Skip to main content

মা আয়েশা (রা) এর বিয়ে নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি....


প্রথমত এটা ছিল তৎকালীন সময়ের সমাজের রীতি অল্প বয়সে বিয়ে। তাই এই রীতি অনুযায়ী বিয়েতে নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শত্রুরা পর্যন্ত সেই সময়ে কোনো সমস্যা দেখে নি। তাই এই বিয়েটা কোনো অস্বাভাবিক কিছু না। এমন প্রথা সব সময়ই ছিল সেই যুগে। বাইবেলেও আমরা পাই এমন early age এ বিয়ের কথা। ভারতীয় শাস্ত্রেও দেখতে পাই দশ বছর দশ বছরের মধ্যেই মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার স্পষ্ট বিবরণ আছে। কৃষ্ম রুক্মিনীকে বিয়ে করেছে যখন রুক্মিনীর বয়স আট। রাম সীতাকে বিয়ে করেছিল যখন সীতার বয়স ছিল ছয়। তাই এই প্রথাগুলো তখনকার সময় ছিল সাধারণ ব্যাপার।
.
এখানে ইসলামে বিয়ের কোনো নির্দিষ্ট বয়স নেই৷ শারীরিক আর মানসিক ম্যাচিউরিটি এসে গেলে কেউ ইসলাম অনুযায়ী বিয়ের উপযুক্ত, এতে তার বয়স ১৮ এর কমও হোক না কেন! বর্তমানেও যদি আমরা দেখি, তাহলে এখনও পৃথিবীর অনেক দেশে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১২, ১৪ বছরও আছে। এখানে শীতপ্রধান দেশে ম্যাচুউরিটি দেরিতে আসে, আর গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশে আগে আগে আসে। এখানে আরবের মত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশে সেই সময় মেয়েদের শারীরিক পরিশ্রমও করতে হত। তাই এখানে আগে আগে ম্যাচিউরিটি আসা অসাধারণ কোনো ব্যাপার না। হাদিস থেকে দেখা যায় যে, আয়েশা (রা) এর মাসিক এর সময় এর কথা, তাই এখানে তার শারীরিক সক্ষমতা অনেক আগে আগে এসে যাওয়া চমকে ওঠার মত কিছুই না। লিনা মদিনা নামে এক মেয়ে ছয় বছর বয়সে বাচ্চার জন্ম দিয়েছে, এটা মেডিকেল সাইন্সের একটা পরিষ্কার এভিডেন্স।
.
তার পাশাপাশি আয়েশা (রা) নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রায় ২০০০ এর ওপর হাদিস উদ্ধৃত করেছেন যার মধ্যে অনেক হাদিস যেমন বড় বড়, তেমনি সেগুলোতে নারী পুরুষের দাম্পত্য বিষয় সম্পর্কেও বলা আছে। যদি মা আয়েশা (রা) এর ম্যাচিউরি নাই আসত, তাহলে এত দক্ষতা তিনি কীভাবে দেখালেন যা একজন ম্যাচিউর লোকের পক্ষেও পুরোপুরি সঠিকভাবে করা সম্ভব না?
.
এর পাশাপাশি এই বিয়েতে আয়েশা (রা) এর পিতা আবু বকর (রা) এর মত ছিল। আয়েশা (রা) তাঁর জীবদ্দশায় কোনো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিন্দা করেন নি, বরং তাঁকে সমস্ত মানবজাতির মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করেছেন। তার মানে, এই বিয়েতে আয়েশা (রা) এরও মত ছিল।তাহলে বর, কনে, অভিভাবক কারও কোনো সমস্যা নেই, এমনকি সেই সময়ের শত্রুদেরও কোনো সমস্যা নেই, যত সমস্যা এই মুক্তমনাদের!! এর কারণ তারা হল ইসলামবিদ্বেষী কাফির আর মুশরিক, ইসলামটাই এদের কাছে যত সমস্যা!
.
তাহলে এই বিয়ের আসল কারণটা কী?
.
এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে হুকুম ছিল যে আয়েশা (রা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী হবেন।
.
আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
.
“আমাকে তিন দিন স্বপ্নে দেখানো হয়েছে তোমাকে, রেশমের একটি পাত্রে তোমাকে নিয়ে এসে মালাক বলে এ হচ্ছে তোমার স্ত্রী, আমি তার চেহারা খুলে দেখি তুমিই সে নারী। অতঃপর আমি বলি, এটা যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়, তবে অবশ্যই তা বাস্তবায়ন হবে”।
.
{মুসলিম- অষ্টম খণ্ড, পনেরতম অংশ, পৃষ্ঠা : (২০২) দারু ইহইয়াউত তুরাসিল আরাবি, বইরুত, দ্বিতীয় মুদ্রণ, হি.১৩৯২, ই.১৯৭২}
.
আয়েশা (রা) কে স্ত্রী করার কারণ হল তাঁর মধ্যে আল্লাহ এমন কিছু বৈশিষ্ট্য দিয়েছিলেন, যাতে তিনি আল্লাহর রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছ থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান উম্মতের মধ্যে স্থানান্তর করতে পারেন। আয়েশা (রা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নবুয়ত জীবনের বাস্তব সাক্ষী। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুব কাছ থেকে জেনেছেন, জ্ঞান লাভ করেছেন, আর অসংখ্য হাদিস, ইসলামিক ব্যাখ্যা বর্ণনা করেছেন। যদি তিনি না থাকতেন, হয়ত উম্মত অনেক হাদিস আর ফিকহ এর অনেক ব্যাখ্যা আজ পেত না। তিনি ইসলামিক আলিমদের শিক্ষিতা ছিলেন, তাঁর কাছে কেউ কোনো সমস্যা নিয়ে গেলে তিনি তার সমাধান করতেন ইসলামিক জ্ঞান এর মাধ্যমে। এমনকি তাঁর শিক্ষাদান, বক্তৃতা, গুণাবলিতে তিনি ছিলেন মাশাআল্লাহ অপূর্ব! আর এতকিছু সম্ভবই হত না যদি না আয়েশা (রা) এর সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিয়ে না হত।
.
আল্লাহই ভাল জানেন।
.
.
#আহমেদ_আলি

Comments

Popular posts from this blog

মানহাজ ও মাযাহাব নিয়ে যত দ্বন্দ্বের জবাব....

[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...

কৃষ্ণ কি আল্লাহর নবী ছিল?

এই প্রশ্নটা আমাকেও করা হয়েছে সম্ভবত কয়েকবার। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরটা বড়ই জটিল। কারণ এর কোনো যথাযথ উত্তর আমাদের জানা নেই। যদি কৃষ্ণের গোপীদের সাথে লীলার কাজকে সত্য বলে...

ভগবতগীতার বর্ণভেদ নিয়ে ভক্তদের ভণ্ডামির জবাব

============================ চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ৷ তস্য কর্তারমপি মাং বিদ্ধ্যকর্তারমব্যয়ম্৷৷১৩ অর্থ:  "প্রকৃতির তিনটি গুণ এবং কর্ম অনুসারে আমি মনুষ্য সমাজে চারটি বর্ণ...