Skip to main content

♣ভূত-প্রেতের পর্দা ফাঁস!!♣


ইসলামে প্রেতাত্মার কোনো অস্তিত্ব নেই। কিন্তু তারপরও প্ল্যান চ্যাট বা কালো যাদুতে আত্মা হাজির করা হয় কী করে??? ইসলামে এর ব্যাখ্যা হল, এটা কোনো আত্মা বা প্রেতাত্মা নয়, বরং এটা হল ধোয়াবিহীন অগ্নিশিখাতে তৈরি শয়তান জ্বিন এর কারসাজি।
.
ইসলামি আলেম ওয়াহীদ বিন আব্দুস সালাম বালী লিখেছেন:
.
"সাধারণত যাদুকর এবং শয়তান এই কথার উপর ঐক্যবদ্ধ হয় যে, যাদুকর কতক শিরকভুক্ত কাজ করবে অথবা প্রকাশ্য কুফুরি কাজ করবে। এর পরিবর্তে শয়তান যাদুকরের সেবায় নিয়োজিত হবে বা অন্য কাউকে তার অধীন করে দিবে যে তার সেবা করবে। আর চুক্তিটি হয়ে থাকে সাধারণত যাদুকর এবং জ্বিন শয়তানের গোত্র প্রধানের সাথে। আর সেই জ্বিন অথবা শয়তান গোপনীয় তথ্য যাদুকরকে প্রদান করে, দুজনের মাঝে শক্রতা সৃষ্টি বা উভয়ের মাঝে মুহাব্বাত সৃষ্টি করিয়ে দিয়ে থাকে বা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটায়।.....
এভাবে যাদুকর জ্বিন ও শয়তানকে তার অধীনে নিয়ে খারাপ কাজ করে থাকে। অতঃপর যদি জ্বিন কখনও আনুগত্য না করে তবে যাদুকর তাবিজের মাধ্যমে সে নেতা জিনের নৈকট্য লাভ করে এবং তার গুণ কীর্তন ও তার নিকট ফরিয়াদ করে তার (গোত্রের প্রধান জিনের) কাছে অভিযোগ করে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা না করে তার কাছেই সাহায্য চায়। অতঃপর সেই জ্বিন সরদার সেই সাধারণ জিনকে শাস্তি প্রদান করে এবং যাদুকরের আনুগত্যে বাধ্য করে।"
.
(গ্রন্থঃ যাদুকর ও জ্যোতিষীর গলায় ধারালো তরবারি
অধ্যায়ঃ যাদুকরের জ্বিন হাজির করার পদ্ধতি)
.
.
তাই মূল ক্রিয়াকৌশলটা হল, শয়তান জ্বিন এক্ষেত্রে যাদুকর বা প্ল্যান চেটের আহবানকারীদের আহবানে সাড়া দিয়ে হাজির হয় এবং যাদের জ্ঞান নেই শয়তান সম্পর্কে, তারা মনে করে যে, আত্মা হাজির হয়েছে। আর তখন শয়তান তাদের সাথে মিথ্যাচার করতে থাকে এবং তাদের সামান্য কিছু স্বার্থ পূরণের প্রলোভন দেখিয়ে হারাম কাজের পথ দেখায়।
.
আল্লাহ বলেন,
.
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَتَّبِعُوا۟ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيْطَٰنِۚ وَمَن يَتَّبِعْ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيْطَٰنِ فَإِنَّهُۥ يَأْمُرُ بِٱلْفَحْشَآءِ وَٱلْمُنكَرِۚ وَلَوْلَا فَضْلُ ٱللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُۥ مَا زَكَىٰ مِنكُم مِّنْ أَحَدٍ أَبَدًا وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ يُزَكِّى مَن يَشَآءُۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
.
"হে ঈমানদারগণ, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, তখন তো শয়তান নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ করবে। যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া তোমাদের প্রতি না থাকত, তবে তোমাদের কেউ কখনও পবিত্র হতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পবিত্র করেন। আল্লাহ সবকিছু শোনেন, জানেন।"
.
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ২৪:২১)
.
.
তবে এখানে আরেকটি প্রশ্ন থেকে যায়। কোথাও অপঘাতে মৃত্যু হলে কেন সেখানে প্রেতাত্মার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়?
এর উত্তর হল, কোথাও হারাম কিছু ঘটলে শয়তান সেই ঘটনার সুযোগ নেয় এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে এই কারণে, যাতে করে সে মানুষকে আল্লাহ তায়ালার পথ হতে দূরে সরিয়ে নিতে পারে। যেমন, কেউ যখন এই ভৌতিক কার্য দেখে সেটা প্রেতাত্মার কার্য বলে ভাবে, তখন সে কুফরি বা সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে বসে; কারণ কোরআন বলছে যে, কোনো আত্মাই অতৃপ্ত হয়ে প্রেতাত্মায় পরিণত হয়ে এখানে সেখানে ঘোরাঘুরি করে না; বরং প্রত্যেকটা আত্মাই ফেরেশতা কর্তৃক সংগৃহীত হয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছায়।
.
আল্লাহ বলেন,
.
"শপথ সেই ফেরেশতাদের যারা (পাপীদের আত্মা) নির্মমভাবে টেনে বের করে,
আর যারা (নেককারদের আত্মা) খুবই সহজভাবে বের করে,
শপথ সেই ফেরেশতাদের যারা দ্রুতগতিতে সন্তরণ করে,
আর (আল্লাহর নির্দেশ পালনের জন্য) ক্ষিপ্র গতিতে এগিয়ে যায়"
.
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ৭৯:১-৪)
.
.
আবার শয়তান যখন অজ্ঞ ব্যক্তিদের প্রেতাত্মা সেজে বিভ্রান্ত করে, তখন অনেকে কালো যাদু, ওঝা, অগ্নিপূজা, মূর্তিপূজা, দেব-দেবী ইত্যাদির সাহায্য নেয় যেগুলো সবই হারাম, শিরক এবং কুফরের অন্তর্ভুক্ত পাপকার্য। আর শয়তান চায় যে, মানুষ এই সকল হারাম পথে চালিত হোক এবং তখন শয়তানের উদ্দেশ্য সফল হয়।
.
কখনও আল্লাহ ব্যতীত অন্য উপাস্যদের সাহায্য নিয়ে কোনো কুফরি কার্য যেমন, যজ্ঞ, পিণ্ডীদান, যিশুখ্রিস্টের নামে শপথ ইত্যাদি করলে ভৌতিক কার্য থেমে যায় বলে শোনা যায়। এক্ষেত্রে যখন এই ভৌতিক কার্য থেমে যায়, তখন হারাম পথের অনুসারীরা আরও বেশি তাদের মিথ্যা উপাস্যদের প্রতি এবং হারাম পথের প্রতি আস্থাশীল হয়ে ওঠে এবং আবারও শয়তানের উদ্দেশ্য সফল হয়।
.
আল্লাহ কোরআনে বলছেন,
.
"সে(ইবলিশ) বলল, ‘যাদের কারণে তুমি আমাকে ভ্রষ্ট করলে আমিও তাদের জন্য তোমার সরল পথে নিশ্চয় ওঁৎ পেতে থাকব;
.
অতঃপর আমি অবশ্যই তাদের সম্মুখ, পশ্চাৎ, ডান ও বাম দিক হতে তাদের নিকট আসব এবং তুমি তাদের অধিকাংশকেই কৃতজ্ঞ পাবে না।’"
.
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ৭:১৬-১৭)
.
.
শয়তান যে হারাম কাজের পথে মানুষকে চালনা করে বিভ্রান্ত করে ও পাপের পথে পরিচালিত করে, তা ওয়াহীদ বিন আব্দুস সালাম বালী এর ব্যাখ্যা থেকে আরও পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়:
.
"যাদুকরদের মধ্যে কেউ কেউ কুরআন মজীদ পায়ের নিচে দলিত করে পায়খানায় নিয়ে যায়, কেউ ময়লা বা জঘন্য জিনিস দ্বারা কুরআনের আয়াত লিখে থাকে, কেউ আয়াতকে উভয় পায়ের নিচে লিখে, কেউ সূরা ফাতেহাকে উল্টাভাবে লিখে, কেউ নিজের বসার স্থানের নিচে রাখে, তাদের কেউ বিনা ওযুতে নামায আদায় করে, কেউ সর্বদা নাপাক থাকে, তাদের কেউ আল্লাহর নাম না নিয়ে শয়তানের উদ্দেশ্যে যবাই করে যবাইকৃত পশুটি শয়তান নির্ধারিত স্থানে অর্পণ করে, কেউ তারকাকে সম্বোধন করে ও আল্লাহকে বাদ দিয়ে তার উদ্দেশ্যে সিজদা করে। কেউ কেউ উদ্দেশ্য সফল হওয়ার জন্য মা বা মেয়ের সাথে যিনা করে এবং কেউ কেউ আরবী নয় এরূপ অস্পষ্ট কুফরী কালামের চিত্র বা নক্সা লিখে দেয়।
.
এ দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায় যে জিন, শয়তান যাদুকরকে চুক্তি বা বিনিময় ব্যতীত কোন সাহায্য করে না বা তার কোন সেবা করে না। যাদুকর যত বড় কুফরীতে লিপ্ত হতে পারবে শয়তান তার ততবেশি অনুগত হবে ও তার ততদ্রুত কাজ সম্পাদন করে দিবে।
.
পক্ষান্তরে যাদুকর যদি শয়তানের পছন্দমত কুফরী কাজে ক্রটি বা উদাসীনতা করে তবে সে তার খেদমত হতে বিরত হয় ও তার অবাধ্য হয়ে যায়, সে আর তার অনুগত থাকে না। মূলতঃ শয়তান ও যাদুকর পরস্পরের সহযোগী উভয়ে আল্লাহর অবাধ্যতায় মিলিত হয়।"
.
(গ্রন্থঃ যাদুকর ও জ্যোতিষীর গলায় ধারালো তরবারি
অধ্যায়ঃ যাদুর আভিধানিক অর্থ)
.
.
প্রেতাত্মার ওপর বিশ্বাস করার অর্থ হল আত্মার অবিনাশিতায় বিশ্বাস করা, কেননা যখন বিশ্বাস করা হবে আত্মা অতৃপ্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়, তখন আপনি মেনে নিচ্ছেন, আত্মা, পরমাত্মার অংশ এবং সেই আত্মা মায়া বা বিভ্রম এর মধ্যে অবস্থান করছে যেটা সম্পূর্ণ শিরক এবং কুফরের পর্যায়ে।
.
হিন্দু দর্শনের মূল স্তম্ভ যে ধারণার ওপর বিশেষভাবে দাঁড়িয়ে আছে তা হল আত্মার অবিনাশিতাবাদ। হিন্দু দর্শন অনুযায়ী, ঈশ্বর হল পরমাত্মা এবং তার অংশ থেকে আত্মা পৃথক হয়ে তা ধ্বংসশীল দেহে প্রবেশ করে। আর তাই এই দর্শন অনুযায়ী, আমরা আসলে আত্মা, দেহ নই। আর যেহেতু পরমাত্মা হল ঈশ্বর এবং ঈশ্বর অবিনশ্বর, তাই আত্মাও অবিনশ্বর (যেহেতু আত্মা, ঈশ্বর বা পরমাত্মার অংশ)।
.
ভগবতগীতা বলছে,
"সমস্ত শরীরে পরিব্যাপ্ত রয়েছে যে অক্ষয় আত্মা, জেনে রেখ তাকে কেউ বিনাশ করতে সক্ষম নয়।"
(ভগবতগীতা, ২:১৭)
.
.
এখান থেকেই শুরু হয়েছে ঈশ্বরের সাথে সৃষ্টির তুলনা। ইসলাম একে ঘোষণা করছে "শির্ক" হিসেবে এবং একে বর্ণনা করছে সর্বোচ্চ অপরাধ ও চূড়ান্ত পথভ্রষ্টতা রূপে।
.
আত্মা ঈশ্বরের অংশ হলে, প্রকৃতপক্ষে তিনি আর সৃষ্টিকর্তাই থাকবেন না, কেননা তিনি তখন তার নিজ অংশের রূপান্তর করবেন মাত্র, শুন্য থেকে নতুন কিছু সৃষ্টি করার কোনো ক্ষমতাই তখন তার থাকবে না।
.
মহান সৃষ্টিকর্তা তাই ঘোষণা করছেন,
.
"তারা তাঁর পরিবর্তে কত উপাস্য গ্রহণ করেছে, যারা কিছুই সৃষ্টি করে না এবং তারা নিজেরাই সৃষ্ট এবং নিজেদের ভালও করতে পারে না, মন্দও করতে পারে না এবং জীবন, মরণ ও পুনরুজ্জীবনেরও তারা মালিক নয়।"

(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ২৫:৩)
.
.
"তবে কি যিনি সৃষ্টি করেন তিনি তারই মত যে সৃষ্টি করে না? তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?"

(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ১৬:১৭)
.
.
তাই আত্মা যে অবিনশ্বর নয়, এটা কেবল সৃষ্টিকর্তার একটি সৃষ্টি এবং তাই সৃষ্টিকর্তা ইচ্ছা করলে এই আত্মাকেও ধ্বংস করতে পারেন - এই উত্তরটি তিনি ঘোষণা করছেন সুস্পষ্টভাবে নিমোক্ত প্রকাশভঙ্গির মাধ্যমে:
.
.
"ভূপৃষ্ঠে (অস্তিত্বপূর্ণ) যা কিছু আছে সব কিছুই নশ্বর;
অবিনশ্বর শুধু তোমার প্রতিপালকের সত্ত্বা যিনি মহিমাময়, মহানুভব।
অতএব, তোমরা উভয়ে(মানুষ ও জ্বিন) তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অনুগ্রহকে অস্বীকার করবে?"

(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ৫৫:২৬-২৮)
.
.
তাই আসুন আমরা ভূত-প্রেতের ভ্রান্ত বিশ্বাস ত্যাগ করে প্রকৃত ইসলামিক আকিদাকে অন্তরে ধারণ করি; কোরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরি এবং দুয়া ও জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার নিকটবর্তী হই যাতে শয়তান তার ভ্রান্ত পথে আমাদেরকে পরিচালিত করতে ব্যর্থ হয়।
.
মহান আল্লাহ ঘোষণা করছেন,
.
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱدْخُلُوا۟ فِى ٱلسِّلْمِ كَآفَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا۟ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيْطَٰنِۚ إِنَّهُۥ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
.
"হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা পরিপূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।"
.
(মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, ২:২০৮)
.
.
আমার কোনোরূপ ভুল-ত্রুটি হলে আল্লাহ তায়ালা মার্জনা করুন এবং সকলকে তাঁর হেদায়েতের পথে পরিচালিতে করুন। আমিন।
.
.
আহমেদ আলি সিরিজ/ভূত-প্রেতের পর্দা ফাঁস

Comments

Popular posts from this blog

মানহাজ ও মাযাহাব নিয়ে যত দ্বন্দ্বের জবাব....

[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...

কৃষ্ণ কি আল্লাহর নবী ছিল?

এই প্রশ্নটা আমাকেও করা হয়েছে সম্ভবত কয়েকবার। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরটা বড়ই জটিল। কারণ এর কোনো যথাযথ উত্তর আমাদের জানা নেই। যদি কৃষ্ণের গোপীদের সাথে লীলার কাজকে সত্য বলে...

ভগবতগীতার বর্ণভেদ নিয়ে ভক্তদের ভণ্ডামির জবাব

============================ চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ৷ তস্য কর্তারমপি মাং বিদ্ধ্যকর্তারমব্যয়ম্৷৷১৩ অর্থ:  "প্রকৃতির তিনটি গুণ এবং কর্ম অনুসারে আমি মনুষ্য সমাজে চারটি বর্ণ...