খ্রিস্টান মিশনারির দাবি অনুযায়ী যীশু ভক্তদের পাপের বোঝা নিয়ে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা গেছিলেন আর আবার জীবিত হয়েছিলেন। আজ এই থিওরির সংক্ষিপ্ত আকারে ব্যবচ্ছেদ করা হবে ইনশাআল্লাহ।
ওল্ড টেস্টামেন্টের সামসঙ্গীত (Psalms) এ বলা হচ্ছে:
"প্রভু ন্যায় ভালবাসেন। সাহায্য না করে তিনি তাঁর অনুগামীদের পরিত্যাগ করেন না। প্রভু তাঁর অনুগামীদের সর্বদাই রক্ষা করেন। কিন্তু দুষ্ট লোকদের তিনি বিনাশ করেন।" (বাইবেল, সামসঙ্গীত (Psalms) ৩৭:২৮)
"For the LORD loveth judgment, and forsaketh not his saints; they are preserved for ever: but the seed of the wicked shall be cut off." (The KJV Bible, Psalms 37:28)
তাহলে বাইবেলে ঈশ্বর বলছেন যে, তিনি তাঁর অনুগামীদের পরিত্যাগ করেন না এবং দুষ্টদের বিনাশ করেন। এবার দেখা যাক নিউ টেস্টামেন্টের গসপেল অব ম্যাথিউ এর একটি উদ্ধৃতি যেখানে ক্রুশে ঝুলন্ত অবস্থায় যীশুর অবস্থা আমরা পাই:
"প্রায় নয়টার সময় যীশু খুব জোরে বলে উঠলেন, ‘এলি, এলি লামা শবক্তানী?’ যার অর্থ, ‘ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় ত্যাগ করেছ?’" (বাইবেল, মথি (Matthew) ২৭:৪৬)
"And about the ninth hour Jesus cried with a loud voice, saying, Eli, Eli, lama sabachthani? that is to say, My God, my God, why hast thou forsaken me?" (The KJV Bible, Matthew 27:46 )
তাহলে কীভাবে ঈশ্বর, তাঁর অনুগামী যীশুকে পরিত্যাগ করতে পারেন? কেননা বাইবেলেই যীশু নিজেকে ঈশ্বরের অনুগামী হিসেবে ঘোষণা দিচ্ছেনঃ
"আমি নিজে থেকে কিছুই করতে পারি না৷ আমি (ঈশ্বরের কাছ থেকে) যেমনটা শুনি তেমনই বিচার করি; আর আমি যা বিচার করি তা ন্যায়, কারণ আমি আমার ইচ্ছামতো কাজ করি না, বরং যিনি (ঈশ্বর) আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁরই ইচ্ছাপূরণ করার চেষ্টা করি৷" (বাইবেল, যোহন (John) ৫:৩০)
"I can of mine own self do nothing: as I hear, I judge: and my judgment is just; because I seek not mine own will, but the will of the Father which hath sent me." (The KJV Bible, John 5:30)
এর অর্থ এটাই দাঁড়াচ্ছে যে, ক্রুশে ঝুলন্ত অবস্থায় যে বলে উঠছিল, "ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় ত্যাগ করেছ?" (বাইবেল, মথি (Matthew) ২৭:৪৬), তিনি প্রকৃত যীশু বা ঈসা আলাইহিস সালাম হতে পারেন না, কেননা ঈশ্বর যদি যীশুকে পরিত্যাগ করেন আর তাঁর বিনাশ করেন, তাহলে যীশু ঈশ্বরের অনুগামী না হয়ে দুষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হবেন! তাই ক্রুশে ঝুলন্ত ব্যক্তি যীশু বা ঈসা আলাইহিস সালাম নন।
এখন বাইবেলের এই উদ্ধৃতিটি আবার খেয়াল করুন:
"প্রায় নয়টার সময় যীশু খুব জোরে বলে উঠলেন, ‘এলি, এলি লামা শবক্তানী?’ যার অর্থ, ‘ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় ত্যাগ করেছ?’" (বাইবেল, মথি (Matthew) ২৭:৪৬)
এর ইংরেজি কিংস জেমস ভার্সনের অনুবাদটি ছিল:
"And about the ninth hour Jesus cried with a loud voice, saying, Eli, Eli, lama sabachthani? that is to say, My God, my God, why hast thou forsaken me?" (The KJV Bible, Matthew 27:46 )
এই অংশটি লক্ষ্য করুন //Jesus cried with a loud voice//, অর্থাৎ এই বাক্যটিতে "cried" শব্দটি থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, এটা past tense বা অতীতকালকে নির্দেশ করছে। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, এই ঘটনাটি ঘটে গেছে এবং যে বা যারা এই ঘটনা দেখেছে, তারা তাদের স্মৃতি থেকে এই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে। তাই এই ঘটনাটিতে তারা যে ব্যক্তিকে দেখেছিল ক্রুশে ঝুলন্ত অবস্থায়, তাকে যীশু ভেবেছিল এবং সে যখন কেঁদে উঠে বলছিল যে, 'ঈশ্বর কেন আমায় পরিত্যাগ করলে', তখন হয়ত মনে করেছিল যে, যীশুই এভাবে কাঁদছে। তাই এখানে আমরা উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে স্পষ্ট বুঝতে পারছি যে, এখানে কেবল লোকদের ভ্রম ঘটেছিল এবং তারা অন্য ক্রুশবিদ্ধ লোককে হয়ত যীশু বলে ধরে নিয়েছিল।
একারণে মহান আল্লাহ কুরআনুল কারীমে ঘোষণা করছেন,
وَبِكُفْرِهِمْ وَقَوْلِهِمْ عَلَىٰ مَرْيَمَ بُهْتَٰنًا عَظِيمًا
وَقَوْلِهِمْ إِنَّا قَتَلْنَا ٱلْمَسِيحَ عِيسَى ٱبْنَ مَرْيَمَ رَسُولَ ٱللَّهِ وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ وَلَٰكِن شُبِّهَ لَهُمْۚ وَإِنَّ ٱلَّذِينَ ٱخْتَلَفُوا۟ فِيهِ لَفِى شَكٍّ مِّنْهُۚ مَا لَهُم بِهِۦ مِنْ عِلْمٍ إِلَّا ٱتِّبَاعَ ٱلظَّنِّۚ وَمَا قَتَلُوهُ يَقِينًۢا
"(তাদের প্রতি আল্লাহর অসন্তোষ নেমে এসেছে) তাদের কুফরীর জন্য আর মারইয়ামের প্রতি তাদের গুরুতর অপবাদপূর্ণ কথা উচ্চারণের জন্য আর ‘আমরা আল্লাহর রাসূল মাসীহ ঈসা ইবনু মারইয়ামকে হত্যা করেছি’ তাদের এ উক্তির জন্য। কিন্তু তারা না তাকে হত্যা করেছে, না তাকে ক্রুশবিদ্ধ করেছে, কেবলমাত্র তাদের জন্য (এক লোককে) তার সদৃশ করা হয়েছিল, আর যারা এ বিষয়ে মতভেদ করেছিল তারাও এ সম্পর্কে সন্দেহে পতিত হয়েছিল। শুধু অমূলক ধারণার অনুসরণ ছাড়া এ ব্যাপারে তাদের কোন জ্ঞানই ছিল না। এটা নিশ্চিত সত্য যে, তারা তাকে হত্যা করেনি।"
(আল-কোরআন, ৪:১৫৬-১৫৭)
আল্লাহই ভাল জানেন।
.
.
=================================
- Ahmad Al-Ubaydullaah
Comments
Post a Comment