মুসলিম উম্মাহর মধ্যে প্রতিনিয়ত অহংকারী ব্যক্তির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর তাদের মধ্যে আরও ভয়ংকর হল সেই ব্যক্তিগণ যারা তাদের ইসলাম ইল্ম আর ইবাদত নিয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অহংকার প্রকাশ করে চলেছেন ক্রমাগত। দেখুন, লোক দেখানো ইবাদতে মত্ত ব্যক্তিদের অবস্থা কীরূপ হবে!!!
.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
.
"যে ব্যক্তি লোক শোনানো ‘ইবাদাত করে আল্লাহ্ এর বিনিময়ে তার ‘লোক-শোনানোর উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দেবেন’। আর যে ব্যক্তি লোক-দেখানো ‘ইবাদাত করবে আল্লাহর এর বিনিময়ে তার ‘লোক দেখানোর উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দেবেন’।"
.
[সহীহ বুখারী (তাওহীদ)/হাদিস নম্বরঃ ৬৪৯৯/হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
source - http://www.hadithbd.com/share.php?hid=31263]
.
.
আল্লাহ তায়ালা কীভাবে এই সকল ব্যক্তিদের দেখানো আর শোনানো ইবাদত প্রকাশ করে দেবেন তা আরেকটি হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি:
.
"আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা ক্বিয়ামাতের দিন আমাদের রবেবর দর্শন লাভ করব কি? তিনি বললেনঃ মেঘহীন আকাশে সূর্যকে দেখতে তোমাদের অসুবিধা হয় কি? আমরা বললাম, না। তিনি বললেনঃ সেদিন তোমাদের রবকে দেখতে তোমাদের কোন অসুবিধা হবে না। এতটুকু ব্যতীত যতটুকু সূর্য দেখার সময় পেয়ে থাক। সেদিন একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করবেন, যারা যে জিনিসের ‘ইবাদাত করতে, তারা সে জিনিসের কাছে গমন কর। এরপর যারা ক্রুশপূজারী ছিল, তারা যাবে তাদের ক্রুশের কাছে। মূর্তিপূজারীরা যাবে তাদের মূর্তির সঙ্গে। সকলেই তাদের উপাস্যের সঙ্গে যাবে। বাকী থাকবে একমাত্র আল্লাহর ‘ইবাদাতকারীরা। নেক্কার ও বদ্কার সকলেই এবং আহলে কিতাবের কতক লোকও থাকবে। অতঃপর জাহান্নামকে আনা হবে। সেটি তখন থাকবে মরীচিকার মত। ইয়াহূদীদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমরা কিসের ‘ইবাদাত করতে? তারা উত্তর করবে, আমরা আল্লাহর পুত্র উযায়র (আঃ)-এর ‘ইবাদাত করতাম। তখন তাদেরকে বলা হবে, তোমরা মিথ্যা বলছ। কারণ আল্লাহর কোন স্ত্রীও নেই এবং নেই তাঁর কোন সন্তান। এখন তোমরা কী চাও? তারা বলবে, আমরা চাই, আমাদেরকে পানি পান করান। তখন তাদেরকে বলা হবে, তোমরা পানি পান কর। এরপর তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হতে থাকবে। তারপর নাসারাদেরকে বলা হবে, তোমরা কিসের ‘ইবাদাত করতে? তারা বলবে, আমরা আল্লাহর পুত্র মসীহের ‘ইবাদাত করতাম। তখন তাদেরকে বলা হবে, তোমরা মিথ্যা বলছ। আল্লাহর কোন স্ত্রীও ছিল না, সন্তানও ছিল না। এখন তোমরা কী চাও? তারা বলবে, আমাদের ইচ্ছা আপনি আমাদেরকে পানি পান করতে দিন। তাদেরকে উত্তর দেয়া হবে, তোমরা পান কর। তারপর তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হতে থাকবে।
.
**অবশেষে বাকী থাকবে একমাত্র আল্লাহর ‘ইবাদাতকারীগণ।**
**তাদের নেক্কার ও বদকার সকলেই।**
তাদেরকে লক্ষ্য করে বলা হবে, কোন্ জিনিস তোমাদেরকে আটকে রেখেছে? অথচ অন্যরা তো চলে গেছে। তারা বলবে, আমরা তো সেদিন তাদের থেকে আলাদা রয়েছি, যেদিন আজকের চেয়ে তাদের অধিক প্রয়োজন ছিল। আমরা একজন ঘোষণাকারীর এ ঘোষণাটি দিতে শুনেছি যে, যারা যাদের ‘ইবাদাত করত তারা যেন ওদের সঙ্গে যায়। আমরা অপেক্ষা করছি আমাদের রবের। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এরপর মহাক্ষমতাশালী আল্লাহ্ তাদের কাছে আসবেন। এবার তিনি সে সুরতে আসবেন না, যেভাবে তাঁকে প্রথমে ঈমানদারগণ দেখেছিলেন। এসে তিনি ঘোষণা দেবেন- আমি তোমাদের রব্ব, সবাই তখন বলে উঠবে আপনিই আমাদের প্রতিপালক। আর সেদিন নবীগণ ছাড়া তাঁর সঙ্গে কেউ কথা বলতে পারবে না।
.
***আল্লাহ্ তাদেরকে বলবেন, তোমাদের এবং তাঁর মাঝখানে পরিচয়ের জন্য কোন আলামত আছে কি?***
তারা বলবেন, পায়ের নলা। তখন পায়ের নলা খুলে দেয়া হবে।
.
***এই দেখে ঈমানদারগণ সবাই সাজদাহ্য় পড়ে যাবে। বাকি থাকবে তারা, যারা লোক-দেখানো এবং লোক-শোনানো সাজদাহ্ করেছিল।***
.
***তবে তারা সাজদাহর মনোভাব নিয়ে সাজদাহ্ করার জন্য যাবে, কিন্তু তাদের মেরুদন্ড একটি তক্তার মত শক্ত হয়ে যাবে।***
.
এমন সময় জাহান্নামের উপর পুল স্থাপন করা হবে। সহাবীগণ বললেন, সে পুলটি কেমন হবে হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেনঃ দুর্গম পিচ্ছিল স্থান। এর ওপর আংটা ও হুক থাকবে, শক্ত চওড়া উল্টো কাঁটা বিশিষ্ট হবে, যা নাজ্দ দেশের সাদান বৃক্ষের কাঁটার মত হবে। সে পুলের উপর দিয়ে ঈমানদারগণের কেউ পার হয়ে যাবে চোখের পলকের মতো, কেউ বিদ্যুতের মতো, কেউ বাতাসের মতো আবার কেউ দ্রুতগামী ঘোড়া ও সাওয়ারের মতো।
.
তবে মুক্তিপ্রাপ্তরা কেউ নিরাপদে চলে আসবেন, আবার কেউ জাহান্নামের আগুনে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাবে। এ কবারে শেষে অতিক্রম করবে যে লোকটি, সে হেঁচড়িয়ে কোন ভাবে পার হয়ে আসবে। এখন তোমরা হকের বিষয়ে আমার চেয়ে অধিক কঠোর নও, যতটুকু সেদিন ঈমানদারগণ আল্লাহর সম্মুখে হয়ে থাকবে, যা তোমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে।
.
***যখন ঈমানদারগণ এ দৃশ্যটি দেখবে যে, তাদের ভাইদেরকে রেখে একমাত্র তারাই মুক্তি পেয়েছে, তখন তারা বলবে, হে আমাদের রব! আমাদের সেসব ভাই কোথায়, যারা আমাদের সঙ্গে সালাত আদায় করত, সওম পালন কত, নেক কাজ করত?***
.
তখন আল্লাহ্ তা‘আলা তাদেরকে বলবেন, তোমরা যাও, যাদের অন্তরে এক দ্বীনার পরিমাণ ঈমান পাবে, তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আন। আল্লাহ্ তাদের মুখমন্ডল জাহান্নামের ওপর হারাম করে দিয়েছেন।
.
***এদের কেউ কেউ দু’পা ও দু’পায়ের নলার বেশি পর্যন্ত জাহান্নামের মধ্যে থাকবে।***
.
তারা যাদেরকে চিনতে পারে, তাদেরকে বের করবে। তারপর এরা আবার ফিরে আসবে। আল্লাহ্ আবার তাদেরকে বলবেন, তোমরা যাও, যাদের অন্তরে অর্ধ দ্বীনার পরিমাণ ঈমান পাবে, তাদেরকে বের করে নিয়ে আসবে। তারা গিয়ে তাদেরকেই বের করে নিয়ে আসবে, যাদেরকে তারা চিনতে পারবে। তারপর আবার ফিরে আসবে। আল্লাহ্ তাদেরকে আবার বলবেন, তোমরা যাও, যাদের অন্তরে অণু পরিমাণ ঈমান পাবে, তাদেরকে বের করে নিয়ে আসবে। তারা যাদেরকে চিনতে পারবে তাদেরকে বের করে নিয়ে আসবে..............."
.
[সহীহ বুখারী (তাওহীদ)/হাদিস নম্বরঃ ৭৪৩৯; মুসলিম ১/৮১, হাঃ ১৮৩, আহমাদ ১১১২৭;
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
source - http://www.hadithbd.com/share.php?hid=32311]
.
.
তাহলে হাদিসটি পড়ে এবার হয়ত বুঝতে পারছেন যে, যারা লোক দেখানো ইবাদতের অহংকারে মত্ত, নিজেদের দ্বীনদার, ঈমানদার বলে লোককে দেখানোর জন্য ব্যস্ত, আল্লাহ তায়ালা কীভাবে তাদের এই লোক দেখানো ইবাদতকে প্রকাশ করে দেবেন!!!
.
.
শুধু এটুকুই নয়। আপনি হয়ত লোকের কাছে ঈমানদার, কিন্তু লোকের চোখের আড়ালে হারাম কাজ, অশ্লীল কাজে মত্ত। আপনি হয়ত ভাবছেন যে, বেশি বেশি নেক আমল করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে, কারণ যদি গুনাহ এর থেকে নেক আমল বেশি হয়, তাহলে মোট বিচারে নেক আমলই প্রাধান্য পাবে!
যদি এমনটা আপনি ভেবে থাকেন, তাহলে বলব, এখনই নিজেকে পরিবর্তন করুন, কারণ নেক আমলের পাল্লা বাড়ানো তো দূরে থাক, কোনো নেক আমল আদৌ আপনার থাকবে কিনা সেটার কোনো নিশ্চয়তা আছে কি!!! নিচের হাদিসটি দেখুন:
.
"সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
.
**আমি আমার উম্মাতের কতক দল সম্পর্কে অবশ্যই জানি যারা কিয়ামতের দিন তিহামার শুভ্র পর্বতমালার সমতুল্য নেক আমলসহ উপস্থিত হবে।**
.
**মহামহিম আল্লাহ সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করবেন।**
.
সাওবান (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের পরিচয় পরিষ্কারভাবে আমাদের নিকট বর্ণনা করুন, যাতে অজ্ঞাতসারে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত না হই।
তিনি বলেনঃ তারা তোমাদেরই ভ্রাতৃগোষ্ঠী এবং তোমাদের সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা রাতের বেলা তোমাদের মতই ইবাদত করবে।
.
***কিন্তু তারা এমন লোক যে, একান্ত গোপনে আল্লাহর হারামকৃত বিষয়ে লিপ্ত হবে।"***
.
[সুনানে ইবনে মাজাহ
অধ্যায়ঃ ৩১/ পার্থিব ভোগবিলাসের প্রতি অনাসক্তি (كتاب الزهد)
হাদিস নম্বরঃ ৪২৪৫
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
source - http://www.hadithbd.com/share.php?hid=45210]
.
.
তাই আমার প্রিয় মুমিন ভাই ও বোনেরা, আসুন নিজেদের এই অহংকারকে ধ্বংস করি; আর এখন থেকেই আল্লাহর কাছে তওবা করা শুরু করি এবং নিজেদের ভেতর থেকে শুদ্ধ করার চেষ্টা করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের গুনাহসমূহ মার্জনা করুন এবং দুনিয়া ও আখিরাতের পথ সহজ করে দিন। আমিন।
.
فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّينَ
ٱلَّذِينَ هُمْ عَن صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ
ٱلَّذِينَ هُمْ يُرَآءُونَ
.
"অতএব দুর্ভোগ সে সব নামায আদায়কারীর,
যারা নিজেদের নামাযের ব্যাপারে উদাসীন;
যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে"
.
[মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ১০৭:৪-৬]
[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...
Comments
Post a Comment