৃত্তি! "বেশ্যাবৃত্তি" বা "পতিতাবৃত্তি" বিশেষণগুলো আসলে মানুষের উদ্ভাবিত; ইসলামিক মানদণ্ডে একে বলা হয় ব্যভিচার।
এক্ষেত্রে পতিতাবৃত্তিকে বিবেচনা করলে:
১) একজন পতিতার সমাজে কোনো প্রকৃত সম্মান নেই;
২) তার শারীরিক কোনো নিরাপত্তা নেই;
৩) তার আত্মমর্যাদা বোধও নষ্ট হয়ে যায়;
৪) তার আর্থিক সুরক্ষার দায়িত্বও কেউ নেয় না; কেবল পতিতাপল্লীর উচ্চ পদে থাকা লোকজনেরা অর্থ কামানোর জন্য তাকে ব্যবহার করে মাত্র।
অন্যদিকে দেনমোহরের ক্ষেত্রে শওহরকে তার বিবির দায়িত্ব নিতে হচ্ছে যেটা ইসলামে বাধ্যতামূলক। ফলে মোহরানার মাধ্যমে বিবাহতে নারী পাচ্ছে স্ত্রী হিসেবে সম্মান, নিরাপত্তা, মর্যাদা, আর্থিক সুরক্ষা প্রভৃতি। এগুলোর কোনোটিই পতিতাবৃত্তিতে লাভ করা সম্ভব নয়!
পতিতাবৃত্তিতে আছে কেবলই পশুর ন্যায় জৈবিক লালসা ও স্বার্থপরতার বহিঃপ্রকাশ। এতে পুরুষ ও নারীর মাঝে নেই কোনো দায়িত্ব, নেই কোনো অন্তরের ভালবাসা, নেই কোনো মান-অভিমান! অথচ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনুল কারীমে বলছেন,
وَمِنْ ءَايَٰتِهِۦٓ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَٰجًا لِّتَسْكُنُوٓا۟ إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةًۚ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَءَايَٰتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
"তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সঙ্গিনীদেরকে যাতে তোমরা তাদের সাথে শান্তিতে বাস করতে পার এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে।" (আল-কোরআন, ৩০:২১)
অর্থাৎ মোহরানার মাধ্যমে বিবাহ আর পতিতাবৃত্তি সম্পূর্ণই ভিন্ন বিষয়!
অধিকন্তু মোহরানা যৌতুকের বিপরীত প্রথার একটি যথোপযুক্ত প্রতিবাদমূলক নিদর্শন।
মাহর বা মোহরানা একজন নারীর এক বিশেষ ব্যক্তিগত সম্পত্তি যা সে নিজের জন্য কিছু অর্থ হিসেবে জমিয়ে রাখতে পারে ভবিষ্যতে কাজে লাগানোর জন্য।
এক্ষেত্রে তাই বিবাহ একটি চুক্তিনামা। কেউ মানুক আর না মানুক, ব্যবহারিক জীবনে বিবাহ একটি চুক্তিনামা ছাড়া আর কিছুই না। এখানে শারীরিক, আর্থিক সকল বিষয়ই অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে! এগুলোর কোনটাই পতিতাবৃত্তিতে খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়!
অর্থাৎ সংক্ষিপ্ত আকারে বললে:
১) দেনমোহর যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ঘোষণা করছে;
২) দেনমোহরের মাধ্যমে বিবাহিত জীবনের শুরুতে শওহর তার বিবিকে ভালবাসার নিদর্শন হিসেবে কিছু উপহার প্রদান করছে;
৩) বিবির সারা জীবনের দায়িত্ব ও ভরণপোষণ নেওয়ার জন্য নিদর্শন হিসেবে কিছু অর্থ প্রদান করা হচ্ছে যাতে এটা প্রকাশিত হয় যে, সে তার প্রিয়তমার দায়িত্ব নিতে চলেছে;
৪) দেনমোহরের অর্থ একজন নারীর ব্যক্তিগত সম্পত্তির অংশ হিসেবে জমা থাকছে যা সে নিজের প্রয়োজনে যখন খুশি কাজে লাগাতে পারে;
৫) দেনমোহরের আদান-প্রদান বিবাহের মাধ্যমে ব্যবহারিক জীবনে একটি সুসংগঠিত চুক্তিকে উপস্থাপন করছে।
মোহরানা নিয়ে যারা আপত্তি তোলে, তাদের মধ্যে মুসলিম পরিবারের সেই সব মেয়েদের যদি মোহরানা না দিয়ে বিয়ে দেওয়া হয়, তবে তারাই সবার আগে মোহরানা না পাওয়ার জন্য আপত্তি তুলবে - এটাই হল বাস্তব!
আল্লাহই ভাল জানেন।
.
.
এই বিষয় সংক্রান্ত একটি ভিডিও-ও দেখতে পারেন এই লিঙ্কে গিয়ে:
https://youtu.be/eneB_mhWNiI
Comments
Post a Comment