এক বোনের হিজাব সংক্রান্ত অভিযোগের জবাব
.
মুসলিম নামধারী এক বোন হিজাব নিয়ে এক প্রকার অভিযোগমূলক একটা পোস্ট দেন ফেসবুকের একটি গ্রুপে। তার অভিযোগটির মূলতত্ত্ব বর্তমানে প্রায় সকল আধুনিক মুক্তমনা ও নারীবাদীদের বক্তব্যদের সাথে মিলে যায়। তাই তার পোস্টের জবাব দিলেই আশা করা যায়, হিজাব সংক্রান্ত অভিযোগগুলোর মূল জবাবটা দেওয়া সম্ভব হবে।
.
উক্ত বোনের পোস্টটি ছিল এরকম:
.
"নবীর নির্দেশ অমান্য করে দাড়িটুপি, জুব্বা,পাগড়ি না পড়লে পুরুষ নষ্টা হয়না।কিন্তু হিজাব বোরখা না পরে জিন্স পড়লেই নারীদের নষ্টা বেহায়া ট্যাগ দেওয়া হয় কেন? তাহলে কি নারীরা শুধুই ভোগ্যবস্তু? কলা মিষ্টি খোলা থাকলেই নোঙ্গরা হয়ে যাবে? নাকি নারীরা মায়ের জাত ? তাদের দেখলে নজর অবনমিত করে চলা উচিত।নারীর মাংস পিন্ডে তাকানোর পূর্বে নজের মায়ের বোনের পবিত্র মাংস পিন্ডের চিন্তা মাথায় আসলেই নজরের পর্দা সুরক্ষিত হয়।কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর পর্দাকে বয়েসই করে দেখলেও পুরুষের নজরের পর্দার ব্যাপারে কেন এত উদাসীন।"
.
উৎস: আস্তিক বনাম নাস্তিক নিরপেক্ষ মতামত ও যুক্তিসঙ্গত আলোচনা(শিক্ষা মূলক বিতর্ক)
.
.
আসুন ওনার দাবি গুলো এক এক করে যাচাই করি।
.
.
///নবীর নির্দেশ অমান্য করে দাড়িটুপি,জুব্বা,পাগড়ি না পড়লে পুরুষ নষ্টা হয়না। কিন্তু হিজাব বোরখা না পরে জিন্স পড়লেই নারীদের নষ্টা বেহায়া ট্যাগ দেওয়া হয় কেন?///
.
.
জবাব:
কথাটা শুনে হাসব না কাঁদব বুঝে উঠতে পারছি না, নবীজী বলেছিলেন যে কেয়ামতের আগে মূর্খতা প্রসার লাভ করবে যার জলজ্যান্ত প্রমাণ আজ দেখতে পাচ্ছি।
.
প্রথমত, ইসলাম অনুযায়ী পুরুষ ও নারী পরস্পর সমান নয়, বরং তারা পরস্পর সমতুল্য যেমনভাবে চুম্বকের উত্তর ও দক্ষিণ মেরু পরস্পর সমান নয়। তাই তাদের প্রকৃতি, মানসিক বিষয় সব কিছুতেই ভিন্নতা আছে। এ কারণে পুরুষ ও নারীকে তাদের নিজ নিজ অবস্থানে রেখে বিচার করতে হবে, কারণ প্রত্যেকের অবস্থান স্বতন্ত্র। পুরুষ এর অবস্থান তার প্রকৃতির সাথে সামাঞ্জস্যশীল, আর নারীর প্রকৃতির সাথে তার অবস্থান সামাঞ্জস্যশীল।
.
একই কারণে কোনো পুরুষ স্বাভাবিকভাবে হরমোন পরিবর্তন না করে গর্ভ ধারণ ও সন্তান জন্ম দিতে পারে না। এই কারণে নারীর ন্যায় পুরুষের বক্ষদেশ তীব্র আকর্ষণীয় হয় না। এই কারণেই পুরুষের প্রতি পুরুষের আকর্ষণের তুলনায় নারীর প্রতি নারীর আকর্ষণের প্রবণতা বেশি হয়। আর ঠিক এই কারণেই নারীর কোনো পুরুষকে দেখে হঠাৎ করে তীব্র কামনা সাধারণত আসে না, কিন্তু পুরুষের কোনো নারীকে দেখলে যৌন হরমোনের দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীলতার প্রাকৃতিক প্রভাবে হঠাৎ করেই নারীর প্রতি তার প্রকৃতিসুলভ কামনা জেগে ওঠে। আর এ কারণেই একজন নারী সমাজের আর পাঁচটা পুরুষকে যেমনভাবে আকৃষ্ট ও পথভ্রষ্ট করতে পারে, একজন পুরুষ সেভাবে তা পারে না।
.
আর আমাদের মুসলিম সমাজে এই উগ্র আকর্ষণকে আমরা সহ্য ও সমর্থন করি না বলেই অনেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে ভাষার লিমিট হারিয়ে ফেলে।
.
কিন্তু তবুও যদি কেউ একটু নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করে, তাহলে ব্যাপারটা আরও একটু পরিষ্কার হয়ে ওঠে।
.
যদি আপনি হাতুড়ে ডাক্তার এর কাছে যান আর তার ভুল চিকিৎসায় আপনি আরও অসুস্থ হয়ে যান, তাহলে দায়টা কার - হাতুড়ে ডাক্তারের না মেডিকেল সাইন্সের?? অবশ্যই সেই ডাক্তারের!
আবার আর এর মানে কি এই যে, সব ডাক্তারই অদক্ষ??? কখনই না!
একইভাবে, যদি মুসলিম সমাজের এক অংশ ইসলামের নীতি সঠিকভাবে মেনে না চলে, তাহলে তার দায় সেই অংশের, এর জন্য না আপনি ইসলামকে দোষারোপ করতে পারেন, না আপনি সমগ্র মুসলিম সমাজকে দায়ী করতে পারেন। প্রত্যেকটা গোত্রেই কিছু কুলাঙ্গার থাকে, আর অদক্ষ ড্রাইভার দিয়ে আপনি কোনো ভালো গাড়িকে যাচাই করতে পারেন না, এটা মূর্খতার পরিচয়।
.
আল্লাহ তায়ালা নারীর হিজাবের আগে কোরআনে পুরুষের হিজাবের ইঙ্গিত দিয়েছেন:
.
"**মু’মিন পুরুষদেরকে** বলো তাদের দৃষ্টি অবনমিত করতে আর তাদের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করতে, এটাই তাদের জন্য বেশি পবিত্র, তারা যা কিছু করে সে সম্পর্কে আল্লাহ খুব ভালভাবেই অবগত।
.
আর **ঈমানদার নারীদেরকে** বলে দাও তাদের দৃষ্টি অবনমিত করতে আর তাদের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করতে, আর তাদের শোভা সৌন্দর্য প্রকাশ না করতে যা এমনিতেই প্রকাশিত হয় তা ব্যতীত...."
.
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ২৪:৩০-৩১)
.
.
///তাহলে কি নারীরা শুধুই ভোগ্যবস্তু? কলা মিষ্টি খোলা থাকলেই নোংরা হয়ে যাবে?///
.
জবাব:
ধরুন, আপনি একটা হীরের নেকলেস বানিয়ে নিয়ে এলেন। এবার সেটা কি আপনি রাস্তায় রেখে দেবেন??
না, আপনি রাস্তায় তো দূরে থাক, তা আপনার পাশের বাড়ির প্রতিবেশীর ঘরেও রাখবেন না। কারণ আপনি জানেন তা কতটা মূল্যবান আর তাই সেটাকে যেভাবে পারা যায়, আপনি লুকিয়ে রেখে সংরক্ষরণ করতে চাইবেন। ঠিক একইভাবে ইসলামে মুমিন নারীর অবস্থান সেই হীরের নেকলেস এর মত, বরং তার চেয়েও মূল্যবান। আর তাইতো ইসলাম নারীর এই মর্যাদার প্রতি সম্মানের জন্য এবং সেই মর্যাদাকে আরও বর্ধিত করার লক্ষ্যে এই অপূর্ব হিজাবের বিধান দিয়েছে। কিন্তু সে যদি সেই মর্যাদাকে নিজেই ক্ষুণ্ণ করে, তাহলে তার দায় তার নিজের; ইসলাম বা মুসলিমদের নয়।
.
আপনি নিজেই আবার প্রশ্ন করেছেন যে, কলা বা মিষ্টি খোলা থাকলেই নোংরা হয়ে যাবে কিনা!
উত্তর হল, হ্যাঁ, তা নোংরা হয়ে যাবে। আপনি যতই ধুলাবালি থেকে দূরে রাখুন না কেন, খুব বেশি দিন আপনি ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক প্রভৃতি থেকে সেগুলোকে শুদ্ধ রাখতে পারবেন না! শুধু খাবারেই নয়, প্রকৃতিতে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই আপনি কোনো না কোনো ধরণের মৈথুনক্রিয়ার এরূপ বহি:প্রকাশ খুঁজে পাবেন। আর মানুষ যেহেতু সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব, হিজাব তার শ্রেষ্ঠত্বকে ঘোষিত করে লজ্জাশীলতার নিয়মে আবদ্ধকরণের মাধ্যমে অন্যান্য জীবের থেকে তাকে পৃথক করে।
.
সুতরাং বলা যায়, নারী একই সাথে ভোগের বস্তু, আবার একই সাথে সম্মানের পাত্রী! যদি সে নিজেকে ভোগের বস্তু রূপে সমাজে তুলে ধরে, তবে সে ভোগ্যতুল্য; আর যদি সে নিজের সৌন্দর্যকে আবৃত করে লজ্জাশীলতা বজায় রাখে, তবে সে সম্মানের অধিকারী। সহজ হিসাব।
.
.
///নাকি নারীরা মায়ের জাত? তাদের দেখলে নজর অবনমিত করে চলা উচিত।
নারীর মাংস পিন্ডে তাকানোর পূর্বে নজের মায়ের বোনের পবিত্র মাংস পিন্ডের চিন্তা মাথায় আসলেই নজরের পর্দা সুরক্ষিত হয়।কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর পর্দাকে বয়েসই করে দেখলেও পুরুষের নজরের পর্দার ব্যাপারে কেন এত উদাসীন।///
.
.
জবাব:
কে বলল উদাসীন! বরং আপনি নিজেই উদাসীন!
আগেই দেখানো হয়েছে যে, কোরআন নারীর হিজাবের আগে পুরুষের হিজাবের নির্দেশ দিয়েছে।
.
"**মু’মিন পুরুষদেরকে** বলো তাদের দৃষ্টি অবনমিত করতে আর তাদের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করতে, এটাই তাদের জন্য বেশি পবিত্র, তারা যা কিছু করে সে সম্পর্কে আল্লাহ খুব ভালভাবেই অবগত।
.
আর **ঈমানদার নারীদেরকে** বলে দাও তাদের দৃষ্টি অবনমিত করতে আর তাদের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করতে, আর তাদের শোভা সৌন্দর্য প্রকাশ না করতে যা এমনিতেই প্রকাশিত হয় তা ব্যতীত...."
.
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ২৪:৩০-৩১).
.
.
মানুষ নিজের মনস্তত্ত্বকে পবিত্র চিন্তায় ভরপুর করতে পারে ঠিকই, কিন্তু প্রাকৃতিক নিয়ম এর পরিবর্তন করতে পারে না। শুদ্ধ চিন্তা মানসিক, আর শারীরিক আকর্ষণ প্রাকৃতিক; আপনি হরমোনের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ এরূপ যৌন আকর্ষণকে কেবল শুদ্ধ চিন্তার মাধ্যমে থামাতে পারবেন না।
.
যদি দুটি চুম্বককে চলমান করে একে অপরের কাছে আনা হয়, তাহলে যেমন আকর্ষণ সৃষ্টি হয়, তেমনি যেকোনো একটি চুম্বককে স্থির রেখে অপরটিকে চলমান করে কাছে আনলেও আকর্ষণ জন্ম নেয়। আকর্ষণ যাতে না হয়, এর জন্ম দুটো চুম্বককেই পরস্পরের থেকে দূরে রাখতে হবে।
একইভাবে, নারী-পুরুষের অবাঞ্ছিত আকর্ষণ প্রতিরোধ করার জন্য কেবল পুরুষ বা কেবল নারী নিজেকে সংযত করলেই তা যথেষ্ট নয়; বরং নারী ও পুরুষ উভয়কেই সংযত হতে হবে। এখানে পুরুষ কেবল নিজেকে সংযত করবে আর নারী তার স্বেচ্ছাচারিতায় মত্ত হয়ে সৌন্দর্যের উগ্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে নিজেকে তুলে ধরবে - এটা কেমনতর ন্যায়বিচার হতে পারে???
পুরুষ কি নারীর দাস না খেলার পুতুল যে, যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করবেন???
.
যখন আপনার মত এসব তথাকথিত নারীবাদীরা একাধিক পুরুষের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়, নারী স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে রিয়েলিটি শো এবং আর্ট আর কালচার এর রঙিন পর্দার পিছনে সমাজের প্রজাপতিদের ভোগের বস্তুতে পরিণত হয়, নগ্নতাকে আধুনিকতা আর শিল্পের লেবেল লাগিয়ে পর্ন ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে নিজের শরীর বেচে দেয়, 'লিভ টুগেদার' নামক সমাজ ও পরিবার বিধ্বংসী লীলাক্রীড়ার স্বেচ্ছাচারিতায় মগ্ন হয়; তখন কোথায় যায় আপনাদের পবিত্র সত্ত্বার এত বড় বড় ডায়লগ???
.
এখানে এসব "মাংসপিণ্ড" দিয়ে আপনি কুরুচিপূর্ণ বিষয়ের পরিচয় দিচ্ছেন, আবার মুমিনদের সমালোচনা করতে আসছেন!!!
নিজে লজ্জাহীন বলে আপনার কোনো অধিকার নেই অন্য মুমিন ভাই-বোনদের এরূপ লজ্জাহীনতার দিকে উস্কানি দেওয়ার!!!
সমালোচনার আগে নিজেকে শুদ্ধ করে সমালোচনার যোগ্য করুন, তারপর কথা বলতে আসবেন!
.
♦ পুরুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে নারীর প্রতি তীব্র কামনা দিয়ে।
♦ নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে পুরুষের প্রতি তীব্র কামনাস্বরূপ হিসেবে।
♦ সুতরাং পুরুষের কর্তব্য নিজেকে সংযত করা।
♦ অতএব নারীর কর্তব্য নিজের সৌন্দর্যকে আবৃত রাখা।
.
তাইতো আমরা মুসলিমরা নারীকে ভোগের বস্তু মনে করি না, তাকে সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি। আর একারণেই আমরা হিজাবের কথা বলি এবং উগ্র ও অবাঞ্ছিত আকর্ষণের প্রতিবাদ করি।
.
يٰۤـاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّبِعُوْا خُطُوٰتِ الشَّيْطٰنِؕ وَمَنْ يَّتَّبِعْ خُطُوٰتِ الشَّيْطٰنِ فَاِنَّهٗ يَاْمُرُ بِالْـفَحْشَآءِ وَالْمُنْكَرِؕ وَلَوْلَا فَضْلُ اللّٰهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهٗ مَا زَكٰى مِنْكُمْ مِّنْ اَحَدٍ اَبَدًا وَّلٰـكِنَّ اللّٰهَ يُزَكِّىْ مَنْ يَّشَآءُؕ وَاللّٰهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
.
"হে ঈমানদারগণ, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, তখন তো শয়তান নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ করবে। যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া তোমাদের প্রতি না থাকত, তবে তোমাদের কেউ কখনও পবিত্র হতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পবিত্র করেন। আল্লাহ সবকিছু শোনেন, জানেন।"
.
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ২৪:২১)
.
.
আহমেদ আলি সিরিজ/ইসলামে হিজাব - পর্ব ২
[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...
Comments
Post a Comment