ইসলামে নারীর অবস্থান ও মর্যাদার বিষয়গুলো আজকালকার তথাকথিত মর্ডান যুগের মর্ডান পাবলিকদের বিকৃত মস্তিষ্কে ঢোকে না। এর কারণ হল তাদের আপন স্বেচ্ছাচারিতার পদাঙ্ক অনুসরণ। তারা "যা খুশি তাই করতে পারবো" - এই চিন্তাধারাকে আঁকড়ে ধরে চলতে গিয়ে যখনই ইসলামের নিয়মনীতির সম্মুখীন হয়, তখনই তাদের যেন শ্বাসরূদ্ধকর অবস্থার সৃষ্টি হয়!
.
এখানে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখলে আশা করা যায়, কোনো ইতিবাচক ধারণাসম্পন্ন ব্যক্তি ইসলামে নারীর অবস্থান ও মর্যাদাকে অনুধাবন করতে পারবেন।
.
=> প্রথমত, ইসলাম কখনই বলছে না যে, নারী ও পুরুষ পরস্পর সমান, ঠিক যেমনভাবে চুম্বকের উত্তর ও দক্ষিণ মেরু পরস্পর সমান নয়। তবে তারা পরস্পর সমতুল্য। অর্থাৎ, তাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব-কর্তব্য এবং অধিকার তাদের নিজ নিজ প্রকৃতির সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ। পুরুষের কোনো সুবিধাজনক অবস্থান বা নারীর কোনো সুবিধাজনক অবস্থান দিয়ে কারও মর্যাদাকে ইসলাম বিচার করে নি, বরং যেটা দিয়ে বিচার করেছে, সেটা হল "তাকওয়া।" যেমন, ইসলামে পুরুষের জন্য বাধ্যতামূলক হল বাড়ির বাইরে গিয়ে কাজের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের জন্য অর্থ উপার্জন করা; তবে নারীর জন্য এটা ঐচ্ছিক এবং শর্তসাপেক্ষ। এক্ষেত্রে নারীকে উৎসাহিত করা হয়েছে গৃহের কাজের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য। এখানে যদি কেউ প্রশ্ন করে - 'কেন ইসলাম নারীকে বাইরে গিয়ে কাজ করার জন্য উৎসাহিত করছে না?' - তাহলে বলতে হবে যে, এখানে এ কাজটি পুরুষের প্রকৃতির সাথে অধিক সামাঞ্জস্যপূর্ণ কেননা গৃহের দায়িত্ব যখনই স্ত্রী সঠিক ভাবে পালন করবে না, তখনই সন্তানেরা মায়ের সাহচর্যের অভাবে ধীরে ধীরে প্রবল মনস্তাত্ত্বিক সমস্যায় ভুগতে শুরু করবে; স্ত্রীর অবহেলার কারণে স্বামী অন্য নারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ব্যভিচারের দিকে ঝুঁকে পড়বে। এখানে তাই আধুনিকতার সংকীর্ণ চিন্তায় যদি কেউ এভাবে মনে করে যে, "এটা কি নারীর প্রতি অপমান নয় যে, তাকেও পুরুষের মত বাইরে কাজ করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে না!" - তাহলে বলতেই হয়, দুঃখিত মহাশয়, আপনি যেটার দোহাই দিয়ে নারীর মর্যাদাকে ছোট বলে ভাবছেন, ইসলাম সেটাকেই নারীর মর্যাদা বলে ঘোষণা করেছে! আপনাদের স্ট্যান্ডার্ডে একজন নারী যদি স্বল্প বস্ত্র সহযোগে গৃহের বাইরে গমনপূর্বক চারটে পরপুরুষের সাথে মিশতে না পারে, স্বামী থাকা সত্ত্বেও বাইরের নামি-দামি লোকদের সাথে গিয়ে সম্পর্ক করতে না পারে, আড়ালে আবডালে গিয়ে আধুনিকতার চরম আদিম প্রকাশ ঘটাতে না পারে, তবে সেটা নারীর জন্য অমর্যাদাকর! অন্যদিকে ইসলাম অনুযায়ী যদি কোনো নারী নিজের লজ্জাশীলতাকে বজায় রেখে সংসারের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে, তবে সেটাই তাঁর জন্য প্রকৃত মর্যাদার।
.
এখানে আমরা এভাবে বিচার করি না যে, কোনো পুরুষ বাইরে কাজ করে, কোনো নারী কেন তা করছে না! এটা আপনাদের বিচারের মানদণ্ড, কিন্তু ইসলামে বিচারের মানদণ্ড হল "তাকওয়া", অর্থাৎ, আল্লাহ তায়ালার প্রতি সচেতনতা, ন্যায়পরায়ণতা, ধার্মিকতা। আপনি নারী না পুরুষ, বাড়ির বাইরে গেলেন না ভিতরে থাকলেন, এসব দিয়ে ইসলাম বিচার করে না; বরং আপনি যা-ই হোন না কেন, যা-ই করুন না কেন, আপনি আসলে কতটুকু "তাকওয়া" অর্জন করছেন এবং কতটুকু সেই অনুযায়ী চলছেন, সেটাই বিচারের প্রকৃত মানদণ্ড।
তাই মহান আল্লাহ ঘোষণা করছেন,
.
"হে মানুষ, আমি তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি আর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার।
***তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন।***
নিশ্চয় আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।"
.
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ৪৯:১৩)
.
.
=> দ্বিতীয়ত, ইসলামে অধিকার অর্থ স্বেচ্ছাচারিতার অনুমতি প্রদান নয়। যেমন কেউ যদি বলে যে, 'আজকের আধুনিক যুগে নারী পুরুষ একসাথে চলবে, তারা তো একে অপরের সহযোগী' - তবে ইসলাম অবশ্যই এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানায়; তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে ইসলামের পথে এগোতে হবে। নারী পুরুষের সম্মিলিত উদ্যোগের অর্থ নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা হলে সেক্ষেত্রে ইসলামে কোনো অনুমতি নেই। আপনি ইসলামের নীতির অনুসরণ করতে চাইলে আগে আপনাকে নিজের ভোগ-বিলাসিতা ত্যাগ করতে হবে। হয়ত ভাবতে পারেন যে, যদি নারী-পুরুষ একসাথে না মেশে, তাহলে কীভাবে সম্মিলিত উদ্যোগ সম্ভব! এটাই হল আপনাদের সংকীর্ণতা, কেননা আপনাদের স্ট্যান্ডার্ডে কীভাবে সমাজে নারী ও পুরুষ সম্মিলিত উদ্যোগ পালন করবে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে যথাযথ হিজাবের মাধ্যমে, তা আপনারা উপলব্ধি তো দূরের কথা, সঠিকভাবে জানার চেষ্টাও করেন না। এখানে যদি হিজাবের কথা বলা হয়, তবে এটার অর্থ আপনারা কেবল ইসলামিক পোশাকের ইঙ্গিতই মনে করেন, যেখানে এটা কেবল পোশাক নয়, বরং নারী-পুরুষের অবাঞ্ছিত আকর্ষণ প্রতিরোধের জন্য নানাবিধ ব্যবস্থার সম্মিলিত পথ। উপরন্তু যদি বলা হয় যে, এরূপ মেলামেশা অশ্লীল বিষয়ের দিকে নিয়ে যায়, তবে আপনাদের তৎক্ষণাৎ জবাব হয় যে, আমাদের মুসলিমদের চিন্তাধারা এত খারাপ কেন! আবার যদি বিয়ের বাইরে প্রেম আর শারীরিক সম্পর্কের কথা তোলা হয়, তখন এটা আবার আপনাদের কাছে স্বর্গতুল্য পবিত্র কার্যের প্রতিরূপ হয়ে ওঠে; এটাকে নিজেদের অধিকার বলে আপনারা প্রচার করতে শুরু করেন।
.
তাই এখানেই আমাদের বক্তব্যটা হল, আপনার স্বেচ্ছাচারিতার বিচারে ইসলামকে যাচাই করতে আসবেন না। আমরা আপনাদের কাছে যে নিকৃষ্ট, এটা এইজন্যই যে, আমরা আপনাদের ভোগ-বিলাসিতার পথ অনুসরণ করি না। আর তাই এই খেয়াল-খুশি অতিক্রম করার আগ পর্যন্ত ইসলামে নারীর অধিকারকে আপনাদের অত্যাচার বলে মনে হবে - এটাই স্বাভাবিক।
.
.
=> তৃতীয়ত, ইসলামে যে যে স্থানে নারীকে অপমান করা হয়েছে, সেখানে দুটি বিষয় লক্ষ্যণীয়:
.
১) যদি কখনও প্রসঙ্গ ছাড়া কোনো আয়াত বা হাদিস দেখা বা পড়া হয়, তবে অনেক ক্ষেত্রেই কারও মনে হতে পারে, ইসলাম নারীকে অপমান করছে। যেমন ধরুন, কয়েকটি হাদিস দেখে মনে হতে পারে যে, ইসলাম নারীকে গাধা বা পশুর সাথে তুলনা করছে। কিন্তু যদি প্রসঙ্গটা সঠিকভাবে দেখেন, তবে দেখতে পাবেন যে, সেখানে অন্য বিষয়ের ইঙ্গিত করা হয়েছে। যেমন, এক ব্যক্তি মা আয়েশা (রা) এর কাছে গিয়ে নারীদের পশুর সাথে তুলনা করল। এই পর্যন্ত থেমে গেলে আপনি নেতিবাচকই ভাবতে শুরু করবেন। যদি শেষ পর্যন্ত হাদিসটা দেখেন, তবে দেখবেন, মা আয়েশা সেই ব্যক্তির নিন্দা করেছেন আর এটাকে জাহেলিয়াত বা অজ্ঞতার যুগের ধারণা বলে ঘোষণা করেছেন। আবার অন্য একটা হাদিসে বলা হচ্ছে যে, সালাত বা নামাজের সময় সামনে দিয়ে পশু ও নারীদের চলাচলের কথা। কিন্তু বিভিন্ন হাদিস পর্যবেক্ষণ করলে আপনি দেখতে পাবেন, সেখানে নারী বা পশু নয়, বরং "সুতরাহ্" এর প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে যে, কোনো পশু বা ব্যক্তি নামাজের সময় সামনে দিয়ে গেলে নামাজ নষ্ট হয়ে যায়। সেরূপ পরিস্থিতিতে "সুতরাহ্" বা প্রতিবন্ধক জাতীয় কিছু ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে সমগ্র কোরআন এর আয়াত আর হাদিস এর প্রসঙ্গগুলোকে তুলনা করতে হবে ইসলামিক পদ্ধতিতে, নিজের মত করে নয়। আপনি যেভাবে চিন্তা করে নারীকে ছোট ভাবছেন, ইসলাম সেভাবে চিন্তা করে না। আপনি জীবনে যতগুলোই বই পড়ে থাকুন না কেন, সেই স্টাইলে কোরআন বা হাদিস পড়তে থাকলে ভুল পথেরই অনুসরণ করবেন। এর কারণ হল কোরআন ও তার ব্যাখ্যায় হাদিসকে আয়ত্ত করার স্টাইল পুরোটাই আলাদা। প্রসঙ্গ ছাড়া কোনো আয়াতের কিছু অংশ দেখে বা কোনো হাদিসের কিছু অংশ পড়ে আধুনিক জগতের স্বেচ্ছাচারিতার মানদণ্ড দিয়ে যদি আপনি যাচাই করেন, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আপনার কাছে বিষয়গুলো নেতিবাচক বলেই মনে হতে থাকবে।
.
২) কিছু কিছু স্থানে নারীকে প্রকৃত অর্থেই অপমান করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে আসলে নারীজাতিকে নয়, নারীর কুফরি(সত্য প্রত্যাখান ও সেই পথের অনুসরণ) এর প্রতি সমালোচনা করা হয়েছে। যেমন ধরুন, যখনই হাদিসে পাবেন যে, নারীর জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হল স্বামীর সাথে অসদাচারণ, অথবা অকল্যাণ রয়েছে গৃহ, অশ্ব ও নারীর মধ্যে; তখনই আপনার মনে হতে পারে যে, এখানে সমস্ত নারীজাতিকে অপমান করা হয়েছে। কিন্তু যে বিষয়টি আপনার মধ্যে নেই, সেটা হল প্রকৃত ইসলামিক পথে ইতিবাচক চিন্তাধারা। এসকল স্থানে নারীকে দুই ভাগে ভাগ করে দেখানো হয়েছে, ১) মুমিন নারী, ২) কাফির নারী।
প্রকৃত মুমিন বা সত্যবিশ্বাসী নারী পরিবারের সদস্যদের প্রতি যত্নশীল হন, নিজের লজ্জাশীলতা বজায় রাখেন, সমাজের লোকের নিকট নিজের সৌন্দর্য তুলে ধরেন না, সর্বোপরি আল্লাহ এর সন্তুষ্টির জন্যই সকল কাজ সম্পন্ন করেন। আর তাইতো এই হাদিসগুলো তাঁর জন্য কেবলই সতর্কবাণী। অন্যদিকে একজন নারী - সে যে পরিবারেই জন্ম লাভ করুক না কেন - যখন তার মধ্যে কুফরির স্বভাব বৃদ্ধি পেতে থাকে, তখন সে স্বামীর সত্যিকারের দোষ না থাকা সত্ত্বেও তার সাথে দুর্ব্যবহার করতে শুরু করে; তার অজান্তে অন্য পুরুষের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে থাকে; আধুনিকতার অযুহাতে নিজের অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যকে সমাজের আর পাঁচটা লোকের সামনে বিলিয়ে দিতে শুরু করে। নারীর এরূপ আচরণ সমাজকে ভয়াবহ অকল্যাণের দিকে ধাবিত করে, কেননা সেক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর স্বাভাবিক সম্পর্ক বিনষ্ট হয় এবং অশ্লীলতা ও ব্যভিচার প্রসার লাভ করে। যেহেতু নারীজাতির মধ্যে মুমিন নারীর তুলনায় এহেন কাফির নারীর সংখ্যাই অধিক এবং নারীর এরূপ নিজেকে সমাজে ভোগ্যপণ্যের ন্যায় বিলিয়ে দেওয়ায় সমাজের বৃহত্তর অংশের অকল্যাণ সাধিত হয়ে থাকে, তাই অকল্যাণ এর কথা প্রকাশ করতে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে নারীর প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আগেই বলা হয়েছে যে, এখানে এই সমালোচনাগুলো একজন মুমিন নারীর কাছে সতর্কবার্তা মাত্র যেহেতু তিনি এহেন কুফরির পথ এর ধারে কাছেও নন। অথচ এই একই সমালোচনা একজন কুফরির পথ অবলম্বনকারী নারীর জন্য যেন বিষাক্ত সর্প দংশনের ন্যায় যন্ত্রণাকর, কেননা সে যখন নিজের কৃতকর্মের এরূপ সমালোচনা সম্পর্কে অবগত হয় এবং নিজের স্বভাবের সাথে সেগুলোর মিল খুঁজে পায়, তখন সে স্বাভাবিকভাবেই এগুলি থেকে পালানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে থাকে; আর যদি সে ক্রমাগত শয়তানের পথ অবলম্বন করতেই থাকে, তবে ইসলামকে তার বিষাক্ত বিষের থেকেও অধিক বিষাক্ত বলে মনে হতে শুরু করে।
.
এহেন পরিস্থিত থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রয়োজন নিজের ভোগ-বিলাসিতাকে উৎসর্গ করা, সত্যকে স্বীকার করা এবং আন্তরিক তওবার মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ এর পথে ফিরে আসা। আল্লাহ বলেন,
.
"যে মুমিন অবস্থায় সৎকাজ করবে, **পুরুষ হোক বা নারী**, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত তার তুলনায় অবশ্যই আমি তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব।"
.
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ১৬:৯৭)
.
.
=> সর্বশেষ যে বিষয়টি না বললেই নয়, সেটি হল, ইসলামের একটি নিয়ম যে, নারী, তার স্বামীর অনুগত হবে - যেটি আজকালকার অনেক শিক্ষিতা মুসলিম নারীদেরও হজম হয় না। প্রথমেই বলে রাখি, হাদিসে এটা স্পষ্ট বলা আছে যে, কোনো পুরুষের ঈমান পূর্ণ হবে না যদি না সে তার স্ত্রীর প্রতি যত্নবান না হয়।
.
প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
.
أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا وَخِيَارُهُمْ خِيَارُهُمْ لِنِسَائِهِمْ.
.
‘‘সবার চেয়ে পূর্ণ ঈমানদার ব্যক্তি সে, যার চরিত্র সবার চেয়ে সুন্দর এবং ওদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম ব্যক্তি সেই, যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম।’’(আহমদ)
.
এখানে তাই, ঈমানের পূর্ণতার খাতিরে স্ত্রীর সাথে উত্তম আচরণের মাধ্যমে তার মন জয় করা পুরুষের জন্য বাধ্যতামূলক। কিন্তু এখানে অনেকে মনে করেন যে, স্ত্রীকে তার স্বামীর অনুগত হতে বলার অর্থ হল এই যে, স্ত্রী হচ্ছে স্বামীর দাসী! তাদের এরূপটা ভাবার অনেক কারণ রয়েছে, যেমন মিডিয়া ও পশ্চিমা সমাজের অপপ্রচার, নিজেদের নাফসের অনুসরণ ইত্যাদি।
যদি স্ত্রীকে স্বামীর দাসী বানানো হত, তাহলে আল্লাহ তায়ালা বলতেন না যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক দেহ ও পোশাকের মত। যেমন ভাবে, দেহ ছাড়া পোশাক মূল্যহীন, আর পোশাক ছাড়া দেহ লজ্জাহীন, তেমনিভাবেই স্বামী ও স্ত্রী পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক।
মহান আল্লাহ ঘোষণা করছেন,
.
"..তারা(স্ত্রীরা) তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা(স্বামীরা) তাদের পরিচ্ছদ..."
.
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ২:১৮৭)
.
এখানে, পারস্পরিক ভালোবাসা ও সমঝোতা বজায় রাখার পরিপূর্ণ সমাধান কীভাবে সম্ভব - সেই বিষয়টিরই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অানুগত্যের মধ্য দিয়ে।
.
প্রথমেই বলে রাখি যে, আনুগত্য অর্থ দাসত্ব নয়। সন্তানকেও পিতামাতার আনুগত্য করতে বলা হয়েছে, কিন্তু সেটি বিন্দুমাত্রও দাসত্বের সমতুল্য নয়। একইভাবে স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অানুগত্যও দাসত্ব নয়, বরং এটি স্ত্রীর কর্তব্য।
.
এখানে কাজ করছে একটি বিরাট মনস্তাত্ত্বিক সমাধান। স্বাভাবিকভাবেই, পুরুষ, নারীর প্রতি বরাবরই দুর্বল। একজন পুরুষ কোনো নারীর প্রতি যত সহজে দুর্বল হয়ে পড়ে, একজন নারী অত সহজে কোনো পুরুষের প্রতি দুর্বল হয় না। তাই দাম্পত্য জীবনেও ব্যাপারটি ব্যতিক্রম নয়। কোনো স্বামী তার স্ত্রীর প্রেমে পড়ে যতই তাকে খুশি করার চেষ্টা করুক না কেন, সেক্ষেত্রে স্বামীর প্রতি সন্তুষ্ট হলেও স্ত্রী, স্বামীর প্রতি ততটা দুর্বলতা স্বাভাবিকভাবে অনুভব করে না, যতটা না স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি অনুভব করে (এর ব্যতিক্রমও হতে পারে, তবে এখানে গড় হিসাবে বেশিরভাগের ক্ষেত্রে সাধারণ বিষয়টির কথা বলা হচ্ছে)।
.
সেক্ষেত্রে এটাই নারীর মনস্তত্ত্ব যে, সে নিজের মত করে চলবে। স্বামীর প্রতি দুর্বলতা তীব্র না হওয়ায় নিজের খেয়াল খুশির বিরুদ্ধে যদি তার স্বামী তাকে কিছু করতে বলে, তবে স্বাভাবিকভাবেই সে তার স্বামীর বিরুদ্ধচারণ করতে চাইবে।
.
অন্যদিকে স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার দরুণ স্বামী কামনা করবে যে, তার স্ত্রী সেভাবেই চলুক যেভাবে সে চায়।
.
এখানে স্বামী-স্ত্রী উভয়ইকেই আল্লাহ এর নির্দেশ অনুযায়ী চলতে হবে। আল্লাহ এর নির্দেশের বাইরে যায়, এমন কোনো কাজই স্বামী বা স্ত্রী একে অন্যের কথায় করতে পারবে না। কিন্তু হালাল পথে থেকেও কখনও স্বামীর অনেক নির্দেশ স্ত্রীর পছন্দ হবে না, এটাই স্বাভাবিক, কারণ অনেক কিছুই স্ত্রীর খেয়াল খুশির বিরুদ্ধে যাবে। তখন স্ত্রী, স্বামীর কথা শুনবে না, আর স্বামীও স্ত্রীকে অপছন্দ করতে শুরু করবে। স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা আর দুর্বলতার জন্য স্বামী, স্ত্রীর মনের ইচ্ছাগুলো পূরণ করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু যখনই স্ত্রী, তার স্বামীকে অবহেলা করতে শুরু করল, তখন স্বামীরও তার স্ত্রীর ওপর থেকে ভালোবাসা আর দুর্বলতা কমতে শুরু করবে। এই অবস্থা চলতে থাকলে ক্রমাগত তা বিবাদে রূপ নেবে, আর চরম পর্যায়ে তা বিবাহ বিচ্ছেদে গিয়ে শেষ হবে।
.
এখানে ইসলামের সবচেয়ে বড় টিপস্-টা হল, স্ত্রীকে এক্ষেত্রে আগে উদ্যোগ নিতে হবে। অর্থাৎ, সমঝোতার starting point - এ আগে আছে স্ত্রীর ভূমিকা। বিষয়টি হল এই যে, যখন স্ত্রী তার স্বামীর সাথে মিষ্টি ব্যবহার করবে, স্বামীর কোনো কথা নিজের খেয়াল খুশির বিরুদ্ধে গেলেও তা হাসিমুখে মেনে চলার চেষ্টা করবে, তখন কল্পনাতীতভাবে ইন শা আল্লাহ (আল্লাহর ইচ্ছায়) স্বামী তার স্ত্রীকে আরও ভালোবেসে ফেলবে।
সেই পর্যায়ে স্ত্রী যদি স্বামীর কাছে তার ভালো মেজাজের সময় কোনো কিছু চায়, বা স্বামীর কোনো ভুল তাকে(স্বামীকে) মিষ্টি ব্যবহারের মাধ্যমে ধরিয়ে দেয় যা সে(স্বামী) হয়ত তার স্ত্রীর ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল, তখন স্বামী স্বাভাবিকভাবেই তার স্ত্রীর কথা রাখবে; কারণ সেখানে সম্পর্কটা তখন হয়ে উঠেছে মধুর ও কল্যাণময়।
.
আজকালকার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কগুলো দেখলে দেখা যায়, গার্ল ফ্রেন্ড্র তার বয় ফ্রেন্ডকে খুশি করার চেষ্টা করে। অথচ যখন তারা বিয়ে করে, তখন স্বামীর প্রতি স্ত্রীর আর কোনো খেয়াল থাকে না।
.
তাই মুমিন ভাই ও বোনদের নিকট এই অধম ভাই এর অনুরোধ, আপনারা আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশগুলো মেনে চলুন। এটা হতে পারে যে, নিজের নাফস আর শয়তানের প্ররোচনায় ইসলামের অনেক কিছুই হয়ত আপনার ভালো লাগছে না; কিন্তু তারপরও সেগুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে। তাহলে দেখবেন, আল্লাহ এর রহমতে ইন শা আল্লাহ আপনি সত্যকে অনুভব করতে পারবেন আর আপনার দুনিয়া ও আখিরাতের পথের সকল বাধা দূর হয়ে যাবে।
.
মহান আল্লাহ ঘোষণা করছেন,
.
.
"... হতে পারে কোন বিষয় তোমরা অপছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হতে পারে কোন বিষয় তোমরা পছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আর আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না।"
.
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ২:২১৬)
.
.
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে হেদায়েতের পথে পরিচালিত করুন এবং সত্যপথে অটল থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।
.
.
আহমেদ আলি সিরিজ/ইসলামে নারী প্রসঙ্গ
[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...
Comments
Post a Comment