বেদান্ত দর্শনে বিশ্বাসী এক হিন্দু ভাই মেসেজে আমার কাছে জানতে চেয়েছিল যে পড়াশুনাতে উন্নতি করার জন্য কোরআন কী বলে।
স্বাভাবিক ভাবেই ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হিন্দুদের পছন্দনীয় নয়, তাই আল্লাহ এর রহমতে এই প্রশ্নের উত্তর এর সুযোগ পেয়ে আমি তার বেদান্ত দর্শনের সাথে ইসলামের তুলনা করার চেষ্টা করলাম। এই মেসেজের উত্তর দেওয়ার পর মনে হল যে, এটা অন্যদেরও দেখা প্রয়োজন। তাই সবার জন্য সেই উত্তরটা কপি করে এই পোস্টে দিলাম। আল্লাহ আমাদের সত্যের পথে অটল থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।
.
*আমি অনুরোধ করব এই লেখাটা সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে পুরোটাই পড়তে। লেখার কোথাও বাদ না দিতে, লেখায় কোনো প্রকার ত্রুটি হলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।*
.
(In the name of Allah, the most gracious, the most merciful. I testify that there is no god, but Allah and Prophet Muhammad (sallahu alaihi wa sallam) is the servant & last messenger of Allah).
.
তোমার প্রশ্নটা ছিল, পরীক্ষায় ভালো করা নিয়ে কোরআন কী বলে।
আমি এই প্রশ্নের উত্তর এর সাথে প্রাসঙ্গিক অনেক কিছু বলছি, আশা করি, তাহলে ইসলামের কিছু বিষয় তোমার কাছে আরও পরিষ্কার হবে।
.
এক কথায় আমার মতে এটার উত্তর এটা হতে পারে:
.
"...*প্রত্যেক ব্যক্তি যা অর্জন করে তার জন্য সে নিজেই দায়ী হবে।*
কোন ভারবহনকারীই অন্যের পাপের ভার বহন করবে না।...."
(আল-কোরআন, ৬:১৬৪)
.
.
"যে সৎকর্ম করে, সে নিজের উপকারের জন্যেই করে, আর যে অসৎকর্ম করে, তা তার উপরই বর্তাবে। আপনার পালনকর্তা বান্দাদের প্রতি মোটেই যুলুম করেন না।"
(আল-কোরআন, ৪১:৪৬)
.
.
"প্রত্যেক ব্যক্তি তার কৃতকর্মের জন্য দায়ী;"
(আল-কোরআন, ৭৪:৩৮)
.
.
"যদি তারা তোমাকে মিথ্যা জেনে অমান্য ক’রে তাহলে বল,
*‘আমার কাজের জন্য আমি দায়ী, আর তোমাদের কাজের জন্য তোমরা দায়ী, আমি যা করি তার দায়-দায়িত্ব থেকে তোমরা মুক্ত, আর তোমরা যা কর তার দায়-দায়িত্ব থেকে আমি মুক্ত।’*"
(আল-কোরআন, ১০:৪১)
.
.
অর্থাৎ তুমি যেরকম কাজ করবে তার ফল সেরকমই পাবে, এটা সবারই জানা। আর এটাই প্রকৃত বিষয়। অনেকে অনেক ভাবে বর্ণনা করতে পারে, যেমন, জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব ও এর তাৎপর্য এবং আরও এরকম বিভিন্ন বিষয়। কিন্তু এগুলো বলে খুব বেশি লাভ নেই কারণ তুমি কীভাবে পড়াশুনা করবে তার রুটিন তুমিই সুবিধামত ঠিক করতে পার। রবীন্দ্রনাথ বা আইনস্টাইন কী করল বা নিউটনের কতটুকু মেধা ছিল, এসব চর্চা করে সঠিক কোনো সমাধানে আসা যায় না। আমার মতে কোরআন এর এই নিদর্শনটা তাই প্রথম মাথায় রাখা ভালো যে, *প্রত্যেক ব্যক্তি যা অর্জন করে তার জন্য সে নিজেই দায়ী হবে।*
.
.
তবে এখানে আমি প্রাসঙ্গিক কিছু কথা বলব যেটা তোমায় হয়ত সাহায্য করতে পারে।
.
*লক্ষ্য স্থিরকরণ*
.
মনে করো, ঘুম থেকে উঠে তুমি দেখলে তুমি এক অজানা জায়গায় আছো। বুঝতে পারলে যে, সেটা একটা Aeroplane, আর সেখানে পরিবেশটা ঠিক তোমার মনের মত, সবাই তোমায় আপ্যায়ন করছে। কিন্তু তুমি কাউকেই চেন না। তোমার সামনে তোমার সব পছন্দের খাবার পরিবেশন করা, সব কিছু ঠিক তেমনই যেমনটি তুমি চাও। এবার নিশ্চয় তুমি খুব খুশি হবে???
.
উত্তর হল "না"।
.
প্রথমেই যে প্রশ্নগুলো মাথায় আসবে সেগুলো হল,
'এটা কোথায়? আমি এখানে কেন? আমি এখানে কীভাবে এলাম? আমাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?'....ইত্যাদি!!!
.
যতক্ষণ না, ঐ নতুন জায়গাতে তোমার উপস্থিতির যথাযথ উদ্দেশ্য ও কারণ তুমি জানতে পারছ, তোমার মনে শান্তি আসবে না!
.
একইভাবে, এই পৃথিবীতেও আমাদের অস্তিত্ব এর কারণ কী, কেন আমরা এই জগতে নিজেদের দেখতে পাচ্ছি তার যথার্থ কারণ না পাওয়া অবধি আমাদের মন শান্তি খুঁজে পায় না, পথভ্রষ্টতা হতে সত্যপথ চেনা, সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী তা বোঝা সম্ভব হয় না।
.
এত কিছু কেন বলছি?
.
কারণ কেবল পার্থিব জগতের অল্প সময়ের কিছু কাজের লক্ষ্যই জীবনের পরিপূর্ণতা আনে না, তুমি কেন পড়াশুনা করছ? হয়ত বলবে, ভাল রেজাল্ট এর জন্য। ভাল রেজাল্ট দিয়ে কী হবে? ভাল জায়গায় কাজ করতে পারব, যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি। এগুলো করে কী হবে? একসময় তো মারাই যাবে। এত কষ্ট করে কী হবে? যারা স্মাগ্লার, পর্ণ স্টার, ড্রাগ সেলার, তারা তো দিব্যিই আছে, দেশ বিদেশের মন্ত্রীরা তাদের পকেটে পোরা। লাইফটাকে enjoy করলেই তো হয়? না, সমাজে আমার একটা সম্মান আছে। আমার মা বাবার মর্যাদা আছে। তার মানে মা বাবাকে ভালো রাখতে তুমি বিলাসিতার পথ বেছে নেবে না? সমাজের লোকের কথার ভয়ে তুমি এসব করবে না? কিন্তু অনেকেরই তো এসবে কিছুই যায় আসে না, যারা আজ কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছে, তারা ক্রমাগত মিথ্যা বলছে, চুরি করছে, অশালীন জীবনযাপন করছে, অনেকের জীবনই ফুর্তিতে কাটছে, তাহলে এরা তো লোকের পরোয়া করে না! আমার এসব কাজ ভালো লাগে না! এগুলো করে শান্তি আসে না, ইত্যাদি নানা রকম কথা বলতে পারো।
তাহলে আসল বিষয়টা হল, তুমি কেন তাহলে এই সময়ে আছো, খাচ্ছ-দাচ্ছ, ঘুরে বেড়াচ্ছ? কী কারণই বা আছে যে তুমি সময়ের চক্রে বাধ্য হচ্ছো জীবন বাঁচানোর জন্য তোমার জীবনের কাজগুলো করতে? অন্য কথায়, কী উদ্দেশ্য এর জন্য তোমার সৃষ্টি হয়েছে বা তুমি নিজেকে একটি আলাদা সৃষ্টি ভাবছ?
.
তোমার বেদান্ত দর্শন বলছে যে, এই জগতটা আসলে কোনো আলাদা সৃষ্টি নয়, আমরা জগতকে আর নিজেদের আলাদা সৃষ্টি বলে ভাবি, আসলে সবই হল ব্রহ্ম বা পরমাত্মা-ঈশ্বরের অংশ। তাই এই জগতের সবকিছু ধ্বংসশীল আর তাই এই জগতের সবকিছুই আসলে মায়া, তাই মোক্ষলাভের মাধ্যমে এই উপলব্ধি যে "জীবাত্মা আর পরমাত্মা অভিন্ন", এটি অনুধাবন করে জড়জগতের বন্ধন হতে মুক্তি লাভ করাই প্রকৃত উদ্দেশ্য।
কিন্তু প্রশ্ন চলে আসে, যদি এই সৃষ্টিজগত মিথ্যা হয়, তবে কেন আমাদের প্রকৃত সত্ত্বা এই জড় জগতের বন্ধনের মধ্যে আবদ্ধ হল? অনেকে বলে থাকে, এটা ঈশ্বরের লীলা খেলা, আর তাই এটা বোঝার সাধ্য আমাদের নেই। এর অর্থ হল, সুস্পষ্ট কোনো কারণ আমাদের জানা নেই, কেন আমরা এই জগতের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে নিজেদের পৃথক ভাবছি আর কেনই বা প্রকৃতির দ্বারা চালিত হয়ে নিজেদের কর্মের কর্তা বলে বিভ্রান্ত হচ্ছি?
.
তাহলে আমাদের অস্তিত্বের প্রকৃত কারণ কী - বেদান্ত দর্শন তার কোনো চূড়ান্ত উত্তর দিতে পারে নি!
সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী জিজ্ঞেস করলে বলছে যে, এই সৃষ্টিজগত মিথ্যা, আর জড়জগতের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কারণ কী জিজ্ঞেস করলে বলছে যে, এটা আমাদের বোধগম্য নয়।
.
আমি না, বিবেকানন্দই তোমায় এই বিষয়টাকে confirm করবে,
.
"*Why should the free, perfect, and pure being be thus under the thraldom of matter, is the next question.*
.
*How can the perfect soul be deluded into the belief that it is imperfect?*
.
We have been told that the Hindus shirk the question and say that no such question can be there. Some thinkers want to answer it by positing one or more quasi-perfect beings, and use big scientific names to fill up the gap. But naming is not explaining. The question remains the same. How can the perfect become the quasi-perfect; how can the pure, the absolute, change even a microscopic particle of its nature? But the Hindu is sincere. He does not want to take shelter under sophistry.
.
*He is brave enough to face the question in a manly fashion; and his answer is: “I do not know.*
.
*I do not know how the perfect being, the soul, came to think of itself as imperfect, as joined to and conditioned by matter."*
.
But the fact is a fact for all that. It is a fact in everybody's consciousness that one thinks of oneself as the body.
.
The Hindu does not attempt to explain why one thinks one is the body. The answer that it is the will of God is no explanation.
.
*This is nothing more than what the Hindu says, "I do not know.""*
.
(Complete Works of Vivekananda/Volume 1/Addresses at The Parliament of Religions/Paper on Hinduism)
.
[Source-
https://en.m.wikisource.org/wiki/The_Complete_Works_of_Swami_Vivekananda/Volume_1/Addresses_at_The_Parliament_of_Religions/Paper_on_Hinduism]
.
.
*তাহলে দেখ, বেদান্ত দর্শন সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী, তার কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারে নি!!!*
.
এর উত্তর দিয়েছেন মহান সৃষ্টিকর্তা নিজেই তার প্রেরিত সর্বশেষ বাণী *আল-কোরআন* এ।
.
মহান স্রষ্টা ঘোষণা করছেন,
.
*"আমার ইবাদত(উপাসনা) করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।*
.
আমি তাদের কাছে জীবিকা চাই না এবং এটাও চাই না যে, তারা আমাকে আহার্য যোগাবে।
.
আল্লাহ তা’আলাই তো জীবিকাদাতা শক্তির আধার, পরাক্রান্ত।"
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ৫১:৫৬-৫৮)
.
"*And I did not create the jinn and mankind except to worship Me.*
I do not want from them any provision, nor do I want them to feed Me.
Indeed, it is Allah who is the [continual] Provider, the firm possessor of strength."
.
(The Noble Quran, 51:56-58)
.
.
অর্থাৎ, মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে একমাত্র সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করার জন্য। ইবাদত অর্থ হল সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ মেনে চলা, তিনি যে নির্দেশ দিয়েছেন সেগুলো মানা ও নিষিদ্ধ বিষয় বর্জন করা এবং সেভাবে নিজের জীবনধারণ করা।
.
কিন্তু তবুও একটা প্রশ্নের উত্তর অজানা থাকে। তাহলে যদি এ জগত সত্যি হয়, মায়া, মিথ্যা, ভ্রম না হয়, তাহলে জগতে এত দুঃখ কেন? কেন কেউ সুখে আছে, আবার কেউ কষ্টে দিন কাটাচ্ছে? সৃষ্টিকর্তা কী তাহলে অবিচারক নন? (এই প্রশ্নটা তোমার গুরু বিবেকানন্দও করেছেন তার লেখায়, আমি আর রেফারেন্স দিচ্ছি না, এমনিতেই লেখা অনেক বড় হয়ে গেছে।)
.
.
এর উত্তর হল, এই জীবনটা সত্য, তবে এটাই প্রকৃত জীবন নয়, এই জীবনটা কেবলই সীমিত সময়ের একটা পরীক্ষা ক্ষেত্র আর তাই এই জীবনের সুখ, দুঃখ কোনোটাই চূড়ান্ত বিচারের মানদণ্ড নয়।
.
ইসলাম অনুযায়ী পরকাল চিরস্থায়ী এবং সেটাই প্রকৃত জীবন, আর এই পৃথিবীর জীবন শুধু একটা পরীক্ষাস্থল। যেহেতু সৃষ্টিকর্তা নিজের অংশ হতে আমাদের রূপান্তর করেছেন, এটা আমরা সমর্থন করি না, তাই আমরা মানি আল্লাহ শুন্য হতে সবকিছুর উদ্ভব ঘটিয়েছেন। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, "হও", আর শুন্য হতে তা automatically সৃষ্টি হয়ে গেছে।
.
"আল্লাহ এমন নন যে, সন্তান গ্রহণ করবেন, তিনি পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা,
*তিনি যখন কোন কাজ করা সিদ্ধান্ত করেন, তখন একথাই বলেনঃ "হও" এবং তা হয়ে যায়।"*
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ১৯:৩৫)
.
যেহেতু, আল্লাহ নতুন ভাবে আমাদের সৃষ্টি করেছেন, আমরা তাঁর অংশ নই, তাই আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তা কোনো পরমাত্মা নন, ব্রহ্মও নন। বরং তিনি সমস্ত আত্মা ও যাবতীয় সকল কিছুর স্রষ্টা। আর তাই আমরা জন্মান্তরবাদ ও মোক্ষলাভও সমর্থন করি না।
.
ব্যাপারটা মনে করো, তোমায় দুটো অপশন দেওয়া হল;
১) এখন কিছু সময়ের জন্য আরাম করতে পারবে, তারপর অনন্তকালের জন্য তোমায় দুঃখ ভোগ করতে হবে;
২) এখন কিছু সময়ের জন্য কষ্ট করতে হবে, এরপর অনন্তকালের জন্য আরামে কাটাতে পারবে।
.
বুদ্ধিমান লোক ২) নং অপশনটাই বেছে নেবে।
.
যেমন, পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কষ্ট করতে হয়, কিন্তু ফলাফল ভালো হলে আনন্দ পাওয়া যায়, কিছুটা সেরকম।
.
মহান সৃষ্টিকর্তা ঘোষণা করছেন:
*"যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য - কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।"*
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ৬৭:২)
.
এখানে এই পৃথিবীর সমস্ত কিছুই তাই পরকালের জন্য একটা পরীক্ষা ছাড়া আর কিছুই নয়।
কারো অনেক ধন-সম্পদ থাকলেই সে সুখী, আর গরিব লোক অসহায়, এই ব্যাপারটাই চূড়ান্ত নয়, ইসলামের একটা বাধ্যতামূলক কাজ হল *যাকাত* দেওয়া। প্রত্যেক ধনী লোক যদি তার সম্পদের পরিমাণ ইসলাম নির্ধারিত একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে প্রতি হিজরি বছরে তাকে তার মোট সম্পদের কমপক্ষে ২.৫% ইসলাম নির্ধারিত উপায়ে গরিব লোকদের দান করতেই হবে, যদি এই পরীক্ষায় সে উত্তীর্ণ হতে না পারে, তবে পরকালে তাকে এর জন্য কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে, দুনিয়ার জীবনে সামান্য সময় সে ভোগ করেছে, আর সৃষ্টিকর্তার নির্দেশের বিরুদ্ধচারণ করে নিজের ওপর অত্যাচার করেছে, তাই পরকালে তাকে কঠোর শাস্তি পেতে হবে, ইচ্ছা করলে সৃষ্টিকর্তা অনন্তকালও তাকে শাস্তি দিতে পারেন ন্যায়বিচারের খাতিরে যদি তিনি চান যেহেতু এই পৃথিবীর জীবন একবারই, আর পরকাল চিরস্থায়ী।
অথচ গরিব লোকটা সম্পদের পরীক্ষায় খুব সহজেই উত্তীর্ণ হয়ে যাবে যেহেতু তাকে সম্পদের পরীক্ষা প্রায় দিতেই হচ্ছে না। তাই পরকালের জীবন যেটা প্রকৃত জীবন, সেই জীবনে জান্নাত(ইসলাম অনুযায়ী স্বর্গ বা চির সুখের স্থান)-এ যাওয়া একজন গরিব লোকের পক্ষে সহজ। আল্লাহ কোরআনে বলছেন,
.
"দুর্ভোগ এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে (সামনাসামনি) মানুষের নিন্দা করে আর (অসাক্ষাতে) দুর্নাম করে,
.
*যে ধন-সম্পদ জমা করে আর বার বার গণনা করে, সে মনে করে যে, তার ধন-সম্পদ চিরকাল তার সাথে থাকবে,*
.
কক্ষনো না, তাকে অবশ্যই চূর্ণ-বিচূর্ণকারীর মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে,
তুমি কি জান চূর্ণ-বিচূর্ণকারী কী?
*তা আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত আগুন, যা হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।*
(লেলিহান অগ্নিশিখার) উঁচু উঁচু স্তম্ভে।"
.
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ১০৪:১-৯)
.
.
তাই এই জীবনে কেউ সুখে আছে ভাবলে এটা ভাবা ঠিক না যে, সে প্রকৃতপক্ষে সফলকাম।
ধন-সম্পদ, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি, সুস্থতা-অসুস্থতা, মস্তিষ্কের স্মৃতি, মেধা, সাফল্য, ব্যর্থতা, অনুকূল বা প্রতিকূল অবস্থা ইত্যাদি প্রত্যেকটা বিষয়ই কেবল পরকালের জন্য একটা পরীক্ষা মাত্র। সৃষ্টিকর্তা বিভিন্নজনকে বিভিন্ন ভাবে পরীক্ষা করবেন।
.
তবে আবারও একটা প্রশ্ন আসে, 'কেন আমি বাধ্য হলাম এই পরীক্ষার সম্মুখে আসতে?'
.
আল্লাহ তার উত্তর দিচ্ছেন কোরআনে এভাবে,
.
"আমি আসমান, যমীন ও পর্বতের প্রতি (ইসলামের বোঝা বহন করার) আমানাত পেশ করেছিলাম। কিন্তু তারা তা বহন করতে অস্বীকৃতি জানাল, তারা তাতে আশংকিত হল, *কিন্তু মানুষ সে দায়িত্ব নিল। সে বড়ই অন্যায়কারী, বড়ই অজ্ঞ।"*
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ৩৩:৭২)
.
"We did indeed offer the Trust to the Heavens and the Earth and the Mountains; but they refused to undertake it, being afraid thereof: *but man undertook it;- He was indeed unjust and foolish;-"*
(The Noble Quran, 33:72)
.
.
এর অর্থ হল, আমাদের সামনে option দেওয়া হয়েছিল, আর আমরাই এই মনুষ্য জীবন বেছে নিয়েছি। প্রায় অন্যান্য সৃষ্টিগুলো already মুসলিম, অর্থাৎ তারা সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজের ইচ্ছা সমর্পণকারী, (যেহেতু "মুসলিম" শব্দের অর্থ যে নিজের ইচ্ছাকে সৃষ্টিকর্তার নিকট সমর্পণ করে শান্তি অর্জনের জন্য), যেমন, সূর্যের চারদিকে পৃথিবী নির্দিষ্ট মহাকর্ষ সূত্রের নিয়ম মেনে ঘুরছে, এর ব্যতিক্রম নেই, এখানে তাই সূর্য, পৃথিবী already সৃষ্টিকর্তার নিকট আত্মসমর্পণকারী।
একই ভাবে, প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতও সৃষ্টিকর্তার নিকট আত্মসমর্পণকারী।
.
কিন্তু মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি আছে, সে সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ মানতেও পারে, নাও পারে। আর তাই এই স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিকে যাচাই ও বিচার করা প্রয়োজন। যেমন ধরো, কেউ নিজের ইচ্ছাকে কাজে লাগিয়ে কারো মা-কে ধর্ষণ করল। এবার এই ইচ্ছাশক্তির সঠিক যাচাই ও বিচার প্রয়োজন। আর তাই এই জীবনে সে সুযোগ পাবে তার কাজ করার এবং সে যদি তার পাপ এর জন্য ক্ষমা না চায় ও সঠিক পথে ফিরে না আসে, তবে অবশ্যই তার ইচ্ছাশক্তির অপপ্রয়োগের জন্য সে পরকালের চিরস্থায়ী জীবনে কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হবে।
.
আর যদি কেউ সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছার নিকট নিজের ইচ্ছাকে সমর্পণ করে জীবনযাপন করে, তবে পরকালের প্রকৃত জীবনেও সে চির সুখের স্থানে প্রবেশ করবে।
.
কিন্তু মানুষ নিজের ভোগ বিলাসিতার কারণে সত্যকে মেনে নিতে চায় না, আর সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধাচারণ করে, আর তাই আল্লাহ বলছেন যে, *কিন্তু মানুষ সে দায়িত্ব নিল। সে বড়ই অন্যায়কারী, বড়ই অজ্ঞ*
এখানে মানুষ নিজের ইচ্ছায় অন্য সৃষ্টিদের থেকে শ্রেষ্ঠতর হওয়ার জন্য এই মনুষ্য জীবন বেছে নিয়েছে, আর তাই এই জীবনের পরীক্ষার জন্য আমরাই দায়ী, সৃষ্টিকর্তা নন।
.
আর তাই মহান স্রষ্টা ঘোষণা করছেন,
.
*"মানুষ কি মনে করেছে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি(সত্যের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি)’ এ কথা বললেই তাদেরকে অব্যাহতি দেয়া হবে এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবেনা?
আমিতো তাদের পূর্ববর্তীদেরকেও পরীক্ষা করেছিলাম; আল্লাহ অবশ্যই প্রকাশ করে দিবেন কারা সত্যবাদী ও কারা মিথ্যাবাদী।"*
.
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ২৯:২-৩)
.
.
আর তাই পার্থিব জ্ঞান অর্জন ও সাফল্যের ক্ষেত্রে ইসলাম শিক্ষা দেয়, নিজের লক্ষ্যকে সত্যের প্রতি স্থির করতে। যে জ্ঞান অর্জনই হোক না কেন, সেটা যেন ইসলামের পথে চলার জন্য সহায়ক হয়, পার্থিব জগতের ক্ষণস্থায়ী ভোগ বিলাসিতায় ও ভ্রান্ত মতাদর্শের পথে চলার জন্য না হয়, সে বিষয়টা মাথায় রেখে জীবনে অগ্রসর হতে। এতে দুনিয়া ও আখিরাত(পরকাল) উভয় স্থানে আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় সঠিক পথ পাওয়া সম্ভব হয়।
.
.
*প্রবৃত্তির অনুসরণ না করা*
.
পড়াশুনার ক্ষেত্রে মনোনিবেশ এর জন্য নিজের খেয়াল-খুশিকে দমন করা দরকার। যে নির্দেশটি প্রথম নবী মোহাম্মাদ(সা) এর কাছে এসেছিল, সেটা এটা নয় যে তুমি প্রার্থনা করো, এটা নয় যে তুমি সৃষ্টিকর্তার প্রশংসা করো, বরং এটা ছিল, "তুমি পাঠ করো", অর্থাৎ প্রথমে জ্ঞান অর্জন করো।
.
Al-Quran, 96:1
ٱقْرَأْ بِٱسْمِ رَبِّكَ ٱلَّذِى خَلَقَ
.
পাঠ কর তোমার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন,
.
Read! In the Name of your Lord, Who has created (all that exists),
.
.
Al-Quran 96:2
خَلَقَ ٱلْإِنسَٰنَ مِنْ عَلَقٍ
.
সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট-বাঁধা রক্তপিন্ড হতে।
.
Has created man from a clot (a piece of thick coagulated blood).
.
.
Al-Quran 96:3
ٱقْرَأْ وَرَبُّكَ ٱلْأَكْرَمُ
.
পাঠ কর, আর তোমার রব বড়ই অনুগ্রহশীল।
.
Read! And your Lord is the Most Generous,"
.
.
আর তাই এই প্রথম ও আবশ্যকীয় কাজটা সম্পন্ন করতে নিজের খেয়াল-খুশিকে সংযত করা প্রয়োজনীয়। আমাদের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি থাকায় আমাদের মন অনেক দিকে যেতে চায়, আর তাই নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ না করে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টির জন্য নিজ দায়িত্ব সম্পূর্ণ করাই হল ইসলাম ও কোরআন এর শিক্ষা। যে ব্যক্তি সৃষ্টিকর্তার প্রদর্শিত পথ ছেড়ে নিজের খেয়াল-খুশি মত চলে, মহান স্রষ্টা তাকে চার পায়ের প্রাণির থেকেও পথভ্রষ্ট বলেছেন।
.
*"তুমি কি তাকে দেখো না, যে তারা প্রবৃত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে? তবুও কি তুমি তার যিম্মাদার হবে?*
.
*তুমি কি মনে করো যে, তাদের অধিকাংশ শোনে অথবা বোঝে? তারা তো চতুস্পদ জন্তুর মত; বরং আরও পথভ্রান্ত"*
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ২৫:৪৩-৪৪)
.
আর তাই নিজের মন যা চায়, তাই করা ইসলামের দৃষ্টিতে চরম পথভ্রষ্টতা। একারণে পড়াশুনাতেও নিয়মানুবর্তিতা বজায় রাখা, যেটা যুক্তিপূর্ণ এবং প্রকৃতপক্ষে কল্যাণকর সেটাকে নিজের খেয়াল-খুশির ওপর প্রাধান্য দেওয়াই হল এই ক্ষেত্রে কোরআন এর শিক্ষা।
.
.
.
*অবৈধ যৌন আনন্দ হতে দূরে থাকা*
.
এটা উপরের পয়েন্টের মধ্যেই চলে আসে, কিন্তু তবুও এই বিষয়টা এতই important যে, এটাকে আলাদাভাবে বলাই ভালো।
.
ইসলাম মোক্ষলাভে সমর্থন করে না বলে প্রাকৃতিক জীবনযাপনের পথ দেখায়। আর তাই ইসলামে বৈরাগ্য, সন্ন্যাস, গৃহে থেকে সন্ন্যাস জীবন, মাংস ভক্ষণ হতে দূরে থাকা ইত্যাদি নিয়ম অর্থহীন।
.
ইসলাম শিক্ষা দেয় উত্তম ও পরিমিত খাদ্য গ্রহণ করতে(যদিও আজ অনেক মুসলিম এই নিয়মকে যথাযথ ভাবে পালন করছে না, এর জন্য তারা নিজেরা দায়ী, ইসলাম নয়)।
.
নবীজী মোহাম্মদ(সা) বলেছেন পরিমিত আহার করতে। এই কথাটার তথ্যসূত্র নিচে দিলাম।
.
গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৭০/ খাওয়া সংক্রান্ত (كتاب الأطعمة)
হাদিস নম্বরঃ ৫৩৯৬
.
৫৩৯৬. আবূ হুরাইরাহ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
.
*মু’মিন(সত্য বিশ্বাসী) এক পেটে খায় আর কাফির(সত্য প্রত্যাখানকারী) সাত পেটে খায়।*[1]
.
[৫৩৯৭; মুসলিম ৩৬/৩৫, হাঃ ২০৬২, ২০৬৩, আহমাদ ৭৭৭৭] আধুনিক প্রকাশনী- ৪৯৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৯১)
[1] বর্তমানে বারবার একথার উপর জোর দেয়া হচ্ছে যে, *কম আহার করুন বেশী দিন বাঁচতে পারবেন।* আর জনসাধারণকে বারবার একথার উপকারিতা বর্ণনা করা হচ্ছে। বেশী খেলে যে সকল রোগ ব্যাধি সৃষ্টি হয় তার একটি তালিকা প্রণয়ন করেছেন প্রফেসার রিচার বার্ড। নিম্নে তা দেয়া হলঃ ১। মস্তিকের ব্যাধি। ২। চক্ষু রোগ। ৩। জিহবা ও গলার রোগ। ৪। বক্ষ ও ফুসফুসের ব্যাধি। ৫। হৃদ রোগ। ৬। যকৃত ও পিত্তের রোগ। ৭। ডায়াবেটিস। ৮। উচ্চ রক্ত চাপ। ৯। মস্তিস্কের শিরা ফেটে যাওয়া। ১০। দুশ্চিন্তাগ্রস্ততা। ১১। অর্ধাঙ্গ রোগ। ১২। মনস্তাত্ত্বিক রোগ। ১৩। দেহের নিম্নাংশ অবশ হয়ে যাওয়া। ‘‘সান’’ উইকলি সুইডেন) গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে যে, এই তালিকা প্রকৃত পক্ষে মৃত্যুর তালিকা, যা প্রফেসার সাহেব গভীর চিন্তা ও গবেষণার পর প্রকাশ করেছেন।
.
কিন্তু অপর দিকে *নাবী ﷺ এর বর্ণনার প্রতি দৃষ্টিপাত করুন। নাবী ﷺ বলেন পেটের এক তৃতীয়াংশ ভাগ আহারের জন্য, এক তৃতীয়াংশ ভাগ পানির জন্য আর এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য।*[হাদীসটি ইবনু মাজাহ্ বর্ণনা করেছেন, হাদীসটি সহীহ্, ‘‘সহীহ্ ইবনু মাজাহ্’’ ৩৩৪৯)]।
.
একজন দার্শনিকের নিকট যখন রসূলের এ নির্দেশ শুনান হল তখন সে বলতে লাগল, এর চেয়ে উত্তম ও শক্তিশালী কথা আমি আজ পর্যন্ত শ্রবণ করিনি। পেটের এক তৃতীয়াংশ পানির দিয়ে পূর্ণ করতে বলার কারণ, পানির মধ্যেও বহুবিধ উপকারিতা রয়েছে পানির উপকারিতা নিম্নরূপঃ * শরীরে পানির অভাব পুরণ করা, * রক্তের তরলতা বজায় রাখা, * শরীর হতে অপ্রয়োজনীয় দুষিত জিনিষ নির্গত করতে সাহায্য করা, * খাদ্য দ্রব্য হজম করতে সাহায্য করা, * শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা, * শরীরের অম্ল-ক্ষরের স্বাভাবিকতা ঠিক রাখা, * হরমোন তৈরি করতে অনেক ক্ষেত্রে সাহায্য করা।
.
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
.
Source of this refrence:
http://www.hadithbd.com/share.php?hid=29969
.
.
আবার উত্তম খাদ্য গ্রহণ করতে বলা হয়েছে, ইসলামে ভারতীয় দর্শনের মত সাত্ত্বিক আহার, রাজসিক আহার, তামসিক আহার এর কথা বলা হয় নি, এর কারণ হল ইসলাম এসেছে পুরো পৃথিবীর মানুষকে পথ দেখাতে। সৃষ্টির শুরু থেকে মানব জাতিকে দেওয়া যে নির্দেশ এর বিকৃতি মানুষ নিজেই করেছে সেই বিকৃতি ও ভ্রান্তি থেকে মানুষকে সত্যের সন্ধান দিতে। আর তাইতো ইসলাম ভারতীয় দর্শন বা অন্য কোনো মতবাদের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের খাদ্যাভাস, জীবনযাত্রা বিভিন্ন রকম, আর তাই ইসলাম মানুষকে বিধি নিষেধ এর সীমা উল্লেখ করে দিয়ে নিজস্ব বিচার বুদ্ধি দ্বারা বিবেচনা করার জন্য উৎসাহিত করেছে। খাদ্যের নির্দেশের ক্ষেত্রে আল্লাহ ঘোষণা করছেন,
.
*"লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে তাদের জন্য কী কী হালাল(অনুমোদন) করা হয়েছে। বল, যাবতীয় ভাল ও পবিত্র বস্তু তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে......"*
(আল-কোরআন, ৫:৪)
.
*"আজ তোমাদের জন্য যাবতীয় ভাল ও পবিত্র বস্তু হালাল করা হল আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের খাদ্য তোমাদের জন্য হালাল, আর তোমাদের খাদ্য তাদের জন্য হালাল....."*
(আল-কোরআন, ৫:৫)
.
.
খাদ্য ও তা গ্রহণের আরও অনেক রকম নিয়ম আছে ইসলামে, যদি কেউ সঠিকভাবে মেনে চলে, তবে ইন শা আল্লাহ(আল্লাহ্র ইচ্ছায়) সে উত্তম ভাবে জীবন যাপন করতে পারবে।
.
কিন্তু কেউ আমিষ খাক কিংবা নিরামিষ, একজন সুস্থ দেহের সক্ষম মানুষের হরমোনের ক্রিয়া থাকেই যেটা বিবেকানন্দও অস্বীকার করেন নি। আর তাই শারীরিক বৃদ্ধির সাথে ক্রিয়াশীল যৌন হরমোনের প্রভাবে মানুষের যৌন চাহিদা জাগ্রত হয় আর মনে সৃষ্টি হয় বিপরীত লিঙ্গের প্রতি প্রকৃতিসুলভ কামনা। এই কামনার পিছনে ছুটে বেড়ালে পড়াশুনায় মনোযোগ আসে না, তাই ইসলাম বিবাহকে ফরজ(বাধ্যতামূলক) করেছে। শারীরিক, মানসিক, আর্থিক ইত্যাদি সব দিক দিয়ে সক্ষমতা থাকলে অর্থাৎ যদি কেউ সব দিক দিয়ে সক্ষম ও পরিপক্ব(mature) হয়, তবে শিক্ষাজীবনেই সে সুনির্দিষ্ট ইসলামিক নিয়মে বিবাহ করতে পারে।
ইসলাম বিবাহ বহির্ভূত প্রেম ও শারীরিক সম্পর্ক কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ করেছে, ভারতীয় দর্শনের মত ইসলাম ব্যভিচার, পরকিয়া, পতিতাবৃত্তি সহ্যের পথকে সমর্থন করে নি। যদি বিবাহ এর অনুকূল পরিবেশ তৈরি না হয়, সেক্ষেত্রে সংযম অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।
নবীজী বিবাহ না করতে পারলে যুবকদের সওম বা রোজা পালন(ইসলামিক নিয়মে খাদ্যগ্রহণ, কামনা-বাসনা প্রভৃতিতে সংযম অবলম্বন) করতে বলেছেন।
.
.
গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬৭/ বিয়ে (كتاب النكاح)
হাদিস নম্বরঃ ৫০৬৬
.
৬৭/৩. বিয়ে করার যার সামর্থ্য নেই, সে সওম পালন করবে।
.
৫০৬৬. ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন,নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আমরা কতক যুবক ছিলাম; আর আমাদের কোন কিছু ছিল না। এই হালতে আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
.
*হে যুব সম্প্রদায় [1]! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, তারা যেন বিয়ে করে। কেননা, বিয়ে তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থান হিফাযত করে এবং যার বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, সে যেন সওম পালন করে। কেননা, সওম তার যৌনতাকে দমন করবে।*
.
[১৯০৫](আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৯৬)
.
[1] হাদীসে ‘যুব সম্প্রদায়’ কাদের বলা হয়েছে, এ সম্পর্কে ইমাম নাবাবী লিখেছেন- আমাদের লোকেদের মতে যুবক-যুবতী বলতে তাদেরকে বোঝানো হয়েছে যারা বালেগ [পূর্ণ বয়স্ক] হয়েছে এবং ত্রিশ বছর বয়স পার হয়ে যায়নি। আর এ যুবক-যুবতীদের বিয়ের জন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকীদ করলেন কেন, তার কারণ সম্পর্কে আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী তার বিশ্ববিখ্যাত বুখারীর ভাষ্য গ্রন্থ ‘‘উমদাতুল ক্বারী’’ গ্রন্থে লিখেছেনঃ ‘‘হাদীসে কেবলমাত্র যুবক-যুবতীদের বিয়ে করতে বলার কারণ এই যে, বুড়োদের অপেক্ষা এ বয়সের লোকেদের মধ্যেই বিয়ে করার প্রবণতা ও দাবী অনেক বেশী বর্তমান দেখা যায়। যুবক-যুবতীদের বিয়ে যৌন সম্ভোগের পক্ষে খুবই স্বাদপূর্ণ হয়। মুখের গন্ধ খুবই মিষ্টি হয়, দাম্পত্য জীবন যাপন খুবই সুখকর হয়, পারস্পরিক কথাবার্তা খুব আনন্দদায়ক হয়, দেখতে খুবই সৌন্দর্যমন্ডিত হয়, স্পর্শ খুব আরামদায়ক হয় এবং স্বামী বা স্ত্রী তার জুড়ির চরিত্রে এমন কতগুলো গুণ সৃষ্টি করতে পারে যা খুবই পছন্দনীয় হয়, আর এ বয়সের দাম্পত্য ব্যাপার প্রায়ই গোপন রাখা ভাল লাগে। যুবক বয়স যেহেতু যৌন সম্ভোগের জন্য মানুষকে উন্মুখ করে দেয়। এ কারণে তার দৃষ্টি যে কোন মেয়ের দিকে আকৃষ্ট হতে পারে এবং সে যৌন উচ্ছৃঙ্খলতায় পড়ে যেতে পারে। এজন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বয়সের ছেলেমেয়েকে বিয়ে করতে তাকীদ করেছেন এবং বলেছেনঃ বিয়ে করলে চোখ যৌন সুখের সন্ধানে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াবে না এবং বাহ্যত তার কোন ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। এ কারণে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদিও কথা শুরু করেছেন যুবক মাত্রকেই সম্বোধন করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিয়ের এ তাকীদকে নির্দিষ্ট করেছেন কেবল এমন সব যুবক-যুবতীদের জন্য যাদের বিয়ের সামর্থ্য আছে। আর যারা বিয়ের ব্যয় বহনের সঙ্গতি রাখে না তারা সওম পালন করবে। সওম পালন তাদের যৌন উত্তেজনা দমন করবে। কারণ পানাহারের মাত্রা কম হলে যৌন চাহিদা প্রদমিত হয়।
.
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
Source of the refrence:
http://www.hadithbd.com/share.php?hid=29590
.
.
.
কারও পরিস্থিতি যদি বিয়ে বা সওম কোনোটা পালনের উপযুক্ত না হয়, তবে সে হিজাব পালন করবে যেটা বিবাহিত-অবিবাহিত সবার জন্য পালন করা বাধ্যতামূলক।
.
এক কথায় হিজাব হল নিজেকে বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ ভাবে মার্জিত ও সভ্য করার উপায়।
.
ভালো চিন্তা, ভালো আচরণ, মার্জিত ভাবে কথা বলা, চলাফেরা ইত্যাদি সবই হিজাবের অংশ। তবে হিজাবের সবচেয়ে বড় দিক হল নিজের সৌন্দর্যকে সংযত করা। আর তাই ইসলাম নারী পুরুষের অবাধে মেলামেশার অনুমতি দেয় নি। ইসলাম পরস্পর অবিবাহিত 'গায়েরে মাহারাম'(যাকে কোনো না কোনো ভাবে বিয়ে করা যায়) নারী পুরুষ এর অবাধ মেলামেশা ও পরস্পরকে স্পর্শ করা নিষিদ্ধ করেছে।
.
এছাড়া হিজাবের বড় একটি বিষয় হল পোশাক। গায়েরে মাহারাম ছেলে মেয়ে, নারী পুরুষ নিজেদেরকে পরস্পরের সামনে সাজিয়ে প্রদর্শন করতে পারবে না কেননা এতে অপবিত্র আকর্ষণ জন্মায়।
.
পোশাক দিয়ে সারা দেহ ঢাকতে হবে। টাইট পোশাক, পাতলা পোশাক যেগুলো পরলে শারীরিক কাঠামো দেখা বা বোঝা যায়; আকর্ষণীয় পোশাক যা বিপরীত লিঙ্গকে আকৃষ্ট করে; ছোট পোশাক যা দেহের আকর্ষণীয় অংশকে প্রকাশ করে; পোশাক যা বিপরীত লিঙ্গের পোশাকের মত, পোশাক যেটাতে অমুসলিমদের প্রতীক বা চিহ্ন আছে ইত্যাদি পোশাক পরার অনুমতি সাধারণ ভাবে নেই।
.
এছাড়াও গান, বাজনা এর অনুমতি ইসলামে নেই, এতে অশালীন প্রেমের কথা থাকে আর থাকে পার্থিব মোহযুক্ত আনন্দ অথবা মিথ্যা উপাস্যের প্রশংসা। এর স্থলে ইসলাম মানুষকে দেখিয়েছে সুরেলা কোরআন এর বাণীর তেলওয়াত(Recitation of Quranic Verses), বাদ্যযন্ত্র ব্যতীত অপূর্ব ইসলামিক নাশিদ, ৫ ওয়াক্ত সালাত(৫ বার বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ ভাবে সৃষ্টিকর্তার নিকট নিজেকে সমর্পণ করা, তাঁর প্রশংসা করা, প্রার্থনা করা, সাহায্য চাওয়া ইত্যাদি সকল বিষয় একই সাথে সম্পন্ন করার পদ্ধতি) যেগুলো কামনা বাসনা দমন করে অন্তরে সৃষ্টিকর্তার চিন্তা আনে।
.
যদি কোনো গায়েরে মাহারাম এর দিকে ভুল করে দৃষ্টি যায়, তবে সাথে সাথে দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে। জেনে শুনে তাকানো একেবারেই হারাম(নিষিদ্ধ)। আর তাই পর্ণগ্রাফি দেখাও হারাম।
.
মহান স্রষ্টা ঘোষণা করছেন,
.
Al-Quran 24:30
.
قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا۟ مِنْ أَبْصَٰرِهِمْ وَيَحْفَظُوا۟ فُرُوجَهُمْۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْۗ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرٌۢ بِمَا يَصْنَعُونَ
.
*মু’মিনদের(সত্য বিশ্বাসী পুরুষদের) বলো তাদের দৃষ্টি অবনমিত করতে আর তাদের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করতে,* এটাই তাদের জন্য বেশি পবিত্র, তারা যা কিছু করে সে সম্পর্কে আল্লাহ খুব ভালভাবেই অবগত।
.
.
Al-Quran 24:31
.
وَقُل لِّلْمُؤْمِنَٰتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَٰرِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَاۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ ءَابَآئِهِنَّ أَوْ ءَابَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَآئِهِنَّ أَوْ أَبْنَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَٰنِهِنَّ أَوْ بَنِىٓ إِخْوَٰنِهِنَّ أَوْ بَنِىٓ أَخَوَٰتِهِنَّ أَوْ نِسَآئِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَٰنُهُنَّ أَوِ ٱلتَّٰبِعِينَ غَيْرِ أُو۟لِى ٱلْإِرْبَةِ مِنَ ٱلرِّجَالِ أَوِ ٱلطِّفْلِ ٱلَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا۟ عَلَىٰ عَوْرَٰتِ ٱلنِّسَآءِۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّۚ وَتُوبُوٓا۟ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
.
আর *ঈমানদার(সত্য বিশ্বাসী) নারীদেরকে* বলে দাও তাদের দৃষ্টি অবনমিত করতে আর তাদের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করতে, আর *তাদের শোভা সৌন্দর্য প্রকাশ না করতে যা এমনিতেই প্রকাশিত হয় তা ব্যতীত। তাদের ঘাড় ও বুক যেন মাথার কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়।*
.
তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভাই-এর ছেলে, বোনের ছেলে, নিজেদের মহিলাগণ, স্বীয় মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনামুক্ত পুরুষ আর নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া অন্যের কাছে নিজেদের শোভা সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।
.
*আর তারা যেন নিজেদের গোপন শোভা সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে।*
হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবাহ(ক্ষমা প্রার্থনা) করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।"
.
.
এভাবে ইসলাম বিভিন্ন উপায়ে অবৈধ যৌনাচার থেকে দূরে থাকার প্রাকৃতিক ও সহজ পথ মানবজাতির সামনে তুলে ধরছে।
.
মহান সৃষ্টিকর্তা তাই ঘোষণা করছেন,
.
Al-Quran17:32
.
وَلَا تَقْرَبُوا۟ ٱلزِّنَىٰٓۖ إِنَّهُۥ كَانَ فَٰحِشَةً وَسَآءَ سَبِيلًا
.
তোমরা অবৈধ যৌন সংযোগের *নিকটবর্তী হয়ো না* (কেবল অবৈধ যৌনাচারই নয়, বরং যে সকল কাজ এসবের নিকটবর্তী করে, যেমন নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, নারী ও পুরুষের অবৈধ পথে সৌন্দর্য প্রদর্শন ইত্যাদিও হারাম),
ওটা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ।"
.
.
আর এভাবে নিজের যৌন লালসাকে ভুল পথে পরিচালিত হতে বিরত রাখতে পারলে পড়াশুনা ও অন্য সকল কাজেই মনোযোগ আসবে ইন শা আল্লাহ।
.
.
আপাতত এই বিষয়গুলোই বললাম। আরও অনেক বিষয় হয়ত বলা যেত, তবে এগুলোই হয়ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
.
এগুলোতে আল্লাহ এর রহমতে অন্যান্য কিছু বিষয় বলার চেষ্টা করেছি। নবীজী বলেছেন যে, প্রত্যেকটা শিশু দীন-উল-ফিতর নিয়ে জন্মায়।
অর্থাৎ যখন সে জন্মায়, তখন সে মুসলিম বা সৃষ্টিকর্তার নিকট নিজের ইচ্ছা সমর্পণকারী হয়ে জন্মায়। কিন্তু পরবর্তীতে পরিবেশের কারণে সে বাধ্য হয় সত্য সৃষ্টিকর্তাকে ছেড়ে মিথ্যা উপাস্যের উপাসনা করতে, আর তাই যখন কেউ ইসলামের সত্যের পথে ফিরে আসে, তখন প্রকৃতপক্ষে সে স্বধর্মেই প্রত্যাবর্তন করে, তাই একে আমরা "Converted" বলি না, আমরা একে বলি "Reverted"।
.
.
এই লেখাটা পড়ে অনেক প্রশ্ন আসতে পারে, তোমার প্রশ্নের অপেক্ষায় রইলাম। আমার ভুল ত্রুটির জন্য আল্লাহ ক্ষমা করুন এবং আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আমিন।
.
.
Al-Quran 41:53
.
سَنُرِيهِمْ ءَايَٰتِنَا فِى ٱلْءَافَاقِ وَفِىٓ أَنفُسِهِمْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُ ٱلْحَقُّۗ أَوَلَمْ يَكْفِ بِرَبِّكَ أَنَّهُۥ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍ شَهِيدٌ
.
"আমি শীঘ্র তাদের জন্য আমার নিদর্শনাবলী ব্যক্ত করব বিশ্বজগতে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে। ফলে তাদের নিকট সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে যে ওটাই সত্য। এটা কি যথেষ্ট নয় যে, তোমার প্রতিপালক সর্ব বিষয়ে অবহিত?"
.
"Soon will We show them our Signs in the (furthest) regions (of the earth), and in their own souls, until it becomes manifest to them that this is the Truth. Is it not enough that thy Lord doth witness all things?"
.
.
(উল্লেখ্য যে, এই মেসেজটি পাঠানোর পর আমায় আর কোনো মেসেজ সেই ভাইটি আর পাঠায় নি ; তাই আমি ধরে নিয়েছিলাম যে, আমার উত্তরটি তার প্রশ্নের জবাবে যথেষ্ট ছিল ইন শা আল্লাহ।)
.
.
আহমেদ আলি সিরিজ/বেদান্ত দর্শন বনাম ইসলাম - এক হিন্দু ভাই এর সাথে কথোপকথন (পর্ব ১)
Comments
Post a Comment