রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
.
“তোমাদের অবস্থা তখন কেমন হবে যখন বিদ'আত(ইসলামে চালু করা নতুন বিষয়) তোমাদেরকে এমনভাবে ঘিরে নেবে যে এই বিদ'আত করতে করতে তোমাদের যুবকেরা বৃদ্ধ হবে, আর এই বিদ'আত করতে করতে ছোটরা বড় হবে এবং মানুষ এটাকে (অর্থাৎ এই সব বিদ'আত কে) সুন্নাত হিসাবে গ্রহণ করবে। আর যদি কেউ এই বিদ'আত এর কিছু ত্যাগ করে, তখন তাকে বলা হবে, "তুমি কি একটা সুন্নাত ত্যাগ করলে?''
.
সাহাবিরা (রা) জিজ্ঞাসা করলেনঃ
''কখন এমনটা হবে?"
.
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যখন (হক্বপন্থি) আলিমদের মৃত্যু হয়ে যাবে, ক্বারিদের (reciters) সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, দীন এর বুঝ সম্পন্ন মানুষের সংখ্যা হবে খুবই অল্প, (religious) নেতা/মাতবরদের সংখ্যা বাড়বে, বিশ্বস্ত মানুষের সংখ্যা হবে খুবই কম, দীন এর কাজের মধ্যে মানুষ দুনিয়ার লাভ খুঁজবে এবং দীনী 'ইলম বাদ দিয়ে বাকি অন্যান্য জ্ঞান অন্বেষণ করা হবে।''
.
[সুনান আদ-দারেমি (১/৬৪) দুটি ভিন্ন সনদে, প্রথমটি সাহিহ এবং দ্বিতীয়টি হাসান (আলবানী), হাকিম (৪/৫১৪)]
.
.
এই হাদিসটি আমার জীবনের একটি বিষয় মনে করিয়ে দেয়। আর সেটা হল, ছোটবেলা থেকেই আমি দেখে এসেছি, কীভাবে মুসলিমরা পেঁয়াজ, রসুন আর অতিরিক্ত মশলা খেয়ে আসছে আর বিশেষ করে পেঁয়াজ-রসুন বেশি করে খাওয়াকে তারা যেন ইসলামের একটা বিরাট অংশ বলে মনে করেছে! তাদের ভাবখানা দেখে এটাকে যেন একটা সুন্নাত কাজ বলে মনে হত! দোকানে যেতাম তো পেঁয়াজের গুনগান, পাশের বাড়ি খাওয়ার দাওয়াত তো পেঁয়াজ, রসুন আর মশলার ঘণ্ট! বিরিয়ানি রান্না, তাতেও একগাদা পেঁয়াজ! "ভাই কী বলেন! পেঁয়াজ তো রাসূলের সময় খেত!" - যেন এরকম ধরণের কথাই লোকের মুখে মুখে শুনেছি। শুধু আমার এক মুসলিম বন্ধু একবার বলেছিল যে, এভাবে অতিরিক্ত পেঁয়াজ আর মশলার খাবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পছন্দ করতেন না। আরেক মুসলিম বন্ধু একবার কথার ছলে বলেছিল যে, পেঁয়াজ খেয়ে মুখে গন্ধ নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করা যাবে না। কিন্তু তারা কেউই হুজুর পরিবারের ছেলে ছিল না। একজন মোটামুটি ধার্মিক আর আরেকজনের অবস্থা না হয় আর বললাম না!!!
.
কিন্তু আমার মাথা ঘুরে গেল যখন আমার এক মুসলিম বাংলার স্যার প্রায়ই বলতে লাগলেন যে, বর্তমানের রিসার্চ অনুযায়ী নাকি বেশি বেশি পেঁয়াজ খাওয়া ভালো আর তারপর পেঁয়াজের গুণগান শুরু! আমিও ছোট থেকে তাই ভেবে এসেছি যে, পেঁয়াজ খাওয়া মনে হয় একটা সুন্নাত টাইপের কিছু! প্রায়ই হিন্দুদের মুখে এই অতিরিক্ত পেঁয়াজ, রসুন আর মশলা খাওয়ার জন্য মুসলিমদের প্রতি তাদের যাচ্ছে না তাই ভাষায় নিন্দা শুনতাম, আর তার ওপর আমার নিজেরও অতিরিক্ত পেঁয়াজ, রসুন আর মশলা কোনো কালেই পছন্দের ছিল না, আজও নেই!
.
কিন্তু যখন ইসলামকে আল্লাহর রহমতে নিজে যাচাই এর কিছুটা সুযোগ পেলাম, তখন পরিষ্কার দেখতে পেলাম যে, ইসলাম এহেন অতিরিক্ত পেঁয়াজ, রসুন, তেল, মশলা খাওয়ার নির্দেশনা কখনও দেয় নি!!!
.
আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলছেন:
.
"লোকে তোমাকে প্রশ্ন করে, তাদের জন্য কী কী বৈধ করা হয়েছে? বলো, সমস্ত ভাল (পবিত্র) জিনিস তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে..."
(আল-কোরআন, ৫:৪)
.
আমি বলছি না যে, পেঁয়াজ, রসুন আর মশলায় উপকারিতা একদমই নেই; কিন্তু এটাও সত্য যে, এগুলো একটু বেশি খেলেই আপনার পেটে গ্যাস ও নানাবিধ সমস্যা দেখা দেবে। দেখুন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী সাজেশন দিচ্ছেন:
.
"মানুষ পেটের চেয়ে নিকৃষ্ট কোন পাত্র ভর্তি করে না। (যতটুকু খাদ্য গ্রহণ করলে পেট ভরে পাত্র থেকে ততটুকু খাদ্য উঠানো কোন ব্যক্তির জন্য দূষণীয় নয়)। যতটুকু আহার করলে মেরুদন্ড সোজা রাখা সম্ভব, ততটুকু খাদ্যই কোন ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট। এরপরও যদি কোন ব্যক্তির উপর তার নফস (প্রবৃত্তি) জয়যুক্ত হয়, তবে সে তার পেটের এক-তৃতীয়াংশ আহারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানির জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখবে।"
.
[সুনানে ইবনে মাজাহ/অধ্যায়ঃ ২৩/ আহার ও তার শিষ্টাচার (كتاب الأطعمة)/হাদিস নম্বরঃ ৩৩৪৯;
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
উৎস - http://www.hadithbd.com/share.php?hid=44313]
.
তাহলে ইসলামিক সিস্টেমে খাওয়ার পদ্ধতি হল, উত্তম খাদ্য পরিমিত গ্রহণ করা, পানি পান করা এবং তারপরও যেন খেয়ে গলায় গলায় না ওঠে সেই ব্যবস্থা রাখা।
.
তাহলে এই নীতিতে আমরা যদি পেঁয়াজ, রসুন, তেল আর মশলাও খাই, তবে তা কম পরিমাণে খাওয়া উচিৎ। দেখুন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কীভাবে অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবারকে প্রত্যাখান করেছেন:
.
"নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে একটি পাত্র যার মধ্যে শাক-সবজী ছিল আনা হল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গন্ধ পেলেন এবং এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন, তখন তাঁকে সে পাত্রে রক্ষিত শাক-সবজী সম্পর্কে অবহিত করা হল, তখন একজন সাহাবী আবূ আইয়ূব (রাঃ) কে উদ্দেশ্য করে বললেন, তাঁর কাছে এগুলো পৌঁছিয়ে দাও। কিন্তু তিনি তা খেতে অপছন্দ মনে করলেন, এ দেখে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি খাও। আমি যার সাথে গোপন আলাপ করি তাঁর সাথে তুমি আলাপ কর না (ফিরিশতার সাথে আমার আলাপ হয় তাঁরা দুর্গন্ধ অপছন্দ করেন)।"
.
[সহীহ বুখারী (ইফাঃ)/অধ্যায়ঃ ১০/ আযান (كتاب الأذان)/হাদিস নম্বরঃ ৮১৩/হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih);
উৎস - http://www.hadithbd.com/share.php?hid=820]
.
.
তাহলে ভাই কী বুঝলেন?
যদি সুন্নাত পালন করতে চান, তাহলে সঠিকভাবে পালন করুন। নিজের আর সমাজের মনগড়া বিদআতকে সুন্নাত বলে চালাবেন না!
.
আমার সেই দুই মুসলিম বন্ধুর কথা মনে পড়ে গেল। তাদের একজনের কথার সাথে মিল পাওয়া হাদিসটা তো পেলাম। এবার চলুন আরেক বন্ধুর কথার সাথে যে হাদিসটা মিলে যাচ্ছে সেটাও না হয় দেখা যাক!
.
"জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি কাঁচা রসুন কিংবা পেঁয়াজ খায়, সে যেন আমাদের থেকে কিংবা আমাদের মসজিদ থেকে আলাদা থাকে। আর সে যেন তার ঘরে বসে থাকে...."
.
[সহীহ বুখারী (তাওহীদ)/অধ্যায়ঃ ৯৬/কুরআন ও সুন্নাহকে শক্তভাবে ধরে থাকা (كتاب الاعتصام بالكتاب والسنة)/হাদিস নম্বরঃ ৭৩৫৯/হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih);
উৎস - http://www.hadithbd.com/share.php?hid=32217]
.
.
তাহলে আশা করি এবার যাদের অতিরিক্ত মশলা বিশেষ করে পেঁয়াজ, রসুন খাওয়ার মনগড়া কাল্পনিক সুন্নাতের ভূত মাথায় চেপে ছিল, তারা সেটাকে মাথা থেকে বের করার চেষ্টা করবেন।
.
"ইবনু উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন একদিন এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে ঢেকুর তুললো। তিনি বললেন, আমাদের সামনে তোমার ঢেকুর তোলা বন্ধ কর। অবশ্যই যে সকল ব্যক্তি দুনিয়াতে বেশি পরিতৃপ্ত হবে তারাই কিয়ামাতের দিন সবচেয়ে বেশি ক্ষুধার্ত থাকবে।"
.
[সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)/অধ্যায়ঃ ৩৫/ কিয়ামাত ও মর্মস্পর্শী বিষয় (كتاب صفة القيامة والرقائق والورع عن رسول الله ﷺ)/হাদিস নম্বরঃ ২৪৭৮/হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan);
উৎস - http://www.hadithbd.com/share.php?hid=41127]
[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...
Comments
Post a Comment