১) আল্লাহর হুকুম:
.
"নারীদের মধ্যে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ নারীগণ তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ..."[১]
.
যেহেতু আল্লাহ তাআলা সধবা নারীদের বিবাহ করা হারাম করেছেন, তাই নারীদের জন্য একাধিক বিবাহ করা ইসলামে হারাম।
.
.
২) নারীর যৌনতায় জটিলতা:
.
একজন নারী একাধিক স্বামী বিবাহ করলে একাধিক পুরুষের সাথে যৌন সম্পর্কে স্বাভাবিকভাবে নারীর যৌন দুর্বলতা তৈরি হতে পারে। তাছাড়া একাধিক পুরুষের বীর্য জরায়ুতে সরাসরি গমনের ফলে তা থেকে নানাবিধ যৌন রোগ সৃষ্টির সম্ভাবনাও তুলনামূলকভাবে একটু বেশি।
.
শাইখ সাদ আল-হুমাইদ বলেন:
"...আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে সাব্যস্ত হয়েছে, এইডসের মত দুরারোগ্য ব্যাধিগুলোর প্রধান কারণ হচ্ছে - কোন নারীর একাধিক পুরুষের সাথে মিলিত হওয়া। নারীর গর্ভাশয়ে বহু রকমের বীর্য একত্রিত হওয়ার ফলে এ ধরনের দুরারোগ্য রোগের কারণ ঘটে। এ কারণেই তো আল্লাহ তাআলা তালাক প্রাপ্ত নারী বা যে নারীর স্বামী মারা গিয়েছে তার উপর ইদ্দত পালন করা ফরজ করেছেন। যাতে করে কিছুকাল এভাবে (সঙ্গমহীন) থাকার মাধ্যমে তার গর্ভাশয় ও এর আশপাশের স্থানগুলো আগের স্বামীর বীর্য ও সঙ্গমের আলামত থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হয়ে যায়।"[২]
.
.
৩) DNA টেস্টে জটিলতা:
.
আজ DNA পরীক্ষার মাধ্যমে সন্তানের পিতা চিহ্নিতকরণ সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এই পদ্ধতি সবক্ষেত্রেই প্রয়োগ সম্ভবপর নাও হতে পারে। অনেকেই আছে যারা এই মেডিক্যাল টেস্ট সম্পর্কে জানে না, আর এমন অনেক স্থানও আছে যেখানে এই টেস্ট করার সুযোগ আর সামর্থ্য সাধারণ লোকজনের নেই। তাই বহু পতী গ্রহণে নারীর জন্ম দেওয়া সন্তানের পিতৃপরিচয় নির্ধারণ করা অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যাযুক্ত হয়ে উঠতে পারে।
.
.
৪) সন্তানের নিকট পিতৃপরিচয়ের মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা:
.
DNA বা অন্য কোনোভাবে পিতৃপরিচয় নির্ণয় করা গেলেও তা সন্তানকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে সন্তুষ্ট নাও করতে পারে। একজন সন্তান ছোটবেলা থেকে মায়ের কাছে লালিত-পালিত হলে সন্তান মনস্তাত্ত্বিকভাবে সন্তুষ্ট হয় এবং তার প্রকৃত মা-কে চিহ্নিত করতে পারে। কিন্তু একজন পিতা সেভাবে একজন সন্তানকে লালন-পালন করতে পারে না, যেভাব সন্তানের মা সন্তানকে লালন-পালন করে থাকে। তাই একজন নারীর একাধিক স্বামী থাকলে জন্ম নেওয়া সন্তান তার প্রকৃত পিতাকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে চিহ্নিত করতে এবং মেনে নিতে পারে না, যা শিশুর সুস্থ মানসিক চিন্তায় জটিলতা ও ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে।
.
.
৫) স্ত্রীর নির্দিষ্ট স্থিতিতে জটিলতা:
.
একজন স্ত্রীর একাধিক স্বামী থাকলে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে সে কোন স্বামীর গৃহে থাকবে? ইসলাম অনুযায়ী পুরুষ হল গৃহের কর্তা আর তাই গৃহের সকলের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব গ্রহণ করা পুরুষের জন্য বাধ্যতামূলক। এখন একজন নারীর একাধিক স্বামী থাকলে তার কোন স্বামীর গৃহে অবস্থান সুনির্দিষ্ট হবে, এটা নির্ণয় করা জটিল হয়ে পড়ে। ফলস্বরূপ, এক স্বামীর গৃহে অবস্থান করলে অন্য স্বামীর সাথে সঠিকভাবে সংসার করা তার জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। যদি সকল স্বামী এক স্ত্রীর সাথে একই গৃহে বসবাস করে, তবে পরিবারের কর্তা কে - তা নির্ণয়ে জটিলতা ও কলহ তৈরি হবে এবং সংসারের স্থিতি ব্যাহত হবে।
.
.
৬) পুরুষের চাহিদার অপূর্ণতা:
.
যদি একজন নারী একাধিক পুরুষকে বিয়ে করে, তবে সেই নারীর মাসিক আর গর্ভাবস্থার সময় তার স্বামীদের শারীরিক চাহিদা সঠিকভাবে পূর্ণ করতে ব্যর্থ হবে। ফলে স্বামীদের অন্য নারীদের কাছে তাদের চাহিদা মেটানোর জন্য যেতে হবে। এখন যদি অন্য নারীরা উক্ত স্বামীদের অন্য বিবাহিত স্ত্রী হয়, তাহলে সেক্ষেত্রেও কোন স্ত্রীর স্থিতি কোন স্বামীর গৃহে হবে এবং কীভাবে সংসারেও স্থিতি আসবে, তা নির্ণয় করা জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠবে।
.
আর নারীর একাধিক স্বামীরা যে অন্য নারীদের কাছে চাহিদা মেটাতে যাবে, তারা যদি সেই সকল উক্ত স্বামীদের সাথে বিবাহিত না হয়, তাহলে তা ব্যভিচারে পরিণত হবে, আর ব্যভিচারের ফলে সমাজ ও সংসারের নারী-পুরুষের মধ্যে সুস্থ সম্পর্ক বিনষ্ট হবে। বিবাহ বহির্ভূত নারীর সাথে সম্পর্কের কারণে বিবাহিত স্ত্রীর তার স্বামীদের প্রতি আস্থা, সম্মান ও ভালবাসা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ব্যভিচারে জন্ম নেওয়া সন্তান জারজ হিসেবে সমাজে অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। সন্তান জন্ম না দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে ক্রমাগত ব্যভিচার করতে থাকলে সমাজ থেকে শিশু সঠিকভাবে সঠিক পরিবেশে পালিত হবে না, ফলে উপযুক্ত পরিমাণ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সমাজবিজ্ঞানী, গবেষক প্রমুখ বুদ্ধিজীবী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকবে এবং সমাজে ভাঙন দেখা দেবে।
.
শাইখ সাদ আল-হুমাইদ আরও বলেন:
.
"আল্লাহ তাআলা নারীকে গর্ভ ধারণের জন্য সৃষ্টি করেছেন। পুরুষ গর্ভধারণ করে না। সুতরাং কোন নারী যদি (একাধিক পুরুষের সহবাসের পর) গর্ভধারণ করে তাহলে সন্তানের পিতৃ পরিচয় জানা যাবে না। এতে করে বংশধারায় তালগোল লেগে যাবে, পরিবারগুলো ভেঙ্গে পড়বে, শিশুরা বাস্তুহারা হয়ে পড়বে এবং নারী তার সন্তানাদি লালনপালন ও ভরণপোষণের ভার বইতে না পেরে ভেঙ্গে পড়বে। এভাবে এক পর্যায়ে নারীরা স্থায়ী বন্ধ্যাত্বও গ্রহণ করতে পারে। যার ফলে মানব বংশ বিলীন হয়ে যাবে।"[৩]
.
আল্লাহই ভালো জানেন।
.
________________________
তথ্যসূত্র:
[১] আল-কোরআন, ৪:২৪
[২] গ্রন্থঃ ইসলাম কিউ এ ফতোয়া সমগ্র/অধ্যায়ঃ পারিবারিক ফিকাহ/উৎস - http://www.hadithbd.com/shareqa.php?qa=2346
[৩] গ্রন্থঃ ইসলাম কিউ এ ফতোয়া সমগ্র/অধ্যায়ঃ পারিবারিক ফিকাহ/উৎস - http://www.hadithbd.com/shareqa.php?qa=2346
======================
- আহমেদ আলি
Comments
Post a Comment