প্রথমেই বলে রাখি, এই বিষয়টি নিয়ে দয়া করে মারামারি করবেন না। কারণ হাত বাঁধাটা ফরজ না, এটা মুস্তাহাব অর্থাৎ উৎসাহমূলক কর্ম। মালিকী মাযাহাবে একেবারে হাত ছেড়ে দিয়েও নামাজ আদায় করা হয়। তাহলে হাত বাঁধা নিয়ে মতবিরোধ হলে এর জন্য দয়া করে আপনার অন্য মুসলিম ভাইকে কটুক্তি করবেন না। আল্লাহ বলেন,
.
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّن قَوْمٍ عَسَىٰٓ أَن يَكُونُوا۟ خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَآءٌ مِّن نِّسَآءٍ عَسَىٰٓ أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّۖ وَلَا تَلْمِزُوٓا۟ أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا۟ بِٱلْأَلْقَٰبِۖ بِئْسَ ٱلِٱسْمُ ٱلْفُسُوقُ بَعْدَ ٱلْإِيمَٰنِۚ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ
.
"হে মু’মিনগণ! কোন পুরুষ যেন অপর কোন পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন মহিলা অপর কোন মহিলাকেও যেন উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারিনী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করনা এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকনা; ঈমান আনার পর মন্দ নামে ডাকা গর্হিত কাজ। যারা এ ধরণের আচরণ হতে নিবৃত্ত না হয় তারাই যালিম।"[১]
.
.
এখানে আমি কেবল আমার মতামতটি এখানে বলছি যে মতটিকে আমি বেশি সমর্থন করি।
.
"যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছেন তিনি যখন সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করলেন তখন উভয় হাত উঠিয়ে তাকবীর বললেন। রাবী হাম্মাম বলেন, উভয় হাত কান বরাবর উঠালেন। তারপর কাপড়ে ঢেকে নিলেন (গায়ে চাঁদর দিলেন)। তারপর তার ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন। তারপর রুকু করার সময় তার উভয় হাত কাপড় থেকে বের করলেন। পরে উভয় হাত উঠালেন এবং তাকবীর বলে রুকুতে গেলেন। যখন سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বললেন , তখন উভয় হাত তুললেন। পরে উভয় হাতের মাঝখানে সিজদা করলেন।"[২]
.
.
এই হাদিসটি সহিহ এবং এতে কারও দ্বিমত নেই।
.
আরেকটি সহিহ হাদিসে উল্লেখ করা হচ্ছে,
.
"সাহল ইবনু সা‘দ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকদের নির্দেশ দেয়া হত যে, সালাতে প্রত্যেক ডান হাত বাম হাতের উপর রাখবে। আবূ হাযিম (রহ.) বলেন, সাহল (রহ.) এ হাদীসটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করতেন বলেই জানি। ইসমাঈল (রহ.) বলেন, এ হাদীসটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতেই বর্ণনা করা হতো। তবে তিনি এমন বলেননি যে, সাহল (রহ.) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করতেন।"[৩]
.
.
এখানে উল্লেখ্য যে, হাদিসগুলোতে স্থানের উল্লেখ নেই, কেবল বাম হাতের ওপর ডান হাত রাখার কথা বলা হয়েছে।
.
ডঃ খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর "সালাতের মধ্যে হাত বাঁধার বিধান" গ্রন্থে বলেছেন,
.
"ইয়াদ: দেহের অঙ্গ: কাঁধ থেকে আঙুলগুলোর প্রান্ত পর্যন্ত...
.....
..'যিরা': মানুষের... কনুইয়ের প্রান্ত থেকে মধ্যম আঙুল পর্যন্ত।
.
এ হাদীসে ডান হাতকে বাম বাহুর উপর রাখতে বলা হয়েছে। শাব্দিকভাবে বাম হাতের আঙুলের প্রান্ত থেকে কনুই পর্যন্ত যেকোনো স্থানে ডান হাতের কাঁধ থেকে আঙুলের প্রান্ত পর্যন্ত যেকোনো স্থান রাখলেই এ নির্দেশ পালিত হবে। হস্তদ্বয় কোথায় রাখতে হবে তা বলা হয়নি।"[৪]
.
.
এখানে উল্লেখ্য যে, নাভীর নীচে হাত বাঁধার ক্ষেত্রে কোনো সহিহ হাদিস নেই। যারা নাভীর নিচে হাত বাঁধার হাদিস পেশ করেন আর সেগুলো সহিহ দাবি করেন, সেগুলোর মূল হাদিসে "নাভীর নিচে" কথাটার উল্লেখ নেই।
.
আবার যখন কেউ কেউ বুকে হাত বাঁধার পক্ষে বলে থাকেন, তারা এই সুযোগটা নিয়ে বলেন যে, নাভীর নিচে হাত বাঁধার কথা বলা নেই, কিন্তু বুকে হাত বাঁধার কথা বলা আছে।
.
এখানে যারা নাভীর নিচে হাত বাঁধার পক্ষে, তারা পাল্টা জবাব দেন যে, "বুকে হাত" কথাটা কোনো সহিহ হাদিসে নেই। ডঃ খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর এর মতে, প্রকৃতপক্ষে হাত কোথায় বাঁধতে হবে, এর কোনো নির্দিষ্ট স্থানের কথা সহিহ হাদিসে বলা হয়নি।
.
এখন এই দুই দল, যাদের একদল বুকে আর এক দল নাভীর নিচে হাত বাঁধার কথা বলেন বা অন্য কোথাও হাত বাঁধার কথা বলেন, আমরা প্রথমে কোনো মতকেই না দেখে এই বিষয়টি উপরের হাদিস দুটো থেকে ধরে নিই যে, বাম হাতের ওপর ডান হাত রাখতে হবে, সেটা তালুর ওপর তালুও হতে পারে, কব্জির ওপর তালুও হতে পারে, আবার বাহুর ওপর বাহুও হতে পারে।
.
.
এবার এই বিষয়টিকে পরিষ্কার করতে আমরা আরেকটি সহিহ হাদিস দেখব।
.
"মুহাম্মাদ ইবনু ‘আমর ইবনু ‘আত্বা (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর একদল সহাবীর সঙ্গে বসা ছিলেন। তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তখন আবূ হুমাইদ সা‘ঈদী (রাযি.) বলেন, আমিই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত সম্পর্কে অধিক স্মরণ রেখেছি। আমি তাঁকে দেখেছি (সালাত শুরু করার সময়) তিনি তাক্বীর বলে দু’ হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন। আর যখন রুকূ‘ করতেন তখন দু’ হাত দিয়ে হাঁটু শক্ত করে ধরতেন এবং পিঠ সমান করে রাখতেন।
.
**অতঃপর রুকূ‘ হতে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন যাতে মেরুদন্ডের হাড়গুলো স্ব-স্ব স্থানে ফিরে আসতো।**
.
অতঃপর যখন সাজদাহ্ করতেন তখন দু’ হাত সম্পূর্ণভাবে মাটির উপর বিছিয়ে দিতেন না, আবার গুটিয়েও রাখতেন না। এবং তাঁর উভয় পায়ের আঙ্গুলির মাথা ক্বিবলাহ্মুখী করে দিতেন। যখন দু’রাকআতের পর বসতেন তখন বাম পা-এর উপর বসতেন আর ডান পা খাড়া করে দিতেন এবং যখন শেষ রাক‘আতে বসতেন তখন বাঁ পা এগিয়ে দিয়ে ডান পা খাড়া করে নিতম্বের উপর বসতেন।"[৫]
.
.
অন্য একটি হাদিসে বলা হচ্ছে,
.
"সাবিত (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) আমাদেরকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাতের বর্ণনা দিলেন। অতঃপর তিনি সালাত আদায় করে দেখালেন। তিনি যখন রুকূ‘ হতে মাথা উঠালেন, তখন (এতক্ষণ) দাঁড়িয়ে রইলেন যে, আমরা মনে করলাম, তিনি (সাজদাহর কথা) ভুলে গেছেন।"[৬]
.
এই হাদিসের রুকূ‘ হতে মাথা উঠানোর পর স্থির হওয়ার প্রসঙ্গে আবূ হুমায়দ (রহ.) বর্ণনা করেন,
.
وَقَالَ أَبُو حُمَيْدٍ رَفَعَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَاسْتَوَى جَالِسًا حَتَّى يَعُودَ كُلُّ فَقَارٍ مَكَانَهُ.
.
"(আবূ হুমায়দ (রহ.) বর্ণনা করেন,) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে এমনভাবে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন যে, মেরুদন্ডের হাড় যথাস্থানে ফিরে আসতো।"[৭]
.
অর্থাৎ এই হাদিস দুটো থেকে বোঝা যায় যে, রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। আর মেরুদণ্ড সোজা রাখতে হবে। আর মেরুদণ্ডের হাড় পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, রুকুতে যাওয়ার পূর্বেও যখন নামাজে দণ্ডায়মান হয়ে দাঁড়াতে হবে, তখনও মেরুদণ্ড সোজা রাখতে হবে।
.
এখন যদি মেরুদণ্ড সোজা রেখে সালাত আদায় করতে হয়, সেক্ষেত্রে আপনি যদি হাত নাভীর নিচে বাঁধেন, তাহলে আপনার মেরুদণ্ড হয় কুঁজো হয়ে যাবে, নয়ত মেরুদণ্ড সোজা রাখতে গেলে শরীর লেগে যাবে। যদি হাত নাভীর ওপর বা নাভীর সামান্য উপরে বাঁধেন, তাহলেও আপনার সোজাভাবে দাঁড়াতে কষ্ট হয়ে যাবে। মেরুদণ্ড সোজাভাবে রেখে হাত বাঁধতে হলে আর এতে আপনার কষ্ট এড়াতে হলে হাতকে হয় বুকের ওপর, নয়ত বুকের সামান্য নিচে রাখাই যুক্তিযুক্ত। এক্ষেত্রে যদি হাত রাখার ক্ষেত্রে তালুর ওপর তালু বা কব্জির ওপর তালু রাখা হয়, সেক্ষেত্রেও আপনার শরীর বিশেষ করে পিঠ লেগে যাবে। তাই একমাত্র আরামদায়ক পদ্ধতি, যা আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, সেটা হল, বাহুর ওপর বাহু রাখা, বাম হাতের ওপর ডান হাত রাখা, কব্জির ওপর বা তালুর ওপর তালু নয়।
.
মুযাফফর বিন মুহসিন বলছেন,
.
"...রাসূল (ছাঃ) ডান হাতটি পুরো বাম হাতের উপর রাখতেন। এমতাবস্থায় হাত নাভীর নীচে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। এইভাবে হাত রেখে নাভীর নীচে স্থাপন করতে চাইলে মাজা বাঁকা করে নাভীর নীচে হাত নিয়ে যেতে হবে, যা উচিৎ নয়..."[৮]
.
.
হানাফি মাযাহাবে নারীদের পৃথক সালাতের কথা অনেকে বলে থাকেন যে সম্পর্কে হানাফি আলিম ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর বলছেন,
.
"...সপ্তম হিজরী থেকেই হানাফী ফকীহগণ উল্লেখ করছেন যে, মহিলাদের জন্য সালাতের মধ্যে হস্তদ্বয় বুকের ওপর রাখা উত্তম....
...তাঁদের বক্তব্যের মূল প্রতিপাদ্য, হস্তদ্বয় একত্রে রাখার বিষয়ে অনেকগুলো সহিহ হাদিস বিদ্যমান। তবে হস্তদ্বয়ের অবস্থান বিষয়ে কোনো হাদিসই সহিহ নয়। এজন্য বিষয়টি প্রশস্ত।
....পরবর্তীকালে দুজন প্রসিদ্ধ হানাফী ফকীহ ও মুহাদ্দিস নারী ও পুরুষ সকলের জন্যই হস্তদ্বয় বুকের ওপর রাখার পক্ষে মত প্রকাশ করেন..."[৯]
.
.
এথেকে বোঝা যাচ্ছে যে, নারী পুরুষের সালাতে পৃথক পদ্ধতি আসলে ব্যক্তিগত মাসলা মাসায়েল, কোনো শরীয়তী নির্দেশ নয়। তাই হাত বাঁধার ক্ষেত্রেও যদি কেউ নারী পুরুষের সালাতে পার্থক্য না করে, তবুও সেটা মাযাহাবের বিরুদ্ধে যাবে না।
.
আল্লাহই ভাল জানেন।
.
.
_________________________
তথ্যসূত্র:
[১] আল-কোরআন, ৪৯:১১
[২] সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৪/ কিতাবুস স্বলাত ( كتاب الصلاة)
হাদিস নম্বরঃ ৭৮১
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) http://www.hadithbd.com/share.php?hid=8570
[৩] সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ১০/ আযান (كتاب الأذان)
হাদিস নম্বরঃ ৭৪০
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) http://www.hadithbd.com/share.php?hid=24576
[৪] "সালাতের হাত বাঁধার নিয়ম
একটি হাদিসতাত্ত্বিক পর্যালোচনা"/
প্রথম পর্ব: প্রাসঙ্গিক হাদিসগুলোর সনদ আলোচনা/১.৩ স্থান উল্লেখ ব্যতিরেকে হাত বাঁধার নির্দেশনা/পৃষ্ঠা ৯;
লেখক: ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর;
উৎস - http://www.mediafire.com/download/hf4h5zea5y7dtqf/1-Hand-f.pdf
[৫] সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ১০/ আযান (كتاب الأذان)
হাদিস নম্বরঃ ৮২৮
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) http://www.hadithbd.com/share.php?hid=24665
[৬] সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ১০/ আযান (كتاب الأذان)
হাদিস নম্বরঃ ৮০০
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) http://www.hadithbd.com/share.php?hid=24637
[৭] উৎস - http://www.hadithbd.com/share.php?hid=24637
[৮] "জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত"/অধ্যায়ঃ ছালাতের পদ্ধতি;
লেখক: মুযাফফর বিন মুহসিন;
উৎস - http://www.hadithbd.com/shareqa.php?qa=1904
[৯] "সালাতের হাত বাঁধার নিয়ম
একটি হাদিসতাত্ত্বিক পর্যালোচনা"/
দ্বিতীয় পর্ব: পর্যালোচনা ও সিদ্ধান্ত/২.৩ মুহাদ্দিস ফকীহগণের বক্তব্য বিশ্লেষণ/২.৩.৯ বুকে হাত রাখার মত/পৃষ্ঠা ৩৮-৩৯;
লেখক: ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর;
উৎস - http://www.mediafire.com/download/hf4h5zea5y7dtqf/1-Hand-f.pdf
.
===============
- আহমেদ আলি
[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...
Comments
Post a Comment