Skip to main content

শির্কের অবসান করুন এবং বিশুদ্ধ তাওহীদে প্রবেশ করুন....


(প্রথমেই আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। ধৃষ্টতা মার্জনা করবেন। আমি তাফসির করার কেউ নই। আমি এখানে কেবল আমার নিজের অনুভূতিগুলো শেয়ার করছি আর মন্তব্যের সাথে সাহায্যস্বরূপ বিশেষ করে তাফসির আবু বকর যাকারিয়া এর ব্যাখ্যাগুলো গ্রহণ করেছি।)
.
.
আয়াতুল কুরসীতে আল্লাহ তাআলা অনেকগুলো আকিদার বিষয় একবারে তুলে ধরেছেন যেগুলো পরিপূর্ণভাবে আয়ত্ত্ব করতে পারলে ইনশাআল্লাহ বান্দা আর কখনও শির্কে লিপ্ত হবে না। আল্লাহ বলেন,
.
ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلْحَىُّ ٱلْقَيُّومُۚ لَا تَأْخُذُهُۥ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌۚ لَّهُۥ مَا فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِۗ مَن ذَا ٱلَّذِى يَشْفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذْنِهِۦۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَىْءٍ مِّنْ عِلْمِهِۦٓ إِلَّا بِمَا شَآءَۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَۖ وَلَا يَـُٔودُهُۥ حِفْظُهُمَاۚ وَهُوَ ٱلْعَلِىُّ ٱلْعَظِيمُ
.
"আল্লাহ্‌, তিনি ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই [১]। তিনি চিরঞ্জীব,[২] সর্বসত্তার ধারক।[৩] তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না, নিদ্রাও নয়[৪]। আসমানসমূহে যা রয়েছে ও যমীনে যা রয়েছে সবই তাঁর।[৫] কে সে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর কাছে সুপারিশ করবে?[৬] তাদের সামনে ও পেছনে যা কিছু আছে তা তিনি জানেন।[৭] আর যা তিনি ইচ্ছে করেন, তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কোন কিছুকেই তারা পরিবেষ্টন করতে পারে না।[৮] তাঁর ‘কুরসী’ আসমানসমূহ ও যমীনকে পরিব্যাপ্ত করে আছে;[৯] আর সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে ক্লান্ত করে না।[১০] আর তিনি সুউচ্চ সুমহান।"[১১]
.
(আল-কোরআন, ২:২৫৫)
.
.
[১] প্রথম পয়েন্টটি হল, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই। অর্থাৎ পৃথিবীতে আর যত রকম উপাস্য হওয়া সম্ভব, হোক দেব-দেবী, পূর্বপুরুষ, খাজা বাবা, উচ্চপর্যায়ের কোনো ব্যক্তি প্রভৃতি, এর মধ্যে কেউই সত্য উপাস্য নয়। তাই আল্লাহ ব্যতীত যেকোনো ব্যক্তি, যে কোনো বস্তু, যেকোনো বিষয়ের পূজা করা, উপাসনা করা, ইবাদত করা হারাম। যে কেউ এরূপ করছে, আয়াতের অংশ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, সে ব্যক্তি মিথ্যার মধ্যে নিমজ্জিত হল।
.
[২] দ্বিতীয় পয়েন্ট হচ্ছে, আল্লাহ তাআলা চিরঞ্জীব, অর্থাৎ তিনি সর্বদা বিরাজমান। একারণে সৃষ্টির শুরুর পূর্বেই তিনি ছিলেন। তাই তাঁর শুরু বা শেষ বলে কিছু নেই। শুরু বা শেষ হয় সৃষ্টির, সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলা এসকল সীমাবদ্ধতা থেকে উর্ধ্বে। একারণে কোনো সৃষ্ট বিষয়কে চিরঞ্জীব বা অবিনশ্বর ভাবলেই সে শির্কে লিপ্ত হচ্ছে। হিন্দুরা দাবি করে যে, আত্মা অবিনশ্বর আর আত্মা হল পরমাত্মার অংশ। চরমপন্থী কিছু সুফিগোষ্ঠীও এই হিন্দুদের আকিদা অনুসরণ করে কিছু জাল হাদিস বানিয়ে প্রচার করেছে যে, আল্লাহ তাঁর নূর থেকে এই জগত সৃষ্টি করেছেন। এই উভয় গোষ্ঠীই বিশ্বাস করে যে, তারা হল ঈশ্বর বা আল্লাহর অংশ আর তাই "আমিই খোদা" বা "আনাল হক" এই তত্ত্বের মাধ্যমে ঈশ্বরের সাথে বা পরমাত্মার সাথে বা আল্লাহর সাথে মিশে যেতে চায়। হিন্দু দর্শনে একে বলে "মোক্ষলাভ", সুফি দর্শনে একে বলে "ওয়াহদাতুল উজুদ"। এখানে এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলছেন যে, তিনিই একমাত্র চিরস্থায়ী আর তাই অন্য কোনো কিছুরই এমন বৈশিষ্ট্য থাকা অসম্ভব। একারণে আল্লাহ তাআলা কোনো পরমাত্মা নন এবং তাঁর থেকে আত্মা অথবা নূর পৃথক হয়েও আসে না, একারণে আত্মা বা নূর এগুলো কিছুই চিরস্থায়ী প্রকৃতির নয়। আর তাই আল্লাহর সাথে বা পরমাত্মার সাথে এক হয়ে বিলীন হয়ে যাওয়ার আকিদা সুস্পষ্ট শির্ক।
.
তাফসির আবু বকর যাকারিয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে,
.
"দ্বিতীয় বাক্য (اَلْـحَيُّ الْقَيُّوْمُ) আরবী ভাষায় (اَلْـحَيُّ) অর্থ হচ্ছে জীবিত আল্লাহ্‌র নামের মধ্য থেকে এ নামটি ব্যবহার করে বলে দিয়েছে যে, তিনি সর্বদা জীবিত; মৃত্যু তাঁকে স্পর্শ করতে পারবে না। (قَيُّوْمُ) শব্দ কেয়াম থেকে উৎপন্ন, এটা ব্যুৎপত্তিগত আধিক্যের অর্থে ব্যবহৃত। এর অর্থ হচ্ছে এই যে, তিনি নিজে বিদ্যমান থেকে অন্যকেও বিদ্যমান রাখেন এবং নিয়ন্ত্রণ করেন। ‘কাইয়ূম’ আল্লাহ্‌র এমন এক বিশেষ গুণবাচক নাম যাতে কোন সৃষ্টি অংশীদার হতে পারে না। তাঁর সত্তা স্থায়ীত্বের জন্য কারো মুখাপেক্ষী নয়। কেননা, যে নিজের স্থায়ীত্ব ও অস্তিত্বের জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী, সে অন্যের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ কি করে করবে? সে জন্যই কোন মানুষকে 'কাইয়ূম’ বলা জায়েয নয়। যারা ‘আবদুল কাইয়ূম’ নামকে বিকৃত করে শুধু কাইয়ূম’ বলে, তারা গোনাহগার হবে...." (তাফসির আবু বকর যাকারিয়া)
.
.
[৩] আয়াতের তৃতীয় পয়েন্টটি হল, আল্লাহ তাআলা সর্বসত্তার ধারক। আর তাই আর কোনো সত্তা নেই, যে, আল্লাহ তাআলার রাজত্বের অংশীদার হতে পারে। কেননা যখন সকল অস্তিত্বমান সত্তাকেই আল্লাহ তাআলা ধারণ করে রেখেছেন, তখন তাঁর নিয়ন্ত্রণ ও রাজত্বের মধ্যে আর কোনো পৃথক সত্তা থাকা অসম্ভব যে আল্লাহর তাআলার ওপর প্রভুত্ব করতে পারে, আর তাঁর রাজত্বের অংশীদার হতে পারে।
.
[৪] এবং [১০] চতুর্থ পয়েন্টটি ছিল, আল্লাহ তাআলাকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না। এর সঙ্গে দশম পয়েন্টেও দেখা যায় যে, "আর সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে ক্লান্ত করে না।"
এগুলো দ্বারা বোঝা যায় যে, আল্লাহ তাআলা ক্লান্ত হন না এবং তাঁর বিশ্রামের প্রয়োজন হয় না।
.
"...আরবীতে (سِـنَةٌ) শব্দের সীন-এর (كَسرة) দ্বারা উচ্চারণ করলে এর অর্থ হয় তন্দ্রা বা নিদ্রার প্রাথমিক প্রভাব (نَوْمٌ) পূর্ণ নিদ্রাকে বলা হয়। এর অর্থ হচ্ছে এই যে, আল্লাহ্ তা'আলা তন্দ্রা ও নিদ্রা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত..."
(তাফসির আবু বকর যাকারিয়া)
.
কিন্তু খ্রিস্টানদের বাতিল আকিদা দেখুন। বাইবেল বলছে, "এবং সপ্তম দিনে ঈশ্বর তার কাজ সমাপ্ত করলেন এবং তারপর তার কৃত সমস্ত কাজ হতে তিনি বিশ্রাম নিলেন।" (জেনেসিস, ২:২) ;
ইংরেজিতে কিংস জেমস ভার্সনের বাইবেল এর অনুবাদটা হল,
"And on the seventh day God ended his work which he had made; and he rested on the seventh day from all his work which he had made." (Genesis, 2:2)
এখানে খ্রিস্টান মিশনারিরা হিব্রু  וַיִּשְׁבֹּת֙ শব্দের অনুবাদ করেছে "and He rested" অর্থাৎ "এবং তিনি বিশ্রাম নিলেন" (উৎস - https://biblehub.com/text/genesis/2-2.htm)
.
এমনকি খ্রিস্টান মিশনারিদের বাইবেলই বলছে যে, তাদের ঈশ্বর যীশুরও নিদ্রা বা ঘুমের দরকার হয়।
.
"শিষ্যদের মধ্যে আর একজন তাঁহাকে বলিলেন, হে প্রভু, অগ্রে আমার পিতাকে কবর দিয়া আসিতে অনুমতি করুন। কিন্তু যীশু তাঁহাকে কহিলেন, আমার পশ্চাৎ আইস; মৃতেরাই আপন আপন মৃতদের কবর দিউক। আর তিনি নৌকায় উঠিলে তাঁহার শিষ্যগণ তাঁহার পশ্চাৎ গেলেন।
.
**আর দেখ, সমুদ্রে ভারী ঝড় আসিল, এমন কি, নৌকা তরঙ্গে আচ্ছন্ন হইতেছিল; কিন্তু তিনি নিদ্রাগত ছিলেন।**
.
তখন তাঁহারা তাঁহার নিকটে গিয়া তাঁহাকে জাগাইয়া কহিলেন, হে প্রভু, রক্ষা করুন, আমরা মারা পড়িলাম।" [মথি, ৮:২১-২৫; উৎস - https://www.bible.com/bible/1791/MAT.8.ROVU]
.
এমনকি হিন্দুদের উপাস্যরাও দিব্যিই বিশ্রাম নেয়। দেবী ভাগবতে উল্লেখ করা হয়েছে,
.
"...বিষ্ণু, যার নাভিকমলে ব্রহ্মা জন্ম নেন, তিনি **যোগ নিদ্রায় শায়িত থাকেন**.... আমি সেই দেবীর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি যিনি ব্রহ্মা কর্তৃক পূজিত হন **বিষ্ণুর নাভিকমলে বিশ্রাম নেওয়ার** সময়, **যিনি যোগ নিদ্রায় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হচ্ছিলেন**...."
.
"...Visnu, from whose navel lotus Brahmâ is born, **lies in Yoga sleep**....  I fly for refuge unto that Devî who was praised by Brahmâ while resting on the navel lotus of Visnu who was lying fast asleep in Yoga nidrâ...."
.
[The S'rîmad Devî Bhâgawatam 1:2:6-10;
Translated by Swami Vijñanananda/source - http://www.sacred-texts.com/hin/db/bk01ch02.htm]
.
এখানে তাই আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করে দিচ্ছেন যে, তিনি তন্দ্রা, নিদ্রা ও ক্লান্তির বহু উর্ধ্বে। তাই তাঁর বিশ্রাম, ঘুম ইত্যাদির কোনো প্রয়োজন নেই। এগুলো কেবল সেই সকল বাতিল উপাস্যদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যারা আসলে নিজেরাই অসহায় ও ক্ষমতাহীন!!!
.
.
[৫] পরের পয়েন্টটি হল "আসমানসমূহে যা রয়েছে ও যমীনে যা রয়েছে সবই তাঁর"।
.
"বাক্যের প্রারম্ভে ব্যবহৃত (لام) অক্ষর মালিকানা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ আকাশ এবং যমীনে যা কিছু রয়েছে সে সবই আল্লাহ্‌র মালিকানাধীন। তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ ইচ্ছাশক্তির মালিক। যেভাবে ইচ্ছা তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।"
(তাফসির আবু বকর যাকারিয়া)
.
এর অর্থ হল "কোনো কিছু আল্লাহর" অর্থ হল সেটি আল্লাহর মালিকানাধীন যা আল্লাহ তাআলারই সুবিশাল সৃষ্টির একটি অংশ মাত্র। কিন্তু সেটি আল্লাহর নিজের অংশ নয়। যেমন, কাবাকে যখন বলা হবে, আল্লাহর ঘর, এর অর্থ সেটি আল্লাহর মালিকানাধীন যা আল্লাহর সুবিশাল বিশ্বজগতের সৃষ্টির একটি অংশ মাত্র। এর অর্থ এটা নয় যে, আল্লাহ তাআলা সেই কাবার মধ্যে থাকেন। নাউযুবিল্লাহ। একইভাবে 'আল্লাহর রূহ' মানব শরীরে তিনি ফুঁকে দেন, এটার অর্থ এটা নয় যে, রূহ আল্লাহর অংশ। বরং, রূহ আল্লাহর মালিকানাধীন, যা তাঁর একটি সৃষ্টি এবং এটি তাঁর সুবিশাল সৃষ্টির একটি অংশ মাত্র।
.
.
[৬] এই অংশতে আল্লাহ বলছেন, "কে সে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর কাছে সুপারিশ করবে?" অর্থাৎ আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোনো সৃষ্টিরই কোনো ক্ষমতা নেই যে, সে সুপারিশ করার ক্ষমতা রাখে। আর তাই কোনো মূর্তি, আগুন, প্রকৃতির উপাদান, সাধু বাবা, খাজা বাবা ইত্যাদি কোনো কিছুকেই আল্লাহর নিকটবর্তী হতে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা শির্ক। মুশরিকরা মূর্তি, আগুন ইত্যাদি প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ট উপাদানকে মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করে চিন্তাকে নিবিষ্ট করতে যাতে তারা ঈশ্বর উপাসনার উর্ধ্ব ধাপে গিয়ে এক পর্যায়ে ঈশ্বরের সাথে মিশে যেতে পারে। চরমপন্থী সুফিরা একজন পীর, সুফি, দরবেশকে মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করে যাতে তাদের মাধ্যমে তারা আল্লাহর নিকটবর্তী হতে পারে আর তাদের কাছ থেকে আল্লাহর দরবারে তাদের মাধ্যমে সুপারিশ এর সাহায্য পেতে পারে। আল্লাহ তাআলা এই বিষয়ের জবাবে সূরা যুমারে উল্লেখ করছেন,
.
أَلَا لِلَّهِ ٱلدِّينُ ٱلْخَالِصُۚ وَٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُوا۟ مِن دُونِهِۦٓ أَوْلِيَآءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَآ إِلَى ٱللَّهِ زُلْفَىٰٓ إِنَّ ٱللَّهَ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ فِى مَا هُمْ فِيهِ يَخْتَلِفُونَۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهْدِى مَنْ هُوَ كَٰذِبٌ كَفَّارٌ
.
"জেনে রেখ, আল্লাহর জন্যই বিশুদ্ধ ইবাদাত-আনুগত্য। আর যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে তারা বলে, ‘আমরা কেবল এজন্যই তাদের ‘ইবাদাত করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে।’ যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে আল্লাহ নিশ্চয় সে ব্যাপারে তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন। যে মিথ্যাবাদী কাফির, নিশ্চয় আল্লাহ তাকে হিদায়াত দেন না।"
(আল-কোরআন, সূরা আয-যুমার ৩৯:৩)
.
আর আয়াতুল কুরসীর এই অংশে তাই আল্লাহ তাআলা প্রশ্ন করছেন যে, কার এত বড় সাধ্য আছে, যে আল্লাহর অনুমতি ছাড়াই কোনো সুপারিশ করার ক্ষমতা রাখে?? কার এত বড় সাহস, যে, আল্লাহর হুকুম ছাড়াই মাধ্যম হিসেবে নিজেকে মাধ্যম হিসেবে দাঁড় করিয়েছে??
আর তাই এই মূর্তি, ছবি, দেব-দেবী, সাধু বাবা, কবরে শায়িত থাকা মৃত ব্যক্তি ইত্যাদি কেউই কেয়ামতের দিন তাদের উপাস্যদের উপাসনা স্বীকার করবে না, অথবা তাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী হতে বা সুপারিশের জন্য মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করাকে সমর্থন করবে না। মহান আল্লাহ ঘোষণা করছেন,
.
إِلَيْهِ يُرَدُّ عِلْمُ ٱلسَّاعَةِۚ وَمَا تَخْرُجُ مِن ثَمَرَٰتٍ مِّنْ أَكْمَامِهَا وَمَا تَحْمِلُ مِنْ أُنثَىٰ وَلَا تَضَعُ إِلَّا بِعِلْمِهِۦۚ وَيَوْمَ يُنَادِيهِمْ أَيْنَ شُرَكَآءِى قَالُوٓا۟ ءَاذَنَّٰكَ مَا مِنَّا مِن شَهِيدٍ
وَضَلَّ عَنْهُم مَّا كَانُوا۟ يَدْعُونَ مِن قَبْلُۖ وَظَنُّوا۟ مَا لَهُم مِّن مَّحِيصٍ

"ক্বিয়ামত কখন সংঘটিত হবে সে সম্পর্কিত জ্ঞান একমাত্র তাঁর কাছেই আছে। কোন ফলই তার আবরণ থেকে বেরিয়ে আসে না, এবং কোন নারী গর্ভধারণ করে না আর সন্তান প্রসব করে না তাঁর অজ্ঞাতে।
.
**যে দিন তিনি তাদেরকে ডেকে বলবেন- আমার শরীকরা কোথায় (তোমরা যেগুলো বানিয়ে নিয়েছিলে)?**
.
**তারা বলবে- আপনাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে, (আজ) আমাদের কেউ (আপনার শরীক থাকার ব্যাপারে) সাক্ষ্য দাতা হবে না।**
.
**পূর্বে তারা যাদেরকে ডাকত তারা তাদের থেকে উধাও হয়ে যাবে, আর তারা বুঝতে পারবে যে, তাদের পালানোর কোন জায়গা নেই।"**
(আল-কোরআন, ৪১:৪৭-৪৮)
.
.
[৭] এই অংশে আল্লাহ বলছেন যে, "তাদের সামনে ও পেছনে যা কিছু আছে তা তিনি জানেন।" তাফসির আবু বকর যাকারিয়াতে এই অংশের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে, "অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা অগ্র-পশ্চাত যাবতীয় অবস্থা ও ঘটনা সম্পর্কে অবগত। অগ্র-পশ্চাত বলতে এ অর্থও হতে পারে যে, তাদের জন্মের পূর্বের ও জন্মের পরের যাবতীয় অবস্থা ও ঘটনাবলী আল্লাহ্‌র জানা রয়েছে। আর এ অর্থও হতে পারে যে, অগ্র বলতে সে অবস্থা বোঝানো হয়েছে যা মানুষের জন্য প্রকাশ্য, আর পশ্চাত বলতে বোঝানো হয়েছে যা অপ্রকাশ্য। তাতে অর্থ হবে এই যে, কোন কোন বিষয় মানুষের জ্ঞানের আওতায় রয়েছে কিন্তু কোন কোন বিষয়ে তাদের জ্ঞান নেই। কিছু তাদের সামনে প্রকাশ্য আর কিছু গোপন। কিন্তু আল্লাহ্‌র ক্ষেত্রে সবই প্রকাশ্য। তাঁর জ্ঞান সে সমস্ত বিষয়ের উপরই পরিব্যপ্ত। সুতরাং এ দু'টিতে কোন বিরোধ নেই। আয়াতের ব্যাপকতায় উভয়দিকই বোঝানো হয়।" (তাফসির আবু বকর যাকারিয়া)
.
.
[৮] এই অংশে উল্লেখ করা হয়েছে, "আর যা তিনি ইচ্ছে করেন, তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কোন কিছুকেই তারা পরিবেষ্টন করতে পারে না।"
অর্থাৎ আল্লাহর অনুমতি ছাড়া সামান্যতম জ্ঞান কেউ অর্জন করার ক্ষমতা রাখে না। হিন্দু যোগী আর চরমপন্থী সুফি সাধকরা লোকদের এই শিক্ষা দেয় যে, মানুষের মনের ওপর এক ধরণের অজ্ঞতার আবরণ আছে যা ধ্যানের মাধ্যমে দূর করে দেওয়া সম্ভব। আর তখন মানুষ সব কিছু জানতে সক্ষম হয়; সে হয়ে যায় তখন সর্বজ্ঞানী, ত্রিকালদর্শী ইত্যাদি ইত্যাদি। এখানে আল্লাহ ঘোষণা দিচ্ছেন যে, মানুষ যখন নিজেকে সর্বজ্ঞানী, ত্রিকালদর্শী ভাবে, তখন সেই অবস্থাও তার জন্য কেবল ক্ষুদ্র একটি অবস্থা মাত্র। সেই পর্যায়ের জ্ঞানও আসলে সামান্য জ্ঞান মাত্র যা আল্লাহর অনুমতি ছাড়া সে অর্জন করতে পারবে না। আল্লাহ তাআলা যতটুকু চাইবেন, ঠিক ততটুকু জ্ঞানই ব্যক্তি অর্জন করতে পারবে; এর বেশি অর্জন করার ক্ষমতা তার নেই। আর তারপরও যদি সে সর্বজ্ঞানী হওয়ার জন্য অহংকারে অটল থাকে, তবে সত্য হতে বিচ্যুত হয়ে সে শির্কে লিপ্তও হয়ে যেতে পারে; যেমনটা হিন্দু যোগীরা কল্পনা করে যে, তার মনের অজ্ঞতা ধ্যানের মাধ্যমে দূর হলে সে সব কিছু জেনে ফেলবে, তখন তার আর ঈশ্বরের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না; যে বিষয়কে হিন্দুদের ছান্দোগ্য উপনিষদে এভাবে বলা হয়েছে, "সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম", অর্থাৎ সকল কিছুই আসলে ব্রহ্ম বা ব্রহ্মই জগতের চরাচর ["All this is Brahman..." (Khândogya Upanishad, 3:14:1); source - http://www.sacred-texts.com/hin/sbe01/sbe01072.htm]
.
তবে মানুষ জানে না সে কী পরিমাণ জ্ঞান অর্জন করতে পারবে; তাই তার জন্য পরিশ্রম করে যাওয়া বাঞ্ছনীয়, কেননা আল্লাহ বলেন, "...কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে..." (আল-কোরআন, সূরা লুকমান ৩১:৩৪)
.
.
[৯] এই অংশে আল্লাহ কুরসীর কথা বর্ণনা করছেন। এখানে সহিহ মত হল, কুরসী হল পাদানি (footstool) এবং আরশ হল সিংহাসন (Throne)।
[বিস্তারিত ফতোয়া দেখতে এখানে ভিজিট করুন - https://islamqa.info/en/answers/9566/what-is-the-difference-between-the-arsh-of-the-lord-and-his]
আর তাই রাজা যেমন রাজ্য শাসন করে, তেমনি মহান আল্লাহও তাঁর সমস্ত সৃষ্টিজগতের নিয়ন্ত্রণকারী এবং চূড়ান্ত বিধান নিয়ন্তা। তবে ব্যাপারটা এমন না যে, আল্লাহ তাআলা সিংহাসনে বসে কুরসীতে পা রেখেছেন। নাউযুবিল্লাহ। বিষয়টি খেয়াল করুন। সিহাংসনে রাজা বসেন আর নীচে থাকে তার পাদানি বা পা রাখবার জায়গা। অর্থাৎ মূল পয়েন্টটি হল, সিংহাসন থাকে যেমন উপরে আর তার নীচে যেমন থাকে পাদানি; তেমনি আরশও হল সমস্ত সৃষ্টির শেষ প্রান্ত এবং তার নীচে আছে কুরসী। আর আল্লাহ বলেন, "তাঁর সমতুল্য কিছুই নেই।" (আল-কোরআন, ১১২:৪) একারণে আল্লাহ তাআলার কুরসী এর অর্থ হল তাঁর মালিকানাধীন, তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন সৃষ্ট কুরসী। এখানে "কুরসী" এবং "আরশ" এমন দুটি প্রকাশভঙ্গী যা আমাদের বোধগম্যের নিকটবর্তী। এর দ্বারা আমরা এতটুকু বুঝতে পারি যে, আরশ হল সৃষ্টির শেষ প্রান্ত, কুরসী তার নীচে অবস্থিত একটি সৃষ্টি এবং আল্লাহ তাআলা আরশের উর্ধ্বে বিরাজমান - সৃষ্টি থেকে পৃথক অবস্থায়; যিনি স্থান, সময় ইত্যাদি সবকিছুর উর্ধ্বে যাকে তুলনা করা সম্ভব নয়। কিন্তু এগুলোকে পরিপূর্ণভাবে অনুধাবন করার ক্ষমতা আমাদের নেই, কারণ আমাদের ইন্দ্রিয়ের ক্ষমতা অতি সামান্য আর তাই এগুলো আমাদের জন্য পরীক্ষা যে, কে কতটুকু এগুলোকে সত্যিই অন্তর থেকে বিশ্বাস করবে, যদিও সে এগুলোকে পরিমাপ করার ক্ষমতা রাখে না। আল্লাহ বলেন,
.
أَحَسِبَ ٱلنَّاسُ أَن يُتْرَكُوٓا۟ أَن يَقُولُوٓا۟ ءَامَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ
وَلَقَدْ فَتَنَّا ٱلَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْۖ فَلَيَعْلَمَنَّ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ صَدَقُوا۟ وَلَيَعْلَمَنَّ ٱلْكَٰذِبِينَ
.
"মানুষ কি মনে করেছে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ এ কথা বললেই তাদেরকে অব্যাহতি দেয়া হবে এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না?
আমিতো তাদের পূর্ববর্তীদেরকেও পরীক্ষা করেছিলাম; আল্লাহ অবশ্যই প্রকাশ করে দিবেন কারা সত্যবাদী ও কারা মিথ্যাবাদী।"
(আল-কোরআন, ২৯:২-৩)
.
তাফসির আবু বকর যাকারিয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে,
.
(وَسِعَ كُرْسِـيُّهُ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضَ)
"অর্থাৎ তাঁর কুরসী এত বড় যার মধ্যে সাত আকাশ ও যমীন পরিবেষ্টিত রয়েছে। হাদীসের বর্ণনা দ্বারা এতটুকু বোঝা যায় যে, আরশ ও কুরসী এত বড় যে, তা সমগ্র আকাশ ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে রেখেছে। ইবনে কাসীর আবু যর গিফারী রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর উদ্ধৃতিতে বর্ণনা করেছেন যে, ‘তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, কুরসী কি এবং কেমন? তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর কছম, কুরসীর সাথে সাত আসমানের তুলনা একটি বিরাট ময়দানে ফেলে দেয়া একটি আংটির মত। আর কুরসীর উপর আরশের শ্রেষ্ঠত্ব যেমন আংটির বিপরীতে বিরাট ময়দানের শ্রেষ্ঠত্ব’।" [ইবন হিব্বান: ৩৬১ বায়হাকী: ৪০৫]
(তাফসির আবু বকর যাকারিয়া)
.
.
[১১] সর্বশেষ পয়েন্টটির ব্যাখ্যায় তাফসির আবু বকর যাকারিয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে,
"দশম বাক্য (وَھُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ) অর্থাৎ তিনি অতি উচ্চ ও অতি মহান। পূর্বের নয়টি বাক্যে আল্লাহ্‌র সত্তা ও গুণের পূর্ণতা বর্ণনা করা হয়েছে। তা দেখার এবং বোঝার পর প্রত্যেক বুদ্ধিমান ব্যক্তি বলতে বাধ্য হবে যে, সকল শান-শওকত, বড়ত্ব ও মহত্ব এবং শক্তির একমাত্র মালিক আল্লাহ্‌ তা'আলা। এ দশটি বাক্যে আল্লাহ্‌র যাত ও সিফাতের পূর্ণ বর্ণনা দেয়া হয়েছে।"
(তাফসির আবু বকর যাকারিয়া)
.
.
.
আল্লাহই ভাল জানেন।
.
কোনোরূপ ভুলত্রুটি হলে আল্লাহ মার্জনা করুন এবং আমাদেরকে শির্ক, কুফর, বিদআত হতে রক্ষা করুন। আমিন।
.
"মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল-হুমাইদী হতে, বর্ণনা করেন যে, 'আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাযিঃ) বর্ণিত হাদীসঃ “আসমান-যামীনের মধ্যে আয়াতুল কুরসীর চাইতে মহান আর কোন কিছুই আল্লাহ তা'আলা সৃষ্টি করেননি, এর ব্যাখায় সুফিয়ান ইবনু উয়াইনাহ বলেন, আয়াতুল কুরসী  হল আল্লাহ তা'আলার কালাম, আর আল্লাহ তা'আলার কালাম তো নিঃসন্দেহে আসমান-যামীনের সকল সৃষ্টির চাইতে মহান।"
.
[সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত]
অধ্যায়ঃ ৪২/ কুরআনের ফাযীলাত (كتاب فضائل القرآن عن رسول الله ﷺ)
হাদিস নম্বরঃ ২৮৮৪
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) http://www.hadithbd.com/share.php?hid=41448]
========================
#আহমেদ_আলি

Comments

Popular posts from this blog

মানহাজ ও মাযাহাব নিয়ে যত দ্বন্দ্বের জবাব....

[Special thanks to brother Mainuddin Ahmad for providing some important reference] . মানহাজ অর্থ পথ (path) অথবা পদ্ধতিগত বা নিয়মগত বা প্রণালিগত বিদ্যা (Methodology)। মানহাজ বললে তাই তাকে দুই ভাবে ভাবা হয় - ১) সহিহ মানহাজ, ২) ভ্রান্ত বা বাতিল মানহাজ। . সহিহ মানহা...

কৃষ্ণ কি আল্লাহর নবী ছিল?

এই প্রশ্নটা আমাকেও করা হয়েছে সম্ভবত কয়েকবার। কিন্তু প্রশ্নের উত্তরটা বড়ই জটিল। কারণ এর কোনো যথাযথ উত্তর আমাদের জানা নেই। যদি কৃষ্ণের গোপীদের সাথে লীলার কাজকে সত্য বলে...

Permission of Adultery and Fornication in Hinduism - Remaining Part

Read the previous part here: http:// uniqueislamblog.blogspot.com /2017/11/ permission-of-adultery-and-fornication.html ?m=1 => Condemning physical relationship outside marriage: Generally physical relationship outside marriage is condemned in Hindu Philosophy. Bhagabat Gita says, "There are three gates leading to this hell-**lust**, anger, and greed. Every sane man should give these up, for they lead to the degradation of the soul." (Bhagabat Gita, 16:21) ['Bhagabat Gita As It Is' by His Divine Grace A.C. Bhaktivedanta Swami Prabhupada] This verse indicates that lust or desire outside marriage can lead one to hell if it is not maintained properly. It is further mentioned in Yajur Veda, "O God, **cast aside a lover**, **who cohabits with another's wife** ; **a paramour having illicit connection with a domestic woman** ; **an unmarried elder brother suffering from the pangs of passion** ; younger brother who has married before his elder to ...