Skip to main content

হিন্দুধর্মের এক ঈশ্বরের ধারণার সাথে ইসলামের সাদৃশ্য দেখানো কেন উচিৎ নয়??


[রেফারেন্স এর সাথে সংশ্লিষ্ট লিঙ্কও যথাসম্ভব রেফারেন্সের সাথেই দিয়ে দেওয়া হল, যাতে করে কেউ ইচ্ছা হলে রেফারেন্স এর সঠিকতা তৎক্ষনাৎ যাচাই করে নিতে পারেন।]
.
.
আমি আমার লেখা শুরু করব আল-কোরআন এর এই আয়াত দিয়ে,
.
قُلْ يَٰٓأَهْلَ ٱلْكِتَٰبِ تَعَالَوْا۟ إِلَىٰ كَلِمَةٍ سَوَآءٍۭ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلَّا نَعْبُدَ إِلَّا ٱللَّهَ وَلَا نُشْرِكَ بِهِۦ شَيْـًٔا وَلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِّن دُونِ ٱللَّهِۚ فَإِن تَوَلَّوْا۟ فَقُولُوا۟ ٱشْهَدُوا۟ بِأَنَّا مُسْلِمُونَ
.
"তুমি বলঃ হে আহলে কিতাব! আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে যে বাক্যে সুসাদৃশ্য রয়েছে তার দিকে এসো, যেন আমরা আল্লাহ ব্যতীত কারও ইবাদাত না করি এবং তাঁর সাথে কোন অংশী স্থির না করি এবং আল্লাহকে পরিত্যাগ করে আমরা পরস্পর কেহকে প্রতিপালক রূপে গ্রহণ না করি। অতঃপর যদি তারা ফিরে যায় তাহলে বলঃ সাক্ষী থেকো যে, আমরা মুসলিম (আল্লাহর নিকট আত্মসমপর্নকারী)।"
(আল-কোরআন ৩:৬৪)
.
এই আয়াতের তাফসিরে ইবনে কাসির এক স্থানে বলছেন,
.
"এই আয়াত অন্তর্ভুক্ত করছে আহলে কিতাবদের, ইহুদি ও খ্রিস্টানদের এবং যারা তাদের পথ অনুসরণ করে চলে।"
.
"This Ayah includes the People of the Book, the Jews and Christians, and those who follow their ways."
.
[source - http://www.qtafsir.com/index.php?option=com_content&task=view&id=530&Itemid=46]
.
অর্থাৎ উপরের এই আয়াত বিশেষভাবে বোঝাচ্ছে ইহুদি, খ্রিস্টান ও তাদের অনুসারীদেরকে। আরও একটু ভেঙে বললে, আব্রাহামিক ফেইথ বা নবী ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) এর প্রচারিত  একেশ্বরবাদে প্রভাবিত ধর্মীয় গোষ্ঠীদের সাথে ইসলামের একেশ্বরবাদ এর সাদৃশ্য খুঁজতে বলা হচ্ছে।
.
আমার প্রশ্ন হল, বেদ ঈশ্বরের বাণী - এটা কি আমরা নিশ্চিত?
.
না! কারণ এর কোনো সুস্পষ্ট দলিল কোরআন হাদিসে নেই।
.
আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন হল, হিন্দুরা কি নবী ইব্রাহীমের দাওয়াত দ্বারা প্রভাবিত ধর্মীয় গোষ্ঠী?
.
এরও উত্তর না!
.
যদি হিন্দুদের কাছে পূর্বে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো আসমানি কিতাব বা সহিফা বা কোনো নবী-রাসূল এসেও থাকেন, তবুও তাদের কাছে আজ যে কিতাব আছে, ধর্মীয় ব্যাখ্যা আছে, তা আজ পুরোপুরি মুশরিকি আকিদায় পরিপূর্ণ ও বিকৃত। তাহলে বর্তমানে হিন্দু গোষ্ঠীকে কোনটা বলা শ্রেয় - আহলে কিতাব না মুশরিক?
.
অবশ্যই মুশরিক, কারণ তাদের কিতাবে নবী-রাসূলের পরিবর্তে ঋষি, অবতারের কথা আছে; ফেরেশতার পরিবর্তে দেব-দেবীর কথা আছে, আর এগুলো সবই নবী ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) প্রচারিত আদর্শের থেকে আলাদা।
.
দেখুন আল্লাহ তাআলা নিজেই বলছেন যে, ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) অংশীবাদী অর্থাৎ মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।
.
وَقَالُوا۟ كُونُوا۟ هُودًا أَوْ نَصَٰرَىٰ تَهْتَدُوا۟ۗ قُلْ بَلْ مِلَّةَ إِبْرَٰهِۦمَ حَنِيفًاۖ وَمَا كَانَ مِنَ ٱلْمُشْرِكِينَ
.
"তারা বলে, ‘ইয়াহুদী বা খ্রিষ্টান হও, সঠিক পথ পাবে।’ বল, ‘বরং একনিষ্ঠ হয়ে আমরা ইব্রাহীমের ধর্মাদর্শ অনুসরণ করব। আর সে (ইব্রাহীম) অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।’"
(আল-কোরআন, ২:১৩৫)
.
তাহলে এখানে বর্তমানে হিন্দুদেরকে "আহলে কিতাব" বলার থেকে "মুশরিক" বলাটাই বেশি যুক্তিযুক্ত।
.
এবার পরের প্রসঙ্গে আসি।
.
যেহেতু হিন্দু দর্শন গোটাটাই একটা মুশরিক পথ, তাই এই মুশরিকি দর্শনের "এক ঈশ্বর" এর ধারণাও শিরকে পরিপূর্ণ। এই ব্যাপারটি বুঝতে আমি সেই সকল রেফারেন্সগুলোকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি যেগুলো সাধারণত দাওয়াহ এর সময় হিন্দুদেরকে বলা হয় ইসলামের প্রতি আহবানের জন্য।
.
ঈশ্বর এক, এর রেফারেন্স গুলো এরকম:
.
=> "তিনি কেবল একজনই, দ্বিতীয় কেউ নেই।"
.
"He is One only without a second."
.
(Chandogya Upanishad 6:2:1;
The Principal Upanishad by S. Radhakrishnan page 447 and 448]
[Sacred Books of the East, volume 1 ‘The Upanishads part I’ page 93)
.
.
=> "ঈশ্বর কেবল একজনই, দ্বিতীয় কেউ নেই; কেউ নেই, কেউ নেই, কখনও কেউ ছিলও না।"
.
"There is only one God, not the second; not at all, not at all, not in the least bit."
(Brahma Sutra)
.
.
=> "এক ঈশ্বরকে পণ্ডিতগণ বিভিন্ন নামে ডেকে থাকেন।"
.
"Sages (learned Priests) call one God by many names."
(Rigveda 1:164:46)
.
.
=> "হে বন্ধুগণ, তাঁকে, সেই ঐশ্বরিক সত্ত্বা ব্যতীত দ্বিতীয় কারও উপাসনা করো না। একমাত্র তাঁরই বন্দনা করো।"
.
"O friends, do not worship anybody but Him, the Divine One. Praise Him alone."
(Rigveda 8:1:1;
Rigveda Samhita vol. 9, pages 2810 and 2811 by Swami Satya Prakash Sarasvati and Satyakam Vidyalankar)
.
[রেফারেন্স নেওয়া হয়েছে এই ওয়েবসাইট থেকে - http://www.islam101.com/religions/hinduism/conceptOfGod.htm]
.
এবার আমার বক্তব্য তুলে ধরলাম:
.
আমি যতটুকু বুঝেছি, তাতে হিন্দু দর্শনের এক ঈশ্বর, মায়াবাদী দর্শন অনুযায়ী নিরাকার এবং বৈষ্ণব মতবাদে সেই ঈশ্বর চূড়ান্ত রূপে নিরাকার নন বরং ঈশ্বরের আধ্যাত্মিক দেহ রয়েছে এবং সেই ঈশ্বর হল কৃষ্ণ। এখানে মায়াবাদী দর্শন দিয়েই সব কিছু বললে, আমার বোধগম্যতা অনুযায়ী,
১) হিন্দু দর্শনের ঈশ্বর নিরাকার,
২) ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান,
৩) ঈশ্বরের দেহের মধ্যে সৃষ্টি অবস্থিত।
.
কিন্তু আল্লাহ তাআলা সাকারও নন, নিরাকারও নন। তিনি অচিন্তনীয়।
.
وَلَمْ يَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدٌۢ
.
"এবং তাঁর সমতুল্য কিছুই নেই।"
(আল-কোরআন ১১২:৪)
.
আল্লাহ তাআলা সর্বত্র বিরাজমান নন, তিনি আরশের উর্ধ্বে সৃষ্টি হতে পৃথক।
.
إِنَّ رَبَّكُمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ فِى سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ ٱسْتَوَىٰ عَلَى ٱلْعَرْشِۖ يُدَبِّرُ ٱلْأَمْرَۖ مَا مِن شَفِيعٍ إِلَّا مِنۢ بَعْدِ إِذْنِهِۦۚ ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبُّكُمْ فَٱعْبُدُوهُۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ
.
"নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেন, অতঃপর তিনি আরশের উর্ধ্বে সমাসীন হন, তিনি প্রত্যেক কাজ পরিচালনা করে থাকেন। তাঁর অনুমতি ছাড়া সুপারিশকারী কেউ নেই। ঐ (স্রষ্টা ও পরিচালক) আল্লাহ, তোমাদের প্রতিপালক। অতএব তোমরা তাঁর ইবাদত কর। তোমরা কি উপদেশ গ্রহণ করবে না?"
(আল-কোরআন, ১০:৩)
.
.
কিন্তু হিন্দু দর্শনের এক ঈশ্বরের ধারণা এরূপ নয়। আমার বক্তব্যের রেফারেন্সগুলো নীচে এক এক করে তুলে ধরছি।
.
হিন্দু দর্শন অনুযায়ী, ঈশ্বরের দেহের মধ্যে সবকিছু বিরাজমান। এই কথাটা থেকে কয়েকটা বিষয় বোঝা যায়। প্রথমত, ঈশ্বর তার নিজের অংশ থেকে জগৎ বানিয়েছে। দ্বিতীয়ত, ঈশ্বরের অংশ থেকে তৈরিকৃত জগৎ ঈশ্বরের মধ্যেই অবস্থান করছে। আর তৃতীয়ত, যেহেতু জগৎ ঈশ্বরের মধ্যে অবস্থিত, তাই বলা হচ্ছে ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান।
.
ঈশ্বর, তার অংশ হতে জগৎ বানিয়েছে - এর রেফারেন্স মনুসংহিতা থেকেঃ
.
"তিনি নিজের দেহ হতে অস্তিত্বপূর্ণ সৃষ্টি তৈরি করার ইচ্ছা করলেন, প্রথমে তার চিন্তার সাথে সাথে তৈরি হল জল এবং তাতে তিনি তার বীজ (সৃষ্টির প্রাথমিক উপাদান) স্থাপন করলেন।"
.
"He, desiring to produce beings of many kinds from his own body, first with a thought created the waters, and placed his seed in them."
.
[Manu Samhita, 1:8; translated by George Bühler; source - http://www.sacred-texts.com/hin/manu/manu01.htm]
.
জগতের সকল কিছুই ঈশ্বরের অংশ তার রেফারেন্স গীতা থেকেঃ
.
ভগবতগীতা, ১৫:৭
.
মমৈবাংশো জীবলোকে জীবভূতঃ সনাতনঃ৷
মনঃষষ্ঠানীন্দ্রিয়াণি প্রকৃতিস্থানি কর্ষতি৷৷
.
অর্থ:  **এই জড় জগতে বদ্ধ জীবসমূহ আমার সনাতন বিভিন্ন অংশ।** জড়া প্রকৃতির বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ফলে তারা মন সহ ছয়টি ইন্দ্রিয়ের দ্বারা প্রকৃতির রুপ ক্ষেত্রে কঠোর সংগ্রাম করছে।
.
English - **The living entities in this conditioned world are My eternal, fragmental parts.** Due to conditioned life, they are struggling very hard with the six senses, which include the mind.
.
[Source - https://www.asitis.com/15/7.html]
.
.
জগৎ ঈশ্বরের দেহে বিরাজমান তার দলিল গীতা থেকেঃ
.
ভগবতগীতা ৪:৩৫
.
"হে পান্ডব, এইভাবে তত্ত্বজ্ঞান লাভ করে তুমি আর মোহগ্রস্ত হবে না, যখন জানবে সমস্ত জীবই আমার বিভিন্ন অংশ এবং **তারা সকলেই আমাতে অবস্থিত** এবং তারা সকলেই আমার।"
.
English - And when you have thus learned the truth, you will know that all living beings are but part of Me—and that **they are in Me,** and are Mine.
.
[Source - https://asitis.com/4/35.html]
.
.
ঈশ্বর নিরাকার তার দলিল ঋগ্বেদ থেকে।
.
আমি গ্রিফিথ এর অনুবাদ ব্যবহার করছি।
.
"Darkness there was: at first concealed in darkness this All was indiscriminate chaos. **All that existed then was void and formless:** by the great power of Warmth was born that Unit."
.
[RigVeda, 10:129:3;
Source - https://en.m.wikisource.org/wiki/The_Rig_Veda/Mandala_10/Hymn_129]
.
এই অংশটি খেয়াল করুন //All that existed then was void and formless// , আমি লিঙ্ক দিয়েছি, কেউ ইচ্ছা হলে ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখতে পারেন, এই মন্ত্রগুলো সৃষ্টির সময়ের কথা বলছে। আর এখানে বলা হচ্ছে যে, সৃষ্টির শুরুতে সবকিছুই ছিল "void and formless" অবস্থায়, অর্থাৎ "অকার্যকর ও নিরাকার" অবস্থায়। এর মানে হল জগৎ তখনও প্রকাশিত হয়নি, তা নিরাকার ঈশ্বরের মধ্যে গুপ্ত ছিল "অস্তিত্ব ও অনস্তিত্ব" এর মাঝামাঝি অবস্থায়, যেটা এই মন্ত্রের আরও কিছু আগে ১নং মন্ত্রে বলা হচ্ছে  "non-existent nor existent" হিসেবে:
.
"THEN was not **non-existent nor existent:** there was no realm of air, no sky beyond it..."
.
[RigVeda, 10:129:1;
Source - https://en.m.wikisource.org/wiki/The_Rig_Veda/Mandala_10/Hymn_129]
.
এই নিরাকার ঈশ্বর থেকে জগৎ যে অস্তিত্বমান হল, তা পরিষ্কার করে দিচ্ছে মনুসংহিতা।
.
"This (universe) existed in the shape of Darkness, unperceived, destitute of distinctive marks, unattainable by reasoning, unknowable, wholly immersed, as it were, in deep sleep.
.
**Then the divine Self-existent (Svayambhu, himself) indiscernible, (but) making (all) this,** the great elements and the rest, discernible, appeared with irresistible (creative) power, dispelling the darkness."
.
[Manu Samhita, 1:5-6; translated by George Bühler; source - http://www.sacred-texts.com/hin/manu/manu01.htm]
.
.
এছাড়াও যজুর্বেদ বলছে ঈশ্বর এর সাকার দেহ নেই।
.
"He hath attained unto the Bright, **Bodiless,** Woundless, Sinewless, the Pure which evil hath not pierced."
(Yajur Veda, 40:8;
http://www.sacred-texts.com/hin/wyv/wyvbk40.htm)
.
এখানে আক্ষরিক ভাবে সর্বত্র বিরাজমান এর ক্ষেত্রে ঈশ্বরকে নিরাকার ধরলে ব্যাখ্যা করা যায় যে, তিনি "bodliess".
.
অনেকে আরও কয়েকটি রেফারেন্স এর উদ্ধৃতি দিয়ে থাকেন যার কয়েকটি সম্পর্কে বলার চেষ্টা করছি।
.
এমন একটি রেফারেন্স হল:
.
"হে ভারত, সর্বত ভাবে তার (ঈশ্বরের) শরণাগত হও। তার কৃপায় তুমি পরাশক্তি লাভ করবে এবং তার নিত্যধাম প্রাপ্ত হবে।"
(ভগবতগীতা, ১৮:৬২)
.
.
গীতার এই রেফারেন্স এর ঠিক আগের রেফারেন্সটা দেখি চলুন।
.
ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং হৃদ্দেশের্জুন তিষ্ঠতি৷
ভ্রাময়ন্ সর্বভূতানি যন্ত্রারূঢ়ানি মায়য়া৷৷৬১
.
অর্থ:  হে অর্জুন, পরমেশ্বর ভগবান সমস্ত জীবকে দেহরূপ যন্ত্রে আরোহণ করিয়ে  *মায়ার দ্বারা* ভ্রমণ করান।
.
স্বামী প্রভুপাদের মূল অনুবাদ থেকে করা ইংরেজি অনুবাদটা হল,
.
"The Supreme Lord is situated in everyone's heart, O Arjuna, and is directing the wanderings of all living entities, who are seated as on a machine, made of the material energy."
[https://www.asitis.com/18/61.html]
.
আমার main focus হল এই "মায়া" শব্দটার ওপর।
প্রভুপাদের অনুবাদে "মায়া" এর অনুবাদ এরকম করেছে - "mayaya—under the spell of material energy" অর্থাৎ, "বস্তুগত শক্তির জাদুর অধীনে"। আপনারা এই লিঙ্কে গিয়ে দেখতে পারেন - https://www.asitis.com/18/61.html
.
এখানে আমি যতটুকু বুঝেছি, সেই অনুযায়ী "মায়া" অর্থ হল মিথ্যা। অর্থাৎ এই জগৎ আসলে মিথ্যা। এর আসলে কোনো অস্তিত্ব নেই। কিন্তু জগতকে আমরা সত্য বলে ভাবছি, এটা আমাদের বিভ্রম। আর এই বিভ্রমই হল মায়া। আর এই মায়া হল পরম ব্রহ্ম বা ঈশ্বরের এক ধরণের শক্তি যা দিয়ে ঈশ্বর অনেকটা জাদুর মত জগতকে নিয়ে খেলা করছে। এখানে জগৎ যেহেতু মিথ্যা, তাই সবই আসলে ঈশ্বরের অংশ বা যাকে হিন্দুরা বলে "ব্রহ্ম", মানে সবই আসলে ব্রহ্ম। জগত বলে আসলে কিছু নেই। তাই গীতায় যে ঈশ্বরের শরণাগত হতে বলা হচ্ছে, সেই ঈশ্বর জগৎ নিয়ে খেলছে বা অন্যভাবে বললে জগৎ তার মধ্যে বিরাজমান যা আসলে মিথ্যা, কিন্তু মায়ার কারণে তা জীবের কাছে সত্য বলে মনে হচ্ছে।
.
তাহলে এখানে হিন্দু দর্শনের এক ঈশ্বরের ধারণা কি ইসলামিক ধারণা থেকে পৃথক হয়ে গেল না???
.
.
আরেকটা রেফারেন্স অনেকে এমন দিয়ে থাকেন,
.
"সমস্ত ধর্ম পরিত্যাগ করে কেবল ঈশ্বরের শ্বরণাগত হও। তিনি তোমাকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করবেন। সে বিষয়ে তুমি কোন দুশ্চিন্তা করো না।"
(ভগবতগীতা, ১৮:৬৬)
.
প্রভুপাদ এর অনুবাদ থেকে শ্লোকটার প্রতিটি শব্দের অনুবাদটা দেখলে অর্থ পাল্টে যাবে। আমি ওয়েবসাইটের লিঙ্কও দিয়ে দিচ্ছি।
.
TEXT 66
.
sarva-dharman parityajya
mam ekam saranam vraja
aham tvam sarva-papebhyo
moksayisyami ma sucah
.
SYNONYMS
.
sarva-dharman—all varieties of religion; parityajya—abandoning; mam—unto Me; ekam—only; saranam—surrender; vraja—go; *aham—I;* tvam—you; sarva—all; papebhyah—from sinful reactions; moksayisyami—deliver; ma—not; sucah—worry.
.
[Source - https://www.asitis.com/18/66.html]
.
এখানে দেখুন "ঈশ্বর" কথাটা কোথাও নেই। যেটা আছে সেটা হল *aham—I*; অর্থাৎ "আমি", এর অর্থ হল কৃষ্ণ বলছে, সব কিছু ছেড়ে কেবল আমার শরণে এসো।
.
বৈষ্ণবরা এই শ্লোক থেকে বলে যে, কৃষ্ণ হল চূড়ান্ত ঈশ্বর, তাই একমাত্র তার উপাসনা করার কথা বলা হচ্ছে। মায়াবাদী দার্শনিকরা বলছে যে, কৃষ্ণ হল আধ্যাত্মিক সদগুরু, আর তাই আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবে কৃষ্ণকে গ্রহণ করলে সবকিছু ছেড়ে কৃষ্ণকে মুক্তিলাভের জন্য মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে, কারণ সে নিজের মধ্যে ঈশ্বরের উপস্থিতিকে উপলব্ধি করেছে।
.
কিন্তু এখানে তাহলে এই শ্লোক ব্যবহার করে দাওয়াহ দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত?
.
আরেক জায়গায় গীতা থেকে আরও একটা রেফারেন্স দেওয়া হয়, যার অনুবাদে বলা হচ্ছে, ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান নন, তিনি উপরে আছেন। এটি গীতার ৯ অধ্যায়ের ৪-৫ নং শ্লোকের রেফারেন্স।
.
কিন্তু আমি সেখানে কিছুই পেলাম না। আমি "সৃষ্টিকর্তা" শব্দটা সেখানে পেলাম না। প্রসঙ্গত বলে রাখি, আমি মনে করি, হিন্দু ধর্মে সৃষ্টিকর্তাই নেই। তাই সৃষ্টিকর্তা শব্দটা পাওয়া প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, "ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান নন" - এই কথাটাও পেলাম না। আমি অনুবাদটা দিচ্ছি।
.
"অব্যক্ত রূপে আমি সমস্ত জগতে ব্যাপ্ত আছি। সমস্ত জীব আমাতেই অবস্থিত কিন্তু আমি তাতে অবস্থিত নই। যদিও সব কিছুই আমারই সৃষ্ট তবুও তারা আমাতে অবস্থিত নয়। যদিও আমি সমস্ত জীবের ধারক এবং যদিও আমি সর্বব্যাপ্ত তবুও আমি সমস্ত সৃষ্টির উৎস।" (ভগবতগীতা, ৯:৪-৫)
.
এখানে ৪ নং মন্ত্রের প্রতিটি শব্দের ইংরেজি অনুবাদ এরকম:
.
maya—by Me; tatam—spread; idam—all these manifestations; sarvam—all; jagat—cosmic manifestation; avyakta-murtina—unmanifested form; mat-sthani—unto Me;sarva-bhutani—all living entities; na—not; ca—also; aham—I; tesu—in them; avasthitah—situated.
.
source - https://www.asitis.com/9/4.html
.
.
৫ নং মন্ত্রের প্রতি শব্দের ইংরেজি অনুবাদ এরকমঃ
.
na—never; ca—also; mat-sthani—situated in Me; bhutani—all creation; pasya—just see; me—My; yogam aisvaram—inconceivable mystic power; bhuta-bhrt—maintainer of all living entities; na—never; ca—also; bhuta-sthah—in the cosmic manifestation; mama—My; atma—Self; bhuta-bhavanah—is the source of all manifestations.
.
Source - https://asitis.com/9/5.html
.
এখানে ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান নয়, এই কথাটা নেই।
.
অনেকে হয়ত এই অংশটুকুর কথা বলতে পারেন //যদিও সব কিছুই আমারই সৃষ্ট তবুও তারা আমাতে অবস্থিত নয়//,
সেক্ষেত্রে এর আগেই দেখুন বলা হচ্ছে //অব্যক্ত রূপে আমি সমস্ত জগতে ব্যাপ্ত আছি। সমস্ত জীব আমাতেই অবস্থিত//, এই অংশের ইংরেজি অনুবাদ এভাবে করেছে //By Me, in My unmanifested form, this entire universe is pervaded.// [source - https://www.asitis.com/9/4.html]
.
এখানে ঈশ্বর ছিলেন অব্যক্ত বা unmanifested, অর্থাৎ, ঈশ্বর এর অংশ যখন জগৎ রূপে অস্তিত্ব লাভ করেনি সেই অবস্থার কথা বলা হচ্ছে। আর এরপর যেটা বলা হচ্ছে যে, //যদিও সব কিছুই আমারই সৃষ্ট তবুও তারা আমাতে অবস্থিত নয়//, এর ইংরেজি অনুবাদটা দেখলে আরও পরিষ্কার হবে //All beings are in Me, but I am not in them.// [source - https://www.asitis.com/9/4.html]
দেখুন, "I am not in them" বলা হচ্ছে, অর্থাৎ উল্টো করে বলা হচ্ছে যে, "আমি তাদের মধ্যে নই"। এর অর্থ হল ঈশ্বরের অংশ থেকে জগৎ তৈরি হয়েছে, তাই এটা বলা হবে যে, ঈশ্বরের মধ্যে জগৎ অবস্থিত। কিন্তু জগৎ থেকে ঈশ্বর তৈরি হয়নি; তাই ঈশ্বর, জগতের মধ্যে অবস্থিত - এটা বলা যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ আগেই আমরা দেখেছি যে, জগতকে বলা হচ্ছে "মায়া" অর্থাৎ মিথ্যা। তাই মিথ্যা বিষয়, ঈশ্বরের মধ্যে তার শক্তি দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হওয়া সঙ্গত; কিন্তু যা মিথ্যা, তার থেকে ঈশ্বর তৈরি হয়ে, সেই মিথ্যার মধ্যে, আর সেই মিথ্যার অধীনে ঈশ্বর থাকতে পারেন না।
.
সোজা কথায়, ঈশ্বরের মধ্যে জগৎ থাকলেও জগতের প্রকৃতি থেকে ঈশ্বরের প্রকৃতি ও অস্তিত্বের ধরণ পৃথক। প্রভুপাদের ব্যাখ্যা থেকে আমি quote করছি,
.
"...the entire material cosmic manifestation is only a combination of His two different energies, the superior spiritual energy and the inferior material energy. Just as the sunshine is spread all over the universe, the energy of the Lord is spread all over the creation, and everything is resting in that energy.
Yet one should not conclude that because He is spread all over He has lost His personal existence. To refute such argument the Lord says, "I am everywhere, and everything is in Me, but still I am aloof."....."
.
[Source - https://www.asitis.com/9/4.html]
.
গীতার ৮ অধ্যায়ের ১-৩ নং শ্লোকেরও উদ্ধৃতিও দেওয়া হয়, কিন্তু সেখানে আমি "সৃষ্টিকর্তা" শব্দটা পেলাম না। সেখানে "ব্রহ্ম", " কর্ম", "অধিদৈব" ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। সৃষ্টিকর্তার অবস্থান কোথায়, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
.
.
অনেকে উপনিষদের এই রেফারেন্সও দিয়ে থাকেন:
.
"..তাঁর কোনো পিতা বা মাতা নেই, কোনো প্রভু নেই।"
.
"..there is of him neither parent nor lord."
.
[Svetâsvatara Upanishad, 6:9; source - http://www.sacred-texts.com/hin/sbe15/sbe15105.htm]
.
অনেকে এখান থেকে হয়ত আবার বলে থাকেন যে, ঈশ্বরের কোনো লিঙ্গ নেই বলা হচ্ছে, অর্থাৎ ঈশ্বর পুরুষও না, নারীও না বা অন্য কোনো লিঙ্গেরও না। তার কোনো মা, বাবা, প্রভু নেই। কিন্তু এখানে সরাসরি লিঙ্গ বা মা বাবা না থাকলেও হিন্দু দর্শনে ঈশ্বরকে দুইভাবে প্রকাশ করা হয়েছে - "পুরুষ" এবং "প্রকৃতি"।
.
"পুরুষ" বলতে "living entity" বা "জীবন্ত সত্ত্বা" এবং "প্রকৃতি" বলতে "material nature" বা "বস্তুগত প্রকৃতি" বলা হয়। আরও বলা যেতে পারে, "পুরুষ" বলতে বোঝায় "individual soul" বা "পৃথক আত্মা বা জীবাত্মা" এবং "প্রকৃতি" হল মায়া।
.
এই পুরুষ ও প্রকৃতি দুটোই ঈশ্বরের নিজের প্রকাশ বা manifestation; আর তাই পুরুষ ও প্রকৃতি উভয়কেই আদি-অন্তহীন (যার শুরু ও শেষ নেই) বলা হয়েছে।
.
ভগবতগীতা, ১৩:২০
.
প্রকৃতিং পুরুষং চৈব বিদ্ধ্যনাদী উভাবপি৷
বিকারাংশ্চ গুণাংশ্চৈব বিদ্ধি প্রকৃতিসংভবান্৷৷
.
অর্থ:  প্রকৃতি এবং পুরুষ উভয়েই আদি-অন্তহীন বলে জানবে। তাদের বিকার এবং গুণসমূহ প্রকৃতি থেকে উৎপন্ন বলে জানবে।
.
English - Know that prakṛiti (material nature) and puruṣh (the individual souls) are both beginningless. Also know that all transformations of the body and the three modes of nature are produced by material energy.
.
[source - https://www.holy-bhagavad-gita.org/chapter/13/verse/20]
.
এক্ষেত্রে পুরুষ হল দেহে উপভোগকারী আর প্রকৃতি হল তাকে পরিবেষ্টনকারী। অন্যভাবে বললে, পুরুষ হল জীবাত্মা আর প্রকৃতি হল জীবাত্মার ওপর প্রভাব বিস্তার করা মায়া। এই পুরুষ ও প্রকৃতির মিলনে জগৎ বিস্তৃতি লাভ করে।
.
দেবী ভাগবতে বলা হচ্ছে,
"আত্মা এবং প্রকৃতির মিলনকে পৃথক করা যায় না, যেরূপে অগ্নি ও তার দহনশক্তিকে পৃথক করা সম্ভব নয়..."
.
"Âtman and Prakriti are in inseparable union with each other as Fire and its burning capacity..."
.
[S'rîmad Devî Bhâgawatam, 9:2:5-26; Translated by Swami Vijñanananda, source - http://www.sacred-texts.com/hin/db/bk09ch02.htm]
.
এই পুরুষ ও প্রকৃতিকে তুলনা করা হয় বিভিন্ন দেব-দেবী ও উপাস্যদের সাথে।
.
রামানুজ এর মতে, কৃষ্ণ এবং রাধা এর জুটি উপস্থাপন করে পুরুষ ও প্রকৃতিকে।
[According to Ramanuja, Krishna and Radha represent the duo purusha prakriti..
source - https://www.dailypioneer.com/2016/sunday-edition/radhas-role-in-krishna-cult.html]
.
একইভাবে পুরুষ-প্রকৃতিকে উপস্থাপন করে শিব-শক্তি (শক্তি অর্থ পার্বতী বা দুর্গা), ব্রহ্মা-সরস্বতী ইত্যাদি।
.
উদাহরণস্বরূপ, দেবী ভাগবতে দুর্গাকে "মূল প্রকৃতি", "ঈশ্বরী", "নারায়ণী" ইত্যাদি বিশেষণে ভূষিত করা হয়েছে।
.
"...Durgâ, the Mâyâ of Visnu (The Highest Self) eternal and whose Deity was Krisna...
..She is Nârâyanî; She is Îs’ânî; She is the S’akti of all and She is the Presiding Deity of the intelligence of S’rî Krisna. From Her have come out many other Devîs;
**She is Mûla Prakriti and She is Îs’varî..."**
.
[S'rîmad Devî Bhâgawatam, 9:2:62-88; Translated by Swami Vijñanananda, source - http://www.sacred-texts.com/hin/db/bk09ch02.htm]
.
.
আমার এখানে বক্তব্যটা হল, আল-কোরআন ৩:৬৪ আয়াতে আল্লাহ তাআলা আহলে কিতাবদের সাথে সাদৃশ্য দেখতে বলেছেন। আর হিন্দুরা আহলে কিতাব নয়, তারা হল মুশরিক। বেদ আল্লাহর বাণী কিনা তাও আমরা জানি না। অন্যদিকে হিন্দুধর্মের ঈশ্বরের ধারণা পুরোটাই মুশরিকি ধারণায় ভরা। তাহলে হিন্দুধর্মের ঈশ্বরের ধারণার সাথে সাদৃশ্য দেখিয়ে ইসলামে সৃষ্টিকর্তার ধারণা প্রচার করাটা কতটা যুক্তিযুক্ত। এখানে কি আমাদের দাওয়াহ এর স্টাইলটা change করা উচিৎ না??
====================
- আহমেদ আলি

Comments

Popular posts from this blog

মানহাজ ও মাযাহাব নিয়ে যত দ্বন্দ্বের জবাব....

[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...

কৃষ্ণ কি আল্লাহর নবী ছিল?

এই প্রশ্নটা আমাকেও করা হয়েছে সম্ভবত কয়েকবার। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরটা বড়ই জটিল। কারণ এর কোনো যথাযথ উত্তর আমাদের জানা নেই। যদি কৃষ্ণের গোপীদের সাথে লীলার কাজকে সত্য বলে...

ভগবতগীতার বর্ণভেদ নিয়ে ভক্তদের ভণ্ডামির জবাব

============================ চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ৷ তস্য কর্তারমপি মাং বিদ্ধ্যকর্তারমব্যয়ম্৷৷১৩ অর্থ:  "প্রকৃতির তিনটি গুণ এবং কর্ম অনুসারে আমি মনুষ্য সমাজে চারটি বর্ণ...