"আহমাদ ও আবূ দাঊদে মু‘আবিয়াহ্ (রাঃ) হতে (কিছু পার্থক্যের সাথে) বর্ণনা করেন যে, ৭২ দল জাহান্নামে যাবে। আর একটি দল জান্নাতে যাবে। আর সে দলটি হচ্ছে জামা‘আত। আর আমার উম্মাতের মধ্যে কয়েকটি দলের উদ্ভব হবে যাদের শরীরে এমন কুপ্রবৃত্তি (বিদ্‘আত) ছড়াবে যেমনভাবে জলাতংক রোগ রোগীর সমগ্র শরীরে সঞ্চারণ করে। তার কোন শিরা-উপশিরা বাকি থাকে না, যাতে তা সঞ্চার করে না।"
.
[মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
অধ্যায়ঃ পর্ব-১ঃ ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان)
হাদিস নম্বরঃ ১৭২;
আহমাদ ১৬৪৯০, আবূ দাঊদ ৪৫৯৭, সহীহুত্ তারগীব ৫১। হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan) http://www.hadithbd.com/share.php?hid=54731]
.
এখানে //সে দলটি হচ্ছে জামা‘আত//।
.
এই দলের বৈশিষ্ট্য কী?
.
"আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বানী ইসরাঈল যে অবস্থায় পতিত হয়েছিল, নিঃসন্দেহে আমার উম্মাতও সেই অবস্থার সম্মুখীন হবে, যেমন একজোড়া জুতার একটি আরেকটির মতো হয়ে থাকে। এমনকি তাদের মধ্যে কেউ যদি প্রকাশ্যে তার মায়ের সাথে ব্যভিচার করে থাকে, তবে আমার উন্মাতের মধ্যেও কেউ তাই করবে। আর বানী ইসরাঈল ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আমার উন্মাত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। শুধু একটি দল ছাড়া তাদের সবাই জাহান্নামী হবে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সে দল কোনটি? তিনি বললেনঃ আমি ও আমার সাহাবীগণ যার উপর প্রতিষ্ঠিত।"
.
[সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত]
অধ্যায়ঃ ৩৮/ ঈমান (كتاب الإيمان عن رسول الله ﷺ)
হাদিস নম্বরঃ ২৬৪১;
মিশকাত, তাহকীক সানী (১৭১), সহীহাহ (১৩৪৮)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan) http://www.hadithbd.com/share.php?hid=41244]
.
অর্থাৎ এই দলের বৈশিষ্ট্য //আমি ও আমার সাহাবীগণ যার উপর প্রতিষ্ঠিত।//
.
অর্থাৎ এই দুটো হাদিস থেকে দাঁড়াল, যারা আকিদাতে জামাআত অর্থাৎ ঐক্যবদ্ধতা অবলম্বন করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবাগণের পথে চলবে, তারাই নাজাতপ্রাপ্ত হবে ইনশাআল্লাহ। এখানে মাযাহাব, আহলে হাদিস, সালাফি কিছুই বলা নেই। এই নামগুলো সব আমরা বানিয়ে নিজেরাই মারামারি করছি। আসলে আমরা জামাআত অর্থাৎ ঐক্যবদ্ধতাও চাই না, অথচ কোন একটি দল নিজেদের শ্রেষ্ঠ বলে মনে করে ভাবি যে, আমরাই শুধু নাজাতপ্রাপ্ত, বাকি সব পথভ্রষ্ট!
.
আল্লাহ বলেন,
.
مُنِيبِينَ إِلَيْهِ وَٱتَّقُوهُ وَأَقِيمُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَلَا تَكُونُوا۟ مِنَ ٱلْمُشْرِكِينَ
مِنَ ٱلَّذِينَ فَرَّقُوا۟ دِينَهُمْ وَكَانُوا۟ شِيَعًاۖ كُلُّ حِزْبٍۭ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ
"তাঁর অভিমুখী হও, আর তাঁকে ভয় কর, নামায প্রতিষ্ঠা কর, আর মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।
যারা নিজেদের দীনে মতভেদ সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে, প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উৎফুল্ল।" (আল-কোরআন, ৩০:৩১-৩২)
.
.
وَإِنَّ هَٰذِهِۦٓ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَٰحِدَةً وَأَنَا۠ رَبُّكُمْ فَٱتَّقُونِ
فَتَقَطَّعُوٓا۟ أَمْرَهُم بَيْنَهُمْ زُبُرًاۖ كُلُّ حِزْبٍۭ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ
.
"তোমাদের এসব উম্মাত তো একই উম্মাত, আর আমিই তোমাদের প্রতিপালক, কাজেই আমাকেই ভয় কর। কিন্তু মানুষ তাদের কর্তব্য কর্মকে বহুধা বিভক্ত করে ফেলেছে, আর প্রত্যেক দলই তাদের কাছে যা আছে তাই নিয়ে আনন্দিত।" (আল-কোরআন, ২৩:৫২-৫৩)
.
.
وَلَا تَكُونُوا۟ كَٱلَّذِينَ تَفَرَّقُوا۟ وَٱخْتَلَفُوا۟ مِنۢ بَعْدِ مَا جَآءَهُمُ ٱلْبَيِّنَٰتُۚ وَأُو۟لَٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
.
"তোমরা সেই লোকদের মত হয়ে যেয়ো না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শন পৌঁছার পরে বিভক্ত হয়েছে ও মতভেদ করেছে এবং এ শ্রেণীর লোকেদের জন্য আছে মহা শাস্তি।" (আল-কোরআন, ৩:১০৫)
.
.
إِنَّ ٱلَّذِينَ فَرَّقُوا۟ دِينَهُمْ وَكَانُوا۟ شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِى شَىْءٍۚ إِنَّمَآ أَمْرُهُمْ إِلَى ٱللَّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُوا۟ يَفْعَلُونَ
.
"নিশ্চয়ই যারা নিজেদের দীনের মধ্যে নানা মতবাদ সৃষ্টি করে ওকে খন্ড বিখন্ড করেছে এবং বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, (হে মুহাম্মাদ) তাদের সাথে কোন ব্যাপারে তোমার কোন দায়িত্ব নেই, তাদের বিষয়টি নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট সমর্পিত, পরিশেষে তিনিই তাদেরকে তাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবহিত করবেন।" (আল-কোরআন, ৬:১৫৯)
.
.
إِنَّمَا ٱلْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا۟ بَيْنَ أَخَوَيْكُمْۚ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّن قَوْمٍ عَسَىٰٓ أَن يَكُونُوا۟ خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَآءٌ مِّن نِّسَآءٍ عَسَىٰٓ أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّۖ وَلَا تَلْمِزُوٓا۟ أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا۟ بِٱلْأَلْقَٰبِۖ بِئْسَ ٱلِٱسْمُ ٱلْفُسُوقُ بَعْدَ ٱلْإِيمَٰنِۚ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ
.
"মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে-যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও। মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালিম।" (আল-কোরআন, ৪৯:১০-১১)
.
.
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে হেদায়েত দান করুন এবং আমাদের গুনাহ, ত্রুটি-বিচ্যুতি মার্জনা করুন। আমিন।
.
- আহমেদ আলি
Comments
Post a Comment