Skip to main content

আল্লাহ তাআলা কীভাবে এলেন? (পর্ব ২)


সৃষ্টিকর্তার কথা চলুন ভুলে যাই। আমরা প্রকৃতিটাকে বোঝার চেষ্টা করি। প্রকৃতি বলতে সময়ের প্রকৃতি।
আমরা মানুষেরা সময় মাপছি কিছু না কিছু দিয়ে। সাধারণভাবে সূর্যটাকেই ধরে নিলাম। এখন পৃথিবী যখন সূর্যের চারদিকে ঘুরছে, তখন সেটা নিজের অক্ষের ওপরও ঘুরছে বলে আমরা জানি। আর একপাক নিজ অক্ষে ঘোরার পর আমরা এই সময়টুকুকে এক দিন বলে হিসাব করেছি। এখন এই এক দিনকে আমরা ২৪ টা ভাগে ভাগ করেছি। এক এক ভাগকে নাম দিয়েছি ঘণ্টা, তাহলে দাঁড়াল ২৪ ঘণ্টা। আবার এক ঘণ্টাকে ৬০ ভাগে ভাগ করে প্রত্যেক ভাগের নাম মিনিট রেখেছি, এভাবে আরও ভাগ করে সেকেন্ডও পেয়েছি। উন্নত প্রযুক্তিতে হয়ত সেকেন্ডকেও দিনে দিনে আমরা অনেক ভাগে ভাগ করতে পারব হয়ত।
.
যাই হোক, মূল বক্তব্য হল আমরা সময় মাপার ক্ষেত্রে কিছু না কিছু যা আমাদের চারপাশে আছে তার সাথে তুলনা করে মাপছি। এখন মূল মাপার কাঠি যদি সূর্য ধরি, তাহলে দিন রাত সূর্যের সাপেক্ষে মেপে হিসাব করছি। এখন যদি সূর্য না থাকত, হয়ত অন্য কিছুর সাথে তুলনা করে আমরা হিসাব করতাম। অন্য কোনো নক্ষত্রের সাপেক্ষে হয়ত। অনেক রীতিতে বছর মাপা হয় চাঁদের সাপেক্ষে। হিন্দু, মুসলিম প্রভৃতি রীতিতে হয়ত এই হিসাবগুলো পেতে পারি।
যাই হোক আমরা আমাদের সাপেক্ষে দিন হিসাব করলাম, এবার সূর্যের সাপেক্ষে পুরোটা ঘুরে আসার সময়কে এক বছর হিসেবে সংজ্ঞায়িত করলাম। আবার এই বছরের হিসাব আর আলোর গতির হিসাবের তুলনা করেও আলোকবর্ষ এর সাপেক্ষে সময়কে মেপে দূরত্ব নির্ণয় করলাম। এছাড়া আমরা যেভাবে সূর্যের সাপেক্ষে পুরো একপাক ঘোরাকে বছর বললাম, সেটার হিসাব করে মূল যে সময়, অর্থাৎ বিগ ব্যাং এর সময় থেকে বর্তমান অবধি আমরা কত বছর পার করেছি এগুলোও হিসাব করলাম মাশাআল্লাহ!
.
আচ্ছা, তাহলে অনেক কিছুই করা গেল। আমার এতকিছু বলার একটাই উদ্দেশ্য। সেটা হল, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, কোনো কিছুর সাপেক্ষে তুলনা না করলে আমরা সময় মাপতেই পারব না। আমাদের সাপেক্ষে সাধারণ হিসাবে আমরা সূর্যের সাপেক্ষে সময় মাপছি। সূর্য না থাকলে অন্য কিছু দিয়ে মাপতাম। এখন তাহলে প্রশ্নটা হল যদি কিছু না থাকে totally, একেবারে কিছুই না থাকে, তাহলে সময় কী দিয়ে মাপব? অর্থাৎ আমি বলতে চাইছি যে, যখন সৃষ্টি বা জগতের কিছুই অস্তিত্ব লাভ করে নি, তখন কী দিয়ে আমরা সময় মাপব? না কোনো মহাবিশ্ব আছে, না কোনো জান্নাত বা জাহান্নাম আছে। কিছুই নেই। এমন অবস্থায় যখন কিছুই নেই, তখন সময় কী দিয়ে মাপব? আর সময় যদি না মাপতে পারি, তাহলে সেখানে শুরু বা শেষ বলে আদৌ কিছু কীভাবে নির্ধারণ করব?
.
উত্তর হল, এটা সিম্পল লজিক যে, যদি সময় মাপার কিছুই না থাকে, সেক্ষেত্রে সেই অবস্থা "শুরু" বা "শেষ" এমন বিষয় দিয়ে নির্ধারিত নয়। বরং সেই অবস্থায় যখন শুরু বা শেষ আদৌ নেই, তখন সেই অবস্থা সময়ের গণ্ডিতে আবদ্ধ নয়। এখন যদি সেই অবস্থা সময়ের গণ্ডিতে আবদ্ধ না হয়, তবে এই অবস্থাকে আমরা বলতে পারি "অনাদি" বা "আদি ও অন্তহীন" বা ইংরেজিতে বলতে পারি without beginning, without end. এখন এই অবস্থায় তাই যদি কোনো কিছু থেকে থাকে, তবে সেটারও শুরু থাকবে না, শেষ থাকবে না। আর ইসলাম ঘোষণা করছে যে, আল্লাহ তাআলা ঠিক এই অবস্থায় বিরাজমান। কোরআন বলছে,
.
ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلْحَىُّ ٱلْقَيُّومُ
.
"আল্লাহ ছাড়া কোনই ইলাহ (উপাস্য) নেই, তিনি চিরঞ্জীব ও নিত্য বিরাজমান।"
(আল-কোরআন, ৩:২)
.
অর্থাৎ তাই এটা দাঁড়াচ্ছে যে, আল্লাহ তাআলা হলেন অনাদি, অর্থাৎ আদি বা অন্তহীন, কারণ তাঁকে যদি মাপতেই হয়, তাহলে আমরা তাঁকে কী দিয়ে মাপব? তিনিই তো সকল পরিমাপের বিষয় সৃষ্টি করেছেন, আর তিনি এই সকল পরিমাপের আগেও ছিলেন, তাহলে যিনি পরিমাপের আগে ছিলেন, তাঁকে সেই ক্ষুদ্র পরিমাপ দিয়ে মাপা সম্ভব না, যেমনভাবে বইয়ের পৃষ্ঠা আর কালি দিয়ে বইয়ের লেখককে মাপা সম্ভব না, কারণ বইয়ের কোনো পাতাতে লেখক নেই, বরং লেখকের অস্তিত্ব আলাদা। এখানেও আল্লাহকে আমরা মাপতে পারব না। তাঁকে মাপার কিছুই তো নেই, কারণ তিনিই এই পরিমাপের বিষয় সৃষ্টি করেছেন আর তাই তিনি এই পরিমাপের চেয়েও উর্ধ্বে। আল্লাহ বলেন,
.
وَلَمْ يَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدٌۢ
.
"তাঁর সমতুল্য কিছুই নেই।"
(আল-কোরআন, ১১২:৪)
.
সুতরাং যদি আল্লাহ তাআলা অনাদি হন, তাহলে তাঁর কোনো শুরু বা শেষ নেই। এখন যুক্তি অনুযায়ী, যদি কোনো কিছু সৃষ্টি হয়, তবে তার একটা শুরু থাকবে। কিন্তু যদি তার শুরু না থাকে, তার মানে হল, সেটা সৃষ্টি হয়নি, বরং সেটা অনাদি বা আদি-অন্তহীন। এর মানে হল, যা অনাদি বা যা সৃষ্টি হয়নি, তার সৃষ্টিকর্তা থাকাও অযৌক্তিক। অর্থাৎ যদি বলা হয়, আল্লাহ তাআলাকে কে সৃষ্টি করেছে, এটাও তখন আসলে একটা অযৌক্তিক প্রশ্ন। কারণ তিনি আসলে অনাদি বা আদি-অন্তহীন।
=============
- আহমেদ আলি

Comments

Popular posts from this blog

মানহাজ ও মাযাহাব নিয়ে যত দ্বন্দ্বের জবাব....

[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...

কৃষ্ণ কি আল্লাহর নবী ছিল?

এই প্রশ্নটা আমাকেও করা হয়েছে সম্ভবত কয়েকবার। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরটা বড়ই জটিল। কারণ এর কোনো যথাযথ উত্তর আমাদের জানা নেই। যদি কৃষ্ণের গোপীদের সাথে লীলার কাজকে সত্য বলে...

ভগবতগীতার বর্ণভেদ নিয়ে ভক্তদের ভণ্ডামির জবাব

============================ চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ৷ তস্য কর্তারমপি মাং বিদ্ধ্যকর্তারমব্যয়ম্৷৷১৩ অর্থ:  "প্রকৃতির তিনটি গুণ এবং কর্ম অনুসারে আমি মনুষ্য সমাজে চারটি বর্ণ...