"স্বভাবজাত গুণ অনুসারে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য এবং শুদ্রেরও কর্মসমূহ পৃথক ভাবে বিভক্ত আছে।"
(ভগবতগীতা, ১৮:৪১)
হিন্দুদের প্রায়ই অযুহাত দিতে শুনবেন যে, এই বর্ণভেদ নাকি কর্ম ও গুণ অনুসারে হয়, জন্ম থেকে হয় না!
অথচ ভগবতগীতার ১৮ অধ্যায়ের ৪১ নং শ্লোকের ব্যাখ্যায় আচার্য রামানুজ বলেন,
"এই সহজাত প্রকৃতির আবির্ভাব ঘটে সামসারা অথবা পূর্ব (জন্মের) প্রভাব এবং কর্মের মাধ্যমে অথবা পূর্বের কাজের ফল হিসেবে এবং এটাই ব্রাহ্মণ হিসেবে জন্মগ্রহণকে নির্ধারণের মূল কারণ..."
"This inherent nature arises from samskaras or past impressions and karma or reactions from past actions and is the root cause of determining birth as a Brahmin...." (Ramanuja's Commentary on Gita, 18:41) source - http://www.bhagavad-gita.org/Gita/verse-18-39.html
অর্থাৎ তারা এটা ভালভাবেই এড়িয়ে যায় যে, তাদের জন্মান্তরবাদ থিওরি অনুযায়ী, আগের জন্মের অবস্থা অনুযায়ী পরের জন্মে গুণ ও অবস্থা স্থির হবে। তাই কেউ জন্মগ্রহণ করলে জন্মগতভাবে সেই বর্ণের অধিকারী। এর অর্থ কেউ জন্মগতভাবে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র।
আগের জন্ম অনুযায়ী পরের জন্মে প্রাপ্ত অবস্থা আমাদের কাছে ভ্রান্ত ধারণা। তাই যেহেতু আমরা জন্মান্তর স্বীকার করি না, তাই পূর্বের জন্মের অবস্থা অনুযায়ী ফল প্রাপ্ত হয়েছে, এটা আমরা সত্য বলে গ্রহণ করি না। এখানে যেহেতু বর্তমান জন্মে জন্ম থেকে বর্ণ নির্ধারিত (যেটাকে পূর্বের জন্মের ফল বলা হচ্ছে), সেক্ষেত্রে আমাদের কাছে শুধু এতটুকুই বিবেচ্য যে, আমরা কেবল এই জন্মের অবস্থাটাই দেখব এবং তাই এই জন্মে জন্ম থেকে একজন ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র এর কোনো পরিবর্তন নেই। কর্ম অনুসারে পরিবর্তন হবে পরের জন্মে, এই জন্মে নয়।
বিঃদ্রঃ কেন আমরা জন্মান্তরবাদ মানি না এটা বিশদে জানতে এখান থেকে পড়তে পারেন - জন্মান্তরবাদ একটি ভ্রান্ত থিওরি!!!
মহাভারতের অনুশাসন পর্বে পরিষ্কার উল্লেখ করা হয়েছে যে, একজন শূদ্রকে বৈদিক জ্ঞান প্রদান একজন ব্রাহ্মণের জন্য নিষিদ্ধ!
"সুতরাং ব্রাহ্মণদের কখনই উচিৎ নয় শূদ্রদের কোনোরূপ (বৈদিক) নির্দেশাবলি সম্পর্কিত শিক্ষা প্রদান করা..."
"Unto Sudras, therefore, the Brahmanas should never give instructions...."
(Mahabharata, Anusasana Parva, 13:10; p. 29; translated by Kisari Mohan Ganguli) source - http://www.sacred-texts.com/hin/m13/m13a010.htm
আদি শংকরাচার্য নিজেই নিচু জাতের জন্য বৈদিক শাস্ত্র অধ্যয়ন নিষিদ্ধ করেছেন।
“Sudras are separated from others who are all mentioned together in one compound word, because Sudras are of one birth and are debarred from the study of the Vedas…”
(Commentary of Adi Shankaracharya on Gita 18.41, translated by Mahadeva Shastri)
আর যারা বেদ অস্বীকারকারী, বৈদিক দর্শন প্রত্যাখানকারী, তারা হল যবন, তারাই ম্লেচ্ছ, তারাই দস্যু। যেমন আমি বৈদিক দর্শন সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখানকারী। সুতরাং আমি এই সংজ্ঞায় দস্যু। হিন্দুরা অনেকে অযুহাত দেয় যে, যাদের পশুর মত স্বভাব, যে মানবীয় গুণাবলি বর্জিত, সত্য বর্জিত, সেই নাকি ম্লেচ্ছ, দস্যু যা পুরোই মনগড়া ব্যাখ্যা।
মনুসংহিতায় পরিষ্কার উল্লেখ করা হয়েছে যে, হিন্দু গোষ্ঠীর চার বর্ণ (ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র) এর বাইরের যারা বৈদিক শাস্ত্র অমান্যকারী অর্থাৎ সহজ কথায় যারা হিন্দু নয়, তারা সবাই দস্যু।
"(ব্রহ্মের) মুখ থেকে জন্ম নেওয়া (ব্রাহ্মণ), বাহু থেকে জন্ম নেওয়া (ক্ষত্রিয়), উরু থেকে জন্ম নেওয়া (বৈশ্য) এবং পায়ের পাতা থেকে জন্ম নেওয়া (শূদ্র) গোষ্ঠীর বাইরে (i.e মুসলিম, খ্রিস্টান, ইহুদি, নাস্তিক, বৌদ্ধ, জৈন ইত্যাদি) আর যত গোষ্ঠী (পৃথিবীতে) আছে, তারা সবাই দস্যু; যদিও তারা ম্লেচ্ছদের ভাষায় কথা বলুক অথবা আর্যদের ভাষায় কথা বলুক।" (মনুসংহিতা, ১০:৪৫)
"All those tribes in this world, which are excluded from (the community of) those born from the mouth (i.e Brahmin), the arms (i.e Kshatriya), the thighs (i.e Vaishya), and the feet (of Brahman) (i.e Sudra), are called Dasyus, whether they speak the language of the Mlekkhas (barbarians) or that of the Aryans."
(Manu Samhita, 10:45) source - http://www.sacred-texts.com/hin/manu/manu10.htm
হিন্দু শাস্ত্রের একেশ্বরবাদ হল panentheism, আর কোরআন ও বাইবেলের একেশ্বরবাদ হল monotheism, সেক্ষেত্রে দুটো আলাদা জিনিস। অর্থাৎ অহিন্দু তত্ত্বের অনুসারীরা যবন, ম্লেচ্ছ। বর্তমানের নাস্তিকরা আরও বড় যবন, কারণ তারা কোনো তত্ত্বই স্বীকার করে না। বৈদিক দর্শনের অনুসারীরা হয়ত বিজ্ঞানের সাথে বৈদিক দর্শন মিলায়, কিন্তু এটা কেবল তাদের দর্শন। নাস্তিকরা এরূপ দর্শনের অনুসারী নয়, সেক্ষেত্রে তারাও দস্যু!
বৈদিক দর্শনের শিক্ষায় বর্ণ হল সম্মানের মানদণ্ড, তাই ব্রাহ্মণকে ব্রহ্মের মস্তিষ্ক এর সাথে, ক্ষত্রিয়কে বাহু এর সাথে, বৈশ্যকে উরু ও শুদ্রকে পায়ের পাতার সাথে তুলনা করা হয়েছে।
ইসলাম এই মানদণ্ডকে প্রত্যাখান করেছে। ইসলামে মানদণ্ড একমাত্র তাকওয়া (আল্লাহভীরুতা, ন্যায়পরায়ণতা, ধার্মিকতা ইত্যাদি)। এই মানদণ্ডের সাপেক্ষে তাকওয়ার বিচারে একজন মুচিও একজন ধনী ব্যক্তি, জ্ঞানী ব্যক্তির থেকে উৎকৃষ্ট হতে পারে। একজন দুশ্চরিত্র ক্ষমতাশালী পুরুষের থেকে একজন সচ্চরিত্র দরিদ্র নারী বহু গুণে আল্লাহর কাছে উত্তম হতে পারে। এখানে কোনো বর্ণ নেই, আছে একমাত্র তাকওয়া।
একারণেই আল্লাহ তাআলা সূরা হুজুরাতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করছেন,
يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَٰكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَىٰ وَجَعَلْنَٰكُمْ شُعُوبًا وَقَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوٓا۟ۚ إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ ٱللَّهِ أَتْقَىٰكُمْۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ
"হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার (একারণে নয় যে, তোমরা একে অপরকে ঘৃণা করবে)। তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে অধিক 'তাকওয়া' এর অধিকারী (অধিক আল্লাহ ভীরু, ন্যায়পরায়ণ, ধার্মিক ইত্যাদি)। আল্লাহ সবকিছু জানেন, সব কিছুর খবর রাখেন।"
(আল-কোরআন, ৪৯:১৩)
আর এজন্যই প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বিদায় হজ্জ্বের ভাষণে বলেন,
"সকল মানুষই আদম এবং হাওয়া থেকে এসেছে। একজন আরবের কোনো অনারবের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব নেই। এমনকি কোনো অনারবেরও কোনো আরবের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব নেই। শ্বেতকায় কোনো ব্যক্তির শ্রেষ্ঠত্ব নেই কৃষ্ণবর্ণের কোনো ব্যক্তির ওপর, এমনকি কৃষ্ণবর্ণের কোনো ব্যক্তিরও শ্রেষ্ঠত্ব নেই শ্বেতকায় কোনো ব্যক্তির ওপর; কেবল যা দিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব বিচার্য হবে তা হল তাকওয়া (ধার্মিকর্তা, ন্যায়পরায়ণতা, সৎকর্ম প্রভৃতি)।"
[আহমাদ ২২৯৭৮/হাদিসের মান: সহিহ;
source - https://islamqa.info/en/answers/182686/is-the-arab-muslim-better-than-the-non-arab-muslim]
=====================
#Ahmad_Ali
Comments
Post a Comment