Skip to main content

আপনার প্রকৃত পরিচয় "মুসলিম" - পর্ব ১


যারা নিজেদের হানাফি বলে পরিচয় দেন, তারা একটু ভাবুন, ইমাম আবু হানিফা কী ছিলেন? তিনি কি হানাফি ছিলেন? একই কথা অন্যদের বেলায়ও প্রযোজ্য। যারা হাম্বলী বলে পরিচয় দেন, তাদের ক্ষেত্রে হলে বলব, ইমাম ইবনে হাম্বল কি হাম্বলী ছিলেন?
.
ইমাম আবু হানিফা কী ছিলেন? মুসলিম।
ইমাম শাফী কী ছিলেন? মুসলিম।
ইমাম মালিকী কী ছিলেন? মুসলিম।
ইমাম হাম্বল কী ছিলেন? মুসলিম।
.
এখানে কিছু ভাইয়েরা একটু আগ বাড়িয়ে বলে থাকেন যে, তারা সবাই ছিলেন আহলুস সুন্নাহ, আহলুল হাদিস এবং সালাফি।
.
তাদের প্রশ্ন করব, ভাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী ছিলেন? তিনি কি আহলুল হাদিস ছিলেন? নাকি আহলুস সুন্নাহ ছিলেন? নাকি সালাফি ছিলেন?
.
সালাফি অর্থ যারা সালফে সালেহীনদের পথ অনুসরণ করে। কিন্তু যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আবির্ভাব না-ই ঘটত, তাহলে সালফে সালেহীনদের উদ্ভবই ঘটত না। তাহলে আগে সালফে সালেহীন নাকি আগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম? অবশ্যই আগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাহলে যদি সালফে সালেহীনদের পথ অনুসরণ করে চললে নিজেকে সালাফি বলা বাধ্যবাধকতা হয়ে দাঁড়ায়, তবে নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো সালফে সালেহীন এরও আগে, তাহলে নিজেকে সালাফি না বলে মোহাম্মাদী বলাটা বেশি যুক্তিযুক্ত না?
.
এখানে আবার আপনাদের অনেক আপত্তি কারণ যারা নিজেদের মোহাম্মাদী বলে, তাদের আকিদা আলাদা যাদেরকে প্রচলিত ভাষায় আমরা কাদিয়ানি বলি।
.
তাহলে এত নাম নিয়ে মারামারি কেন?
.
আমাদের পরিচয় যেখানে আল্লাহ নির্ধারণ করে দিয়েছেন, সেখানে একই আকিদায় এসে সেই পরিচয়ে নিজেকে পরিচয় দেওয়া বেশি গ্রহণযোগ্য নয় কী?
.
.
পূর্বের নবী রাসূলরাও একই মুসলিম উম্মতভুক্ত, সেখানে তারা কি মাযাহাবি না আহলে হাদিস?
.
يَٰٓأَيُّهَا ٱلرُّسُلُ كُلُوا۟ مِنَ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَٱعْمَلُوا۟ صَٰلِحًاۖ إِنِّى بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ
وَإِنَّ هَٰذِهِۦٓ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَٰحِدَةً وَأَنَا۠ رَبُّكُمْ فَٱتَّقُونِ
.
"হে রাসূলগণ! পবিত্র বস্তু আহার করো এবং সৎকর্ম করো, তোমরা যা করো সে সম্পর্কে আমি পূর্ণরূপে অবগত।
তোমাদের এসব উম্মাত তো একই উম্মাত, আর আমিই তোমাদের প্রতিপালক, কাজেই আমাকেই ভয় কর।"
(আল-কোরআন, ২৩:৫১-৫২)
.
.
এখানে যদি ভালভাবে খেয়াল করা হয়, তাহলে নাম এর ক্ষেত্রে দুটি বিষয় পরিলক্ষিত হচ্ছে -
১) পরিচয়গত নাম,
২) বৈশিষ্ট্যগত নাম।
.
বৈশিষ্ট্যগত নাম বলতে যে নামের মাধ্যমে আপনার বৈশিষ্ট্য বা বিশেষণ প্রকাশ পাচ্ছে। যেমন যদি বলা হয় যে, আমি হানাফি। এর অর্থ হল আপনার বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পাচ্ছে যে, আপনি হানাফি ফিকহ অনুসরণ করছেন। একইভাবে যদি বলা হয়, আমি সালাফি, এর অর্থ আপনি সালফে সালেহীন অর্থাৎ সাহাবা, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈনদের পথ অনুসরণ করছেন। আপনি আহলুস সুন্নাহ অর্থাৎ আপনার বৈশিষ্ট্য হল আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ এর অনুসারী। আপনি আহলুল হাদিস অর্থাৎ আপনি সহিহ হাদিসের যথাযথ অনুসারী। এগুলো দিয়ে কেবল আপনার আহলে সুন্নাত আল-জামাআত এর ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্যগত বিষয়গুলো ফুটে উঠছে।
.
কিন্তু আপনার পরিচয় কী আসলে?
.
মহান আল্লাহ ঘোষণা করছেন,
.
وَجَٰهِدُوا۟ فِى ٱللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِۦۚ هُوَ ٱجْتَبَىٰكُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِى ٱلدِّينِ مِنْ حَرَجٍۚ مِّلَّةَ أَبِيكُمْ إِبْرَٰهِيمَۚ هُوَ سَمَّىٰكُمُ ٱلْمُسْلِمِينَ مِن قَبْلُ وَفِى هَٰذَا لِيَكُونَ ٱلرَّسُولُ شَهِيدًا عَلَيْكُمْ وَتَكُونُوا۟ شُهَدَآءَ عَلَى ٱلنَّاسِۚ فَأَقِيمُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُوا۟ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱعْتَصِمُوا۟ بِٱللَّهِ هُوَ مَوْلَىٰكُمْۖ فَنِعْمَ ٱلْمَوْلَىٰ وَنِعْمَ ٱلنَّصِيرُ
.
"তোমরা আল্লাহর জন্যে শ্রম স্বীকার কর যেভাবে শ্রম স্বীকার করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে পছন্দ করেছেন এবং ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা রাখেননি। তোমরা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের ধর্মে কায়েম থাক।
.
**তিনিই তোমাদের নাম মুসলিম** রেখেছেন পূর্বেও এবং এই কোরআনেও, যাতে রাসূল তোমাদের জন্যে সাক্ষ্যদাতা এবং তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলীর জন্যে।
.
সুতরাং তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে শক্তভাবে ধারণ কর। তিনিই তোমাদের মালিক। অতএব তিনি কত উত্তম মালিক এবং কত উত্তম সাহায্যকারী।"
(আল-কোরআন, ২২:৭৮)
.
অর্থাৎ আল্লাহর দেওয়া বিধান অনুযায়ী আপনার পরিচয় হল আপনি "মুসলিম" অর্থাৎ আল্লাহর নিকট নিজের ইচ্ছা সমর্পণকারী। আর এটাই হল আপনার পরিচয়গত নাম যা দিয়ে আপনি আল্লাহর বিধান অনুযায়ী নিজের পরিচয়কে নির্ধারণ করছেন।
.
"ইসলাম" এসেছে আরবি শব্দ "সালাম" থেকে যার অর্থ "শান্তি"। এটা মূল শব্দ "সিলম" থেকেও এসেছে যার অর্থ "নিজের ইচ্ছাকে আল্লাহর নিকট সমর্পণ করা।" তাই ইসলামিক পরিভাষায় "মুসলিম" অর্থ হল সেই ব্যক্তি যে শান্তি অর্জনের তাগিদে আল্লাহর নিকট নিজের ইচ্ছাকে সমর্পণ করে। আর এটাই হল তার চূড়ান্ত পরিচয়।
.
অনেকে পালটা প্রশ্ন করে বসেন - ভাই, মুসলিমদের মধ্যেও তো এমন আছে যারা শির্ক করে, কুফরে জড়িত, বিদআতে জড়িত। তারাও তো নিজেদের মুসলিম বলে দাবি করে।
.
এর উত্তর আগেই দিয়েছি, আবারও বলছি।
.
ধরুন ভাই, আপনি যে মুসলিম এলাকায় থাকেন, সেখানে এক মুসলিম রাতে মদ খেয়ে চলে এল। এবার আপনি কি তাকে কাফির বলবেন না অমুসলিম বলবেন? আপনি এগুলোর কিছুই বলবেন না। কারণ আপনি জানেন যে, সে গুনাহ করছে। কিন্তু তাও আপনি তাকে অমুসলিম বলে বসবেন না। এখন সে যদি নিজেকে ঈমানদার বলে দাবি করে, তাহলে আপনি হয়ত এর প্রতিবাদ করতে পারেন যে, তুমি ঈমানদার হও কীভাবে? তুমি তো মদ খেয়ে এসেছো?
.
ঠিক একইভাবে কেউ নিজেকে মুসলিম হিসেবে দাবি করে শির্ক, কুফরে লিপ্ত হলেও সে প্রকৃত মুসলিম হয়ে যাবে না যেমন, মিথ্যাবাদী মিথ্যা কথা বলে নিজেকে সত্যবাদী বললেও সত্যবাদী হয়ে যায় না।
.
এক্ষেত্রে মহান আল্লাহ বলেন,
.
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِذَا ضَرَبْتُمْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ فَتَبَيَّنُوا۟ وَلَا تَقُولُوا۟ لِمَنْ أَلْقَىٰٓ إِلَيْكُمُ ٱلسَّلَٰمَ لَسْتَ مُؤْمِنًا تَبْتَغُونَ عَرَضَ ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا فَعِندَ ٱللَّهِ مَغَانِمُ كَثِيرَةٌۚ كَذَٰلِكَ كُنتُم مِّن قَبْلُ فَمَنَّ ٱللَّهُ عَلَيْكُمْ فَتَبَيَّنُوٓا۟ۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا
.
"হে মু’মিনগণ! যখন তোমরা আল্লাহর পথে বহির্গত হও তখন প্রত্যেক কাজ যাচাই করে নাও এবং কেহ তোমাদেরকে ‘সালাম’ করলে তাকে বলো না যে, ‘তুমি মু’মিন নও’; তোমরা কি পার্থিব জীবনের সম্পদ অনুসন্ধান করছো? তাহলে আল্লাহর নিকট প্রচুর সম্পদ রয়েছে; প্রথমে তোমরা ঐরূপই ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন। অতএব তোমরা স্থির করে নাও যে, তোমরা যা করছ নিশ্চয়ই আল্লাহ তদ্বিষয়ে অভিজ্ঞ।"
(আল-কোরআন, ৪:৯৪)
.
অর্থাৎ আল্লাহ আমাদের বলছেন আল্লাহর পথে প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে যাচাই বাছাই করে নিতে। তাই কেউ যদি ইসলামের নাম ভাঙিয়ে শির্ক, কুফর, বিদআতে মত্ত হয়, তাহলে আমরা সেগুলোকে কোরআন ও সুন্নাহ দিয়ে যাচাই করে দেখব আহলে সুন্নাত আল-জামাআত এর পথে সালফে সালেহীনদের মতাদর্শে। কে কতটুকু ভুল বা সঠিক কাজ করছে, তার পরিপূর্ণ বিচার করবেন আল্লাহ।
.
وَقَالَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ لَا تَأْتِينَا ٱلسَّاعَةُۖ قُلْ بَلَىٰ وَرَبِّى لَتَأْتِيَنَّكُمْ عَٰلِمِ ٱلْغَيْبِۖ لَا يَعْزُبُ عَنْهُ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَلَا فِى ٱلْأَرْضِ وَلَآ أَصْغَرُ مِن ذَٰلِكَ وَلَآ أَكْبَرُ إِلَّا فِى كِتَٰبٍ مُّبِينٍ
.
"কাফিররা বলেঃ আমাদের উপর কিয়ামাত আসবে না। বলঃ আসবেই, শপথ আমার প্রতিপালকের! নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট ওটা আসবে। তিনি অদৃশ্য সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত; আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে তাঁর অগোচর নয় অণু পরিমাণ কিছু কিংবা তদপেক্ষা ক্ষুদ্র অথবা বৃহৎ কিছু; বরং ওর প্রত্যেকটি লিপিবদ্ধ আছে সুস্পষ্ট কিতাবে।"
(আল-কোরআন, ৩৪:৩)
.
আল্লাহই ভাল জানেন।
=======================
#আহমেদ_আলি

Comments

Popular posts from this blog

মানহাজ ও মাযাহাব নিয়ে যত দ্বন্দ্বের জবাব....

[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...

কৃষ্ণ কি আল্লাহর নবী ছিল?

এই প্রশ্নটা আমাকেও করা হয়েছে সম্ভবত কয়েকবার। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরটা বড়ই জটিল। কারণ এর কোনো যথাযথ উত্তর আমাদের জানা নেই। যদি কৃষ্ণের গোপীদের সাথে লীলার কাজকে সত্য বলে...

ভগবতগীতার বর্ণভেদ নিয়ে ভক্তদের ভণ্ডামির জবাব

============================ চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ৷ তস্য কর্তারমপি মাং বিদ্ধ্যকর্তারমব্যয়ম্৷৷১৩ অর্থ:  "প্রকৃতির তিনটি গুণ এবং কর্ম অনুসারে আমি মনুষ্য সমাজে চারটি বর্ণ...