Skip to main content

ইসলাম বনাম হিন্দু দর্শন


কেন আমরা হিন্দু দর্শনকে স্বীকার করি না???
.
অনেক মুসলিমকে দেখি ইসলামের নিয়মগুলো ছেড়ে দিয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হিন্দু উপাসনার নিয়মগুলোকে পালন করতে। এক্ষেত্রে এটা কারও ব্যক্তিগত ব্যাপার সে কোন ধর্মের রীতি নীতি পালন করবে, সেই স্বাধীনতা তার আছে। কিন্তু যারা নিজেদের ইসলামের অন্তর্ভুক্ত দাবি করেও হিন্দুদের উপাসনা পদ্ধতি অবলম্বন করে, তারা হিন্দুদের ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ধর্মসহিষ্ণুতার বুলির প্ররোচনায় হিন্দুধর্মেরই অনুসরণ করে যেটা ইসলামে নিষিদ্ধ।
.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
.
“যে ব্যক্তি কোনো জাতির অনুকরণ, অনুসরণ ও সামঞ্জস্য বিধান করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে”।
.
(উৎস: ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ: ২/৫০; আবু দাউদ রহ. বর্ণনা করেছে উৎকৃষ্ট সনদে, হাদীস নং-৪০৩১; আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, ‘সহীহ আল-জামে‘ আস-সাগীর’, হাদীস নং-৬০২৫)
.
.
কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই এসকল হিন্দুরা ইসলাম বাদে অন্য সকল ধর্মই সমর্থন করে, আবার কোনো কোনো হিন্দু ভাই একটু বেশি ধর্মসহিষ্ণুতার নিদর্শন দেখাতে গিয়ে আগ বাড়িয়ে বলে বসে যে, সে ইসলামকেও শ্রদ্ধা করে। কিন্তু যখন তাকে মূর্তিপূজা ত্যাগ করতে বলা হয়, তখন যে মুসলিম তাকে মূর্তিপূজা করতে বারণ করছে তাকে সে মৌলবাদী, কট্টরপন্থী ইত্যাদি আখ্যা দিতে শুরু করে।
.
এখানে ইসলামে আমরা বিশ্বাস করি যে, অমুসলিমরা অবশ্যই তাদের ধর্মীয় কার্যাবলি সম্পাদন করতে পারবে এবং ইসলাম পালনের জনা তার ওপর কোনো জোরজবরদস্তি করা যাবে না। কোরআন বলছে,
.
"কাজেই তুমি তাদেরকে উপদেশ দাও, তুমি একজন উপদেশদাতা মাত্র।
**তুমি তাদের ওপর জবরদস্তিকারী নও**"
.
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ৮৮:২১-২২)
.
কিন্তু তার মানে এই না যে, এই ধর্মসহিষ্ণুতা দেখাতে গিয়ে আমাদের ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গিতে যেটা সঠিক নয়, সেটাকেও আমরা সঠিক বলব আর আনন্দ উপভোগের জন্য তাদের উপাসনা পদ্ধতিতেও অংশ নেব।
.
কোরআন বলছে,
.
"আর আমি তার ‘ইবাদাতকারী(উপাসনাকারী) নই তোমরা যার ‘ইবাদাত(উপাসনা) করে থাক,
.
আর আমি যার ‘ইবাদাত করি তোমরা তার ‘ইবাদাতকারী নও,
.
তোমাদের পথ ও পন্থা তোমাদের জন্য আর আমার জন্য আমার পথ (যে সত্য পথে চলার জন্য আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, এ পথ ছেড়ে আমি অন্য কোন পথ গ্রহণ করতে মোটেই প্রস্তুত নই)।"
.
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ১০৯:৪-৬)
.
.

কিন্তু হিন্দুরা আর তাদের দ্বারা প্রভাবিত মুসলিমরা এটা বুঝতে পারে না যে, কেন আমরা তাদের উপাসনা আর আনন্দে অংশ নিতে পারি না বা এতে কী সমস্যা আছে???
.
যদিও এখানে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, হারাম সঙ্গীত, অশ্লীলতা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণ দেখানো যায়, তবুও এগুলো দেখিয়ে খুব বেশি লাভ নেই। কারণ তখন আবার এই অপবাদ দেওয়া হবে যে, আমাদের মানসিকতা খারাপ, চিন্তা অপবিত্র ইত্যাদি ইত্যাদি।
.
তাই এখানে একেবারে প্রধান বিষয়টা দেখানো হল যে কেন আমরা হিন্দু দর্শন সমর্থন করতে পারি না।
.
.

এখানে আমরা "হিন্দু"ধর্ম বলব না, কারণ "হিন্দু", "সনাতন", "বৈদিক" ইত্যাদি সব নামই মানুষের দেওয়া, একটাও ধর্ম গ্রন্থে নেই। তাই আমরা "ভারতীয় দর্শন" শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করছি।
.
যেসব কারণের জন্য আমরা ভারতীয় দর্শন স্বীকার করতে পারি না, তার মধ্যে একটা বড় কারণ হল, এই দর্শনে কোনো সত্য সৃষ্টিকর্তার বিবরণ নেই। যত প্রকার উপাসনা আছে ভারতীয় দর্শনে, তার সব গুলোরই চূড়ান্ত উদ্দেশ্য একটাই। সেটা হল মোক্ষলাভ, মানে ঈশ্বরের সাথে মিশে যাওয়া বা এক হয়ে যাওয়া।
.
ভারতীয় দর্শন অনুযায়ী, সব কিছুই হল ঈশ্বরের অংশ, ঈশ্বর হল পরমাত্মা, আর তার থেকে পৃথক হয়ে আসে আত্মা, আর আমরা হল সেই আত্মা। যেহেতু ঈশ্বর অবিনশ্বর, আর আত্মা ঈশ্বরের অংশ, তাই আত্মাও অবিনশ্বর। অর্থাৎ, আমরা প্রকৃতপক্ষে আত্মা, আর আমরা অবিনশ্বর। কিন্তু আমরা যে ঈশ্বরের অংশ আর আমরাও অবিনশ্বর, তা আমরা বুঝতে পারি না, কারণ আমরা যে দেহ ধারণ করে আছি তা ধ্বংসশীল, আর তাই আমরা নিজেদের ধ্বংসশীল দেহ ভাবা শুরু করি যেখানে এই ভাবনাটা আমাদের অজ্ঞতা, একে বলা হয় "মায়া", আর মায়ার কারণে তাই আমরা যে ঈশ্বরের অংশ, তা বুঝতে পারি না।
.
কিন্তু যখন আমরা খুঁজতে যাই, কেন আমরা অবিনশ্বর ঈশ্বরের অংশ হওয়া সত্ত্বেও নিজেদের এই ধ্বংসশীল দেহ ভাবা শুরু করেছি, তখন দেখা যায়, এর কোনো উত্তর নেই, এটা একটা অন্ধ বিশ্বাস। স্বামী বিবেকানন্দের উত্তরটা বিষয়টাকে আরও পরিষ্কার করে।
.
**"Why should the free, perfect, and pure being be thus under the thraldom of matter, is the next question.**
.
**How can the perfect soul be deluded into the belief that it is imperfect?**
.
We have been told that the Hindus shirk the question and say that no such question can be there. Some thinkers want to answer it by positing one or more quasi-perfect beings, and use big scientific names to fill up the gap. But naming is not explaining. The question remains the same. How can the perfect become the quasi-perfect; how can the pure, the absolute, change even a microscopic particle of its nature? But the Hindu is sincere. He does not want to take shelter under sophistry.
.
**He is brave enough to face the question in a manly fashion; and his answer is: “I do not know.**
.
**I do not know how the perfect being, the soul, came to think of itself as imperfect, as joined to and conditioned by matter."**
.
But the fact is a fact for all that. It is a fact in everybody's consciousness that one thinks of oneself as the body.
.
The Hindu does not attempt to explain why one thinks one is the body. The answer that it is the will of God is **no explanation.**
.
***This is nothing more than what the Hindu says, "I do not know.""***
.
(Complete Works of Vivekananda/Volume 1/Addresses at The Parliament of Religions/Paper on Hinduism)
.
[Source-
https://en.m.wikisource.org/wiki/The_Complete_Works_of_Swami_Vivekananda/Volume_1/Addresses_at_The_Parliament_of_Religions/Paper_on_Hinduism]
.
যদি সব কিছু ঈশ্বরের অংশ হয়, তার মানে ঈশ্বর কেবল নিজের অংশের রূপান্তর করে আমাদের তৈরি করার ক্ষমতা রাখেন, শূন্য থেকে নতুন কিছু সৃষ্টি করার ক্ষমতা তার নেই।

"হে পান্ডব, এই ভাবে তত্ত্বজ্ঞান লাভ করে তুমি আর মোহগ্রস্ত হবে না যখন জানবে ***সমস্ত জীবই আমার বিভিন্ন অংশ*** এবং তারা আমাতেই অবস্থিত এবং তারা সকলেই আমার।"
(ভগবতগীতা, ৪:৩৫)
.
আমরা আরও নিশ্চিত হই যে, ভারতীয় দর্শনে আসলে কোনো সৃষ্টিকর্তার বিবরণ নেই যখন বিবেকানন্দের লেখা দেখি যেখানে তিনি এই অযুহাত দিয়েছেন যে, সৃষ্টিকর্তার ধারণা মানুষের সুখ দু:খের কারণ এর সমাধান করতে পারে না।
.
"....if they are all created, why does a just and merciful God create one happy and another unhappy, why is He so partial? Nor would it mend matters in the least to hold that those who are miserable in this life will be happy in a future one. Why should a man be miserable even here in the reign of a just and merciful God?
In the second place, ***the idea of a creator God does not explain the anomaly***, but simply expresses the cruel fiat of an all-powerful being...."

[Complete Works of Vivekananda, Volume 1/Addresses at The Parliament of Religions/Paper on Hinduism]
.
তাহলে কোনো সত্য সৃষ্টিকর্তার ধারণা ভারতীয় দর্শনে পাওয়া যায় না। তাই মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁর সর্বশেষ ঐশী বাণী আল-কোরআনে বলেন,
.
"যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্বের অধিকারী; তিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেননি; সার্বভৌমত্বে তাঁর কোন অংশীদার নেই। *তিনি সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেককে পরিমিত করেছেন যথাযথ অনুপাতে।*
.
***আর তারা তাঁর পরিবর্তে উপাস্য রূপে গ্রহণ করেছে অপরকে *যারা কিছুই সৃষ্টি করেনা,* বরং তারা নিজেরাই সৃষ্ট*** এবং তারা নিজেদের অপকার অথবা উপকার করার ক্ষমতা রাখেনা এবং জীবন, মৃত্যু ও পুনরুত্থানের উপরও কোন ক্ষমতা রাখেনা।"
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ২৫:২-৩)
.
নবীজী ছিলেন নিরক্ষর, লিখতে, পড়তে কিছুই পারতেন না, তাই এটা তাঁর পক্ষে সম্ভব না অন্য গ্রন্থ পড়ে তার ওপর কমেন্ট করা, তাঁর ওপর মক্কার লোকজন ছিল কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। এর মানে এটাই দাঁড়ায় এই জবাব তাঁর পক্ষ থেকে যিনি প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা।
আমরা আরও বুঝতে পারি, যখন বলা হয় যে, মানুষকে ঈশ্বরের অংশ থেকে না, শুন্য থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে সম্পূর্ণ নতুন ভাবে।
.
The Noble Quran, Surah Maryam, 19:67,
.
(Bengali Translation - Mujibur Rahman)
.
"মানুষ কি স্মরণ করেনা যে, আমি তাকে পূর্বে সৃষ্টি করেছি ***যখন সে কিছুই ছিল না?"***
.
English Translation - Yusuf Ali
.
"But does not man call to mind that We created him before ***out of nothing?"***
.
.
"তিনি আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা এবং যখন তিনি কোন কাজ সম্পাদন করতে ইচ্ছা করেন ***তখন তার জন্য শুধুমাত্র ‘হও’ বলেন, আর তাতেই তা হয়ে যায়।"***
(The Noble Quran, Surah Al-Baqarah, 2:117)
.
এরপর আরও জানতে পারা যে, নবীজী আসলে কোনো নতুন ধর্ম প্রচার করেন নি, তাঁকে সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে শুধু সেই সত্যের চূড়ান্ত সংশোধিত রূপটি দেওয়া হয়েছে মানব জাতির জন্য যা মানুষ সময়ের সাথে বিকৃত করে ফেলেছে, আর তা হল একমাত্র সত্য সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ মেনে চলা, যে নির্দেশ আগের সকল নবীগণ বা পয়গম্বরদেরও দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু মানুষ নিজেই তার বিকৃতি সাধন করে এবং নিজেদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি করে।
.
"মানব জাতি একই সম্প্রদায়ভুক্ত ছিল; অতঃপর আল্লাহ সুসংবাদ বাহক ও ভয় প্রদর্শক রূপে নবীগণকে(পয়গম্বর) প্রেরণ করলেন এবং তিনি তাদের সাথে সত্যসহ গ্রন্থ অবতীর্ণ করলেন যেন (ঐ কিতাব) তাদের মতভেদের বিষয়গুলি সম্বন্ধে মীমাংসা করে দেয়, অথচ যারা কিতাব প্রাপ্ত হয়েছিল, স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ তাদের নিকট সমাগত হওয়ার পর, পরস্পরের প্রতি হিংসা বিদ্বেষ বশতঃ তারা সেই কিতাবকে নিয়ে মতভেদ ঘটিয়ে বসলো, বিশ্বাস স্থাপনকারীরা যে বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করত আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে সেই বিষয়ে তাদেরকে সত্য পথে পরিচালিত করেন। আল্লাহর যাকে ইচ্ছা সঠিক পথে পরিচালিত করেন।"
.
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ২:২১৩)
.
.
"(হে মোহাম্মদ) আমি তোমাকে সমগ্র মানবমন্ডলীর জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।"
.
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ৩৪:২৮)
.
.
তাই যদি কেউ সত্যটা জানতে পারে, তবে তাঁর উচিত সেই সত্যের অনুসরণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া কারণ তাতে কিছু কষ্ট থাকলেও সেটাই প্রকৃত মুক্তির পথ।
.
মূর্তিপূজা, অগ্নিপূজা ইত্যাদিকে সর্বোচ্চ পাপকার্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কেননা এগুলো যেমন সত্য সৃষ্টিকর্তাকে অপমান করে, তেমনি সত্য হতে একজন ব্যক্তিকে সম্পূর্ণ দূরে সরিয়ে দেয়।
.
"হে বিশ্বাসীগণ! ***মদ, জুয়া আর মূর্তি ও ভাগ্য নির্ধারক তীর ঘৃণিত শয়তানী কাজ,*** তোমরা তা বর্জন কর, যাতে তোমরা সাফল্যমন্ডিত হতে পার।"
.
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ৫:৯০)
.
.
আহমেদ আলি সিরিজ/ইসলাম বনাম হিন্দু দর্শন

Comments

Popular posts from this blog

মানহাজ ও মাযাহাব নিয়ে যত দ্বন্দ্বের জবাব....

[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...

কৃষ্ণ কি আল্লাহর নবী ছিল?

এই প্রশ্নটা আমাকেও করা হয়েছে সম্ভবত কয়েকবার। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরটা বড়ই জটিল। কারণ এর কোনো যথাযথ উত্তর আমাদের জানা নেই। যদি কৃষ্ণের গোপীদের সাথে লীলার কাজকে সত্য বলে...

ভগবতগীতার বর্ণভেদ নিয়ে ভক্তদের ভণ্ডামির জবাব

============================ চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ৷ তস্য কর্তারমপি মাং বিদ্ধ্যকর্তারমব্যয়ম্৷৷১৩ অর্থ:  "প্রকৃতির তিনটি গুণ এবং কর্ম অনুসারে আমি মনুষ্য সমাজে চারটি বর্ণ...