কোরআন পুরুষের সমকামিতাকে (sodomy) সরাসরি হারাম করেছে, কিন্তু নারীর সমকামিতা (lesbianism) এর ব্যাপারে সরাসরি কিছু বলছে না। তাহলে নারীর সমকামিতা কি অনুমোদিত?
এই ব্যাপারটা নিয়ে প্রায়ই বড় বড় পণ্ডিত মার্কা লোকজনেরা বিশেষ করে অনলাইন জগতের বড় বড় ভণ্ডরা জলঘোলা করে থাকে।
.
প্রথমেই দেখি চলুন আল্লাহ তাআলা সমকামিতার ব্যাপারে কী বলছেন। মহান আল্লাহ বলেন,
.
وَلُوطًا إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِۦٓ أَتَأْتُونَ ٱلْفَٰحِشَةَ مَا سَبَقَكُم بِهَا مِنْ أَحَدٍ مِّنَ ٱلْعَٰلَمِينَ
إِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ ٱلرِّجَالَ شَهْوَةً مِّن دُونِ ٱلنِّسَآءِۚ بَلْ أَنتُمْ قَوْمٌ مُّسْرِفُونَ
.
"আর আমি লূতকে পাঠিয়েছিলাম। সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিলঃ তোমরা এমন অশ্লীল ও কু-কর্ম করছো যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে আর কেউই করেনি।
তোমরা স্ত্রীলোকদের বাদ দিয়ে পুরুষদের দ্বারা নিজেদের যৌন ইচ্ছা নিবারণ করে নিচ্ছ। প্রকৃত পক্ষে, তোমরা হচ্ছ সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়।"
(আল-কোরআন, ৭:৮০-:৮১)
.
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা সমকামিতা হারাম হওয়ার বিষয়টিকে পরিষ্কার করতে লূত (আলাইহিস সালাম) এর সম্প্রদায়ের ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন। এথেকেই মুসলিমদের জন্য এটা বোঝা যথেষ্ট যে, সমকামিতাকে আল্লাহ হারাম করেছেন আর লূত (আলাইহিস সালাম) এর সম্প্রদায়ের ঘটনাটি এখানে এই বিষয়ের একটি উদাহরণ মাত্র।
.
কিন্তু ইসলামবিদ্বেষী আর নাফস-পূজারিরা এথেকে এই অর্থ বের করতে চায় যে, কোরআনে কেবল পুরুষের জন্য সমকামিতা নিষিদ্ধ, নারীর জন্য নয়।
.
তাহলে চলুন দেখি লেজবিয়ানিজম বা নারীর সমকামিতার ব্যাপারটা কতখানি ইসলামে অনুমোদিত!
.
আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন,
.
ٱلْيَوْمَ أُحِلَّ لَكُمُ ٱلطَّيِّبَٰتُۖ وَطَعَامُ ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْكِتَٰبَ حِلٌّ لَّكُمْ وَطَعَامُكُمْ حِلٌّ لَّهُمْۖ وَٱلْمُحْصَنَٰتُ مِنَ ٱلْمُؤْمِنَٰتِ وَٱلْمُحْصَنَٰتُ مِنَ ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْكِتَٰبَ مِن قَبْلِكُمْ إِذَآ ءَاتَيْتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ مُحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَٰفِحِينَ وَلَا مُتَّخِذِىٓ أَخْدَانٍۗ وَمَن يَكْفُرْ بِٱلْإِيمَٰنِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُۥ وَهُوَ فِى ٱلْءَاخِرَةِ مِنَ ٱلْخَٰسِرِينَ
.
"আজ তোমাদের জন্য পবিত্র বস্তুগুলি হালাল করা হল। আহলে কিতাবের যবাহকৃত জীবও তোমাদের জন্য হালাল এবং তোমাদের যবাহকৃত জীবও তাদের জন্য হালাল।
.
**আর সতী সাধ্বী মুসলিম নারীরাও এবং তোমাদের পূর্ববর্তী আহলে কিতাবের মধ্যকার সতী-সাধ্বী নারীরাও (তোমাদের জন্য হালাল),**
.
**যখন তোমরা তাদেরকে তাদের বিনিময় (মোহর) প্রদান কর, এ রূপে যে, তোমরা (তাদেরকে) পত্নী রূপে গ্রহণ করে নাও,**
.
**না প্রকাশ্যে ব্যভিচার কর, আর না গোপন প্রণয় কর;**
.
আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে কুফরী মিশ্রিত করবে তার ‘আমল নিস্ফল হয়ে যাবে এবং সে আখিরাতে সম্পূর্ণ রূপে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।"
(আল-কোরআন, ৫:৫)
.
উক্ত আয়াত থেকে কয়েকটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়:
.
১) বিবাহের পদ্ধতিতে, পুরুষ এবং নারীর মধ্যে বিবাহ হবে।
.
২) মুসলিম পুরুষ কেবল মুসলিম নারী অথবা উত্তম আহলে কিতাবদের নারীদেরকেই বিবাহ করতে পারবে।
.
৩) বিয়ের বাইরে ব্যভিচার করা যাবে না।
.
৪) বিয়ের বাইরে প্রেম করাও যাবে না।
.
.
এখন ১) নং পয়েন্ট অনুযায়ী, বিবাহ কেবল নারী আর পুরুষের মধ্যেই হালাল। এর অর্থ হল, পুরুষ-পুরুষকে অথবা নারী-নারীকে বিয়ে করতে পারবে না।
.
৩) ও ৪) নং পয়েন্ট অনুযায়ী, বিয়ের বাইরে তাই পুরুষ-পুরুষের সাথে, নারী-নারীর সাথে অথবা পুরুষ-নারীর সাথে কোনোরূপ প্রণয়জাত সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না। এর অর্থ এটাই দাঁড়ায় যে, বিয়ের বাইরে নারী-নারীর সাথে সমকামিতায়ও লিপ্ত হতে পারবে না।
.
তবে এখানে কেউ প্রশ্ন করতে পারে যে, বিয়ের বাইরে সম্পর্ক অনুমোদিত নয়, এটা তো বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু এখানে তো কেবল পুরুষ আর নারীর বিবাহের কথা বলা হচ্ছে। নারী-নারীকে বিয়ে করতে পারবে কিনা, এটা তো বলা হয়নি।
.
এর জবাবে আল্লাহ বলেন,
.
"...আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দীন হিসাবে মনোনীত করলাম।"
(আল-কোরআন, ৫:৩)
.
অর্থাৎ ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় ইবাদতের ক্ষেত্রে কোনো কিছু বাদ দেওয়া বা যোগ দেওয়ার কোনো উপায় নেই ইসলামে। একারণে আল্লাহ তাআলা বিবাহের যে বিধান জারি করেছেন, তার বাইরে গিয়ে দুই বা ততোধিক নারীর মধ্যে বিবাহ সম্পাদন করা ইসলামে হারাম বলেই গণ্য হবে আর তা সমকামিতার মধ্যেই পড়বে।
.
তাই বিবাহের ক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতি চালু করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিস অনুযায়ী তা বিদআতী পথভ্রষ্টতা হিসেবে গণ্য হবে যা সর্বাবস্থায় পরিত্যাজ্য।
.
"....উত্তম বাণী হল আল্লাহ তা'আলার কিতাব এবং সর্বোত্তম হিদায়াত হল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হিদায়াত। নিকৃষ্ট বিষয় হলো বিদআত (দ্বীনে নতুন আবিষ্কৃত বিষয়সমূহ।) সকল বিদআতই হল পথভ্রষ্টতা..."
.
[সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৮/ জুমু’আ (كتاب الجمعة)
হাদিস নম্বরঃ ১৮৭৮
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) http://www.hadithbd.com/share.php?hid=11243]
.
আল্লাহই ভাল জানেন।
.
"আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ (রহঃ) ..... আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন পুরুষ অপর পুরুষের লজ্জাস্থানের দিকে তাকাবে না এবং কোন মহিলা অপর মহিলার লজ্জাস্থানের দিকে তাকাবে না; কোন পুরুষ অপর পুরুষের সাথে এক কাপড়ের নীচে (উলঙ্গ অবস্থায়) ঘুমাবে না এবং কোন মহিলা অপর মহিলার সাথে একই কাপড়ের নীচে ঘুমাবে না।"
.
[সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ৩। হায়য ঋতুস্রাব (كتاب الحيض)
হাদিস নম্বরঃ ৬৫৫
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) http://www.hadithbd.com/share.php?hid=47408]
.
.
==============
#আহমেদ_আলি
Comments
Post a Comment