Skip to main content

♦ নাস্তিকতার স্বরূপ উন্মোচন!!!


[লেখাটি আমার একান্ত নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে রচিত। তাই কোনোরূপ ভুল-ত্রুটির জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।]
.
নাস্তিকতা বিষয়টি আজ ব্যাপক হারে প্রসার লাভ করে চলেছে। নাস্তিকতা বলতে আমরা সোজা সাপটা ভাবে বুঝি যে, এটা এমনই একটা ধারণা বা মতবাদ, যেটা শিক্ষা দেয়, সমগ্র বিশ্বজগতের কোনো চূড়ান্ত সৃষ্টিকর্তা বা নিয়ন্ত্রণকারী নেই।
.
কিন্তু আপনি খেয়াল করে দেখবেন যে, প্রতিটি শিশুই জন্মের সময় প্রাকৃতিকভাবে আস্তিক হয়ে পৃথিবীতে আসে এবং নাস্তিকতার ধারণা নিয়ে সে জন্মায় না এবং এতে বিবর্তনেরও কোনো প্রভাব নেই, যা আজ বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রতিষ্ঠিত সত্য।[১] অর্থাৎ নাস্তিকতার ধারণা মনে আসে জন্মের পর ধীরে ধীরে বিচার বিবেচনার ক্ষমতা লাভের সময় থেকে।
.
এক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই আমি নাস্তিকদের চিন্তাধারার ওপর ভিত্তি করে তাদের বৈশিষ্ট্যগুলোকে প্রধানত ৩ ভাগে ভাগ করব:
.
১) সিদ্ধান্তহীন নাস্তিকতা,
২) দৃঢ় নাস্তিকতা,
৩) ক্ষণস্থায়ী নাস্তিকতা।
.
প্রথম বিভাগের ওপর ভিত্তি করে বললে, তারা হল সিদ্ধান্তহীন নাস্তিক যাদেরকে সংশয়বাদী বা অজ্ঞেয়বাদী বা Agnostic ও বলা যেতে পারে। এই ধরণের নাস্তিকতা কেবল সন্দেহ আর অনিশ্চয়তার ওপর দাঁড়িয়ে। এই জাতীয় নাস্তিকতায় আসক্ত ব্যক্তি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের ওপর নিশ্চিত কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারে না।
.
২ নং পয়েন্টের নাস্তিকতার মধ্যে আমি সেই নাস্তিকতাকে ফেলব যেখানে ব্যক্তি নিজের প্রাপ্ত জ্ঞান বা অন্যান্য তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নিজে নিজে যাচাই করে এই সিদ্ধান্তে এসে দৃঢ় হয় যে, চূড়ান্ত সৃষ্টিকর্তা বলে কিছু নেই। স্টিফেন হকিং এর মত পশ্চিমা বিভিন্ন নাস্তিক ব্যক্তি, হিন্দু দর্শনের (মায়াবাদী, মীমাংসা প্রভৃতি দর্শনের) পণ্ডিত ব্যক্তিদের নাস্তিক গোষ্ঠীর বিভিন্ন দৃঢ় নাস্তিক ব্যক্তি প্রভৃতিদের এই পর্যায়ের নাস্তিকতার মধ্যে আনা যেতে পারে।
.
তৃতীয় বিভাগের ক্ষণস্থায়ী নাস্তিকতা তাদের মধ্যে দেখা যায়, যারা মূলত আস্তিক; কিন্তু কোনো বিশেষ কারণে আস্তিকতার ওপর হতাশ ও অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েছে। এই ক্ষণস্থায়ী নাস্তিকতায় নমনীয়তা থাকলে তা সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে চলে যায় এবং ব্যক্তি পুনরায় আবার আস্তিক চিন্তায় ফিরে আসে।
কিন্তু এরূপ ক্ষণস্থায়ী নাস্তিকতায় যদি দৃঢ়তার আবির্ভাব ঘটে এবং তা ধীরে ধীরে দীর্ঘস্থায়ী অবস্থার দিকে ধাবিত হয়, তবে তা পুনরায় আবার আস্তিকতার দিকেও ফিরে আসতে পারে, অথবা পূর্ব উল্লিখিত নাস্তিকতার দুটি বিভাগের যেকোনো একটির দিকেও অগ্রসর হতে পারে।
.
.
উল্লিখিত তিন ধরণের নাস্তিক মানসিকতায় আরও কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। সেই বৈশিষ্ট্যগুলোকে আমি আবার প্রধান দুটি ভাগের আওতায় ফেলব:
.
ক) নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য,
খ) ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য।
.
.
ক) নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য:-
.
a. ভোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গি:
নাস্তিকতার ভিত্তি মূলত এটির ওপর দাঁড়িয়ে। নাস্তিকদের বিচারের মানদণ্ড হল তাদের প্রবৃত্তির পরামর্শ বা অন্যভাবে বললে নাফসের উস্কানি! যেটা করলে তারা আনন্দ পায়, সুখ বোধ করে, উত্তেজনা প্রশমিত হয়, সেগুলোই তারা করে। অন্য কথায়, যেটা করতে তাদের ভাল লাগে আর তাদের মন সায় দেয়, সেটাই তারা করে, আর সেটাই তাদের কাছে ভাল কাজ। আর যেটা করতে তাদের মন সায় দেয় না, সেটি খারাপ কাজ। যেমন বেশিরভাগ নাস্তিকের কাছে অবাধ যৌনাচার হল প্রগতিশীলতা। অর্থাৎ কোনোরূপ বিধি নিষেধ ছাড়াই নিজেদের ইচ্ছামত তারা যৌনচারে আনন্দ উপভোগ করতে পারবে - এরূপ ক্রিয়াকে যেহেতু তাদের প্রবৃত্তি সমর্থন করছে, তাই সেটি হল উত্তম বিষয়। অন্যদিকে যদি কেউ এর বিরুদ্ধে কিছু বলে, তবে সেটি হবে তাদের কাছে নিকৃষ্ট কর্ম।
ভোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে স্রষ্টার প্রয়োজনীয়তা, ধর্মীয় নীতি ইত্যাদি তাদের কাছে তুচ্ছ বলে মনে হয় এবং নিজেদের মনের বাসনা এবং বিকৃত চিন্তাধারাকেই তাদের একমাত্র সঠিক বলে প্রতীয়মান হতে থাকে!
.
b. ধর্মীয় অনাগ্রহ: নাস্তিকতার ক্ষেত্রে এটি একটি সাধারণ বিষয় যে, নাস্তিকেরা ধর্ম ও ধর্মীয় রীতি নীতিকে তাদের স্বাধীনতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা স্বেচ্ছাচারী জীবনপথের বিরুদ্ধে ভয়ংকর বাধা বা প্রবল বিপত্তি বলে মনে করে। তাই তারা, হয় ধর্মীয় বিষটিকে এড়িয়ে যাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে, নয়ত ধর্মীয় বিষয়াবলিকে সমাপ্ত করার জন্য যথাসম্ভব এর বিরুদ্ধে প্রচারণায় লিপ্ত থাকে। কখনও কখনও ধর্মীয় বিষয় সম্পর্কে ভালভাবে জানার পর তা ভোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধী হলে, বা কখনওবা ধর্মীয় বিষয়সমূহকে অযৌক্তিক, পরস্পরবিরোধী, অর্থহীন প্রভৃতি বলে মনে হলে তাদের ধর্মীয় অনাগ্রহ সৃষ্টি হয় এবং ফলস্বরূপ তা থেকে নাস্তিকতার উদ্ভব ঘটে।
.
c. নিজের সাথে নিজের মিথ্যাচার ও প্রতারণা:
"চূড়ান্ত স্রষ্টা বলে কিছু নেই" - এই চিন্তাধারাকেই বেশিরভাগ নাস্তিক একপ্রকার মনে বদ্ধমূল করে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং এই চিন্তার সাপেক্ষে তারা সকল কিছু বিচার করে ও তাদের মত প্রকাশ করে। যদি তাদের সামনে এমন কোনো প্রমাণ, ব্যাখ্যা বা নিদর্শনও আসে যার মাধ্যমে স্রষ্টার অস্তিত্ব সম্পর্কে ইতিবাচক বিষয়সমূহ তাদের সামনে ফুটে উঠে, তবে সেগুলো থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়ে তাদের মিথ্যাচার ও নিজের সাথে নিজের প্রতারণাতে অটল থাকে।
.
d. প্রবল অসন্তোষ ও তার প্রভাব:
নাস্তিকতার ভোগবাদী বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গির কারণে নাস্তিক মনে সর্বদা অসন্তুষ্টি বিরাজ করে যা সাধারণত তারা মুখে স্বীকার করে না। দৃঢ় নাস্তিকের তুলনায় সিদ্ধান্তহীন নাস্তিকের তুলনামূলক অধিক সংশয় তার মনকে আরও অধিক হারে অসন্তুষ্ট করে তোলে! এহেন অসন্তোষের প্রভাবে তাদের উত্তেজনা, কামনা, উপভোগ, ক্রোধ, সিদ্ধান্তহীনতা প্রভৃতি ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এই বৃদ্ধিসমূহ ঘুরে ফিরে পূর্বের তুলনায় আরও অধিক অসন্তোষের জন্ম দেয় এবং এই প্রক্রিয়া চক্রাকারে চলতেই থাকে, যতক্ষণ না চরম পর্যায়ে ব্যক্তি মাদকাসক্তি বা আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়!
.
.
খ) ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য:
.
i) প্রকৃত সত্য সন্ধানী মানসিকতা:
সাধারণত এরূপ বৈশিষ্ট্য সিদ্ধান্তহীন নাস্তিকদের মধ্যে প্রতীয়মান হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এক্ষেত্রে তারা প্রকৃতই সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজে পাওয়ার ইচ্ছাকে অগ্রাধিকার দেয় এবং নিজেদের জেদ আর অহংকার এর ওপর অটল থাকে না। এহেন বৈশিষ্ট্য এর অধিকারী নাস্তিক, ভোগবাদী চিন্তার পিছনে তুলনামূলক কম ছুটে বেড়ায় এবং সত্য সামনে এলে সেই সত্য গ্রহণ করার মানসিকতায় ইতিবাচক ভাবে যাচাইয়ের চেষ্টা করে।
.
ii) ধর্মীয় নিরপেক্ষতা:
নাস্তিকেরা ধর্মীয় নিরপেক্ষতার কথা বললেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা নিরপেক্ষভাবে ধর্মকে যাচাই না করে মিথ্যাচার, প্রতারণা আর ভোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েই ধর্মীয় বিষয়কে নিন্দা করে তা ধর্মীয় নিরেপক্ষতা আর মুক্তমনা মনোভাব হিসেবে চালিয়ে দেয়। কিন্তু কিছু কিছু নাস্তিক রয়েছে যারা সত্য বিষয়ে সন্দিহান এবং সত্যটা যেরকমই হোক না কেন, তা সত্য বলে বুঝতে পারলে মেনে নিতে প্রস্তুত থাকে, তারা নিরপেক্ষভাবেই যাচাই করে ধর্মীয় বিষয়গুলোকে তুলনা করে ও তা থেকে শিক্ষা নিয়ে সত্যকে বোঝার চেষ্টা করে।
.
.
এই দুই ধরণের ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যের অধিকারীরাই সত্যের কাছে আসার ক্ষেত্রে অধিক সম্ভাবনাময় হয়ে ওঠে; ফলস্বরূপ নিজেদের প্রকৃত আস্তিকতার প্রকৃতিতে ফিরে আসার মাধ্যমে অসন্তোষ মুক্ত হওয়ার সুযোগকে তারা যথাসম্ভব কাজে লাগাতে পারে।
.
তবে লক্ষ্যণীয় যে, নাস্তিকতার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় ধরণের বৈশিষ্ট্যই ব্যক্তির মধ্যে বিরাজমান থাকার সম্ভাবনা বেশি। এক্ষেত্রে ব্যক্তির ভোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গির বিকৃতি যত কম হবে, ততই তার ওপর ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যের প্রভাব বেশি হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে ধরা যেতে পারে। তবে যদি ভোগবাদী চিন্তাধারাই ব্যক্তির সমগ্র জগৎ জুড়ে বিরাজ করে, তাহলে নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলোই ব্যক্তিকে প্রধানত প্রভাবিত করবে।
.
এক্ষেত্রে উপরিউক্ত ইতিবাচক ও নেতিবাচক বিষয়ের আওতাধীন বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে আরও কিছু বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে; তবে আমার মনে হয়, উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলোই নাস্তিকতার প্রকৃত স্বরূপের অভ্যন্তরীণ বাস্তবতাকে তুলে ধরার জন্য যথেষ্ট।
.
.
শেষ করব আল-কোরআন এর দুটি আয়াত দিয়ে যেখানে নাস্তিকদের উদ্দেশ্য করে মহান আল্লাহ ঘোষণা করছেন:
.
أَمْ خُلِقُوا۟ مِنْ غَيْرِ شَىْءٍ أَمْ هُمُ ٱلْخَٰلِقُونَ
أَمْ خَلَقُوا۟ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَۚ بَل لَّا يُوقِنُونَ
.
"তারা কি কোন কিছু ব্যতিরেকে আপনা-আপনিই সৃষ্ট হয়েছে, না তারা নিজেরাই স্রষ্টা?
নাকি তারা আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছে? বরং তারা নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে না।"
.
[আল-কোরআন, ৫২:৩৫-৩৬]
.
______________________
তথ্যসূত্র:
[১] "Dr. Justin Barrett, a senior researcher at the University of Oxford's Centre for Anthropology and Mind, claims that ***young people have a predisposition to believe in a supreme being because they assume that everything in the world was created with a purpose.***
.
He says that **young children have faith even when they have not been taught about it by family or at school, and argues that even those raised alone on a desert island would come to believe in God**....."
.
(For more details, visit - http://www.telegraph.co.uk/news/religion/3512686/Children-are-born-believers-in-God-academic-claims.html)
=====================
.
লেখক: আহমেদ আলি

Comments

Popular posts from this blog

মানহাজ ও মাযাহাব নিয়ে যত দ্বন্দ্বের জবাব....

[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...

কৃষ্ণ কি আল্লাহর নবী ছিল?

এই প্রশ্নটা আমাকেও করা হয়েছে সম্ভবত কয়েকবার। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরটা বড়ই জটিল। কারণ এর কোনো যথাযথ উত্তর আমাদের জানা নেই। যদি কৃষ্ণের গোপীদের সাথে লীলার কাজকে সত্য বলে...

Permission of Adultery and Fornication in Hinduism - Remaining Part

Read the previous part here: http:// uniqueislamblog.blogspot.com /2017/11/ permission-of-adultery-and-fornication.html ?m=1 => Condemning physical relationship outside marriage: Generally physical relationship outside marriage is condemned in Hindu Philosophy. Bhagabat Gita says, "There are three gates leading to this hell-**lust**, anger, and greed. Every sane man should give these up, for they lead to the degradation of the soul." (Bhagabat Gita, 16:21) ['Bhagabat Gita As It Is' by His Divine Grace A.C. Bhaktivedanta Swami Prabhupada] This verse indicates that lust or desire outside marriage can lead one to hell if it is not maintained properly. It is further mentioned in Yajur Veda, "O God, **cast aside a lover**, **who cohabits with another's wife** ; **a paramour having illicit connection with a domestic woman** ; **an unmarried elder brother suffering from the pangs of passion** ; younger brother who has married before his elder to ...