মহান আল্লাহ বলেন,
.
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَٰٓئِكَةِ إِنِّى جَاعِلٌ فِى ٱلْأَرْضِ خَلِيفَةًۖ قَالُوٓا۟ أَتَجْعَلُ فِيهَا مَن يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ ٱلدِّمَآءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَۖ قَالَ إِنِّىٓ أَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ
.
"স্মরণ কর, তোমার প্রতিপালক যখন ফেরেশতাদেরকে বললেন, ‘আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করছি’; তারা বলল, ‘আপনি কি সেখানে এমন কাউকেও সৃষ্টি করবেন যে অশান্তি সৃষ্টি করবে ও রক্তপাত ঘটাবে? আমরাই তো আপনার প্রশংসামূলক তাসবীহ পাঠ ও পবিত্রতা ঘোষণা করি’। তিনি বললেন, ‘আমি যা জানি, তোমরা তা জান না’।" (আল-কোরআন, ২:৩০)
.
এখানে মানব সৃষ্টির আগেই আল্লাহ ফেরেশতাদের ঘোষণা করে দিয়েছিলেন যে, পৃথিবীতে মানুষের আগমন ঘটবে। আর তাই আদম আলাইহিস সালাম ফল খেলেও কী, না খেলেও কী! মানুষ পৃথিবীতে সৃষ্টি হতই।
.
প্রশ্ন হল, তাহলে আদম আলাইহিস সালামকে জান্নাতে কেন রাখা হল?
.
وَقُلْنَا يَٰٓـَٔادَمُ ٱسْكُنْ أَنتَ وَزَوْجُكَ ٱلْجَنَّةَ وَكُلَا مِنْهَا رَغَدًا حَيْثُ شِئْتُمَا وَلَا تَقْرَبَا هَٰذِهِ ٱلشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ ٱلظَّٰلِمِينَ
.
"আমি (আদমকে) বললাম, “হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বাস করো এবং সেখান থেকে যখন যেখানে চাও তৃপ্তি সহকারে (খাদ্য-সামগ্রী) আহার কর। তবে এই গাছটির কাছে যেয়ো না, গেলে তোমরা অন্যায়কারীদের দলভুক্ত হবে।”" (আল-কোরআন, ২:৩৫)
.
অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে যে, এখানে আল্লাহ তাআলা জান্নাতে আদম আলাইহিস সালাম ও তাঁর স্ত্রীকে রেখেছেন দুটি বিষয়ের সম্মুখীন করতে -
১) জান্নাতের বিলাস বহুল জীবনকে তুলে ধরতে,
২) জান্নাতের একটি বিষয়কে হারাম হিসেবে নির্দিষ্ট করতে।
.
এই দুটি বিষয় থেকে বোঝা যায়, জান্নাতের বিলাসের উপভোগ থেকে ভোগ বিলাসিতা, চাকচিক্যময়তার ব্যাপারটি মানব প্রকৃতির নিকট উন্মোচিত হল আর এর পরেই হারাম বৃক্ষ থেকে হালাল হারামের শিক্ষা দেওয়া হল এবং এটাও বোঝানো হল যে, চাকচিক্যময়তার মধ্যে ডুবে থেকে আল্লাহর নির্দেশ লঙ্ঘন করলে তা কখনই প্রশান্তি বয়ে আনে না, হারাম পথ তাই বর্জনীয়।
.
আর তাই এই বিষয়গুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ায় পাঠানোর আগে আদম আলাইহিস সালামকে পূর্বপ্রস্তুতির মাধ্যমে উপযুক্ত করে তুললেন যাতে করে সে দুনিয়ার বিলাসিতা আর পরীক্ষার সম্মুখীন হতে পারে।
.
এরপর যখন শয়তান এর প্ররোচনায় আদম আলাইহিস সালাম নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খেয়ে বসেন, তখন আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত সময় এসে পড়ে আদম আলাইহিস সালামকে দুনিয়ায় প্রেরণের। কিন্তু এখানে তাঁর পাপের জন্য দুনিয়ায় তাঁকে পাঠানো হয়নি। বরং আলাইহিস সালামকে আল্লাহ হারাম কাজের জন্য ক্ষমা করে দেন এবং তাই মানুষের আদিপাপ বলে কিছু নেই, আর তাই যীশু খ্রিস্টকেও এই পাপের বোঝা বহন করে ক্রুশে মারা যাওয়ার জন্য পৃথিবীতে নেমে আসারও প্রয়োজন নেই! অর্থাৎ খ্রিস্টবাদের এখানেই পরিসমাপ্তি হয়ে গেল।
.
فَتَلَقَّىٰٓ ءَادَمُ مِن رَّبِّهِۦ كَلِمَٰتٍ فَتَابَ عَلَيْهِۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ
.
"আদম তখন (ক্ষমা চাওয়ার জন্য) তার প্রভুর কাছ থেকে কয়েকটি কথা শিখে নেয়। অতঃপর তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন। কারণ, তিনি তো ক্ষমাশীল, দয়ালু।" (আল-কোরআন, ২:৩৭)
.
তবে দুনিয়ার এই পরীক্ষার মধ্যে আসতে আল্লাহ তাআলা আমাদের বাধ্য করেন নি, বরং আমরাই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হওয়ার জন্য ইসলামের আমানত বহনকারী মনুষ্যজীবনের পরীক্ষা বেছে নিয়েছি, তাই এই জীবনের পরীক্ষার জন্য আমরাই দায়ী!!!
.
إِنَّا عَرَضْنَا ٱلْأَمَانَةَ عَلَى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَٱلْجِبَالِ فَأَبَيْنَ أَن يَحْمِلْنَهَا وَأَشْفَقْنَ مِنْهَا وَحَمَلَهَا ٱلْإِنسَٰنُۖ إِنَّهُۥ كَانَ ظَلُومًا جَهُولًا
"নিশ্চয়ই আমি আকাশ, পৃথিবী ও পর্বতমালার প্রতি এ আমানত অর্পণ করতে চেয়েছিলাম। ওরা ভয়ে বহন করতে অস্বীকার করল; কিন্তু মানুষ তা বহন করল। নিশ্চয় সে অতিশয় যালেম ও অতিশয় অজ্ঞ।" (আল-কোরআন, ৩৩:৭২)
.
আল্লাহই ভাল জানেন।
.
.
- আহমেদ আলি
Comments
Post a Comment