কেন ইসলাম ‘অবতারবাদ’(মানুষ বা অন্য কোনো রূপে ঈশ্বরের পার্থিব অবতরণ)-কে সমর্থন করে না???
.
(অমুসলিমদের প্রতি আমাদের জবাব)
.
.
১) সৃষ্টিকর্তা সর্বোচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত:
.
“আর আল্লাহর জন্যই হল নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের আধিপত্য। আল্লাহই সর্ব বিষয়ে ক্ষমতার অধিকারী।”
(আল-কোরআন, ০৩:১৮৯)
.
যেহেতু আল্লাহ(সৃষ্টিকর্তা) সর্বোচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত, তাই তাঁর জন্য এটা উপযুক্ত নয় যে, তিনি এমন কাজ করবেন যা তাঁর মর্যাদাকে অধঃপতিত করবে।
.
এখন যদি তিনি অবতার-রূপে আবির্ভূত হন, তবে তাঁকে নিম্নতর পার্থিব অবয়ব ধারণ করতে হবে যা তাঁর(সৃষ্টিকর্তার) সর্বোচ্চ মর্যাদার একটি অবনমন।
.
২) সৃষ্টিকর্তা তুলনীয় নন:
.
"আর কোনো কিছুই তাঁর সমতুল্য নয়।"
(আল-কোরআন, ১১২:৪)
.
সৃষ্টিকর্তা এতই উচ্চ (ক্ষমতা ও মহত্ত্বে) যে, আমরা তাঁকে কোনো কিছুর সঙ্গেই তুলনা করতে পারি না। এজন্য আমাদের সীমিত মাত্রার পরিমাপণ পদ্ধতির দ্বারা আমরা তাঁকে মাপতে সক্ষম নই এবং একারণেই আমাদের সামান্য ক্ষমতার দৃষ্টিশক্তিও তাঁর চিত্র ধারণ করতে পারে না যেহেতু সৃষ্টিকর্তার কোনো পার্থিব অবয়ব নেই। কিন্তু যদি তিনি পার্থিব কোনো অবয়ব ধারণ করেন, তবে তিনি আমাদের সীমিত মাত্রার আকৃতির সাথে তুলনীয় হয়ে পড়বেন। ফলে সৃষ্টিকর্তা তখন তাঁর ঐশ্বরিক সত্ত্বার অনন্য বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলবেন।
.
৩) সৃষ্টিকর্তা সমস্ত পার্থিব সীমাবদ্ধতার উর্ধ্বে:
.
আমরা মনুষ্য সম্প্রদায় পার্থিব সীমাবদ্ধতার স্তরে অবস্থান করি। আমাদের মধ্যে ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিকই আছে। আমরা খাদ্য, বিশ্রাম প্রভৃতির ওপর নির্ভরশীল। আমরা পবিত্র হই, আবার অপবিত্রতার সংস্পর্শেও আসি। আমরা জন্মগ্রহণ করি, আবার মৃত্যুকেও বরণ করি। এহেন পার্থিব সীমাবদ্ধতার বেড়াজালে আমরা আবদ্ধ।
.
কিন্তু যিনি সকল কিছুর নিয়ন্ত্রক, সেই সত্ত্বার(সৃষ্টিকর্তার) ক্ষেত্রে এটা সামাঞ্জস্যপূর্ণ নয় যে, তিনি আমাদের সীমাবদ্ধতার সঙ্গে সমতুল্য হয়ে পড়বেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি সৃষ্টিকর্তা কোনো অবতার রূপ ধারণ করেন, অথবা যদি আমরা এটা ধরে নিই যে, অবতার হল পার্থিব অবয়ব ধারণকারী সৃষ্টিকর্তার কোনো অংশবিশেষ, তাহলে সৃষ্টিকর্তাকে পার্থিব জগতের অপবিত্রতাকে বরণ করতে হবে, কারণ আমাদের এই পৃথিবী প্রচুর ময়লা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ। তাছাড়া এটা যুক্তিযুক্ত যে, অবতার রূপ ধারণ করলে সৃষ্টিকর্তাকে তাঁর পার্থিব দেহ কর্মক্ষম রাখার জন্য খাদ্য, বিশ্রাম প্রভৃতির ওপর নির্ভর করতে হবে; তাঁকে (পার্থিবজগতের নিয়মে) জন্মাতে হবে, আবার মরতেও হবে। ফলে তখন সৃষ্টিকর্তার সর্বোচ্চ অবস্থানের সুস্থিতি বজায় থাকবে না যা তুলে ধরবে যে, সৃষ্টিকর্তাও পার্থিব সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ। আমরা মুসলিমরা এমন ঈশ্বরে বিশ্বাস করি যিনি সমস্ত পার্থিব সীমাবদ্ধতার উর্ধ্বে।
.
"যদি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলে আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্য থাকত, তবে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত। অতএব তারা যা বলে, তা থেকে আরশের অধিপতি আল্লাহ পবিত্র।"
(আল-কোরআন, ২১:২২)
.
৪) সৃষ্টিকর্তা সকল কিছুই অনুধাবন ও নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম:
.
একজন ইঞ্জিনিয়ার কোনো যন্ত্র বানালে তিনি যেমন যন্ত্রটার অবস্থা কেমন সেটা বুঝতে পারেন এবং সেই যন্ত্রটাকে নিয়ন্ত্রণও করতে পারেন, তেমনি সৃষ্টিকর্তাও আমাদের সৃষ্টি করেছেন বিধায় আমাদের অনুভূতি ও আবেগগুলো কেমন তা অনুধাবন করতে এবং আমাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতেও তিনি সক্ষম। তাই সৃষ্টিকর্তার সাথে এটা সামাঞ্জস্যশীল নয় যে, আমাদের অনুভূতিগুলো কেমন তা বুঝতে তিনি পার্থিব অবতার রূপে নেমে আসবেন কেননা তখন তা নির্দেশ করবে যে, সৃষ্টিকর্তা ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ নন। আমরা মুসলিমরা এমন ঈশ্বরে বিশ্বাস করি যিনি আমাদের অনুভূতিগুলো অনুধাবন করতে এবং আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতেও সক্ষম।
.
"বলো, 'তোমরা যদি মনের কথা গোপন করে রাখ অথবা প্রকাশ করে দাও, আল্লাহ সে সবই জানতে পারেন। আর নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সেসবও তিনি জানেন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে শক্তিমান'।"
(আল-কোরআন, ৩:২৯)
.
৫) বাস্তব উদাহরণসমূহ:
.
"হে ভারত, যখনই ধর্মের অধঃপতন ও অধর্মের অভ্যুত্থান হয়, তখনই আমি নিজেকে প্রকাশ করে অবতীর্ণ হই। সাধুদের পরিত্রাণ, দুষ্কৃতিদের বিনাশ এবং ধর্ম সংস্থাপনের জন্য আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হই।"
(ভগবতগীতা, ৪:৭-৮)
.
অর্থাৎ, ভারতীয় দর্শন অনুযায়ী, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করতে ঈশ্বর অবতার রূপে আবির্ভূত হন। তাই-ই যদি হয়ে থাকে, তবে ঈশ্বরের অবতার রূপ কোথায় ছিল যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়? যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়?? কেনো হিরোশিমা আর নাগাসাকির লোকদের বাঁচাতে তিনি পৃথিবীতে আবির্ভূত হলেন না? কেনো তিনি এলেন না ভারতকে সুদীর্ঘ ব্রিটিশ শাসনের দাসত্ব থেকে মুক্ত করতে???
.
তাই নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি কি সত্য ঈশ্বরেরই উপাসনা করছেন?
.
ইসলামে আমরা বিশ্বাস করি যে, এই পার্থিব জগত হল পরীক্ষা ক্ষেত্র এবং পরিপূর্ণ ফলাফলের প্রাপ্তি ঘটবে পরকালে। তাই সৃষ্টিকর্তা অবিচারক নন, বরং তিনি বিভিন্ন উপায়ে আমাদেরকে (পার্থিব জগতে) পরীক্ষা করে থাকেন।
.
"যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য - কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।"
(আল-কোরআন, ৬৭:২)
.
"নিশ্চয় আল্লাহ অণু পরিমাণও অবিচার করেন না। আর যদি সেটি ভাল কাজ হয়, তিনি তাকে দ্বিগুণ করে দেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে মহা প্রতিদান প্রদান করেন।"
(আল-কোরআন, ৪:৪০)
.
"সেদিন(পাপ-পুণ্যের বিচার দিবসে) প্রত্যেক ব্যক্তি সৎকাজ হতে যা করেছে ও দুস্কর্ম হতে যা করেছে তা দেখতে পাবে; তখন সে ইচ্ছা করবে - যদি তার মধ্যে এবং ঐ দুস্কর্মের মধ্যে সুদূর ব্যবধান হত! আল্লাহ তোমাদেরকে স্বীয় পবিত্র অস্তিত্বের ভয় প্রদর্শন করছেন এবং আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের প্রতি স্নেহশীল।"
(আল-কোরআন, ৩:৩০)
.
.
আহমেদ আলি সিরিজ/ইসলাম ও অবতারবাদ
[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...
Comments
Post a Comment