"ইসলাম" শব্দটি আরবি "সালাম"(শান্তি) শব্দের পাশাপাশি "সিল্ম"(silm) থেকেও এসেছে যার ইসলামিক পরিভাষায় অর্থ দাঁড়াবে আল্লাহ তায়ালার নিকট নিজের ইচ্ছাকে সমর্পণ করা।
.
অর্থাৎ নিজের খেয়াল খুশি ত্যাগ করে যখন কেউ আল্লাহর নির্দেশকেই নিজের সকল কর্মের প্রধান বিবেচ্য বিষয় হিসেবে ধরে নেয় এবং সেই নির্দেশ অনুযায়ীই কাজ করে, তখন সে নিজের ইচ্ছাকে আল্লাহ তায়ালার নিকট সমর্পণ করে।
.
কিন্তু এর মধ্যেও দুটি সূক্ষ্ম বিষয় আছে যা আমরা সচারাচর ধরি না। প্রথমটি হল, এই ইচ্ছাশক্তিকে সন্তুষ্টি সহকারে সমর্পণ করা; আর দ্বিতীয়টি হল ইচ্ছাশক্তিকে অসন্তুষ্টভাবে সমর্পণ করা।
.
ব্যাপারটা কী উদাহরণ এর মাধ্যমে দেখা যাক।
.
ধরুন, আপনার সামনে একটা খাবার নিয়ে আসা হল। আপনি দেখলেন যে, সেটা একটা রান্না করা মাংস। গন্ধ দারুণ বেরোচ্ছে! স্বাদও হয়ত দারুণ হবে! আপনাকে সেই মাংস খেতে দেওয়া হল। আপনার খাওয়ার খুব ইচ্ছা হল যদিও তেমন খিদে নেই। এখন আপনি খেতে যাবেন। সেই মুহুর্তে জানতে পারলেন যে, সেটা শুকরের মাংস!
আল্লাহ কোরআনে শুকরের মাংস খাওয়াকে নিষিদ্ধ করেছেন - এটা আপনার মনে পড়ল! আপনি সেটা আর খেলেন না। উঠে এলেন।
.
এই মাংস হারাম হওয়ায় সেটা যদি আপনি না খান এবং সেই মুহুর্তে যদি আপনার মন সেই মাংস খেতে না পারায় অসন্তুষ্ট থাকে, তবে আপনি আল্লাহ তায়ালার কাছে নিজের ইচ্ছাকে সমর্পণ করেছেন ঠিকই; কিন্তু নিজেকে তাঁর নিকট আত্মনিবেদন এর মাধ্যমে নয়, বরং পরাজিত হয়ে। অর্থাৎ, আপনি তখন নিজেকে হারাম থেকে বিরত রাখছেন কেবলই শাস্তির ভয়ে, আল্লাহ তায়ালার ফয়সালার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে নয়! আর যেহেতু আপনি নিজেকে আল্লাহ তায়ালার শাস্তির থেকে বাঁচাতে পারবেন না, তাই আপনি নিজের ইচ্ছাকে সমর্পণ করেছেন, যা আত্মনিদেন নয়, বরং পরাজয়ের সমতুল্য।
.
আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করছেন:
.
"....(হে মুহাম্মাদ তুমি) বলে দাওঃ তোমরা ঈমান আনায়ন করো নি; বরং বলো, 'আমরা বশ্যতা স্বীকার করেছি'। এখনও তোমাদের অন্তরে (প্রকৃত অর্থে) ঈমান জন্মেনি। যদি তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করো, তবে তোমাদের কর্ম বিন্দুমাত্রও নিস্ফল করা হবে না। নিশ্চয়, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম মেহেরবান।"
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ৪৯:১৪)
.
.
আবার, সেই মাংস হারাম জানার পরও আপনার মন যদি অসন্তুষ্ট না হয় এবং সন্তুষ্টি সহকারেই আপনার অন্তরাত্মায় ধ্বনিত হয় যে, 'যেহেতু আল্লাহ এটা হারাম করেছেন, তাই এটাই সঠিক; এতে আমার কোনো দুঃখ নেই, কোনো অসন্তোষ নেই' - তবে প্রকৃত অর্থেই আপনি নিজেকে আল্লাহ তায়ালার নিকট সমর্পণ করতে পেরেছেন, কারণ আপনি তখন নিজেকে সমর্পণ করেছেন আল্লাহ তায়ালার নিকট আত্মনিবেদনের মধ্য দিয়ে। আপনার অন্তরে যদিও জান্নাত ও জাহান্নামের ফল এর চিন্তা আছে, তবুও সেই ফলাফল লাভ তখন আপনার কাছে মুখ্য বিষয় নয়; সেই মুহুর্তে আপনার কাছে মুখ্য বিষয় হল, কেবলই আপনার প্রতিপালক আল্লাহ তায়ালার নিকট আত্মনিবেদনের মাধ্যমে নিজেকে সমর্পণ করা!!!
.
قُلْ إِنَّ صَلَاتِى وَنُسُكِى وَمَحْيَاىَ وَمَمَاتِى لِلَّهِ رَبِّ ٱلْعَٰلَمِينَ
.
"বলো, ‘নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু বিশ্ব-জগতের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য।"
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ৬:১৬২)
.
.
যদিও আমরা চাই, তবুও শয়তান এবং নাফসের প্রভাবের কারণে আমরা আত্মনিবেদনের মাধ্যমে সর্বদা আল্লাহর নিকট নিজেকে সমর্পণ করতে পারি না। কিন্তু তবুও আমাদের উচিৎ ইসলামকে কেবল মুখ দিয়ে বলার মাধ্যমে নয়, বরং অন্তর দিয়েও অনুভবের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রকৃত অর্থে নিজেকে সন্তুষ্টি সহকারে সমর্পণের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা ও সংগ্রাম করা।
.
إِنَّمَا ٱلْمُؤْمِنُونَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا۟ وَجَٰهَدُوا۟ بِأَمْوَٰلِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِۚ أُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلصَّٰدِقُونَ
.
"তারাই মু’মিন যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং জীবন ও সম্পদ দ্বারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে, তারাই সত্যনিষ্ঠ।"
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ৪৯:১৫)
[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...
Comments
Post a Comment