অনেকেরই একটা ভুল ধারণা আছে যে, ইসলাম বহু বিবাহকে উৎসাহিত করে। বরং বিষয়টা ঠিক এর উল্টো। ইসলাম বহুবিবাহকে নিরুৎসাহিত করে। বহুবিবাহকে ইসলাম কেবল অনুমোদিত করেছে, উৎসাহিত করে নি। এটা প্রধানত এজন্য যে, পৃথিবীতে ক্রমাগতভাবেই নারীর সংখ্যা পুরুষের তুলনায় বৃদ্ধি পাবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
.
"কিয়ামতের কিছু আলামাত হলঃ ‘ইল্ম হ্রাস পাবে, অজ্ঞতার প্রসার ঘটবে, ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে,
.
***স্ত্রীলোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে, এমনকি প্রতি পঞ্চাশজন স্ত্রীলোকের জন্য মাত্র একজন পুরুষ হবে পরিচালক।"***
.
[সহীহ বুখারী (তাওহীদ)/অধ্যায়ঃ ৩/আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) (كتاب العلم)
হাদিস নম্বরঃ ৮১/হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih);
source - http://www.hadithbd.com/share.php?hid=21945]
.
তবে অনেকে আরেকটি হাদিসটা দেখিয়ে দাবি করতে পারে যে, ইসলাম বহু বিবাহকে উৎসাহিত করে:
.
"সা‘ঈদ ইবনু যুবায়র (রহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আমাকে বললেন, তুমি কি বিয়ে করেছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, বিয়ে কর। কারণ, এই উম্মাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তির অধিক সংখ্যক স্ত্রী ছিল।"
.
[সহীহ বুখারী (তাওহীদ)/অধ্যায়ঃ ৬৭/ বিয়ে (كتاب النكاح)/হাদিস নম্বরঃ ৫০৬৯/হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
source - http://www.hadithbd.com/share.php?hid=29593]
.
.
এখানে লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে যে, এই হাদিসে বিবাহের সংখ্যার ওপর নয়, বরং বিবাহ বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যেটা হাদিসের এই অংশ থেকে বোঝা যায়:
.
///তুমি কি বিয়ে করেছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, বিয়ে কর।///
.
.
বহু বিবাহকে যে ইসলাম নিরুৎসাহিত করেছে, তার নমুনা আমরা বিভিন্নভাবে পেতে পারি।
.
প্রথমত আল্লাহ তায়ালা বলেন,
.
وَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تُقْسِطُوا۟ فِى ٱلْيَتَٰمَىٰ فَٱنكِحُوا۟ مَا طَابَ لَكُم مِّنَ ٱلنِّسَآءِ مَثْنَىٰ وَثُلَٰثَ وَرُبَٰعَۖ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا۟ فَوَٰحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَٰنُكُمْۚ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰٓ أَلَّا تَعُولُوا۟
.
"যদি তোমরা আশঙ্কা করো যে, (নারী) ইয়াতীমদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে নারীদের মধ্য হতে নিজেদের পছন্দমত দুই-দুই, তিন-তিন ও চার-চার জনকে বিবাহ কর,
.
***কিন্তু যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, তোমরা সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকেই***
.
কিংবা তোমাদের অধীনস্থ দাসীকে; এটাই হবে অবিচার না করার কাছাকাছি।"
(আল-কোরআন, ৪:৩)
.
এই আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, একের অধিক বিয়ে করার পূর্বশর্ত হল স্ত্রীদের মধ্যে সুবিচার করা। যদি কেউ আশঙ্কা করে যে, একের অধিক বিবাহ করে স্ত্রীদের মধ্যে সে মধ্যে সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একের অধিক বিয়ে করা তার জন্য অনুমোদিত নয়।
.
এমনকি যদি কেউ এটাও দাবি করে যে, সে বহু বিবাহ করে স্ত্রীদের মধ্যে পরিপূর্ণরূপে সুবিচার করতে পারবে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা নিজেই তার এই ধারণার জবাব দিচ্ছেন নিম্নোক্ত আয়াতে:
.
وَلَن تَسْتَطِيعُوٓا۟ أَن تَعْدِلُوا۟ بَيْنَ ٱلنِّسَآءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْۖ فَلَا تَمِيلُوا۟ كُلَّ ٱلْمَيْلِ فَتَذَرُوهَا كَٱلْمُعَلَّقَةِۚ وَإِن تُصْلِحُوا۟ وَتَتَّقُوا۟ فَإِنَّ ٱللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَّحِيمًا
.
***"তোমরা কখনও স্ত্রীগণের মধ্যে সুবিচার করতে পারবে না যদিও তোমরা তা কামনা করো,***
.
সুতরাং তোমরা কোন একজনের প্রতি সম্পূর্ণরূপে ঝুকে পড়ো না ও অপরজনকে ঝুলন্ত অবস্থায় রেখো না এবং যদি তোমরা পরস্পর সমঝতায় আসো ও সংযমী হও তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।"
(আল-কোরআন, ৪:১২৯)
.
.
তাহলে দেখাই যাচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করছেন যে, কারও ইচ্ছা থাকলেও বহুবিবাহ করে সে স্ত্রীদের মধ্যে পরিপূর্ণরূপে সুবিচার করতে পারবে না! তাহলে এখন কেউ কীভাবে বলতে পারে যে, ইসলামে বহু বিবাহ করাটা উৎসাহমূলক???
.
মিডিয়াতে অমুসলিমরা প্রায়ই মুসলিমদের চিহ্নিত করার জন্য একটু কিছু পেলেই বহুবিবাহের সমস্ত দায় মুসলিমদের ওপর চাপিয়ে দেয়, যেখানে সমস্ত পৃথিবীতে মুসলিমরাই সবচেয়ে কম বহুবিবাহ করে। কেউ যাচাই করতে চাইলে নিজে এই বিষয়টি যাচাই করে দেখতে পারেন। এমনকি ভারতেও হিন্দু ও আদিবাসীদের বহুবিবাহের হার মুসলিমদের চেয়ে বেশি। উপরন্তু পৃথিবীর অন্য ধর্মগ্রন্থগুলোতেও বহুবিবাহের অসংখ্য বিবরণ রয়েছে, কিন্তু কোথায় আল-কোরআন এর ৪:৩ আয়াতের মত একজন স্ত্রী গ্রহণ করার ওপর জোর দিয়ে বলা হয়নি যে, "যদি তোমরা আশঙ্কা করো যে, তোমরা সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকেই (বিবাহ করো)"।
.
এমনকি বহুবিবাহ ইসলামে কোনো ছেলে খেলা না যে, কেবল কামনা-বাসনা মেটানোর জন্যই কেবল বহুবিবাহের বিধান দেওয়া হয়েছে। বরং বহুবিবাহের দায়ভার সঠিকভাবে পালন না করতে পারলে এর জন্য বিচার দিবসে কোনো ব্যক্তি ভয়াবহ শাস্তিরও সম্মুখীন হবে!!!
.
.
"মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ..... আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
.
***যদি কারো দুই স্ত্রী থাকে আর সে তাদের মাঝে ইনসাফের সঙ্গে সমব্যবহার না করে তবে সে তার এক পার্শ্ব ভগ্ন অবস্থায় কিয়ামতের দিন উঠে আসবে।"***
.
[সূনান তিরমিজী (ইফাঃ)/অধ্যায়ঃ ১১/বিবাহ (كتاب النكاح عن رسول الله ﷺ)/হাদিস নম্বরঃ ১১৪২;
ইবনু মাজাহ ১৯৬৯; তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১১৪১(আল মাদানী প্রকাশনী);
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
source - http://www.hadithbd.com/share.php?hid=18334]
[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...
Comments
Post a Comment