Skip to main content

♦ মূর্তিপূজার যুক্তিখণ্ডন!!!


[বি:দ্র: এই লেখাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের কাউকে নিন্দা বা অপমান করার জন্য নয়। বরং কেবলই ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কেন আমরা মূর্তিপূজা অস্বীকার করি - সেই বিষয়টিই এখানে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। যদি কেউ আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে একমত না হন, তবে এটি তার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার - তিনি কোন মতপথটি বেছে নেবেন; কেননা ইসলাম গ্রহণে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই। কোরআন বলছে:
.
"দ্বীন (ইসলাম) গ্রহণের ব্যাপারে কোন জোর-জবরদস্তি নেই। নিশ্চয় সুপথ প্রকাশ্যভাবে কুপথ থেকে পৃথক হয়েছে..." (আল-কোরআন, ২:২৫৬)
.
এরপরও যদি কেউ আমাদের লেখায় কোনোরূপ আঘাত পেয়ে থাকেন, তবে তার জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী, কেননা তা একান্তই অনিচ্ছাকৃত।]
.
.
♦ হিন্দু দর্শনে মূর্তিপূজার সংক্ষিপ্ত পরিচয়:
.
হিন্দু দর্শনে মূর্তিপূজা হল এক ধরণের সাকার উপাসনা। খুব সংক্ষেপে এর মূল তত্ত্বটি হল, ঈশ্বরের আধ্যাত্মিক দেহের মধ্যে সবকিছু অবস্থিত।[১] কিন্তু তবুও ঈশ্বরকে পরিপূর্ণরূপে জানা, বোঝা ইত্যাদি সম্ভব নয় বিধায় ঈশ্বরের অংশবিশেষ (সৃষ্টির) কোনো একটি সাকার রূপের ওপর মনোনিবেশ করে ধীরে ধীরে মনঃসংযোগ ও অনেকগুলি ধাপ অতিক্রমের মাধ্যমে এক পর্যায়ে জড়জগতের সমস্ত রকম আসক্তি হতে মুক্তি লাভ করে ঈশ্বরের সাথে এক হয়ে যাওয়া যায় - এই ধারণায় বিশ্বাস করা হয়; যাকে হিন্দু দর্শনে "মোক্ষলাভ" বলা হয়েছে। তবে উল্লেখ্য যে, বৈদিক শাস্ত্রে সরাসরি মূর্তিপূজার নির্দেশ দেওয়া নেই, আবার সরাসরি নিষেধও করা নেই। তাই এই ব্যাপারটি উহ্য থাকায় মূর্তিপূজা হিন্দু দর্শনের একটি ঐচ্ছিক কর্ম। একারণে অনেকে মূর্তিপূজা না করে সরাসরি ধ্যান, যোগসাধনা ইত্যাদির মাধ্যমেও ঈশ্বরের প্রতি মনোনিবেশের চেষ্টা করে থাকেন। এজন্য ভগবতগীতাতে সাকার ও নিরাকার উভয় ধরণেরই উপাসনা পদ্ধতির স্বপক্ষে বলা হচ্ছে:
.
"যে যেরূপে আমার ভজনা করে, আমি সেভাবেই তাকে কৃপা করি। মনুষ্যগণ সর্বতভাবে আমারই পথ অনুসরণ করে চলেছে।"[২]
.
.
♦ কেন আমরা মূর্তিপূজা স্বীকার করি না?:
.
আমরা কয়েকটি পয়েন্টে এর উত্তর দেওয়ার এবং ইসলামের সাথে হিন্দু দর্শনের পার্থক্যও কিছুটা দেখানোর চেষ্টা করবো।
.
.
i. আল্লাহর হুকুম:
.
যেহেতু কোরআনে আল্লাহ তাআলা আমাদের হুকুম দিয়েছেন মূর্তিপূজা পরিত্যাগ করতে, তাই ইসলামে মূর্তিপূজা আমাদের জন্য নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলছেন:
.
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِنَّمَا ٱلْخَمْرُ وَٱلْمَيْسِرُ وَٱلْأَنصَابُ وَٱلْأَزْلَٰمُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ ٱلشَّيْطَٰنِ فَٱجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
.
"হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণয় করার শর তো কেবল ঘৃণার বস্তু, শয়তানের কাজ। কাজেই তোমরা সেগুলোকে বর্জন করো – যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।"[৩]
.
.
ii. আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি হতে সম্পূর্ণ পৃথক:
.
ভগবতগীতা বলছে,
"হে পান্ডব, এইভাবে তত্ত্বজ্ঞান লাভ করে তুমি আর মোহগ্রস্ত হবে না, যখন জানবে সমস্ত জীবই আমার বিভিন্ন অংশ এবং তারা সকলেই আমাতে অবস্থিত এবং তারা সকলেই আমার।"[৪]
.
অর্থাৎ হিন্দু দর্শন অনুযায়ী সমস্ত সৃষ্টি ঈশ্বরের অংশ বা, অন্যভাবে বললে সমস্ত জগৎ ঈশ্বরের দেহের মধ্যে অবস্থিত, যা পূর্বেই বলা হয়েছে। আর তাই সৃষ্টির কোনো অংশকে ঈশ্বরের সাকার রূপ বিবেচনা করা হয় বিধায় মূর্তিপূজাও এই ধরণের উপাসনার আওতাভুক্ত।
ঠিক এখানেই এই বিষয়টির ওপর আল্লাহ তাআলা ঘোষণা দিচ্ছেন যে, তিনি সমস্ত সৃষ্টি হতে সম্পূর্ণ পৃথক এবং সৃষ্টির শেষ প্রান্ত হল আল্লাহর আরশ যার উর্ধ্বে আল্লাহ তাআলা বিরাজমান। আল্লাহ তাআলা বলেন,
.
ٱللَّهُ ٱلَّذِى رَفَعَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَاۖ ثُمَّ ٱسْتَوَىٰ عَلَى ٱلْعَرْشِۖ وَسَخَّرَ ٱلشَّمْسَ وَٱلْقَمَرَۖ كُلٌّ يَجْرِى لِأَجَلٍ مُّسَمًّىۚ يُدَبِّرُ ٱلْأَمْرَ يُفَصِّلُ ٱلْءَايَٰتِ لَعَلَّكُم بِلِقَآءِ رَبِّكُمْ تُوقِنُونَ
.
"আল্লাহ, যিনি উর্ধ্বদেশে স্থাপন করেছেন আকাশমন্ডলীকে স্তম্ভ ব্যতীত; তোমরা সেগুলো দেখ। অতঃপর তিনি আরশের উপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে কর্মে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকে নির্দিষ্ট সময় মোতাবেক আবর্তন করে। তিনি সকল বিষয় পরিচালনা করেন, নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা স্বীয় পালনকর্তার সাথে সাক্ষাত সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাসী হও।"[৫]
.
গাছের কাঠ থেকে চেয়ার তৈরি করা যেমন মহাবিশ্বে কোনো নতুন সৃষ্টি নয়, বরং এটি কেবল গাছের কাঠের একটি রূপান্তর; একইভাবে ঈশ্বর নিজের অংশ থেকে জগৎ তৈরি করলেও একে কোনো নতুন সৃষ্টি বলা যায় না, কেননা এটিও ঈশ্বরের নিজের অংশের রূপান্তর মাত্র! তাই প্রকৃত অর্থে সৃষ্টি হতে হলে একেবারে শুন্য থেকে বা out of nothing থেকে কোনো কিছু সৃষ্টি হতে হবে। আর এর জন্য সৃষ্টিকর্তাকেও সৃষ্টি হতে সম্পূর্ণ পৃথক হতে হবে। সুতরাং আল্লাহ তাআলাই হলেন প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা যিনি তাঁর সমস্ত সৃষ্টি হতে পৃথক এবং আহলে সুন্নাত আল জামাআত এর আকিদায় তিনি তাঁর সৃষ্টির মধ্যে কখনই প্রবৃষ্ট হন না।
মহান আল্লাহ মানব জাতির উদ্দেশ্যে ঘোষণা করছেন:
.
وَٱلَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ لَا يَخْلُقُونَ شَيْـًٔا وَهُمْ يُخْلَقُونَ
.
"যারা আল্লাহ ছাড়া অপরকে আহবান করে তারা কিছুই সৃষ্টি করে না, বরং তারা নিজেরাই সৃজিত।"[৬]
.
.
أَفَمَن يَخْلُقُ كَمَن لَّا يَخْلُقُۗ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ
.
"যিনি সৃষ্টি করেন, তিনি কি তারই মত, যে সৃষ্টি করে না? তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?"[৭]
.
.
iii. আল্লাহ তাআলা সাকার-নিরাকারের ধারণায় আবদ্ধ নন:
.
আহলে সুন্নাত আল জামাআত এর আকিদায় আল্লাহ তাআলা নিরাকার নন, আবার সাকারও নন। তবে মহান আল্লাহর নিজস্ব চেহারা বিদ্যমান যা আকারবিশিষ্ট কোনো বিষয়ের সাথেই তুলনীয় নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
.
كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ
وَيَبْقَىٰ وَجْهُ رَبِّكَ ذُو ٱلْجَلَٰلِ وَٱلْإِكْرَامِ
.
"ভূপৃষ্টের সবকিছুই ধ্বংসশীল।
অবিনশ্বর শুধু তোমার মহিমময়, মহানুভব প্রতিপালকের চেহারা।"[৮]
.
প্রখ্যাত আলিম ড: আবু বকর যাকারিয়া এই আয়াতের ব্যাখ্যায় এক স্থানে বলেন,
.
"এখানে وجه শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যা দ্বারা মহান আল্লাহ তায়ালার চেহারার সাথে সাথে তাঁর সত্তাকেও বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ তিনি অবিনশ্বর। তাঁর চেহারাও অবিনশ্বর। তিনি ব্যতীত আর যা কিছু রয়েছে সবই ধ্বংসশীল। এগুলোর মধ্যে চিরস্থায়ী হওয়ার যোগ্যতাই নেই..."[৯]
.
হিন্দু দর্শনের অনুসারীরা সাকার আর নিরাকারের ধারণা ব্যতীত আর কিছু বোঝার চেষ্টাই করেন না। ঈশ্বর সম্পর্কিত তাদের একটি অন্যতম উক্তি হল, 'জল যেমন নিরাকার, বরফ যেমন সাকার, ঈশ্বরও তেমনি সাকার, নিরাকার দুই-ই হতে পারেন।'
.
আমাদের প্রশ্ন হল, জল আর বরফ - এই দুটি সৃষ্ট বস্তু না স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা? অবশ্যই সৃষ্ট বস্তু। আর আগেই বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি হতে সম্পূর্ণ পৃথক - তাই জল, বরফ কোনটিই তাঁর অংশ নয়। একারণেই আল্লাহ তাআলা তাঁর সৃষ্টির সমতুল্য হতে পারেন না বিধায় সৃষ্টির সাথে শরীক করে কখনই তাঁকে সঠিকভাবে বোঝা সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ ঘোষণা করছেন:
.
فَاطِرُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِۚ جَعَلَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَٰجًا وَمِنَ ٱلْأَنْعَٰمِ أَزْوَٰجًاۖ يَذْرَؤُكُمْ فِيهِۚ لَيْسَ كَمِثْلِهِۦ شَىْءٌۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلْبَصِيرُ
.
"তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের স্রষ্টা। তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্য যুগল সৃষ্টি করেছেন এবং চতুস্পদ জন্তুদের মধ্য থেকে জোড়া সৃষ্টি করেছেন। এভাবে তিনি তোমাদের বংশ বিস্তার করেন। কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়।  তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।"[১০]
.
একারণে আল্লাহ তাআলার সুরত বা চেহারা তাঁর কোনো সৃষ্টির মত নয়, এমনকি সৃষ্টির মত স্থান, কাল, আপেক্ষিকতায়ও আবদ্ধ নয়। বরং সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাআলার সত্ত্বা সকল স্থান, কাল, আপেক্ষিকতার বহু উর্ধ্বে। মহান আল্লাহ ঘোষণা করছেন:
.
خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ بِٱلْحَقِّۚ تَعَٰلَىٰ عَمَّا يُشْرِكُونَ
.
"যিনি যথাবিধি আকাশরাজি ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন। তারা যাকে শরীক করে তিনি তার বহু উর্ধ্বে।"[১১]
.
ড: আবু বকর যাকারিয়া আরও বলেন, "(وَجْهُ اللّٰه) শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ্‌র চেহারা। মুসলিমদের আকীদা বিশ্বাস হলো এই যে, আল্লাহ্‌র চেহারা রয়েছে। তবে তা সৃষ্টির কারও চেহারার মত নহে।"[১২]
.
ইমাম আ’যম আবূ হানীফা নু’মান ইবন সাবিত (রাহ) এর ব্যাখ্যা হতে ব্যাপারটি আরও কিছুটা বোঝা যায়:
.
"তাঁর (মহান আল্লাহর) সৃষ্টির মধ্যে কোনো কিছুই তাঁর সাথে তুলনীয় নয়। তিনি তাঁর সৃষ্টির কোনো কিছুর মত নন। তিনি অনাদি কাল থেকে অনন্ত কাল বিদ্যমান, তাঁর নামসমূহ এবং তাঁর যাতী (সত্তীয়) ও ফি’লী (কর্মীয়) সিফাত (বিশেষণ) সমূহসহ। তাঁর সত্তীয় বিশেষণসমূহ: হায়াত (জীবন), কুদরাত (ক্ষমতা), ইলম (জ্ঞান), কালাম (কথা), সাম’ (শ্রবণ), বাসার (দর্শন) ও ইরাদা (ইচ্ছা)। আর তাঁর ফি’লী সিফাতসমূহের মধ্যে রয়েছে: সৃষ্টি করা, রিয্ক প্রদান করা, নবসৃষ্টি করা, উদ্ভাবন করা, তৈরি করা এবং অন্যান্য কর্মমূলক সিফাত বা বিশেষণ। তিনি তাঁর গুণাবলি এবং নামসমূহ-সহ অনাদিরূপে বিদ্যমান। তাঁর নাম ও বিশেষণের মধ্যে কোনো নতুনত্ব বা পরিবর্তন ঘটে নি। তিনি অনাদিকাল থেকেই তাঁর জ্ঞানে জ্ঞানী এবং জ্ঞান অনাদিকাল থেকেই তাঁর বিশেষণ। তিনি অনাদিকাল থেকেই ক্ষমতাবান এবং ক্ষমতা অনাদিকাল থেকেই তাঁর বিশেষণ। তিনি অনাদিকাল থেকেই তাঁর কথায় কথা বলেন এবং কথা অনাদিকাল থেকেই তাঁর বিশেষণ। তিনি অনাদিকাল থেকেই সৃষ্টিকর্তা এবং সৃষ্টি করা অনাদিকাল থেকেই তাঁর বিশেষণ। তিনি অনাদিকাল থেকেই তাঁর কর্মে কর্মী, কর্ম অনাদিকাল থেকে তাঁর বিশেষণ। আল্লাহ তাঁর কর্ম দিয়ে যা সৃষ্টি করেন তা সৃষ্ট, তবে আল্লাহর কর্ম সৃষ্ট নয়। তাঁর সিফাত বা বিশেষণাবলি অনাদি। কোনো বিশেষণই নতুন বা সৃষ্ট নয়। যে ব্যক্তি বলে যে, আল্লাহর কোনো সিফাত বা বিশেষণ সৃষ্ট অথবা নতুন, অথবা এ বিষয়ে সে কিছু বলতে অস্বীকার করে, অথবা এ বিষয়ে সে সন্দেহ পোষণ করে, তবে সে আল্লাহর প্রতি ঈমান-বিহীন কাফির.....
.
...তাঁর সকল বিশেষণই মাখলূকদের বা সৃষ্টপ্রাণীদের বিশেষণের ব্যতিক্রম। তিনি জানেন, তবে তাঁর জানা আমাদের জানার মত নয়। তিনি ক্ষমতা রাখেন, তবে তাঁর ক্ষমতা আমাদের ক্ষমতার মত নয়। তিনি দেখেন, তবে তাঁর দেখা আমাদের দেখার মত নয়। তিনি কথা বলেন, তবে তাঁর কথা বলা আমাদের কথা বলার মত নয়। তিনি শুনেন, তবে তাঁর শোনা আমাদের শোনার মত নয়। আমরা বাগযন্ত্র ও অক্ষরের মাধ্যমে কথা বলি, আর মহান আল্লাহ বাগযন্ত্র এবং অক্ষর ছাড়াই কথা বলেন। অক্ষরগুলি সৃষ্ট। আর আল্লাহর কথা (কালাম) সৃষ্ট নয়।
.
তিনি ‘শাইউন’: ‘বস্তু’ বা ‘বিদ্যমান অস্তিত্ব’, তবে অন্য কোনো সৃষ্ট ‘বস্তু’ বা ‘বিদ্যমান বিষয়ের’ মত তিনি নন। তাঁর ‘শাইউন’- ‘বস্তু’ হওয়ার অর্থ তিনি বিদ্যমান অস্তিত্ব, কোনো দেহ,  কোনো জাওহার (মৌল উপাদান) এবং কোনো ‘আরায’ (অমৌল উপাদান) ব্যতিরেকেই। তাঁর কোনো সীমা নেই, বিপরীত নেই, সমকক্ষ নেই, তুলনা নেই। ‘‘অতএব তোমরা কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ বানাবে না।’’(সূরা (২) বাকারা: ২২ আয়াত) তাঁর ইয়াদ (হস্ত) আছে, ওয়াজহ (মুখমন্ডল) আছে, নফস (সত্তা) আছে, কারণ আল্লাহ কুরআনে এগুলো উল্লেখ করেছেন। কুরআনে আল্লাহ যা কিছু উল্লেখ করেছেন, যেমন মুখমন্ডল, হাত, নফস ইত্যাদি সবই তাঁর বিশেষণ, কোনো ‘স্বরূপ’ বা প্রকৃতি নির্ণয় ব্যতিরেকে। এ কথা বলা যাবে না যে, তাঁর হাত অর্থ তাঁর ক্ষমতা অথবা তাঁর নিয়ামত। কারণ এরূপ ব্যাখ্যা করার অর্থ আল্লাহর বিশেষণ বাতিল করা। এরূপ ব্যাখ্যা করা কাদারিয়া ও মু’তাযিলা সম্প্রদায়ের রীতি। বরং তাঁর হাত তাঁর বিশেষণ, কোনো স্বরূপ নির্ণয় ব্যতিরেকে। তাঁর ক্রোধ এবং তাঁর সন্তুষ্টি তাঁর দুটি বিশেষণ, আল্লাহর অন্যান্য বিশেষণের মতই, কোনো ‘কাইফ’ বা ‘কিভাবে’ প্রশ্ন করা ছাড়াই..."[১৩]
.
সুতরাং বলা যায় যে, সাকার-নিরাকারের ধারণার মাধ্যমে আল্লাহকে সৃষ্ট সাকার বিষয়ে আবদ্ধ করে মূর্তিপূজা করা, আল্লাহ তাআলার প্রতি মিথ্যা আরোপ এবং তাঁকে অপমান করারই সমতুল্য অপরাধ!
.
আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করছেন:
.
إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِۦ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ وَمَن يُشْرِكْ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱفْتَرَىٰٓ إِثْمًا عَظِيمًا
.
"নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন। আর যে লোক অংশীদার সাব্যস্ত করল আল্লাহর সাথে, সে যেন অপবাদ আরোপ করল।"[১৪]
.
.
إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِۦ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ وَمَن يُشْرِكْ بِٱللَّهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَٰلًۢا بَعِيدًا
.
"নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন। যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়।"[১৫]
.
.
iv. মূর্তিপূজা কি উপাসনার নিম্ন স্তর থেকে উচ্চ স্তরে যাওয়ার মাধ্যম স্বরূপ?:
.
হিন্দু দর্শনের বেশিরভাগ পণ্ডিতের মতে, মূর্তিপূজা হল উপাসনার নিম্ন স্তর। ভগবতগীতা বলছে,
.
"যাদের মন জড়-কামনা বাসনা দ্বারা বিকৃত, তারা অন্য দেব-দেবীর শরণাগত হয়ে এবং তাদের স্বীয় স্বভাব অনুসারে নিয়ম পালন করে দেবতাদের উপাসনা করে।
পরমাত্মারূপে আমি সকলের হৃদয়ে বিরাজ করি। যখন কেউ দেবতাদের পূজা করতে ইচ্ছা করে, আমি তাদের শ্রদ্ধানুসারে সেই সেই দেবতাদের প্রতি ভক্তি বিধান করি।"[১৬]
.
এক্ষেত্রে হিন্দু দর্শন অনুযায়ী নিম্ন স্তরের বিষয়টি ভগবতগীতার উক্ত শ্লোক থেকে কিছুটা বোঝা যায়। আর সেটি হল জড় জগতের প্রতি আসক্তি, লালসা ইত্যাদিতে নিমজ্জিত হওয়া, বা আরও সহজভাবে বললে দুনিয়া-প্রীতিতে আসক্ত ও মোহগ্রস্ত হওয়া। ইসলামও এই দুনিয়ার প্রতি লালসা থেকে সরে আসতে বলে, কিন্তু হিন্দু দর্শনের মত একে নিম্ন স্তর হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে মূর্তিপূজা করার অনুমতি দেয় না!
.
আমরা আগেই দেখিয়েছি যে, মূর্তিপূজা কেন ইবাদত এর ক্ষেত্রে সত্য পথ নয়। তবে এই বিষয়টি মেনে নেওয়ার পরও হিন্দু পণ্ডিতেরা এই অযুহাত দিয়ে থাকেন যে, মানুষ একবারে উচ্চ পর্যায়ে যেতে পারে না। তাই তার সত্য পর্যন্ত পৌঁছাতে একটি মাধ্যমের প্রয়োজন হয়। তাই মাটির তৈরি কোনো একটি সাকার প্রতিমার প্রতি মনোনিবেশের মাধ্যমে চূড়ান্ত চিন্ময় সত্ত্বার প্রতি ধীরে ধীরে অগ্রসর হওয়ার জন্যই মূর্তিপূজার সাহায্য নেওয়া হয়। 'মৃন্ময় মাঝে চিন্ময়' সত্ত্বাকে উপলব্ধি করতে মূর্তিকে পূজা করা হয় না, বরং মূর্তিকে প্রতীকরূপে মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করে অচিন্তনীয় ঈশ্বরকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করা হয়।
.
আল্লাহ তাআলা এই ধারণার জবাব দিচ্ছেন নিম্নোক্ত আয়াতে:
.
أَلَا لِلَّهِ ٱلدِّينُ ٱلْخَالِصُۚ وَٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُوا۟ مِن دُونِهِۦٓ أَوْلِيَآءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَآ إِلَى ٱللَّهِ زُلْفَىٰٓ إِنَّ ٱللَّهَ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ فِى مَا هُمْ فِيهِ يَخْتَلِفُونَۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهْدِى مَنْ هُوَ كَٰذِبٌ كَفَّارٌ
.
"জেনে রাখ, অবিমিশ্র আনুগত্য আল্লাহরই প্রাপ্য। যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে, তারা বলে, ‘আমরা এদের পূজা এ জন্যই করি যে, এরা আমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর সান্নিধ্যে এনে দেবে।’ নিশ্চয় আল্লাহ (কিয়ামত দিবসে) তাদের মধ্যে তাদের পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ তাকে সৎপথে পরিচালিত করেন না, যে মিথ্যাবাদী অবিশ্বাসী।"[১৭]
.
আমরা জানি, ২+২=৪, এটা যেমন ক্লাস ওয়ান এর সময় সত্য, তেমনি ক্লাস টেন এর সময়ও সত্য, গণিতে অনার্স আর মার্স্টার্সের সময়ও সত্য, এমনকি পিএইচডি লেভেলেও সত্য; কেননা এটি একটি বাস্তব সত্য যে, আমি দুই টাকার দুটো নোট বা কয়েন অন্য কাউকে দিলে তার সমমূল্য চার টাকাই হবে; পাঁচ টাকাও হবে না, আবার একই সাথে চার টাকা ও পাঁচ টাকা উভয়ও হবে না। একইভাবে, আল্লাহকে মূর্তির প্রতীকে উপাসনা করে তাঁর ওপর সাকার-নিরাকারের ধারণা প্রয়োগ করলেও আল্লাহ সাকার হয়ে যাবেন না, বা নিরাকার হয়ে যাবেন না, অথবা একই সাথে সাকার-নিরাকার উভয়ও হয়ে যাবেন না! আল্লাহ তাআলা কেবল তাঁর নিজ সত্ত্বারই মতন এবং কোনো কিছুই তাঁর সমতুল্য নয়, কোনো সৃষ্টিও তাঁর অংশ নয়।
.
لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ
وَلَمْ يَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدٌۢ
.
"তিনি (আল্লাহ) কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেওয়া হয়নি এবং তাঁর সমতুল্য কিছুই নেই।"[১৮]
.
এতকিছুর মূল কথা হল এটাই যে, যদি সৃষ্টিকর্তা একক সত্ত্বা হন এবং তাঁর সমতুল্য যদি কিছুই না হয়, তবে তাঁর উপাসনা ও আনুগত্য করতে ভুল বিষয়ের সাহায্য না নিয়ে সঠিক পথেরই অনুসরণ করা উচিৎ। যদি কেউ গণিতে অনার্স পড়তে চায়, সে ক্লাস ওয়ানে ২+২=৫ শিখবে না, কেননা এটি সুস্পষ্ট যে, ২+২=৪; একইভাবে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টির সমতুল্য নন, এটি সুস্পষ্টভাবে জানানোর পর ইসলাম মানুষকে সাকার-নিরাকার ধারণার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার সাথে সৃষ্টিকে শরীক করার শিক্ষা দেয় না। বরং আল্লাহ তাআলার সত্ত্বাকে কোনোরূপ বিকৃত ব্যাখ্যার আওতায় না এনেই সরাসরি তাঁর আনুগত্যের পথ দেখায়। যিনি সমস্ত বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন, তাঁর কি এতটুকুও ক্ষমতা নেই যে, তিনি তাঁর সৃষ্টির আহবান সরাসরি শোনার ক্ষমতা রাখেন না?
.
সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলা সমস্ত সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ঘোষণা করছেন:
.
وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدْعُونِىٓ أَسْتَجِبْ لَكُمْۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِى سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ
.
"তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, 'তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহংকারবশত আমার 'ইবাদাত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে।'"[১৯]
.
.
وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّن يَدْعُو مِن دُونِ اللَّهِ مَن لَّا يَسْتَجِيبُ لَهُ إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَن دُعَائِهِمْ غَافِلُونَ *وَإِذَا حُشِرَ النَّاسُ كَانُوا لَهُمْ أَعْدَاءً وَكَانُوا بِعِبَادَتِهِمْ كَافِرِينَ 
.
"সে ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত কে, যে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুকে আহবান করে যা ক্বিয়ামত দিবস পর্যন্তও তার আহবানে সাড়া দেবে না? তার অবস্থা তো এরকম যে, এসব কিছু তাদের আহবান সম্পর্কে অবহিতও নয়। যখন (কিয়ামতের দিন) মানুষদেরকে একত্রিত করা হবে, তখন সে সকল কিছু হবে তাদের শত্রু এবং সেগুলো তাদের ইবাদাত অস্বীকার করবে।"[২০]
.
.
فَإِن لَّمْ يَسْتَجِيبُوا۟ لَكَ فَٱعْلَمْ أَنَّمَا يَتَّبِعُونَ أَهْوَآءَهُمْۚ وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنِ ٱتَّبَعَ هَوَىٰهُ بِغَيْرِ هُدًى مِّنَ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهْدِى ٱلْقَوْمَ ٱلظَّٰلِمِينَ
.
"অতঃপর তারা যদি তোমার কথায় সাড়া না দেয়, তবে জানিয়ে দাও যে, তারা কেবল নিজের প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে। আল্লাহর হিদায়েতের পরিবর্তে যে ব্যক্তি নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? নিশ্চয় আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ দেখান না।"[২১]
.
.
________________________
তথ্যসূত্র:
[১] "হে পান্ডব, এইভাবে তত্ত্বজ্ঞান লাভ করে তুমি আর মোহগ্রস্ত হবে না, যখন জানবে সমস্ত জীবই আমার বিভিন্ন অংশ এবং তারা সকলেই আমাতে অবস্থিত এবং তারা সকলেই আমার।" (ভগবতগীতা, ৪:৩৫)
[২] ভগবতগীতা, ৪:১১
[৩] আল-কোরআন, ৫:৯০
[৪] ভগবতগীতা, ৪:৩৫
[৫] আল-কোরআন, ১৩:২
[৬] আল-কোরআন, ১৬:২০
[৭] আল-কোরআন, ১৬:১৭
[৮] আল-কোরআন, ৫৫:২৬-২৭
[৯] তাফসির আবু বকর যাকারিয়া/আল-কোরআন ৫৫:২৭ আয়াতের তাফসির হতে বিবৃত
[১০] আল-কোরআন, ৪২:১১
[১১] আল-কোরআন, ১৬:৩
[১২] তাফসির আবু বকর যাকারিয়া/আল-কোরআন ২:১১৫ আয়াতের তাফসির হতে বিবৃত
[১৩] গ্রন্থঃ আল-ফিকহুল আকবর/মহান আল্লাহর বিশেষণ, তাকদীর ইত্যাদি/লেখকঃ ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.);
source - https://hadithbd.com/qaext.php?qa=7132
[১৪] আল-কোরআন, ৪:৪৮
[১৫] আল-কোরআন, ৪:১১৬
[১৬] ভগবতগীতা, ৭:২০-২১
[১৭] আল-কোরআন, ৩৯:৩
[১৮] আল-কোরআন, ১১২:৩-৪
[১৯] আল-কোরআন, ৪০:৬০
[২০] আল-কোরআন, ৪৬:৫-৬
[২১] আল-কোরআন, ২৮:৫০
======================
লেখক: আহমেদ আলি
.
.
.
___________
আরও পড়ুন:
♦ মুসলিমরা কি শিবলিঙ্গ আর দেবদেবীর পূজা করে?
visit - http://uniqueislamblog.blogspot.com/2018/06/blog-post_9.html?m=1

Comments

Popular posts from this blog

মানহাজ ও মাযাহাব নিয়ে যত দ্বন্দ্বের জবাব....

[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...

কৃষ্ণ কি আল্লাহর নবী ছিল?

এই প্রশ্নটা আমাকেও করা হয়েছে সম্ভবত কয়েকবার। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরটা বড়ই জটিল। কারণ এর কোনো যথাযথ উত্তর আমাদের জানা নেই। যদি কৃষ্ণের গোপীদের সাথে লীলার কাজকে সত্য বলে...

Permission of Adultery and Fornication in Hinduism - Remaining Part

Read the previous part here: http:// uniqueislamblog.blogspot.com /2017/11/ permission-of-adultery-and-fornication.html ?m=1 => Condemning physical relationship outside marriage: Generally physical relationship outside marriage is condemned in Hindu Philosophy. Bhagabat Gita says, "There are three gates leading to this hell-**lust**, anger, and greed. Every sane man should give these up, for they lead to the degradation of the soul." (Bhagabat Gita, 16:21) ['Bhagabat Gita As It Is' by His Divine Grace A.C. Bhaktivedanta Swami Prabhupada] This verse indicates that lust or desire outside marriage can lead one to hell if it is not maintained properly. It is further mentioned in Yajur Veda, "O God, **cast aside a lover**, **who cohabits with another's wife** ; **a paramour having illicit connection with a domestic woman** ; **an unmarried elder brother suffering from the pangs of passion** ; younger brother who has married before his elder to ...