Skip to main content

♦ নিকাবের প্রয়োজনীয়তা আপেক্ষিক.....


নিকাবের বিধান নিয়ে অনেকেই আজকাল বলে থাকেন যে, ইসলামে নিকাব বলে কিছু নেই অথবা এটা অপ্রয়োজনীয়।
.
কিন্তু নিকাব কখনও কখনও এতটাই প্রয়োজনীয় হতে পারে যে, কোনো কোনো অবস্থায় সেটাকে বাধ্যতামূলকও বলা যেতে পারে।
.
কিছু কিছু ফতোয়া নিকাবকে বাধ্যতামূলক বলছে, কিছু কিছু ফতোয়া নিকাবকে বাধ্যতামূলক বলছে না। তবে আমার বিচারে আমি এই দুই ধরণের ফতোয়াকেই সমর্থন করে বলব, নিকাবের প্রয়োজনীয়তা আপেক্ষিক।
.
এখানে নারীর হিজাবের বিধানটি লক্ষ্য করুন:
.
"বিশ্বাসী নারীদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থান রক্ষা করে। তারা যা  সাধারণতঃ প্রকাশ থাকে তা ব্যতীত তাদের সৌন্দর্য যেন প্রদর্শন না করে...."
(আল-কোরআন, ২৪:৩১)
.
সুতরাং এই আয়াত থেকে দেখা যায় যে, আল্লাহ তায়ালা নারীকে তার সৌন্দর্য উগ্রভাবে প্রদর্শন করতে নিষেধ করছেন।
.
কেউ আমায় দয়া করে বলবেন কি - নারীর সৌন্দর্য কোনো পুরুষ কী দিয়ে সর্বপ্রথম বোঝার চেষ্টা করে??
.
অবশ্যই তার মুখমণ্ডল। মুখই সৌন্দর্যের কেন্দ্রবিন্দু। তাহলে যদি সৌন্দর্যকে সংযত করতে হয়, তাহলে মুখের সৌন্দর্যকে সংযত করা কি যুক্তিযুক্ত নয়?
.
উক্ত আয়াত (আল-কোরআন ২৪:৩১) এ আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করা যায় যে, আল্লাহ নারীকে তার লজ্জাস্থানও সংযত করতে বলছেন।
.
এবার এই হাদিসটি দেখুন:
.
"আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
.
***‘‘মেয়ে মানুষের (সবটাই) লজ্জাস্থান (গোপনীয়)। আর সে যখন বের হয়, তখন শয়তান তাকে পুরুষের দৃষ্টিতে সুশোভন করে তোলে।’’***"
.
(তিরমিযী ১১৭৩, মিশকাত ৩১০৯, ত্বাবারানী, ইবনে হিব্বান, ইবনে খুযাইমা, সহীহ তারগীব ৩৩৯, ৩৪১, ৩৪২, ইরওয়া ২৭৩, সহীহ আল জামি‘ ৬৬৯০;
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
source - http://www.hadithbd.com/share.php?hid=66399)
.
তাহলে এই হাদিসটি অনুযায়ী, নারীর সমস্ত দেহই আওরাহ বা লজ্জাস্থান এর সাথে তুলনীয়। তাহলে আল-কোরআন ২৪:৩১ আয়াতে আল্লাহ যখন নারীকে তার লজ্জাস্থান সংযত করার নির্দেশ দিচ্ছেন, তখন এর মধ্যে মুখের সৌন্দর্য সংযত করার কথা প্রাসঙ্গিক নয় কি???
.
.
তবে আরেকটি হাদিস রয়েছে যেখানে আল্লাহর রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইহরামের সময় নিকাব পরতে নিষেধ করছেন:
.
"‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ইহরাম অবস্থায় আপনি আমাদেরকে কী ধরনের কাপড় পরতে আদেশ করেন?
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ জামা, পায়জামা, পাগড়ী ও টুপী পরিধান করবে না। তবে কারো যদি জুতা না থাকে তাহলে সে যেন মোজা পরিধান করে তার গিরার নীচ হতে এর উপরের অংশটুকু কেটে নিয়ে তোমরা যাফরান এবং ওয়ারস্ লাগানো কোন কাপড় পরিধান করবে না।
.
***মুহরিম মহিলাগণ মুখে নেকাব এবং হাতে হাত মোজা পরবে না।***
.
মূসা ইবনু ‘উকবাহ, ইসমা‘ঈল ইবনু ইবরাহীম ইবনু ‘উকবাহ, জুওয়ায়রিয়া এবং ইবনু ইসহাক (রহ.) নিকাব এবং হাত মোজার বর্ণনায় লায়স (রহ.)-এর অনুসরণ করেছেন। ‘উবাইদুল্লাহ (রহ.) وَلاَ الْوَرْسُ এর স্থলে وَلاَ وَرْسُ বলেছেন এবং তিনি বলতেন, ইহরাম বাঁধা মেয়েরা নিকাব ও হাত মোজা ব্যবহার করবে না। মালিক (রহ.) নাফি‘ (রহ.)-এর মাধ্যমে ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, ইহরাম বাঁধা মেয়েরা নিকাব ব্যবহার করবে না। লায়স ইবনু আবূ সুলায়ম (রহ.) এ ক্ষেত্রে মালিক (রহ.)-এর অনুসরণ করেছেন।"
.
[সহীহ বুখারী (তাওহীদ)/হাদিস নম্বরঃ ১৮৩৮/হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)/source - http://www.hadithbd.com/share.php?hid=25769;
অন্য একটি বর্ণনায় উৎস: সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)/হাদিস নম্বরঃ ১৮২৭/হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)/source - http://www.hadithbd.com/share.php?hid=59195]
.
তাহলে ইহরামের মত পবিত্র বিষয়ের ক্ষেত্রে যদি আল্লাহর রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নারীদের নিকাব ও হাত মোজা পরা হতে বিরত থাকতে বলেন, তাহলে এটা কি করে হতে পারে যে, নিকাব ও হাত মোজা পরাটা বাধ্যতামূলক???
.
অর্থাৎ এখানে হাত মোজা আর নিকাব হল ঐচ্ছিক বিষয় যেটাতে কিছুটা ছাড় দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু আমরা প্রথম দিকের আলোচনায় দেখেছি যে, লজ্জাস্থান আর সৌন্দর্য সংযত করার জন্য নিকাবের গুরুত্ব মোটেও কম নয়।
.
তাই মুফতিদের দুই ধরণের ফতোয়াকেই সমর্থন করে বলা যায় যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাইরে চলার ক্ষেত্রে নিকাব পরে চলাটা উত্তম। কিন্তু যেহেতু নিকাব পরাটা বাধ্যতামূলক নয়, এক্ষেত্রে নিকাব পরাতে ক্ষেত্র বিশেষে কিছুটা ছাড় দেওয়া যেতে পারে যেখানে উগ্র আকর্ষণ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই কম। যদি নারী নিকাব না পরে রাস্তায় চলে, সেক্ষেত্রে এটা বাধ্যতামূলক নয় যে তাকে নিকাব পরতেই হবে। কিন্তু নিকাব ছাড়া চলার কারণে যদি কোনো পুরুষ সেই নারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়, তবে তার দায়ভার থেকে সেই নারী মুক্ত নয়। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞগণের অনেকেই তাই বাইরে চলার ক্ষেত্রে নিকাব পরিধানকে বাধ্যতামূলক বলেন। তবে যেহেতু হাদিসে রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ভাষ্য থেকে আমরা নিকাব খোলার অনুমতি পাচ্ছি, তাই বলা যায় যে, উগ্র আকর্ষণের সম্ভাবনা না থাকলে নিকাব ছাড়াও চলা যেতে পারে। তাই নিকাবের বিষয়টি আপেক্ষিক এবং ক্ষেত্র বিশেষে বিবেচনার বিষয়। আপনি একবারে বলতে পারেন না যে, এটা পুরোপুরি বাধ্যতামূলক, আবার এটাও বলতে পারেন না যে, নিকাব না পরলে কোনো সমস্যা নেই।
.
আল্লাহই ভালো জানেন।
.
.
[এই লেখাটা কেবল আমার ব্যক্তিগত অভিমত। পাঠকদের বলব, দয়া করে এই লেখা থেকে নিকাব বিষয়ে কোনোরূপ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিতে। আপনি নিজে বিভিন্ন মুফতিগণের ফতোয়াগুলো আগে শুনুন। তারপর যে ফতোয়াটি আপনার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হবে, সেটাকেই গ্রহণ করুন। আল্লাহ আমাদের সকলকে হেদায়েতের পথে পরিচালিত করুন। আমিন।]
.
.
লেখক: আহমেদ আলি

Comments

Popular posts from this blog

মানহাজ ও মাযাহাব নিয়ে যত দ্বন্দ্বের জবাব....

[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...

কৃষ্ণ কি আল্লাহর নবী ছিল?

এই প্রশ্নটা আমাকেও করা হয়েছে সম্ভবত কয়েকবার। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরটা বড়ই জটিল। কারণ এর কোনো যথাযথ উত্তর আমাদের জানা নেই। যদি কৃষ্ণের গোপীদের সাথে লীলার কাজকে সত্য বলে...

ভগবতগীতার বর্ণভেদ নিয়ে ভক্তদের ভণ্ডামির জবাব

============================ চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ৷ তস্য কর্তারমপি মাং বিদ্ধ্যকর্তারমব্যয়ম্৷৷১৩ অর্থ:  "প্রকৃতির তিনটি গুণ এবং কর্ম অনুসারে আমি মনুষ্য সমাজে চারটি বর্ণ...