ইসলামে ঈমান, অন্ধভক্তির সমতুল্য নয়! আর একারণেই যুগে যুগে নিরপেক্ষ সত্যসন্ধানীরা ইসলামকে যাচাই করে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশিত পথে নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছেন। তাই যদি সুফিবাদের অনুসারীরা নিজেদের মতপথকে সত্য ইসলামের অংশ বলে মনে করেন, তাহলে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিন।
.
তাবলীগী নিসাব ফাযায়েলে আমাল বইয়ে গাঙ্গুহী তার মোরশেদ হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কীর খেদমতে লিখিত এক চিঠিতে বলেনঃ
.
"....অধিক লেখা বে-আদবী মনে করিতেছি। হে আল্লাহ! ক্ষমা কর, হজরতের আদেশেই এই সব লিখিলাম, মিথ্যাবাদী, কিছুই নই, শুধু তোমরাই ছায়া, আমি কিছুই নই, আমি যাহা কিছু সব তুমিই তুমি।"
.
(ফাযায়ে আমাল, দ্বিতীয় খন্ড, ১৮৫ পৃষ্ঠা)
.
উদ্ধৃত অংশ থেকে দুটি বিষয় সম্পর্কে ধারণা আসে:
.
১) হুলুল,
২) ওয়াহদাতুল উজুদ
.
.
১) হুলুল:
.
"হুলুল-এর সংজ্ঞায় আলেমগণ বলেনঃ
.
হুলুল এর তাৎপর্য হচ্ছে, আল্লাহ তাআলা তাঁর কতিপয় সৃষ্টির মধ্যে অবতরণ করেন এবং তার সাথে মিশে একাকার হয়ে যান। যেমন খৃষ্টানদের ধারণা যে, ঈসা ইবনে মারইয়ামের মাধ্যমে স্বয়ং আল্লাহ অবতরণ করেছিলেন। সুফীদের কতিপয় লোকের বিশ্বাস হচ্ছে প্রখ্যাত সুফী সাধক মানসুর হাল্লাজ এবং অন্যান্য কতিপয় সুফী সাধকের মধ্যে আল্লাহ অবতরণ করেছেন..."
.
(গ্রন্থঃ কুরআন ও হাদীছের মানদন্ডে সুফীবাদ/অধ্যায়ঃ সূফীবাদ/প্রচলিত সুফীবাদের কতিপয় বিভ্রান্তি)
.
.
♦আমার প্রথম প্রশ্ন:
.
"হুলুল" এর ধারণা হিন্দুধর্মের "অবতারবাদ" এর সঙ্গে মিলে যায়।
.
"হে ভারত, যখনই ধর্মের অধঃপতন হয় এবং অধর্মের অভ্যূত্থান হয়, তখনই আমি নিজেকে প্রকাশ করে অবতীর্ণ হয়।"
(ভগবতগীতা, ৪:৭)
.
তাহলে সুফি ভাইয়েরা কি অবতারবাদকে মেনে নিতে প্রস্তুত? যদি প্রস্তুত থাকেন, তাহলে এটা কীভাবে ইসলামিক হয় আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত এর আকিদার অন্তর্ভুক্ত হয়, দয়া করে একটু ব্যাখ্যা করবেন কী?
.
.
২) ওয়াহদাতুল উজুদ:
.
"ওয়াহ্দাতুল উজুদের এর তাৎপর্য হচ্ছে
.
সৃষ্টি এবং স্রষ্টা একই জিনিস। অর্থাৎ সৃষ্টিজীব এবং আল্লাহ তাআলার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, উভয়ই এক ও অভিন্ন। ইবনে আরাবী এ মতেরই সমর্থক ছিল। তার মতে পৃথিবীতে যা আছে সবই মাবুদ...."
.
(গ্রন্থঃ কুরআন ও হাদীছের মানদন্ডে সুফীবাদ/অধ্যায়ঃ সূফীবাদ/প্রচলিত সুফীবাদের কতিপয় বিভ্রান্তি)
.
.
♦ আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন:
.
ওয়াহদাতুল উজুদ এর ধারণা আদি শঙ্করাচার্যের ব্যাখ্যাকৃত হিন্দু দর্শনের "অদ্বৈতবাদ" এর সাথে মিলে যায়, যে ধারণা অনুযায়ী, জীব(সৃষ্টি) ও ব্রহ্ম(ঈশ্বর)-তে কোনো পার্থক্য নেই, কারণ জীব হল আসলে ব্রহ্মেরই অংশ।
.
"হে পান্ডব, এইভাবে তত্ত্বজ্ঞান লাভ করে তুমি আর মোহগ্রস্ত হবে না যখন জানবে, সমস্ত জীবই আমার বিভিন্ন অংশ এবং তারা সকলেই আমাতে অবস্থিত এবং তারা সকলেই আমার।"
(ভগবতগীতা, ৪:৩৫)
.
তাই আমার প্রশ্ন হল, তারা কি হিন্দু দর্শনের অদ্বৈতবাদ মেনে নিতে প্রস্তুত? যদি প্রস্তুত থাকেন, তাহলে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত এর আকিদায় সেটাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
.
.
♦ আমার তৃতীয় প্রশ্ন:
.
ওয়াহদাতুল উজুদ অনুযায়ী, আল্লাহ ও সৃষ্টি একই এবং তাই প্রতিটি সৃষ্টি আসলে আল্লাহর অংশ (নাউজুবিল্লাহ)। তাহলে সৃষ্টির একটি অংশের ইবাদতের অর্থ দাঁড়াবে আল্লাহর ইবাদত করা (নাউজুবিল্লাহ)।
.
আমার প্রশ্ন হল, তাহলে আল্লাহর অংশ মনে করে প্রকৃতিপূজা, মানুষ পূজা ও মূর্তিপূজা করতে সুফি ভাইয়েরা কি প্রস্তুত? যদি প্রস্তুত থাকেন, তাহলে দয়া করে ব্যাখ্যা করবেন কি এগুলো কীভাবে ইসলামিক হয়?
.
.
♦ আমার শেষ প্রশ্ন:
.
সুফিবাদের দর্শনে একটা দিক দিয়ে সুফি ভাইয়েরা পিছিয়ে। আর সেটা হল, তারা "মায়া" এর দর্শন সঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারেন নি। "মায়া" অর্থ "বিভ্রম", "মিথ্যা", হিন্দু দর্শনে একে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে যেখানে জীব ও ব্রহ্ম একই - এটা বলার সাথে সাথে বলা হয়েছে যে, এই জগতটা হল মায়া অর্থাৎ মিথ্যা, ঠিক স্বপ্নের মত।
.
তাহলে আমার প্রশ্ন, সুফি সাধকরা কি হিন্দু দর্শনে পুরোপুরি প্রবেশ করতে প্রস্তুত? কারণ তাদের ওয়াহদাতুল উজুদকে পুরোপুরি বুঝতে বেদান্ত শাস্ত্রের অধ্যয়ন এবং তার যথাযথ অনুসরণ জরুরি। নয়ত তাদের সাধনায় পরিপূর্ণ সিদ্ধিলাভ সম্ভব নয়। তাহলে হিন্দু দর্শন গ্রহণ করতে সুফি সাধকদের আপত্তি না থাকলে হিন্দু দর্শন গ্রহণের অনুমতি যে ইসলামে আছে, তার যথাযথ ইসলামিক দলিল কি পেশ করবেন দয়া করে???
.
.
বি:দ্র: আমি ইচ্ছাকৃতভাবেই কোরআন-হাদিস থেকে কোনো দলিল পেশ করি নি। কারণ সুফিবাদের অনুসারীরা কোনো দলিল এর তোয়াক্কা করেন না। তাই তাদের কাছে কেবল আমার প্রশ্নগুলো পেশ করলাম। আশা করব, তারা যথাযথ ইসলামিক দলিল সহ আমার প্রশ্নের সন্তুষ্টজনক উত্তর দেবেন। তবুও কোরআন থেকে একটি আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে আমি শেষ করছি:
.
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ ءَامِنُوا۟ كَمَآ ءَامَنَ ٱلنَّاسُ قَالُوٓا۟ أَنُؤْمِنُ كَمَآ ءَامَنَ ٱلسُّفَهَآءُۗ أَلَآ إِنَّهُمْ هُمُ ٱلسُّفَهَآءُ وَلَٰكِن لَّا يَعْلَمُونَ
.
যখন তাদেরকে বলা হয়, যে সব লোক ঈমান এনেছে তাদের মতো তোমরাও ঈমান আন, তারা বলে, ‘নির্বোধেরা যেমন ঈমান এনেছে, আমরাও কি তেমনি ঈমান আনব’? আসলে তারাই নির্বোধ, কিন্তু তারা তা’ বুঝতে পারে না।"
.
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ২:১৩)
[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...
অদ্বৈতবাদের সাথে প্রকৃতবাদ আর বিশিষ্টাদ্বৈতাবাদ মিশায় জগাখিচুড়ী করে দিছেন।
ReplyDeleteবিশেষ করে ব্রহ্মের অংশ এটা বিশিষ্টাদ্বৈতাবাদের কথা।জীব মিথ্যা,ঈশ্বরও মিথ্যা অদ্বৈতবেদান্তের শুধুমাত্র ব্রহ্ম সত্য,জীব স্বরূপত ব্রহ্মই জীবের জীবত্ব মিথ্যা,স্রষ্টা,সৃষ্টি এক বলে কথা নাই,অদ্বৈতবেদান্তে পরিণামবাদের জায়গা নেই ব্যবহারিকে স্রষ্টা ও সৃষ্টি ভেদ ধরা হয় অবশ্য এ ভেদ মিথ্যা পরমার্থে স্রষ্টা ও সৃষ্টি উভয় নেই একমাত্র অদ্বৈত ব্রহ্ম ব্যতীত।মিথ্যা অর্থ অনির্বচনীয়।এ জগৎ ব্রহ্মের বিবর্ত এবং মায়ার পরিণাম বিস্তারিত জানতে পঞ্চদশী,নৈষ্কর্ম্য সিদ্ধি পড়তে পাড়েন।
Delete