Skip to main content

সালমান রুশদির কোরআন নিয়ে মিথ্যাচারের জবাব...


যুক্তরাজ্যের অন্যতম ঔপন্যাসিক (মুরতাদ ও নাস্তিক) সালমান রুশদি তার উপন্যাস "দ্য স্যাটানিক ভার্সেস" (The Satanic Verses) - এ দাবি করে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা তিন পেগান দেবতার উপাসনা করার কথা ঘোষণা করে পরবর্তীতে সেটাকে শয়তানের বাণী বা Satanic Verses বলে বাতিল করে দেন (নাউযুবিল্লাহ)। এ সম্পর্কে উইকিপিডিয়া বলছে,
.
"বইয়ের নামটি তথাকথিত স্যাটানিক ভার্স বা শয়তানের বাণী-কে নির্দেশ করে। কারও কারও দাবী মতে কুরআনের কিছু আয়াত শয়তান কর্তৃক অনুপ্রাণিত হওয়ায় দৈনিক প্রার্থনার সময় তৎকালীন মক্কার পেগান দেবতা, লাত, উজ্জা এবং মানাতের পূজা হয়ে গিয়েছিল। এই আয়াতগুলোকেই শয়তানের বাণী বলা হয়।"[১]
"..এর কেন্দ্রবিন্দুতে শয়তানি বাণী সম্পর্কিত যে উপাখ্যান রয়েছে, সেখানে নবী প্রথমে প্রাচীন বহু ঈশ্বরবাদী দেব-দেবীদের স্বপক্ষে দৈববাণী ঘোষণা করেন, কিন্তু পরে সেটাকে আবার শয়তান দ্বারা প্রবর্তিত ত্রুটি বলে পরিত্যাগ করেন।"[২]
.
.
সালমান রুশদি যে আয়াতগুলোর কথা বলতে চেয়েছে, সেগুলো আসলে সূরা নাজমের ১-২০ নং আয়াত। সালমান রুশদির দাবির সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ একটি আয়াতও কোরআন থেকে আমরা পাই যা নিম্নরূপ:
.
وَمَآ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رَّسُولٍ وَلَا نَبِىٍّ إِلَّآ إِذَا تَمَنَّىٰٓ أَلْقَى ٱلشَّيْطَٰنُ فِىٓ أُمْنِيَّتِهِۦ فَيَنسَخُ ٱللَّهُ مَا يُلْقِى ٱلشَّيْطَٰنُ ثُمَّ يُحْكِمُ ٱللَّهُ ءَايَٰتِهِۦۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
.
"আর আমি তোমার পূর্বে যে রাসূল কিংবা নবী পাঠিয়েছি, সে যখনই (ওহীকৃত বাণী) পাঠ করেছে, শয়তান তার পাঠে (কিছু) নিক্ষেপ করেছে। কিন্তু শয়তান যা নিক্ষেপ করে আল্লাহ তা মুছে দেন। অতঃপর আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহকে সুদৃঢ় করে দেন। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, অতি প্রজ্ঞাময়।"[৩]
.
কিন্তু এখানে সালমান রুশদি ব্যাপারটিকে দুইভাবে বিকৃত করে দেখিয়েছে যা থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর ইঙ্গিত পাওয়া যায়:
.
১) রুশদির দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসলে কুরআনের রচয়িতা আর তিনি এই আয়াতগুলো (যা 'শয়তানের বাণী' নাম দেওয়া হয়েছে) রচনা করার পর তা পাঠ করার সময় পেগান দেব-দেবীদের পূজা করার কথা বলে বসেন; আর পরে ভুল বুঝতে পেরে এই দেব-দেবীদের কথা সরিয়ে নেন নিজের রচনার বিষয়বস্তুর সাথে সামাঞ্জস্য রাখার জন্য। পরে নিজের ভুল বা ত্রুটি ঢাকার জন্য তা 'শয়তানের বাণী' হিসেবে প্রচার
করেন। (নাউযুবিল্লাহ)
.
২) রুশদি তার নিজের ইচ্ছামত কোরআন এর আয়াতের ব্যাখ্যা তৈরি করে সেই বিকৃত ব্যাখ্যার সারবস্তু নিজের উপন্যাসের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়।
.
এখানে সালমান রুশদি যে দাবি করেছে, তার পক্ষে কোনো প্রতিষ্ঠিত প্রমাণ নেই। 'তাফসির ফাতহুল মাজীদ' - এ আল-কোরআন ২২:৫২ এর ব্যাখ্যায় এক স্থানে উল্লেখ করা হচ্ছে:
.
"অধিকাংশ মুফাসসিরগণ এ আয়াতের তাফসীরে কিসসাতুল গারানীক
.
قصة الغرانيق
.
উল্লেখ করেছেন। আর তা হলো এই যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কার জীবনে একদা
.
والنجم إذا থেকে
.
الثالثة الأخري
.
(সূরা নাজমের ১-২০ নং আয়াত) পর্যন্ত পাঠ করেন তখন শয়তান তাঁর কথার সাথে এ কথা মিলিয়ে দিয়ে রাসূলের মুখে প্রকাশ করায় যে,
.
تلك الغرانيق العلي – وإن شفاعتهن لترجي
.
অর্থাৎ এগুলো হল মহান গারানীক এবং তাদের সুপারিশের আশা করা যায়। যখন সূরার শেষ প্রান্তে চলে গেলেন তখন তিনি সিজদা করলেন, সাথে সাথে মুসলিম ও মুশরিক সবাই সিজদা করল।
.
মুশরিকরা বলল: আজ তিনি আমাদের দেবতাদের এমন প্রশংসা করেছেন যা তিনি ইতোপূর্বে করেননি। মক্কায় সংবাদ ছড়িয়ে পড়ল যে, মক্কার মুশরিকগণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সিজদা করার মধ্য দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছে। এমনকি এ কথা শুনে হাবশায় যে সকল মুসলিমরা হিজরত করেছিল তারা ফিরে এসেছিল এ ধারণা নিয়ে যে, তাদের সম্প্রদায়ের লোকেরাও হয়তো ইসলাম গ্রহণ করেছে। কিন্তু এসে দেখে তারা কাফির রয়ে গেছে। **এ ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বাতিল।**
.
কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন কথা বলবেন না যে, এরা (লাত, উযযা, মানাত ইত্যাদি দেবতা) মহান গারানীক আর এদের সুপারিশ কবুল করার আশা করা যায়, এটা সম্পূর্ণ শিরকী ও কুফরী কথা। তাঁর মুখ দিয়ে এরূপ কথা কোন দিন বের হতে পারে না। এটা যে মিথ্যা তার প্রমাণ পরের আয়াত থেকেই বুঝা যাচ্ছে। কারণ পরের আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: 
.
(إِنْ هِيَ إِلَّآ أَسْمَا۬ءٌ سَمَّيْتُمُوْهَآ أَنْتُمْ وَاٰبَآؤُكُمْ مَّآ أَنْزَلَ اللّٰهُ بِهَا مِنْ سُلْطَانٍ ط إِنْ يَّتَّبِعُوْنَ إِلَّا الظَّنَّ وَمَا تَهْوَي الْأَنْفُسُ)
.
“এগুলো কতক নাম মাত্র, যা তোমাদের পূর্বপুরুষরা ও তোমরা রেখেছ, এর সমর্থনে আল্লাহ কোন দলীল প্রেরণ করেননি। তারা শুধু অনুমান এবং তাদের প্রবৃত্তি যা চায় তারই অনুসরণ করে।” (সূরা নাজম ৫৩:২৩)
.
পূর্বের আয়াতগুলোতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের মা‘বূদের প্রশংসা করার পর অত্র আয়াতে নিন্দা করবেন এটা বোধগম্য নয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুশরিকরদের মা‘বূদের প্রথমে প্রশংসা করবেন তারপর নিন্দা করা হবে, আর তারা ছেড়ে দিবে? আবার তারা সিজদাও করবে? কখনো হতে পারে না। এছাড়া কুরআনের অনেক আয়াত রয়েছে যা প্রমাণ করে যে, এ ঘটনা মিথ্যা। তা হল আল্লাহ তা‘আলা কোন নাবী বা রাসূলগণের ওপর শয়তানের কর্তৃত্ব দেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
.
(إِنَّه۫ لَيْسَ لَه۫ سُلْطٰنٌ عَلَي الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَلٰي رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ - إِنَّمَا سُلْطٰنُه۫ عَلَي الَّذِيْنَ يَتَوَلَّوْنَه۫ وَالَّذِيْنَ هُمْ بِه۪ مُشْرِكُوْنَ)
.
“নিশ্চয়ই তার কোন আধিপত্য নেই তাদের ওপর যারা ঈমান আনে ও তাদের প্রতিপালকেরই ওপর নির্ভর করে। তার আধিপত্য কেবল তাদেরই ওপর যারা তাকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে এবং যারা আল্লাহর সাথে শরীক করে।” (সূরা নাহাল ১৬:৯৯-১০০)
.
আল্লাহ বলেন: 
.
(وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوٰي) ‏
.
“এবং সে প্রবৃত্তি হতেও কোন কথা বলে না।” (সূরা নাজম ৫৩:৩)
.
শাইখ আলবানী
.
(رحمه الله) نصب المجانيق لنسف قصة الغرانيق
.
গ্রন্থে এ ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট দশটি বর্ণনা নিয়ে এসেছেন এবং সে সকল বর্ণনার ত্রুটি উল্লেখপূর্বক বাতিল বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ বিষয়ে সেখানে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।"[৪]
.
শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদ তাঁর এক ফতোয়ায় বলছেন,
.
"...শয়তান নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মুখে বাণী তুলে দিয়েছিল এবং তিনি বলেছিলেন: 'তারা মহিমান্বিত গারানীক যাদের মধ্যস্থতা আশা করা উচিৎ'। কাফিররা তাদের তিনটি মূর্তির প্রশংসা শুনে সন্তুষ্ট হয়, আর তাই তারা সিজদা বা নতজানু হয়ে পড়ে।
.
এই বর্ণনা সন্দেহাতীতভাবে মিথ্যা কয়েকটি কারণে।
.
১) এর সনদ (isnaad) খুবই দুর্বল এবং তা সহিহ নয়।
.
২) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইসলামের বার্তা প্রচারে সংশয়াতীত ছিলেন।
.
৩) এমনকি তর্কের খাতিরে যদি এই বর্ণনাকে সহিহও ধরে নিই, সেক্ষেত্রে আলিমগণ এর বক্তব্য অনুযায়ী, এই বিষয়টি এরূপে বোধগম্য যে, শয়তান কাফিরদের ওপর তার ক্রিয়ার দ্বারা তাদেরকে এই কথাগুলো শুনিয়েছে, এমন নয় যে, সে কথাগুলোকে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মুখে তুলে দিয়েছে, যার ফলে তারা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছ থেকে কথাগুলো শুনেছে।"[৫]
.
.
'তাফসির আবু বকর যাকারিয়া' - এ আল-কোরআন ২২:৫২ আয়াতের তাফসিরের এক স্থানে কাফিরদের ওপর শয়তানের এই ক্রিয়ার প্রসঙ্গে এরূপে বলা হচ্ছে:
.
"মূল শব্দটি হচ্ছে, تمني (তামান্না)। আরবী ভাষায় এ শব্দটি দু’টি অর্থে ব্যবহৃত হয়। একটি অর্থ হচ্ছে কোন জিনিসের আশা-আকাংখা করা। [ফাতহুল কাদীর]
.
দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে তিলাওয়াত অর্থাৎ কিছু পাঠ করা। তবে আয়াতে تمني শব্দের অর্থ قرأ অর্থাৎ আবৃত্তি করে এবং أمنية শব্দের অর্থ قراءة অর্থাৎ আবৃত্তি করা। [কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
.
আরবী অভিধানে এ অর্থ প্রসিদ্ধ ও সুবিদিত। আয়াতের অর্থ হল- আল্লাহ্‌ তা'আলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পূর্বে যখনই কোন নবী বা রাসূল পাঠিয়েছেন, তিনি যখন মানুষকে উপদেশ দেয়ার জন্য আদেশ-নিষেধ প্রদান করতেন, তখনি সেখানে শয়তান মানুষের কানে তার ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তমূলক এমন কথাবার্তা প্রবিষ্ট করত যা নবীর কথা ও পড়ার সম্পূর্ণ বিপরীত বিষয়। আর আল্লাহ্‌ যেহেতু নবী-রাসূলদেরকে উম্মতের জন্য প্রচার করা বিষয়সমূহ এবং তাঁর ওহীর হেফাযত ও সম্পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান করেছেন, সেহেতু তিনি শয়তানের সে সমস্ত কারসাজি ও ষড়যন্ত্রকে স্থায়িত্ব দেন না; বরং অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দেন। ফলে কোনটা আল্লাহ্‌র আয়াত আর কোনটা তাঁর আয়াত নয়, তা সুস্পষ্ট হয়ে পড়ে।
.
এভাবেই আল্লাহ্‌ তা'আলা তাঁর আয়াতসমূহের হেফাযত করে থাকেন। মূলতঃ আল্লাহ্‌ প্রবল পরাক্রান্ত মহাশক্তিধর। তিনি একদিকে তাঁর সুনির্দিষ্ট হেকমত ও প্রজ্ঞার কারণে শয়তানের পক্ষ থেকে তা হতে দেন। অপরদিকে তাঁর শক্তিতে তাঁর ওহীর হেফাযত করেন। যাতে করে যাদের অন্তরে রোগ রয়েছে এবং কঠোর হৃদয়ের অধিকারী মানুষদের মনে শয়তানের এ বাক্যগুলো ফেৎনা সৃষ্টি করতে পারে। এর বিপরীতে যাদের কাছে রয়েছে ইলম বা জ্ঞান, তারা এ দু’য়ের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে এবং শয়তানের প্রক্ষিপ্ত বিষয় ত্যাগ করে একমাত্র আল্লাহ্‌র আয়াতসমূহে বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে। বরং এতে তাদের অন্তরে ঈমান বর্ধিত হয় এবং তারা আল্লাহ্‌র জন্য বিনম্র ও বিনয়ী হয়ে পড়ে। [বাগভী; কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর; সা‘দী থেকে সংক্ষেপিত]"[৬]
.
.
আল-কোরআন ২২:৫২ আয়াতের প্রধান অংশটুকু ছিল এরূপ: "আমি তোমার পূর্বে যে রাসূল কিংবা নবী পাঠিয়েছি, সে যখনই (ওহীকৃত বাণী) পাঠ করেছে, শয়তান তার পাঠে (কিছু) নিক্ষেপ করেছে। কিন্তু শয়তান যা নিক্ষেপ করে আল্লাহ তা মুছে দেন। অতঃপর আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহকে সুদৃঢ় করে দেন" - যার ব্যাখ্যায় তাফসিরে ফাতহুল মাজীদে আরও উল্লেখ করা হচ্ছে:
.
"..আল্লাহ তা‘আলা এ কথার দ্বারা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সান্ত্বনা দিলেন যে, শয়তান এরূপ কার্যকলাপ শুধু তোমার সাথেই করেনি বরং তোমার পূর্ববর্তী সকল নাবীদের সাথেই করেছে। সুতরাং তুমি একটুও বিচলিত হবে না। শয়তানের ঐ সমস্ত চক্রান্ত ও দুরভিসন্ধি হতে যেমন আমি পূর্বের নাবীদেরকে রক্ষা করেছি, তেমনি তুমিও সুরক্ষিত থাকবে এবং শয়তানের অনিচ্ছা সত্ত্বেও আল্লাহ তা‘আলা  নিজের বাণীকে পাকাপোক্ত ও সুদৃঢ় করবেন।
.
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন: শয়তানের এ সকল চক্রান্ত করার উদ্দেশ্য হলন যে সকল মানুষের অন্তরে কুফরী ও মুনাফিকীর রোগ রয়েছে এবং যাদের অন্তর অধিক পাপ করতে করতে পাথরের ন্যায় শক্ত হয়ে গেছে এদেরকে তার জালে আটকে ফেলে অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করা। কারণ শয়তান কয়েকটি কথা নাবীদের কথার সাথে মিশ্রণ করতে পারলে সে সব কথাকে দলীল বানিয়ে বাতিলকে শক্তিশালী করার আপ্রাণ চেষ্টা করবে। আর এটা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে একটা পরীক্ষাও বটে। ফলে যারা কাফির ও মুনাফিক তারা এ পরীক্ষায় ব্যর্থ হয় এবং শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে মন্দ কর্মে লিপ্ত হয়। পক্ষান্তরে যারা মু’মিন, জ্ঞানী তারা এ পরীক্ষায় কৃতকার্য হয় এবং সাথে সাথে তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়।"[৭]
.
সুতরাং দেখাই যাচ্ছে যে, সালমান রুশদি বানোয়াট ও বিকৃত ব্যাখ্যার মাধ্যমে কোরআনের আয়াতের বিষয়বস্তু তুলে ধরে মিথ্যাচার করেছে আর সেই মিথ্যাচারের নিদর্শন ফুটিয়ে তুলেছে তার "The Satanic Verses" উপন্যাসে!
.
আমার লেখা শেষ করব আল-কোরআনের কয়েকটি আয়াত দিয়ে যার একটি আয়াত উপরের তাফসিরেই পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে আল্লাহ তাআলা এই তিন পেগান দেবতাদের সম্পর্কে বলছেন:
.
أَفَرَءَيْتُمُ ٱللَّٰتَ وَٱلْعُزَّىٰ
وَمَنَوٰةَ ٱلثَّالِثَةَ ٱلْأُخْرَىٰٓ
.
"তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও উযযা সম্বন্ধে এবং তৃতীয় আরেকটি ‘মানাত’ সম্বন্ধে?"[৮]
.
.
إِنْ هِىَ إِلَّآ أَسْمَآءٌ سَمَّيْتُمُوهَآ أَنتُمْ وَءَابَآؤُكُم مَّآ أَنزَلَ ٱللَّهُ بِهَا مِن سُلْطَٰنٍۚ إِن يَتَّبِعُونَ إِلَّا ٱلظَّنَّ وَمَا تَهْوَى ٱلْأَنفُسُۖ وَلَقَدْ جَآءَهُم مِّن رَّبِّهِمُ ٱلْهُدَىٰٓ
.
"এগুলো তো কেবল কতকগুলো নাম যে নাম তোমরা আর তোমাদের পিতৃ পৃরুষরা রেখেছ, এর পক্ষে আল্লাহ কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি। তারা তো শুধু অনুমান আর প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে, যদিও তাদের কাছে তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে পথ নির্দেশ এসেছে।"[৯]
.
.
.
_________________________
তথ্যসূত্র:
[১] https://bn.m.wikipedia.org/wiki/দ্য_স্যাটানিক_ভার্সেস
[২] "At its centre is the episode of the so-called satanic verses, in which the prophet first proclaims a revelation in favour of the old polytheistic deities, but later renounces this as an error induced by the Devil. "
[https://en.m.wikipedia.org/wiki/The_Satanic_Verses]
[৩] আল-কোরআন, ২২:৫২ (বয়ান ফাউন্ডেশন কর্তৃক অনুদিত)
[৪] তাফসিরে ফাতহুল মাজীদ/আল-কোরআন ২২:৫২ আয়াতের তাফসির হতে বিবৃত/source - play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran
[৫] "...the Shaytaan put words into the mouth of the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) and he said: ‘they are the exalted gharaneeq, whose intercession is to be hoped for.’ The kuffaar were pleased with this praise of their three idols, so they prostrated.”
This report is undoubtedly false on a number of counts.
1. Its isnaad is very weak and is not saheeh.
2. The Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) was infallible with regard to the conveying of his Message.
3. Even if this report was saheeh, for argument’s sake, the scholars have stated that it is to be understood as meaning that the Shaytaan caused the kuffaar to hear these words, not that he put them in the mouth of the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him), so they heard them from him."
[Taken from the fatwa of Sheikh Muhammed Salih Al-Munajjid/source - https://islamqa.info/en/4135]
[৬] তাফসিরে আবু বকর যাকারিয়া/আল-কোরআন ২২:৫২ আয়াতের তাফসির হতে বিবৃত/source - play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran
[৭] তাফসিরে ফাতহুল মাজীদ/আল-কোরআন ২২:৫২ আয়াতের তাফসির হতে বিবৃত/source - play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran
[৮] আল-কোরআন, ৫৩:১৯-২০ (মুজিবুর রহমান কর্তৃক অনুদিত)
[৯] আল-কোরআন, ৫৩:২৩ (অনুবাদ: তাইসিরুল কুরআন)
=======================
- আহমেদ আলি

Comments

Popular posts from this blog

মানহাজ ও মাযাহাব নিয়ে যত দ্বন্দ্বের জবাব....

[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...

কৃষ্ণ কি আল্লাহর নবী ছিল?

এই প্রশ্নটা আমাকেও করা হয়েছে সম্ভবত কয়েকবার। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরটা বড়ই জটিল। কারণ এর কোনো যথাযথ উত্তর আমাদের জানা নেই। যদি কৃষ্ণের গোপীদের সাথে লীলার কাজকে সত্য বলে...

ভগবতগীতার বর্ণভেদ নিয়ে ভক্তদের ভণ্ডামির জবাব

============================ চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ৷ তস্য কর্তারমপি মাং বিদ্ধ্যকর্তারমব্যয়ম্৷৷১৩ অর্থ:  "প্রকৃতির তিনটি গুণ এবং কর্ম অনুসারে আমি মনুষ্য সমাজে চারটি বর্ণ...